somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবীন লেখক

০৫ ই জুন, ২০১১ রাত ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দৃশ্য এক
স্থান: বাংলা একাডেমির বই মেলা প্রাঙ্গন
সময়: ফেব্রুয়ারী, ২০১০ সাল
আবুল প্রকাশনীর মালিক আবুল আলী বই মেলায় তার ষ্টলে বসে পান চিবুচ্ছিলেন। একটু আগে নেহারি আর তুন্দুল দিয়ে সকালের নাস্তা সেরেছেন। মেলার বেশ কয়েক দিন পার হয়ে গেছে কিন্তু সে তুলনায় বিক্রি ভাল নয় বলে আবুল আলী খানিকটা চিন্তিত। যদিও মেলা এখন তেমন একটা জমে ওঠেনি। জমে উঠলে বিক্রি বাড়বে বলে তার বিশ্বাস।
এই যখন অবস্থা ঠিক তখন সাদা পাঞ্জাবী পড়া এক লোক হেলতে দুলতে ষ্টলের সামনে এসে দাড়ালেন। ভ্রু কুচকে এটা সেটা নাড়াচাড়া করতে দেখে আবুল আলী জিজ্ঞেস করলেন, ‘বিশেষ কারো বই খুজছেন নাকি ভাই সাহেব?’ ভদ্রলোক আবুল আলীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কললেন, ‘জ্বি জ্বি, আমি আসলে সর্বনাম রাসেলের বই খুজছিলাম, আছে না কি?’ এবার আবুল আলীর ভ্রুও কুচকে গেল। তিনি বললেন, ‘না, এই নামে কোন রাইটারের বই তো আসে নি। নতুন রাইটার না কি?’ কাষ্টমার যারপর নাই অবাক হয়ে বললেন, ‘আসে নি মানে? এমন একজন রাইটারের বই না এসে তো পারে না। আপনি মনে হয় ভুল করছেন। অবশ্য আপনার ছোট দোকান, সব বই না থাকারই কথা।’ অতপর কাষ্টমার ভদ্রলোক আর দেরি করলেন না। বিরক্তির একটা ভাব দেখিয়ে আবুল প্রকাশনীর ষ্টল থেকে চলে গেলেন।
দিনের প্রথম কাষ্টমার মিস হয়ে গেলে দিনটা খারাপ যায় বলে শুনেছেন। তার উপর এতবড় ষ্টল কে ছোট ষ্টল বলে চলে গেল অথচ কোন জবাবই দিতে পারলেন না। সব মিলিয়ে আবুল আলীর মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। মেজাজ ঠা-া করার জন্য গরম গরম চায়ের কোন বিকল্প নেই। অগত্যা দোকানের এক সেলসম্যানকে চা আনার জন্য পাঠিয়ে দিলেন।
দুপুরের দিকের কথা। মেলায় কাষ্টমার কিছুটা বেড়েছে। আবুল আলী সাহেব বেশ কয়েকটা বইও বিক্রি করে ফেলেছেন। ষ্টলের সামনে কাষ্টমাররা বই নাড়াচাড়া করছেন বলে তিনি সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন যেন কাষ্টমার সেজে কোন চোর বই চুরি করে না নিয়ে যায়। এমন সময় এক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই যে ভাই, আপনাদের প্রকাশনী থেকে সর্বনাম রাসেলের কোন বই এসেছে?’ আবুল আলী বললেন, ‘না ভাই, এবার তার কোন বই আমাদের থেকে আসেনি।’ আবুল আলীর কথা শুনে কাষ্টমার ভদ্রলোক যার পর নাই হতাশ হলেন। তিনি বললেন, ‘হায় হায়! সর্বনাম রাসেলের বই প্রকাশ করেন নি? অবশ্য সর্বনাম রাসেল ছোটখাট প্রকাশনীতে বই দেন না। আপনাদেরকেও সে কারনে পান্ডুলিপি না দিয়ে থাকতে পারেন। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি পাশের ষ্টলে খোঁজ নিয়ে দেখি।’ কাষ্টমার যা ইচ্ছা বলতে পারেন কিন্তু এভাবে অপমান করে কথা বললে কার না খারাপ লাগে। আবুল আলীরও খারাপ লাগল। রাগে দুঃখে তিনি বেশ কিছুক্ষন কথাই বলতে পারলেন না।
সন্ধ্যর দিকে বই মেলা চুড়ান্ত রকম জমে গেল। আবুল আলী প্রচন্ড ব্যস্ত। কাষ্টমারকে বই দিয়ে কুল পাচ্ছেন না। এমন সময় এক তরুনী সুরেলা কণ্ঠে বললেন, ‘সর্বনাম রাসেলের যে কটা বই বেরিয়েছে তার প্রত্যেকটার দু কপি করে দিন তো।’ আবুল আলী কথাটা শুনতে পেয়ে বললেন, ‘আমাদের প্রকাশনী থেকে সর্বনাম রাসেলের কোন বই এবার আসেনি ম্যাডাম।’ আবুল আলীর কথা শুনে ম্যাডাম মনে হয় আকাশ থেকে পড়লেন, তাও আবার প্যারাসুট ছাড়া। তিনি বললেন, ‘সর্বনাম রাসেলের একটা বইও আসেনি, বলেন কি? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরে বাংলা সাহিত্যে একজন রাইটারই আছেন, তিনি সর্বনাম রাসেল। আর আপনারা বলছেন তার বই আপনাদের ষ্টলে নেই! অবাক হলাম বটে।’ আবুল আলী এবার সত্যিই বিচলিত হয়ে পড়লেন। তিনি বললেন, ‘ম্যাডাম, এবার তিনি ব্যাস্ততার কারনে বই প্রকাশ করতে পারেন নি। সামনের বার আমরা অবশ্যই তার বই বাজারে আনব।’

দৃশ্য দুই
স্থান: বাংলা একাডেমির বই মেলার পাশের চায়ের দোকান
সময়: ফেব্রুয়ারী, ২০১০ সাল
তিন ভদ্রলোক আর এক ভদ্রমহিলা বসে চা খাচ্ছেন। তাদের মধ্যে এক জনের নাম সর্বনাম রাসেল। চা খেতে খেতে তিনি অন্যদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘এক সপ্তাহ পর আবার তোরা আবুল প্রকাশনীতে যাবি এবং এভাবে আমার বই এসেছে কি না জিজ্ঞেস করবি। চল এবার সবাই বিরানী খেয়ে বাড়ির দিকে চলে যাই।

দৃশ্য তিন
স্থান: মিরপুর দশ নাম্বার গোল চক্করের পত্রিকার দোকান
সময়: ফেব্রুয়ারী, ২০১১ সাল
এক ভদ্রলোক দোকানের সামনে দাড়িয়ে ফাও পত্রিকা পড়ছেন। পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের ভাষা এরকম, ‘এবারের বই মেলায় সর্বনাম রাসেলের দুটো বই। পাখি ও বৃক্ষ বিষয়ক গবেষনা পত্র ‘ডাউয়া গাছে কাউয়া বসা’ এবং অমর প্রেমের উপন্যাস ‘মনো মাঝে বাঁশি বাজে’। পাওয়া যাচ্ছে আবুল প্রকাশনীর ষ্টলে।’
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×