somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিরাজ শিকদারঃ বিপ্লবের কবি

১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিপ্লবের কবি সিরাজ শিকদার তাঁর একটি কবিতায় লিখেছিলেন,

"আর কয়েকটা শত্রু খতম হলেই তো গ্রামগুলো আমাদের;
জনগণ যেনো জল, গেরিলারা মাছের মতো সাঁতরায়। "

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থরক্ষাকারী পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী পুর্ববাংলার বিশ্বাসঘাতক আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া ও সামন্তবাদীদের অধিকাংশের উপর নির্ভর করে পূর্ববাংলাকে উপনিবেশে পরিণত করেছে এবং একে শোষণ ও লুন্ঠন করছে। পূর্ববাংলার সমাজ তার বিকাশের নিজস্ব নিয়মেই জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে বৈদেশিক শোষণের অবসান এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে সামন্তবাদকে উত্খাত করে পূর্ববাংলায় বুর্জোয়া বিকাশের শর্ত সৃষ্টির লক্ষ্য সামনে রেখে এগুচ্ছে।

সিরাজ শিকদার তার লক্ষ্য এমনভাবেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথাগত আন্দোলনের বাইরে গিয়ে সূচনা করেছিলেন এক নতুন ধরণের সংগ্রাম। বাংলাদেশের মুক্তির জন্য, বাংলার অসহায় মানুষের মুক্তির জন্য তিনি সংগ্রাম করে গেছেন।

সিরাজ শিকদার অধ্যায়কে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। সিরাজ শিকদারের অস্তিত্বকে মুছে ফেলা হয়েছে বাংলার ইতিহাস থেকে। কিন্তু ইতিহাস কখনো মিথ্যে বলেনা। ইতিহাস তার নিরীক্ষার মাধ্যমে সত্যটা একদিন প্রকাশ করবেই।

কি চেয়েছিলেন সিরাজ শিকদার?
১৭ ই এপ্রিল গঠিত হল মুজিবনগর সরকার, সিরাজ শিকদার নতুন গঠিত সরকারকে তাঁর অভিপ্রায় জানালেন,

"পূর্ববাংলার জনগণ ও পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন মনে করে, পূর্ববাংলার জনগণের স্বার্থের সত্যিকার প্রতিনিধিত্বকারী সরকারের নিম্নলিখিত সর্বনিম্ন সুনির্দিষ্ট নীতিসমূহ পালন করতে হবে।

*এই সরকার অবশ্যই একটি কোয়ালিশন সরকার হবে যেখানে সংগ্রামরত পূর্ববাংলার বিভিন্ন প্রকাশ্য ও গোপনে কার্যরত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি, গোষ্ঠী, ব্যক্তি, ধর্মীয়-ভাষাগত-উপজাতীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

*পূর্ববাংলার সর্বস্তরে এ সরকার স্থাপনের নিমিত্ত পূর্ববাংলার সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সংগ্রামের পরিচালনা ও নেতৃত্ব প্রদানের জন্য পারস্পরিক স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্যতার ভিত্তিতে একটি জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট স্থাপন করা; এতে সংগ্রামরত পূর্ববাংলার সকল প্রকাশ্য ও গোপনে কার্যত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি, গোষ্ঠী, ব্যক্তি, ধর্মীয়-ভাষাগত ও উপজাতীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি গ্রহণ করা।

*এ সরকার ও মুক্তিফ্রন্ট কর্তৃক পূর্ববাংলার পরিপূর্ণ মুক্তির জন্য গণযুদ্ধের পথ গ্রহণ করা ও তাতে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকা।"


মুক্তিযুদ্ধে সিরাজ শিকদারের অবদান কতটুকু তা নিয়ে কারো চিন্তা করার অবকাশ হয়নি। অনেকেই অনেক খেতাব পেয়েছেন, কিন্তু সিরাজ শিকদার দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত হলেন ইতিহাসের কাছে। সিরাজ শিকদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে তার কর্মীদের রুখে দাড়াতে বললেন।

"পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী ও তার পদলেহী কুকুর পূর্ববাংলার বিশ্বাসঘাতকরা পূর্ববাংলার অধিকাংশ জেলা, মহকুমা শহর দখল করেছে এবং সেখানে নিজেদের দখল বজায় রেখেছে। যে কয়টি জেলা বা মহকুমায় তাদের অধিকার কায়েম হয়নি তা অচিরেই তারা দখল করবে। শহরে আওয়ামী লীগ, বিদ্রোহী বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ই.পি.আর, পুলিশের প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ছে। শহরে পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী তাদের ফ্যাসিবাদী বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে এবং ভেঙ্গে যাওয়া বেসামরিক প্রশাসন পুনরায় চালু করার জন্য এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য-লুন্ঠন চালাবার চেষ্টা করছে। পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের কর্মীরা সাহসী হোন,
জাতীয় মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলুন। ইয়াহিয়া-টিক্কার ধ্বংস অনিবার্য। আমাদের বিজয় অনিবার্য।"

স্বাধীনতা এলো। সিরাজ সিকদার ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বরের শেষ দিকে চট্টগ্রামের কাছাকাছি এক এলাকা থেকে পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন। সিরাজ সিকদারকে হাতকড়া লাগিয়ে চোখ-বাঁধা অবস্থায় ঢাকাস্থ রমনা রেসকোর্সের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নিয়ে আসা হয়। তারপর ২ জানুয়ারি ১৯৭৫ গভীর রাতে এক নির্জন রাস্তায় নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন পত্রিকায় তার মৃত্যুর খবর প্রচারিত হয়। এখন যেমন ক্রসফায়ার নিয়ে খবর লেখা হয় ঠিক তেমনি লেখা হয়েছিল। ইতিহাস একদিন সত্য উদঘাটন করবে সময় সেই প্রতীক্ষায়।


১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহর সাহায্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪০



দুই মেয়ের পরীক্ষা বিধায় আমার স্ত্রীকে লক্ষ্মীপুর রেখে আসতে গিয়েছিলাম। বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট রুটে আমার স্ত্রী যাবে না বলে বেঁকে বসলো। বাধ্য হয়ে চাঁদপুর রুটে যাত্রা ঠিক করলাম। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডয়েজ ভেলে'র প্রকাশিত এই প্রামাণ্যচিত্রটি বেশ উদ্বেগজনক

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন বাহিনী থেকে প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকান্ডে যুক্ত সৈনিকদের ইউ.এন. এর পিস কিপিং মিশনে পাঠানোর বিষয়ে ইউ.এন. এর কর্মকর্তাগণ বেশ উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে ডয়েচ ভেলে ক'দিন আগেই একটি প্রামাণ্যচিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুলের চিন্তার কাবা প্রাচ্য নাকি পাশ্চাত্য?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:০৫


কাজী নজরুলের বড় বিপত্তি তিনি, না গোঁড়া ধর্মীয় লোকের কবি আর অতিমাত্রায় বামের কবি, না হোদাই প্রগতিশীলের কবি। তিনি সরাসরি মধ্যপন্থীর। অনেককেই দেখি নজরুলের কিছু কথা উল্লেখ করে বলেন কাফের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×