somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুমায়ুনের মায়াবী পথে

০২ রা জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুমায়ুনের পাহাড় ঘুরতে হলে যেখান থেকে শুরু করতে হয় সেটা নৈনিতাল। আমরা কোলকাতা থেকে রওনা দিয়ে প্রথমে নামলাম হলদোয়ানি। কাঠগোদামের আগের স্টেশন, কাঠগোদামের থেকে এখানেই ভাড়া গাড়ি বা বাস পাওয়া বেশি সুবিধের। আরেকটা রাস্তা লখনৌ থেকে মিটার গেজের ট্রেনে লালকুঁয়া গিয়ে সেখান থেকে নৈনিতাল। নৈনিতাল যেতে হলদোয়ানি থেকে দু ঘন্টার কিছু বেশি লাগবে, পাহাড়ি রাস্তায় এই ৩৯ কিমি যেতে তেমন কষ্ট হয় না। রাস্তা বেশ চওড়া, ভালো আর খুব পরিচ্ছন্ন। নৈনিতাল এ গিয়ে প্রথমেই মন ভরিয়ে দিল একটা মিষ্টি তিরতিরে ঠান্ডা। কোলকাতা যখন ৩৫ ডিগ্রী পেরিয়েছে, নৈনিতাল তখন ২৫ এর আশেপাশে, সন্ধ্যা, রাতে তো আরও খানিক কম। সন্ধ্যা অবশ্য গোটা কুমায়ুনেই বেশ দেরিতে নামে। সাড়ে সাতটারও পর। প্রথম দিন নৈনিতাল পৌঁছে হোটেলেই বিশ্রাম। কিন্তু সেটাও বেশ প্রীতিপ্রদ। আমরা ছিলাম হোটেলের তিনতলায়। সেখান থেকে নৈনি লেকের ভিউটা খুব চমৎকার। প্রায় সাত হাজার ফিট ওপরে এরকম বড় একটা লেক সত্যি দারুণ একটা ব্যাপার। লেকটা লম্বায় দেড় কিমি আর চওড়ায় পাঁচশো মিটার। লেকের ধারের রাস্তাটাই হার্ট অব নৈনিতাল। সার দিয়ে দোকান পাঠ আর সুন্দর সুন্দর পান্থনিবাস। রাস্তার একদিকের নাম তাল্লিতাল আর একদিকের মাল্লিতাল। মাল্লিতাল থেকে উঠে গেছে রোপওয়ে বা কেবল কার। অনেকটা ওপরে নিয়ে যাবে এই কেবল কার, সেখান থেকে দূরের বরফ মোড়া পাহাড় দেখা যায় শীতকালে গেলে। এই গরমে মেঘে ঢাকা সেই সব দূরের শৃঙ্গরা, কিন্তু তবু ওই ওপর থেকে নৈনির আর এক সুন্দর রূপ দেখে অনেকটাই মন ভরে যায়। নৈনি ছাড়াও আশেপাশে আছে আরো বেশ কিছু লেক বা তাল। যেমন ভীমতাল, খুরপাতাল। নৈনিতালের একটা উল্লেখযোগ্য জিনিস পাইন ফল আর বিশেষত মোমের তৈরি রকমারী জিনিসপত্র। বেশ সস্তায় সেসব কেনা হল পরিচিত বন্ধুজনেদের উপহার দেবার জন্য।
নৈনিতাল থেকে আমরা পাড়ি দিলাম আলমোড়া জেলার রাণীক্ষেতের দিকে। নৈনিতাল বেশ ভীড়ের জায়গা। তুলনায় সেনা রেজিমেন্ট এর শহর রাণীক্ষেত অনেকটাই ফাঁকা। উচ্চতা নৈনিতালের মতই। রাণীক্ষেতে যেটা সবচেয়ে মন টানে সেটা হল বিরাট গলফ কোর্স। আমরা হোটেল থেকে যখন গলফ কোর্স এর দিকে রওনা দিলাম ঘড়িতে তখন সাড়ে পাঁচটা বেজেছে, কিন্তু বেশ তীব্র রোদ। দীর্ঘক্ষণ গলফ কোর্স এ ঘোরাঘুরি হল। সেনাবাহিনির অফিসাররা তখন চুটিয়ে গলফ খেলছেন। বল এসে আঘাত করতে পারে, বারবার আসা এই সতর্কতা উপেক্ষা করেই আমরাও চুটিয়ে সবুজ মখমলকে উপভোগ করেই চললাম একমনে। রাণীক্ষেতের চৌবাতিয়া উদ্যান আরেকটা উপভোগের জায়গা। কত নাম না জানা গাছ আর ফুলের যে সমারোহ পাহাড়ের গা কেটে কেটে তৈরি সেই বিশাল প্রাকৃতিক উদ্যানে। রাণীক্ষেতে কেনাকাটির জন্য আছে নানা রকমের শাল। বাজারে পাওয়া যায়, তবে সেখানে নাকি ঠকার আশঙ্কা। ভালো হয় সেনা পরিচালিত কমিউনিটি সেন্টার থেকে কেনাকাটি করলে।
আমাদের একটা আশা তখনো মেটেনি। সাদা বরফের টোপর পরা শৃঙ্গ তো চোখে পড়ল না। মেঘে ঢেকে আছে তারা। এ আপশোষ ভুলিয়ে দিল কৌশানি। রাণীক্ষেত থেকে উপত্যকা পেরিয়ে আবার পাহাড় চড়ে কৌশানি। উচ্চতা নৈনিতাল বা রাণীক্ষেতের মতই ৭০০০ ফিটের কাছাকাছি। কিন্তু হিমালয়ের সু উচ্চ শৃঙ্গরাজি দু চোখ ভরে দেখার এত ভালো ব্যালকনি আর হয় না। এখানে হোটেলের ঘর থেকেই দেখা মিলল দূরের নন্দাদেবীদের। বরফে ঢেকে থাকা এই পাহাড়চূড়োদের আর ভালভাবে দেখতে গেলে অবশ্য আসতে হবে শীতকালে। কৌশানিতে আলাদাভাবে দেখার কিছু নেই। চোখ মেলে চারিদিকে তাকিয়ে থাকাটাই কাজ। প্রকৃতি এত সুন্দর আর এত নির্জন যে তন্ময়তা অজান্তেই নেমে আসে। অনেকেরই জানা নেই রাতের আকাশ ভালোভাবে দেখার একটা চমৎকার জায়গা কৌশানি। টেলিস্কোপের সাহায্যে রাতের আকাশের গ্রহ তারা পরিষ্কার দেখা কৌশানি ভ্রমণের একটা অতিরিক্ত পাওনা। কৌশানি হিন্দি কবি সুমিত্রানন্দন পন্থ এর আবাসভূমি। আর এখানে অল্প কিছুদিন কাটিয়ে ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। লিখেছিলেন গীতার অনাসক্তি যোগের ভাষ্য। গান্ধীবাসের সেই স্মৃতিমাখা অনাসক্তি যোগ আশ্রম এখন গান্ধী সংগ্রহশালা। রয়েছে গান্ধীজীর জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছবি। সংগ্রহ করা যায় তাঁর লেখা বই। হিন্দি ইংরাজী তো বটেই, এমনকী বাংলা ভাষাতেও।
ভালো হত কৌশানি থেকে চৌকরি হয়ে যদি মুন্সিয়ারী যাওয়া যেত। ইচ্ছাও ছিল, কিন্তু সেটা এবার আর হোল না। দেখা যাক, আবার কবে সুযোগ মেলে। আপাতত কৌশানি থেকেই কাঠগোদাম হয়ে কোলকাতায় ফিরতে হল।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১১ রাত ৯:৫৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দিশ হারা

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২

তোয়াত্তন আ`‌রে কেন লা‌গে?
গম লা‌গে না হম লা‌গে?
রাই‌ক্কো আ‌রে হোন ভা‌গে
ফেট ফু‌রে না রাগ জা‌গে?

তোয়া‌রে আত্তন গম লা‌গে
ছটফড়াই আর ডর জাগে
ছেত গরি হইলজা ফাড়ি
হইবানি হোন মর আগে।

হোন হতার হোন ইশারা
ন'বুঝি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

খাদ্য পন্যের মান নিয়ন্ত্রন

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১২

মশলা প্রস্তুতকারী কিছু ভারতীয় সংস্থার মশলায় ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান পাওয়া গিয়েছে।সম্প্রতি এমনই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘সেন্টার ফর ফুড সেফটি’। সংস্থা জানিয়েছে, ভারতীয় বাজারে জনপ্রিয় বেশ কিছু সংস্থার মশলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×