একবার ছোটবেলায় মামাতো ভাইবোন,খালাতভাইবোন সবাই মিলে গ্রামে নানার বাড়িতে বেড়াতে গেলাম।আমাদের নানার বাড়িটা মোটামুটি বড়।সামনে বারান্দা তারপর লম্বা করিডোর হয়ে বাড়ির অন্যান্য ঘরগুলো।সামনের উঠানজুড়ে বড় বড় গাছ।এক সন্ধ্যায়, ইলেক্ট্রিসিটি নাই,অন্ধকার,মোমবাতির আলোয় আমি,আমার বড় বোন তিশা,ছোট ভাই সাকিব ,মামাত বোন লোপা,খালাত ভাই সারজিল সব ছোটরা মিলে সামনের বারান্দার সাথে লাগানো ঘরে বসে আছি আর পুরানো ভুতের গল্পগুলা শেয়ার করছি।হটাৎ দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি সাদা কি একটা যেন দারিয়ে আছে,প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না,ভালভাবে তাকিয়ে দেখি ঠিকই আছে,একটা ভুত দাড়িয়ে আছে দরজায়!!,ভয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো,প্রথমে ভাবলাম আমি বোধহয় একাই দেখছি,পরে দেখলাম আমার কাজিনরা ভূত ভূত করতে করতে ঘর থেকে পড়িমরি বের হয়ে যাচ্ছে,আমিও কোনমতে জান হাতে নিয়ে ছুটলাম।তারপর সবাই হাঁপাতে হাঁপাতে আম্মু আর নানুর কাছে গিয়ে কমপ্লেইন করতে লাগলাম যে আমরা ভুত দেখেছি আর খেয়াল করলাম আমার মামাতবোন লোপা ওই রুমে আটকা পড়ে আছে , বের হতে পারেনি।বড়রা স্বাভাবিকভাবে আমাদের কথা বিশ্বাস করল না।কিন্তু আমরা জোর দিয়ে বলতে লাগলাম আমরা ভুত দেখেছি আর লোপা ওই রুমে রয়ে গেছে।যাইহোক লোপাকে উদ্ধার করার জন্য সবাইমিলে আবার ওই রুমটাতে গেলাম,গিয়ে দেখি ও বসে বসে কাঁদছে।আমরা ওকে নানা প্রশ্ন করতে লাগলাম,কিন্তু একটা প্রশ্নেরও জবাব ও দিচ্ছে না।ওকে রেখে সবাই চলে যাওয়াতে আর ও বের হতে না পারায় অপমানে চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে।নানু আমাদের বোঝাতে লাগলেন আমরা ভুল দেখেছি ,ভূতবলতে আসলে কিছু নাই।কিন্তু আমরা যেহেতু সবাই একসাথে দেখেছি সুতারাং ভুল হতে পারে না।অতঃপর আম্মু বললেন যে তারা আশেপাশে থাকছেন আবার যদি কিছু দেখি তো তাদের যেন ডাকি।তারপর আবার ওই রুমতাতে গিয়ে বসলাম,খুব ভয় লাগতেছিল আর বারবার দরজার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছিলাম।সাকিব আর সারজিল বলা শুরু করল এইবার যদি ভুত টা আসে তাহলে আর ভয় পাব না ধরে ফেলব।কিছুক্ষণ পর ভূতটা আবার এসে দরজায় দাঁড়ালো,সাকিব আর সারজিল কিছু বিঝার আগে দেখি ভুতটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে,আর ঠিক তখনই দেখলাম ইলেক্ট্রিসিটি চলে এসেছে,অবাক হয়ে দেখলাম ভুত তা আর কেউ না ছোট মামা,সারা মুখে লোশান্ এর ফোম মেখে আর গায়ে সাদা চাঁদর পরে আমাদেরকে ভয় দেখাতে এসেছেন,ছোটমামাকে ভূতের গল্প বলার জন্য খুব জ্বালাতাম এজন্য মজা দিতে এই কাণ্ড টা করেছেন,আমরা যে খুব ভয় পাব বুঝেন নাই যদিও শেষে নানু এসে এইসব দেখে ছোটমামার পিঠে হাঁসতে হাঁসতে লাগিয়ে দিয়েছিলেন ধুমধাম কয়েকটা কিল।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৯