বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির ধরণ পাল্টে গেছে । দল ক্ষমতায় থাকলে দলের সহযোগী ছাত্রসংগঠন বেপরোয়া হয়ে উঠে নিজেদের আধিপত্য জানান দেয়ার জন্য। নিজ দলে গ্রুপিং, সাব গ্রুপিংএ দ্বিধাবিভক্ত ছাত্রসংগঠনগুলো। আক্রমন পাল্টা আক্রমনে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সংখ্যাও কম না। প্রত্যেকটি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর সরকারের উপর মহল বেশ নড়ে চড়ে বসে। তদন্ত কমিটি গঠিত হয় কিন্তু তারপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায় তদন্ত সত্যের আলোয় আলোকিত হয়না, অপরাধীর শাস্তি হয়না। তদন্ত কমিটি গঠনও প্রশাসনের প্রহসনই বলা চলে। রাষ্ট্রযন্ত্রের এ এক নিষ্ঠুরতম অভিঘাত। ছাত্র রাজনীতির যে জৌলুস ছিল তা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। এখন রাজনীতি মানেই দলবাজি। ছাত্র দিয়ে ছাত্র হত্যা। নেতাদের টেন্ডার ছিনতাইয়ের কাজটিও করতে হচ্ছে ছাত্রনেতাদের। পেশি শক্তি কলমের শক্তিকে গিলে খেয়েছে। মূল দল ছাত্রসংগঠনের উপর নির্ভরশীল, তারুন্যের শক্তিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শক্তিতে পরিণত করতে হচ্ছে রাজপথকে রক্তে ভিজানোর জন্য। কারণ তরুনরা মরতে পারে সামান্য বিষয়ে। মৃত্যু তাদের কাছে পরাজিত । তাই রাজনীতির হাওয়ায় ক্ষমতার স্বাদে তাদের পেশি ফুলে ফেপে মোটা হতে সময় লাগেনা। আজকাল রাজনীতিতে মেধা লাগেনা, লাগে লাঠি। লাঠিসর্বস্ব রাজনীতিতে রাজনীতিবিদরা উপেক্ষিত। লাঠিয়ালরাই আজ নেতা। লাঠির কসরত যোগাতে বিপুল পরিমানে অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। কি অ™ভুত দেশ, সরকার পরিবর্তন হলেই ইউভার্সিটিতে ছাত্র দিয়ে ছাত্র মারা হচ্ছে। চর দখলের মতো হল দখলের ফুটেজ নিজেদেরকে সভ্যতা থেকে ছিটকে দিচ্ছে। জাতির সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এ কি কান্ড। বাবা মা’র সে কি উদ্বেগ, সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে বাবা মা’র ঘুম হারাম হয়ে গেছে । প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মারামারির খবর স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে পৌছে গেছে অজপাড়াগায়ে। ক্ষমতার পালাক্রমে নেকড়ে সিংহ হয়ে উঠছে। দুদিন আগেও যে ছেলেটি মাথা নিচু করে ডিপার্টমেন্টে যেত, সে কিনা আজ নেতা। আপন পর চিনেনা। বন্ধু বান্ধবদেরকে শাসাতে তার বুক কাপেনা। ডিপার্টমেন্টে তার সময় মতো পরিক্ষার সময়সূচী ঠিক করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ছাত্রনেতাদের তোয়াজ করে। ভিসি প্রোভিসি রাজকীয় ভোজসভায় ছাত্রনেতাদের সাথে মিলিত হচ্ছে। অশান্তি সৃষ্টি করা এই দুষ্টচক্রের হাতেই ক্যাম্পাসের শান্তি শৃঙখলার দায়িত্ব বর্তাচ্ছে। ভিসি মহোদয়ও এই পেশি শক্তির উপর কতোটা নির্ভরশীল তা কল্পনাশক্তির বাইরে। রাজনীতি পরিমাপের কোন যন্ত্র নেই, থাকলে দেখা যেত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের কাছে কতোটা অসহায়। মšী¿ থেকে শুরু করে সবায় ঠিক কেন জানি অপদার্থ ছাত্রনেতাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। পত্রিকার হিসাবন্তে গেলো দুই বছরে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের দৌরাতœ পাগলা ঘোড়ার গতিকে হার মানিয়েছে। অতচ ছাত্রলীগের ইতিহাসের সাথে বাঙালি জাতির ইতিহাস বিজড়িত। গেলো দু’বছরে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের সাথে মারামারিতে মারা গেছে আট ছাত্র। ১৩ মার্চ ২০০৯, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে নিহত হয় শিবির নেতা শরিফুজ্জামান নোমানী । ৩১ মার্চ ২০০৯, ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দেলে মারা গেছেন রাজিব। ১ ফেব্রুয়ারী ২০১০, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন মেধাবী ছাত্র আবু বকর। ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১০, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক। ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১০, চট্রগ্রামের ষোলশহরে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী মহিউদ্দীন। ২৯ মার্চ ২০১০, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হারুন অর রশিদের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৬এপ্রিল, ২০১০, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামান প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আহত হন এবং পরদিন মারা যান। ১৫ আগষ্ট, ২০১০, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত হন নাসিম, পরে মারা যান। ( সূত্র: প্রথম আলো’ ২৮মে, ২০১১)। এই যে হত্যা, এই হত্যার পিছনে মূল নিয়ামক কি? নিশ্চয়ই আধিপত্য বিস্তার আর আধিপত্যের সাথে অর্থের প্রত্যক্ষ যোগসাজশ রয়েছে। আর অর্থ মানেই অবৈধ উপায়ে রোজগার কারণ ছাত্রাবস্থায় কোটি টাকার হাতছানি যাদের পেয়ে বসে তাদের মাথাতো গরম থাকবেই। তাই নিজ দলই কি, অন্য দলই কি? যাদেরকেই বাধা বলে মনে হবে তাদের বিরুদ্ধে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় খুন খারাপি মারা মারি কাটা কাটিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। এতো সবের পরও সরকার খুব একটা কঠোর অবস্থা গ্রহণ করতে পারেনা কারণ যারা এসব ঘটনার মদদ দাতা তাদের আশ্রয় থাকা ক্রিমিনালদের রক্ষায় তারা সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে। তাই রাষ্ট্র যন্ত্র বিকল! প্রতিবারই সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রক্তের বণ্যা বয়ে যায়। কতোজনের জীবন যে রাজনীতির অপঘাতে ঝরে পড়ার অপেক্ষায় থাকে ! দৃশ্যত বড়ো দলগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন খেলায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ছাত্রনেতার তোকমা যে ও কতো কাজে লাগে, তাওতো ফেলে দেয়ার নয়। সরকারদলীয় ছাত্রনেতাদের বাড়ি গাড়ি করতে সময় লাগেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক চাইলে বছরখানেকের মধ্যে কোটিপতি বনে যেতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যতো উন্নয়নমূলক কাজ হয় তার বখরা নেতাদের কাছে চলে যায়, চাইতে হয়না। কন্ট্রাকদের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে নেতাদের সুনজর থাকা চাই। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’চারটা গাড়ি নেতাদের জন্য প্রশাসন এমনিতেই বরাদ্দ রাখেন। যখন যার খুশি নিজের মনে করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন কাউকে কৈফিয়ত দিতে হয়না। এ যেন স্বর্গরাজ্য। এমন স্বর্গে পড়ালেখার কি প্রয়োজন? ছাত্রত্ব ধরে রাখতে পারলেই হলো। পাচ বছরে সারা জীবনের কামাই করে নিতে পারে। বাবার বয়সী লোকদেরকে এখনো বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেত্রত্বে দেখা যায়। লজ্জা হয় সাধারণের কিন্তু নেতাদের ঐ জিনিস থাকতে নেই।
ছাত্ররাজনীতি : হত্যা, টন্ডোর আর দখলবাজইি মূল নয়ািমক
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন
সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নিছক স্বপ্ন=
©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন
একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?
টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহককেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।
০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?
ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?
বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন