somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৃষ্টি সুখের সকল গরব

২৮ শে মে, ২০১১ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৌদি আরবে চাকরি নিয়ে এসে সবাই একরকম আরবি শিখে ফেলে দ্রুত আর দেশে চিঠি দেয়। ‘আব্বাজান, শুনিয়া খুশি হইবেন, আপনাদের দোয়ায় অতি শীঘ্র এই ভাষা রপ্ত করিয়া ফেলিতেছি’। শিখাটা অনেকটা এইরকম।

সবার আগে শিখে সৌদি কায়দায় সালাম দেয়া। দেশে স্লামালেকুম লম্বা একটি শব্দ কিন্তু ঝটপট, লঘুস্বরে বলার চল, কোথায় যেন একটু কৃপণতা। সৌদি আরবে তার বিপরীত। শব্দটা ‘ছালামালেক’, বলতে হয় টেনে টেনে ‘ছা লা মা লে ক’, উচ্চস্বরে, পরাণ খুলে। লিফটে ঢুকতে ঢুকতে ‘ছা লা মা লে ক’ বললে দেখা যায় লিফটের তাবত চড়নদার, পরিচিত কি অপরিচিত, আলেকুমছালাম বলছে এমন উচ্চকণ্ঠে যে মনে হবে সবাই কতদিনকার জানাশোনা।

এর পর একটা প্রশ্ন বুঝতে শিখতে হয়। প্রশ্নটা ‘এশ্ ইছমাক’ অর্থাৎ নাম কি তোমার। ব্যস, আরবি শেখার প্রথম পাঠ শেষ। এবার প্রয়োগের পালা। নতুন কারো সাথে দেখা হোল। ছালাম বিনিময়ের পর প্রথম প্রশ্নটা হবেই হবে, ‘এশ্ ইছমাক’ আর পিতৃপ্রদত্ত নামটি কার না জানা।

পরের প্রশ্নটা হতেই হবে, ‘কিফ্ হালাক’, অর্থাৎ তোমার হাল কেমন, মানে কেমন আছ? উত্তর ঝটপট, আলহামদুলিল্লাহ। পরবর্তী প্রশ্ন নিশ্চিত হবে, ‘কিফ আছ-ছাহা’, স্বাস্থ্য কেমন, ফের উত্তর, আলহামদুলিল্লাহ। পরবর্তীতে ওপক্ষের যতগুলো কথা প্রশ্নবোধক মনে হবে, কেবল উত্তর করলেই চলবে আলহামদুলিল্লাহ। কেননা পরিচয়ের প্রথম পর্যায়ে এদের প্রশ্নগুলো হয় একই ফরমেটে। শুধাবে, পরিবার ভাল আছে কিনা, বাচ্চারা ভাল আছেতো। সকালে হলে বলবে নাস্তা খেয়েছ, দুপুরে দেখা হলে জানতে চাইবে লাঞ্চ ‘খাইলা’ কিনা। আর সব কিছুর সহজ সঠিক জবাব হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। যার অর্থ হাঁ বোধক নির্দেশ করে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

বাচ্চার প্রসঙ্গটা একটা অভিজ্ঞতার কথা মনে করিয়ে দিল। তখন সবেমাত্র বিয়ে করেছি। লজ্জা লজ্জা ভাবটা পুরোপুরি কাটেনি। ইতিমধ্যে বউও নিয়ে গিয়েছি জেদ্দায়। একটা মিষ্টির দোকানে ঢুকেছি অফিস থেকে ফেরার পথে । পাকিস্তানি ম্যানেজার কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, বিয়ে করেছো। বললাম, হ্যাঁ। আবার জিগালেন, ‘বাচ্চা বানায়া’? অর্থটা বাংলাতেও এতো স্পষ্ট যে ‘নন্..না’ বলে চট জলদি পালিয়ে বাঁচলাম।

সেই মূহুর্তে লজ্জা পেলেও পরে ধীরে সুস্হে ভাবতে ভাবতে অনুভব করলাম কত প্রচণ্ড শক্তিমত্তা এই ‘বানায়া’ শব্দের মাঝে লুকিয়ে। বানানোর চেয়ে শুদ্ধতম শব্দ আর কি হতে পারে এই প্রক্রিয়ার? কিছুতেই নতুন বউয়ের সাথে শেয়ার করতে পারছিলাম না ব্যাপারটা। ওই যে বললাম লজ্জা লজ্জা ভাবটা থেকে গিয়েছিল তখনও।

পরদিন যেতে হলো জার্মানিতে এক সন্মেলনে যোগ দিতে। রাতে ভিসবাডেন (Wiesbaden) শহরের এক হোটেলে বিছানায় এপাশ ওপাশ করি, মাথা থেকে বাচ্চা বানানোর বিষয়টা মাইনাস করা যাচ্ছিলো না কিছুতেই। টেবিলে বসে কলম কাগজ নিয়ে বসতেই আমি নই, কে যেন আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিল কবিতার কয়েকটি পঙতি।

‘ভাবতে বুকে কি শিহরণ, তোমায় বলি কেমন করে,
এই শিশুটি তোমার আমার মিলন-গাঁথা রাখবে ধরে।
ভাবছি যখন সেইটি শুধু তোমার আমার দুয়ের গড়া,
সৃষ্টি সুখের সকল গরব আমার মনে পড়ছে ধরা।‘

তারপর কবিতাটার শানে নজুল হিসেবে মিষ্টির দোকানের কাহিনীটা লিপিবদ্ধ করলাম। রিসেপশনে গিয়ে একটা ফ্যাক্স নাম্বার দিয়ে বললাম, জরুরী, এক্ষুণি দিনতো পাঠিয়ে সৌদি আরবে। রূমে এসেই নিশ্চিন্তের ঘুমে হারিয়ে গেলাম। যেন আমার কোন সমস্যাই ছিলো না।

সকালে ঘুম ভেংগে পাশ ফিরতেই দেখি, টেলিফোনের লাল বোতামটা জ্বলছে আর নিভছে। তার মানে আমার জন্যে মেসেজ রয়েছে। রিসেপশনে যেতে হলো আবারো। ‘গুটেন মরগেন’ অর্থাৎ সু্প্রভাত জানিয়ে চ্যাংড়া জার্মান লোকটা একপাতা ফ্যাক্স তুলে দিলো আমার হাতে। কম্পিত হস্তে দেখি, আমার লেখাটাই ফেরত পাঠিয়েছে বউ। নীচে দুটো লাইন যোগ করা।

‘তোমাকে বলবো বলবো করেও বলতে পারিনি। তাই লিখেই জানালাম। আমরা মনে হয় বাচ্চা বানাতে শুরু করেছি।‘
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১১ দুপুর ১২:১৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×