somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিটোলের জন্য ভালোবাসা আর আমার আকাশে হাঁটার গল্প

০২ রা জুন, ২০১১ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিটোলের সাথে আমার প্রথম দেখা সিদ্ধেশ্বরীতে মনোয়ারা হসপিটালের সামনে। পাশেই আমিনাবাদ হাউজিং-এ ছিল ওদের বাসা। আমি চিনতে পারছিলাম না। তাই আমাকে নিতে আসছে। সন্ধ্যার সেই আবছা অন্ধকারেও নিটোলের কিশোরমুখ দেখে আমার মধ্যে একটা আনন্দের অনুভূতি হয়েছিল- অনেক সুন্দর কিছু দেখার পর যেমন হয়। আগে আর পরে কখনো আমি ওর চেয়ে সুন্দর, নিষ্পাপ মুখের কাউকে দেখিনি

নিটোল আমার ছাত্র, খুব প্রিয় ছাত্রদের একজন। ছাত্র হিসেবে বেশ ভালো ছিল। প্রথমদিন ও আমাকে বলে- "ভাইয়া, আমি কিন্তু খুব গাধা-গরু টাইপ স্টুডেন্ট! শুধু বয়সের দোষে নটরডেমে পড়তেছি। সার্টিফিকেটে আসল বয়স দিয়ে ফেলছি তো! বকা-ঝকা না দিলে আমার থেকে কখনো পড়া আদায় করতে পারবেন না। " আমার মাথা খারাপ আর কী! এত সুন্দর, এত ভাল ছেলেকে বকা-ঝকা করা যায়? নিটোলকে পড়ানো আমার জীবনের অন্যতম আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। পড়ার বাইরে, সিলেবাসের বাইরে চলে যেতাম সবসময়। বিশেষ করে, বিন্যাস-সমাবেশ পড়ানোর সময়। বইয়ের বাইরে কত কী! ওর সাথে আমি আইনস্টাইনের জেব্রা পাজল সলভ করতাম, কিংবা অয়লারের সেভেন ব্রীজ প্রোবলেম। ফার্মার লাস্ট থিওরেমের কথা বললে ও চোখ বড় করে ফেলতো। আমি চেষ্টা করতাম আমার সব স্বপ্ন ওর মধ্যে বুনে দিতে।

নিটোলের অনেক অদ্ভুত আবদার আমাকে মেটাতে হত। ওর জন্য আইপড ভর্তি করে গান নিয়ে যেতে হত। আর অনেক অনেক বই। তবে আমাকেও যে কম দিয়েছে তা না। আমি খুব একটা মুভি দেখতাম না। ও আমাকে জোর করে অনেক মুভির ডিভিডি দিত। আমার প্রতি ওর ভালোবাসা, শ্রদ্ধাটা আমি বেশ উপভোগ করতাম।

সে সময় নিটোল ভাল বেস গিটার বাজাত। নতুন কোন গান তুললে আমাকে বেশ আগ্রহ নিয়ে শোনাত। আমি বুঝতাম না- তাও সে আমাকে গিটারের কর্ড বোঝাত।

নিটোলের বুয়েট এডমিশান টেস্টের দু'মাস আগে আমি চিটাগাং চলে আসি। ও আমাকে অনেক অনুরোধ করছিল অন্তত এডমিশন টেস্ট পর্যন্ত থেকে যেতে। কিন্তু থাকিনি। আসলে তখন ঢাকা থেকে অনেক কারণে আমার মন উঠে গিয়েছিল। চিটাগাং-এ যাওয়ার পরও বেশ ভালোই যোগাযোগ ছিল। প্রায় প্রতিদিনই ফোনে কথা হত। ভাইয়া, এই ম্যাথটা বুঝতেছিনা- এই ফর্মূলা তো আগে দেখিনি-ইন্টিগ্রেশন কিছুই পারতেছিনা- ভাইয়া, ঢাকা চলে আসেন-হায় হায়, এটা এভাবে করতে হবে! দেখছেন,আপনি চলে যাওয়ার পর আমি কী গাধা হয়ে গেছি!

আমার নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল নিটোল বুয়েটেই পড়বে। সম্ভবত বুয়েট এডমিশান টেস্টের সপ্তাহখানিক আগে টেক্সটাইলের পরীক্ষা হয়েছিল। ঐ পরীক্ষা দিয়ে বের হয়েই নিটোল আমাকে ফোন করে সে কী কান্না! আমার ভীষণ মায়া হয়। নিটোল, আমি তো জানি তোমাকে দিয়ে কি হবে। নেক্সট উইকের জন্য প্রেপারেশন নাও। নিটোলে যে বুয়েটে টিকলোনা আমার কাছে তা ছিল খুব আশ্চর্যের আর হতাশার ঘটনা। পরে নিটোল খুলনার কুয়েটে মেকানিক্যাল এ ভর্তি হয়। ওর মা চাচ্ছিল না ওকে ঢাকার বাইরে পাঠাতে। নি্টোলের বাবা ব্যাংকার। ওকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারতেন। নিটোল রাজি ছিল না।

এরপর যেমন হয়-ধীরে ধীরে যার যার ব্যস্ততায় যোগাযোগটা একটু কমে আসে। ফেইসবুকে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হত। তখনই জানতে পারলাম ওর ছবি তোলার শখ। আমি খুব উৎসাহ দিতাম। মাঝে মধ্যে ফেইসবুকে কিছু ছবি শেয়ার করত। দেখতাম, ভাবতাম- ভালই তো ছবি তুলছে ছেলেটা। কিন্তু কখনো প্রশংসা করা হত না। গতকাল ছিল নিটোলের জন্মদিন। ওর ফেইসবুক ওয়ালে কিছু লিখতে গিয়ে ফ্লিকারে শেয়ার করা কিছু ছবি দেখতে গেলাম। ছবি দেখে আমি হতভম্ব, হতবাক। এত ভাল ছবি! এত সুন্দর ছবি! এত অসাধারণ! আমার ভাষার দীনতায় আমি আমার মুগ্ধতা প্রকাশ করতে পারছিনা। ছবিগুলো দেখার পর আমি বুঝতে পারি নিটোল খুব বড় মাপের ফটোগ্রাফার হবে। আমার যে কী ভালো লাগে। ফেইসবুকে একটা মেসেজ পাঠালাম। তারপর ফোন করলাম- অনেক অনেক দিন পর। ওর আনন্দটা, ওর উচ্চ্বাস আমি টের পাই। শুনলাম কিছুদিন পর লন্ডনে একটা এক্সিবিশানে ওর সতেরোটা ছবি যাবে। সেই ছবি তুলতে ও কুমিল্লায় গিয়েছিল। সেখান থেকে মাত্রই ঢাকায় ফিরল। গেল মাসে ঢাকাতেও একটা এক্সিবিশন হল।

ওর সাথে ফোনে কথা হওয়ার পর আমার কি যে ভাল লাগল। এক সময় এই ছেলেটা আমার ছাত্র ছিল- এইটা ভেবে নিজের মধ্যে একটা অহংকার অনুভব করি। নিজেকে আমার মনে হয় দশ ফুট উচ্চতার একটা মানুষ। আমার মনে হয় আমি যেন আকাশে হাঁটছি।

আজ সকালে দেখি নিটোল ফেইসবুকে দুইটা ইউটিউব লিঙ্ক পাঠাল। ওদের দুটো গান। বিশেষ করে 'দহন' গানটার লিরিক, কম্পোজিশন, পারফরম্যান্স সবই অসাধারণ। এই গানে চশমা পড়া বাম পাশের ছেলেটা নিটোল। আর অন্য গানটা আমাদের সবসময়ের প্রিয় জন ডেনভারের 'অ্যানিস সং' এর কাভার। দুইটা গানই খুব ভাল লেগেছে। তাই এখানে শেয়ার করলাম।

দহন-

অ্যানিস সং-

নিটোল, তুমি আরো বড় হও। আমি আরো অনেক কাল আকাশে হাঁটতে চাই।

[ সকালে এই পোষ্ট একবার করছিলাম,। অনেক বেশি ভুল ছিল। তাই আবার নতুন করে পোষ্ট দিলাম। ]
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×