somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানস সরোবর,কৈলাশ পর্বত ও রাক্ষস তাল হ্রদ।

২৪ শে মে, ২০১১ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরোবরের সামনের গুম্ফা থেকে।

ছেলেবেলায় আমরা পড়তাম ব্রহ্মপুত্র নদী মানস সরোবর হতে উতপন্ন হয়ে আসাম,মেঘালয় হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।তখন দারুন রোমাঞ্চ অনুভব করতাম,বলে কি এত দেশ ঘুরে এটি আমাদের দেশে এসেছে,না জানি কত অজানা প্রানি ও উদ্ভিদ এর জলে ভেসে এসেছে।তাই ইন্টারনেটের কল্যানে এ সম্পর্কে পড়ে একটি ছোট ব্লগ দিলাম,সাথে কৈলাশ পর্বত ও রাক্ষস তাল হ্রদ সম্পর্কেও কিছু তথ্য দিলাম, কারন এরা সবাই কাছাকাছি অঞ্চলে অবস্থিত।

মানস সরোবর স্বায়ত্তশাসিত তিব্বতের রাজধানী লাসা হতে ৮০০ কিঃমিঃ দক্ষিন-পশ্চিমে অবস্থিত।সাহিত্যের ভাষায় মানস সরোবর মানে হলো মনের সরোবর বা হ্রদ।হিন্দুদের মতে দেবতা ব্রহ্মা তার মন থেকে এটি তৈরী করেন।এ হ্রদের পশ্চিমে হলো রাক্ষসতাল হ্রদ ও উত্তরে কৈলাশ পর্বতশ্রেনী।কৈলাশের উচ্চ পর্বতমালা থেকে প্রবাহিত জলপ্রবাহই মানস সরোবরে এসে পৌছায়।

পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও প্রেরণাসঞ্চারী হ্রদ মানস সরোবর। এটি পৃথিবীর উচ্চতম মিঠাপানির হ্রদও। চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বতের কৈলাশ পর্বতের দক্ষিণে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ৫৫৬ মিটার উঁচুতে এটি অবস্থিত। ৩২০ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এ হৃদের গভীরতা প্রায় ৯০ মিটার। তুলনামূলকভাবে হ্রদটি গোলকার। এর বৃত্তের পরিধি প্রায় ৮৮ কিলোমিটার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য মানস সরোবর বিখ্যাত।আমি শুনেছি এই হ্রদে নাকি একপ্রকার পদ্মফুল ফোঁটে।

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় মানস সরোবর অপরূপ সৌন্দর্যময় হয়ে ওঠে। সূর্যাস্তকালে হ্রদের তীরবর্তী কৈলাশ পর্বতের সমস্ত উত্তর এলাকা হঠাৎ যেন অগি্নময় অঞ্চলে রূপ নেয় ।শুধু এটি দেখার জন্য একজন পর্যটক সারাজীবন স্রস্টার কাছে ঋনী থাকবে। পূর্ণিমা রাতেও হ্রদ এলাকা অবর্ণনীয় ও অতুলনীয় চিত্রময় হয়ে ওঠে পর্যটকের কাছে।
শীতকালে মানস সরোবরের পানি জমে এক বিরাট বরফখণ্ডে পরিণত হয়। বসন্তকালে বরফগলে মানস সরোবর আবার স্বচ্ছ নীল জলের হ্রদে পরিনত হয়। এ দুই ঋতুতেই পর্যটকরা এখানে এসে জাঁকালো ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা লাভ করে। একটি বিশাল নীলাভ সবুজ পান্নার মতো দেখতে হ্রদটি রাজকীয়ভাবে শান্ত ও গম্ভীর। পৃথিবীর যে কোনো নদী বা তুষারময় হ্রদের পানির চেয়ে মানস সরোবরের পানি সুস্বাদু। ব্রহ্মপুত্র নদ এ সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়ে তিব্বত ও আসাম হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
মানস সরোবর প্রসিদ্ধ একটি তীর্থস্থান। তিব্বত ও প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অনেক ধর্মপরায়ণ মানুষ এখানে পুণ্যস্নান করতে আসে। বিশেষ করে ভারত থেকে নিয়মিতভাবে তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত 'কৈলাশ মানস সরোবর যাত্রা' সবচেয়ে জনপ্রিয়। যেসব মানুষ এ হ্রদে ডুব দিয়েছেন তাদের অধিকাংশই নাকি সম্মোহনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। হিন্দু পুরাণমতে, হ্রদটি প্রথমে স্রষ্টার মনে জন্মেছিল। এ কারণে সংস্কৃতে মানস সরোবর বলা হয়। মানস মানে মন, সরোবর অর্থ হ্রদ। হিন্দু পুরাণে এটাও মনে করা হয় যে হ্রদটি রাজহাঁস বা মুরালের গ্রীষ্ম আবাস। এ হাঁসকে হিন্দুরা খুব জ্ঞানী, পবিত্র ও পূজনীয় বিবেচনা করে।
হ্রদের তীরে তীর্থযাত্রীদের জন্য রয়েছে অবকাশযাপন শিবির বা মঠ, চমৎকার পর্বতগুহা ও সুন্দর দর্শনীয় বস্তু। মঠগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রাচীন চিউ গোমপা মঠ। পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত এ মঠ দেখলে মনে হয় যেন পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে।
মানস সরোবরের আবহাওয়া সব সময় অনিশ্চিত। হয়ত এখন কাঠফাটা রোদ উঠছে। পরমুহূর্তে দেখা যাবে শিলাবৃষ্টি ও তুষারপাত শুরু হয়েছে। আবার কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে মাথার ওপর পরিষ্কার নীল আকাশ ও ঝলমলে রোধ এবং ভূপৃষ্ঠে মুক্তোর মতো শিলাবৃষ্টি ও শুভ্র তুষারের বিছানা।
এবার কৈলাশ পর্বত সম্পর্কে বলি,এটি তিব্বতে হিমালয়েরই একটি অংশ।এটির গুরুত্ব এশিয়ায় এজন্য যে এশিয়ার দীর্ঘতম সব নদীগুলো এখান থেকে নির্গত হয়ে সমগ্র দক্ষিন-পূর্ব এশিয়াকে সুজলা সুফলা রেখেছে।সিন্ধু নদী,শতন্দ্রু নদী,ব্রহ্ম-পুত্র নদী ও কার্নেলী নদী যা গঙ্গাতেও জল পাঠায় এসব নদীর উতপত্তীস্থল হলো কৈলাশ পর্বতশ্রেনী।
এবার রাক্ষস তাল হ্রদের কথা বলি,এটি মানস সরোবরের পশ্চিমে অবস্থিত।হিন্দুদের মতে এটি দশ মাথাওলা রাক্ষস রাভন শিবকে ভক্তি ও শ্রদ্ধার নিদর্শন রুপে তৈরী করেন।কিন্তু শিব এটি নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় রাবন বলেন,যতদিন শিব এটি গ্রহন করবে না ততদিন সে তার একটি করে মাথা কাটতে থাকবে।দশম দিন শিব এটি গ্রহন করে তাকে বরপ্রদান করেন।নিম্নে সবগুলোর ছবি দেওয়া হলোঃ





মানস সরোবর।


মানস সরোবর।


কৈলাশ পর্বত।


উত্তরদিক থেকে কৈলাশ।


দক্ষিনদিক থেকে কৈলাশ।


তীর্থযাত্রীরা মানস সরোবরে।


মানস সরোবর দূরে কৈলাশ।


সরোবরে সূর্যোদয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৯
১৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×