কয়েকদিন আগে আম নিয়ে সাহিত্যকর্ম খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। তেমন কিছু খুঁজে পেলাম না। আম পাতা জোড়া জোড়া, মারব চাবুক চলবে ঘোড়া - এরকম একটা কবিতা কে জানি মনে করায় দিল। অপমানিত বোধ করলাম। কোথায় আম আর কোথায় আমপাতা!! আমপাতা কি আমাদের খাবার নাকি?? একটি আমে ফলের অংশ থাকে। আমের আঁটি থাকে। এইগুলা ভাগ্যে না থাকলে আমের ছোকলা থাকে। তা না কবি একটা কবিতা লিখেছে তাও আমপাতা নিয়ে। আম নিয়ে সাহিত্যকর্ম এত কম কেন তা নিয়ে বেশ অবাক হলাম। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছেন। তিনি আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে- এই লাইনটির পরে আমের কথা আনতে পারতেন। তিনি বলতে পারতেন আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে আম খেতে ভাল লাগে- তা না তিনি কিনা বললেন বৈশাখ মাসের হাটু জলের কথা। তারপরে হটাৎ চমকে উঠলাম। আরিব্বাস। কবি গুরু তো কবি গুরুই। তিনি কি আর বিশ্বকবি এমনি এমনি হয়েছেন!! আমাদের জাতীয় সঙ্গীতেই তো তিনি আম দিয়েছেন। তা খালি আম না একেবারে আমবাগান। আমবাগানকে তিনি বলেছেন আম বন। ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রানে, পাগল করে। সত্যিই আম তো পাগল করারই জিনিস।
আমার এক বন্ধু আছে যার জাতীয়ফল নিয়ে বেশ ক্ষোভ আছে। তার সোজা সাপটা কথা কাঠাল জাতীয় ফল হয় কেমনে? এই জিনিস খাইতে ভাল না দেখতে ভাল? আমি অনেক চিন্তা করলাম- কই নাতো খাইতেও খারাপ না দেখতেও খারাপ না। বন্ধু তেলে-পেপেতে (তখন বেগুনের কেজি ১০০ টাকায় গেছে, মানুষ পেপে দিয়ে বেগুনী বানায়। আর বন্ধু অতোও রাগেনায়) জ্বলে উঠল। কই আম আর কাঠাল। কই আয়ুব খান কই খিলি পান। কই ম্যারাডোনা কই পেলে। আমি দেখলাম অবস্থা বেগতিক। ফল দিয়া কাহিনী শুরু এখন ফুটবলের দিকে ধ্রাবমান। আমি ফলেই থাকলাম। বললাম কি কইতে চাস ক। বন্ধু বলে কোন কিছু বলতে চাইনা কাঠাল হইল গরুর খাবার। গরুরা খুব আগ্রহ নিয়া এই জিনিস খায়। জাতীয় ফল হওয়া উচিত আম। এই ধরনের বিতর্কে চুপ থাকা ভাল। বন্ধুর মন রক্ষাতেই সম্ভবত জাতীয় গাছ এখন আম গাছ। ১৪ ডিসেম্বর ২০১০ থেকে আমগাছ জাতীয় গাছের মর্যাদা লাভ করেছে।
আম হল ফলের রাজা। কে তাকে এই মর্যাদা দিল জানিনা তবে এই মহান মর্যাদা সে অনেক দিন ধরেই ধরে রেখেছে। আমের মৌসুমে আম খাওয়া হবেনা- এটা মানতে আমরা সবাই নারাজ। কারো কোনো তৎবিরের কাজ আছে। বসের বাড়ি আম নিয়ে যাওয়া ভাল। রসের মিষ্টির থেকে আমের সাফল্য এখানে বেশি। ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা আম তার কোন জুড়ি নেই নেই কোন তুলনা। আম খেতে দুহাত একসাথে নষ্ট হয় তাও আম খাওয়া চাই। হাবিবুল বাশার সুমন অবশ্য হাত নষ্ট করেননা। তিনি ফ্রুটো খান। সেইজন্যই তিনি বলেন ফ্রুটো- সে যে পুরা আম।
তবে যেমন যেমন আম- আমের রয়েছে দাম। মৌসুমী ফল কিনে খাওয়া তা মধ্যবিত্তের নিচে নামা মাত্রই ধরাছোয়ার বাইরে। পথে ঘাটের ছোট ছোট বাচ্চাদের আম খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় কিন্তু একটি সংগঠন। সম্পূর্ন অলাভজনক এই সংগঠনের পেছনে যারা কাজ করেন তারা প্রথম আলোর রস আলোর কিছু লোকজন (তবে রস+আলোতে কাজ করলেও রস+আলোর সঙ্গে কিন্তু এই গ্রুপের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা একটি ফেসবুক গ্রুপ। শুধু ফেসবুক ইউজারদের সাহায্যেই এই কার্যক্রম ও গ্রুপ পরিচালিত হয়)। গরীবদের দূঃখ বুঝতে হলে নিজেদের গরীব হতে হবে। বড়লোকদের পক্ষে গরীবের দুঃখ বোঝা কঠিন। কারন তাদের প্লেন গরীবের হৃদয়ে ল্যান্ড করেনা। বড়লোকদের প্লেন ল্যান্ড করে সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়াতে। তাই গরীব বাচ্চাদের আম খাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া সংগঠনের নাম আমরা খাটি গরীব- যারা নিজেদের গরীব ভাবে- কারন তারা গরীবের দূঃখ অনুভব করতে চায়। তাদের পূর্বের কার্যক্রমের কিছু ছবি আমি আপনাদের দেখাচ্ছি। আম পেয়ে বাচ্চাদের খুশির ছবি দেখাচ্ছি। ভাল কথা- আপনারা যদি চান আপনাদের সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে এবারেও গরীব বাচ্চারা আমের স্বাদ পায় তাহলে আপনি " আমরা খাটি গরীব " কে সাহায্য করতে পারেন। এটা সম্পূর্নই আপনাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা। তবে খেয়াল করে দেখুন। ছবিতে বাচ্চাদের হাসিগুলো দেখতে ভাল লাগছে। চলুন বাচ্চাদের আম খাওয়াই। ফলের রাজা- আম। জাতীয় বৃক্ষের ফল- আম।
বিস্তারিত জানার সুযোগ।