somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিউলিপ এর মেলায় বন্ধু মোরা দু'জন..........

২৪ শে মে, ২০১১ সকাল ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অটোয়াতে টিউলিপ ফেস্টিভ্যাল শুরু হয়েছিলো মে এর ৬ এ। আর শেষ হলো আজ।এবার এত বৃষ্টি হয়েছে যে যাই যাই করে যাওয়া হয়ে উঠছিলো না। আর যাকেই বলি সবাই ব্যস্ত না হয় কোন অজুহাত।
আজ শেষদিন। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর দেখি দারুন সুন্দর একটা রোদেলা দিন। আজ ভিক্টোরিয়া ডে এর ছুটি। মিনুকে ফোন করে যাবেন নাকি বলতেই রাজি হয়ে গেলো। বেড়িয়ে পড়লাম দুজনে।কার্লিং এর উপর নেমে গেলাম গাড়ি থেকে। রাস্তা পার হয়ে Dows lake এর পাশ দিয়ে হাঁটছি আর মানুষের ঢল দেখছি আমরা দুজনে। Dows Lake Pavilion দেখার মতন।
http://www.dowslake.com/
মনোরম সেই Dows Lake Pavilion এর দিকে তাকিয়ে খুব ভালো লাগলো। একটু হাঁটতেই টিউলিপ এর দেখা পেলাম।যদিও বৃষ্টিতে এবার ফুলগুলো তেমন ভালো করে ফোটেনি ,তবু অনেকমাস পর এত ফুল একসাথে দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো। শীতের পর গাছের সবুজ পাতাগুলোর দিকে তাকালেই মন আলো হয়ে যায় আর ফুল তো আরো বর্ণিল আর সুন্দর।





কয়েকটা গাছ পানির দিকে এমন নুয়ে ছিলো । খুব ভালো লাগছিলো। আমরা দুজন দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম।



হাতের বা দিকে তাকাতেই দেখি ফুলে ছেয়ে আছে পথের ধার। মানুষ আর মানুষ। এই সব জায়গায় আসলে মন যে কেমন হয়ে যায়। যে কোন সুন্দরের কাছে গেলে প্রিয়জনদের কথা মনে হয়। মনে হয়, সবাই মিলে যদি এমন সুন্দর সব দেখা যেতো।





মিনুকে বললাম আমি যে ব্লগে লিখি ওখানে একটা ছবি পোষ্ট দেবো তাই অনেক ছবি তুলছি।







লাল টিউলিপ এর পাশে দাঁড়িয়ে সিলসিলা ছবির অমিতাভ আর রেখাকে মনে পড়লো। মনেহয় ঐ ছবিতে প্রথম হলান্ডের টিউলিপ এর রাজ্য দেখেছিলাম।







মিনু গল্প করলো অটোয়াতে এসে প্রথম টিউলিপ দেখার স্মৃতির কথা।ওর ও মনে হয়েছিলো প্রিয় মানুষের কথা। মানুষের জীবনটা আসলেই স্মৃতির এ্যালবামে গাঁথা। কত কথা ,কত ছবি জমা হয়ে থাকে!







হঠাৎ করে খুব সুন্দর রোদ দেখা দিলো। মেঘের আড়ালে সূর্যটা লুকোচুরি খেলছিলো একক্ষন ।বৃষ্টি আসলে একদম ভিজে যাবো এমন সম্ভাবনার কথা ভাবছিলাম দুজনেই। ছাতা আনতে ভুলে গেছি আমরা । যদিও এমন বাতাস বইছে,ছাতা ধরে রাখা কঠিন। আমি ছবি তুলছি। মানুষ দেখছি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ফুলের মাখে বসিয়ে বাবা মায়ের ছবি তুলছে।





হাতের ডান পাশে লেকের ছিমছাপ নির্জনতা।সবুজ ঘাস এর উপর কিছু মানুষ বসে বিশ্রাম করছে।এক জায়গায় দেখি একজন দাঁড়িয়ে ছবি আঁকছে। পৃথিবীর কোলাহল ,কোন চিৎকার তার কানে যাচ্ছেনা। রং আর তুলিতে সে আঁকছে ফুলের রং ,পাতার রং। কি যে দারুণ সেই মগ্নতা।
পাশে দাঁড়িয়ে তার ছবি তুললাম। কত মানুষ আসছে দেখছে তার এই আঁকাআঁকি।







চেরী ব্লসমস ফেস্টিভ্যাল হয় শুনেছি টরন্টোতে। চেরী গাছ ফুলে নুয়ে ছিলো। মিনু বলছিলো ওর শাশুড়ীর কথা । উনাকে ছবি পাঠাবে। উনি এখানে আসতে চান না শীতের ভয়ে। এখানেও গাছে ফুল ফোটে। পাতাই দেখা যায়না। আসলেই এখনকার এই প্রকৃতি দেখলে কেউ বুঝবেনা একমাস আগেও গাছে কোন পাতা ছিলো না......





এর জায়গায় টিউলিপ এর প্রতিকৃতি বানানো। একটা ছোট্ট মেয়ে বসে বিশ্রাম করছিলো।




আমাদের গল্প কথার ফাঁকে টুপটাপ বৃষ্টি পড়া শুরু করলো।কার্লিং পার হয়ে একটা গভর্মেন্ট অফিসের বারান্দার বেঞ্চিতে বসে গল্প করলাম দুজনে। টুপটাপ বৃষ্টি আর জড়ো বাতাসে কেমন যে লাগছিলো।অনেকদিন পর একটা একটা সুন্দর নির্মল দিনের স্মৃতিতে জমানো রইলো আমাদের দুজনের কিছু সময়। মিনুকে বললাম ,যেই বৃদ্ধাশ্রমের স্বপ্ন দেখি আমি। একদিন এই দেশে আমাদের বয়সী যারা আমরা বুড়ো হবো সবাই মিলে একটা বৃদ্ধাশ্রমে থাকলে বেশ হবে। আমরা বাংলায় কথা বলবো, গান শুনবো, ক্যারাম খেলবো,লুডু খেলবো। এ দেশে বয়সই বাবা মায়ের সাথে ছেলেমেয়েরা কেউ থাকেনা। আমি জানিনা আমার ছেলেরা কেমন জীবন বেছে নেবে। মিনুর মেয়েরা কেমন করে চাইবে। তখন হয়তো বৃদ্ধাশ্রমই আমাদের জায়গা হবে। আর অসুবিধা কি? জীবনে যখন যা সামনে এসে দাঁড়ায় তাকে মেনে নিতে পারলেই তো আনন্দ।যদি বেঁচে থাকি, কি জানি কেমন হবে আমাদের সেইসব দিন! পার্কের বেঞ্চে বসে থাকা দুজন বয়সী মহিলার দিকে তাকিয়ে মিনুকে বলি, একদিন আমরাও হয়তো এমন করে ফেস্টিভ্যাল দেখতে আসবো। পার্কের বেঞ্চে বসে পুরানো দিনের গল্প করবো। আমাদের কথা র ফাঁকেই ও এসে পড়লো আমাদের উঠাতে। মিনুকে বাসায় নামিয়ে বাসায় ফিরে আমার লাইলাক গাছের দিকে তাকিয়ে আমি মুগ্ধ। কাল রাতেও এত ফুল ছিলো না।
একটা সুন্দর দিন আর স্মৃতিতে জমানো রইলো আমার গাছের সাদা লাইলাক।



সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১১ সকাল ৯:৪৬
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×