somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাভি মারমারা আক্রমনের একবছর পর

০২ রা জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আকাশে কয়েকটা গাঙচিল উড়ছে। রাতের অন্ধকারেও সাদা গাঙচিলগুলোকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গাঙচিলগুলোর নিচে ফানুস উড়ছে। একটার পর একটা ফানুস লাইন দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। মুক্তির প্রতীক ওই ফানুসগুলো। মুক্ত হয়ে উড়ছে। গাঙচিলগুলোও মুক্ত মনে উড়ছে। নিচে উড়ছে পতাকা। লাল, সবুজ, সাদা বিভিন্ন রংয়ের পতাকা। প্রায় সবার হাতে পতাকা। শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, পুরুষ মহিলা সকলের হাতে পতাকা। অনেকের মাথায় পট্টি। সবুজ রঙের পট্টি র উপরে বিভিন্ন ভাষায়র লেখা। সাউন্ড বক্স থেকে ঘোষনা আসছে, দয়াকরে সবাই মঞ্চের বামদিকে যান, ইসতিকলাল এভিনিউতে আরো হাজার হাজার সমর্থক ময়দানে আসার চেষ্টা করছে, তাদেরক জায়গা করেদিন। গত ৩০ মে ২০১১ তারিখ রাতে ইস্তানবুলের তাকসিম ময়দানের মিটিং এর বর্ণনা দিচ্ছিলাম। ‘স্বাধীনতা বহর‌’ এবং ‘মাভি মারমারা’ আক্রমনের বর্ষপুর্তি উপলক্ষে সমাবেষের আয়োজন করছিল তুরস্কের মানবিক ত্রান সংস্থা IHH (ই.হা.হা) প্রায় বিশ হাজার লোক উপস্থিত ছিল বলে মনে করা হয়। প্রথমে ইসতিকলাল এভিনিউর এ মাথা হতে শেষ মাথা পর্যন্ত হাতে মশাল নিয়ে র‍্যালি করে। পরে সমাবেশ।


IHH (ই.হা.হা.) আয়েজিত মাভি মারমারা অক্রমনের বর্ষপূর্তি সম্মেলন, তাকসিম ময়দান/ইস্তানবুল

তুরস্ক সম্পর্কে একটা ধারনা আছে আমাদের মাঝে। সেক্যুলার রাস্ট্র। ইসলাম এবং মুসলমানদের থেকে অনেক দূরে এরা। আসলে দূরে থেকে অনেক কিছু ধারণা করা সম্ভব। কিন্তু কাছে এসে বাস্তবটাকে দেখা যায়।

আমিও ছিলাম ওই সমাবেশে। এক বন্ধুর সাথে গিয়েছিলাম। সমাবেশ ছিল রাত সাড়ে নয়টায়। প্রথমেই একটা খটকা লাগল, এত রাতে কেন এ ধরনের একটা সমাবেশের আয়োজন করল? পড়ে বুঝলাম যে মাগরিবের নামাজের কারণে।

“অপেক্ষা কর গাজা, মাভি মারমারা আসছে”

সমাবেশে পুরুষ, মহিলা, শিুশু, যুবক, বৃদ্ধ, বোরখা পড়া, বোরখা ছাড়া, মিনি স্কার্ট পড়া সব ধরনের লোকই ছিল। প্রায় সবার হাতে ছিল ফিলিস্তিনি পতাকা। তুরস্কের পতাকা এবং আয়োজক সংস্থা IHHইçıöçö.হা.হা IHH এর পতাকাও কম ছিল না। মাঝে মাঝে দু একটা হামাসের পতাকাও ছিল। বিভিন্ন ধরনের স্লোগানের ধ্বনি রাতের নিস্তব্ধতাকে ভেদ করে মুখরিত করছিল তাকসিমের আকাশ। এত লোক হবে ভাবিনি। কিছুটা অবাকই লাগছিল। বড় একটা বাস গাড়ির উপরে মঞ্চ সাজানো হয়েছে। গাড়ির গায়ে বড় বড় করে মাভি মারমারা শহীদদের ছবি। মঞ্চ থেকে বলা হচ্ছে গেল বছরের মাভি মারমারা যাত্রীদের কোন একজন গান গাইবেন। গান শুরু হল সাথে সাথে নড়ছে পতাকা। তুর্কী ও ফিলিস্তিনি পতাকা। ছেলেদের একটি দল ফানুস উড়াচ্ছে। সাংবাদিকরা ছবি তোলায় ব্যস্ত। অনেক গুলো টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করছে। অনেককেই দেখেছি যারা পুরো পরিবার নিয়ে আসছেন। ৫-৬ বছরের শিশু হাতে পতাকা নিয়ে নাড়াচ্ছে। ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন বলে স্লোগান দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালেয়র ছাত্র-ছাত্রী, কেউ রোখা পড়া কেউ বা মিনি স্কার্ট পড়া; একত্রে স্লোগান দিচ্ছে- “আমরা সবাই ফিলিস্তিনী” “হত্যাকারী ইসরাইল, জবাব দে জবাব দে” “অপেক্ষা কর গাজা, মাভি মারমারা আসছে” “হামাসকে সালাম প্রতিরোধ চলবে” এরকম আরো অনেক স্লোগান ছিল। আসলে একটা আবেগময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। মঞ্চের পিছনে বিশাল এক ফিলিস্তিনি পতাকা উড়ছিল পত পত করে। আর ওই রাতের বাতাসও যেন এই পতাকাগুলো উড়ানোর জন্যই আসছিল।


গেল বছর ইসরাইলী সৈন্যদের আক্রমনে ত্রানবহরে মৃত তুর্কীদের ছবি বহন করছে

গেল বছর ৯ জন তুর্কী নাগরিক মারা যায়

গেল বছর অবরুদ্ধ গাজাবাসীদের সাহায্যার্থে ৬ টি জাহাজ ভর্তি ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে “স্বাধীনতা বহর” যাওয়ার সময় ইরাইলী সৈন্যরা বহরে বাধা দেয়। বহর থেকে বলা হয় যে, তারা ইসরাইলে না বরং ফিলিস্তিনে যাচ্ছে। তাছাড়া তারা তখনও আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিল। ৩১ মে ২০১০ সকালের সূর্য উঠার আগেই ফিলিস্তিনী সৈন্যরা আক্রমন চালায় মাভি মারমারা জাহাজে। ৯ জন তুর্কী নাগরিক মারা যায়। পরে জাহাজ সহ সকলকে অবরুদ্ধ করে ইসরাইলে নিয়ে যাওয়া হয়। জাহাজে প্রায় ৬০০ ত্রাণ কর্মী ছিল। যাদের মধ্যে প্রায় ৩৬ টি দেশের নাগরিক, প্রচুর সাংবাদিক, নোবেল বিজয়ী, লেখক, সংসদ সদস্য এবং বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় নেতাও ছিল। পরবর্তীতে তুরস্ক সরকারের কঠোর পদক্ষেপের ফলে ইসরাইল সকলকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু পড়ে থাকে ৯ টি লাশ আর অসংখ্য আহত লোকদের অর্তনাদ।

এবছর ১৫ টি জাহাজে ১৫ হাজার ত্রাণকর্মী যোগ দিবে


ইসরাইল থেকে ফিরে আসলে মাভি মারমারায় মানুষের ঢল
IHH ই.হা.হা এবং মুক্ত গাজা আন্দলোনের পক্ষ থেকে ঘোষনা দেয়া হয়েছে যে, “গাজার উপর থেকে আবরোধ না উঠা পর্যন্ত তারা এই সামাজিক আন্দলোন চালবে। রাফা সীমান্ত খুলে দেয়া হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, অবরোধ পুরোপুরি উঠে গেছে। তাই আগামী মাসে আবার ত্রাণ বহর পাঠাবো। আমরা এবার আরও বড় এক বহর পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই বহরে থাকবে ১৫ টি জাহাজে ১৫ হাজার ত্রাণকর্মী। IHH ই.হা.হা এর ইন্টারনেট সাইট থেকে হাজার হাজার লোক আবেদন করছে। আমরা চাচ্ছি যে, মোট দেড় মিলিয়ন মানুষ আবেদন করুক। কারণ ইসরাইgdgdgdল ঘোষণা করছে, এবারের বহরে কেউই আসবে না। আমরাও দেখাতে চাই যে এবারের বহরে দেড় মিলিয়ন লোক আসার জন্য প্রস্তুত।”

মূল লেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন
অথবা এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×