পরিক্ষার সময় নতুন কিছু বন্ধু জুটে যায়।সারা বছর আশে-পাশে থাকলেও এই সময় নতুন করে তাদের খুব আপন মনে হয়। নানা রকম উপসর্গ দেখা যায় তখন।
ফেসবুক,মুভি,চা,পলাশি, উদাসিনতা আর গান।
১০ মিনিট ফেসবুক! আহা কি যে ভালো লাগে। বার বার চা খাইতে মন চায়। একটা ব্যালকনি আছে আমার রুমে।ঠিক রাস্তার পাশে। ব্যালকনির সাথে কিছু গাছও আছে।তার মধ্যে একটা আমগাছ।এবার কিছু আম ধরেছে। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সেই আম পেড়ে খাইতে কি যে সুখ! এই আমের জন্য আমরা রুমমেটরা লবন,কাসুন্দি কিনে এনেছি। রাত যখন গভীর হতে থাকে সেই ব্যালকনিতে যেয়ে উদাস হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কিছুক্ষণ দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই Schrodinger আঙ্কেলের ভয়াবহ সমীকরন মাথার মধ্যে ঘোরা শুরু করে।তখন রবি দাদুর দু-চারটা গানের লাইন মাথায় আসার দুঃসাহস দেখালেও শেষ পর্যন্ত আর পেরে ওঠে না।
টেবিলে বসার অল্প পরেই পেটে মোঁচড় শুরু হয়। এর জন্য বিস্কুট,মুড়ি এনে রেখেছি।কিন্তু তখন সেটা মুখে রোচে না। পলাশী হাতছানি দিয়ে ডাকে। নিশির ডাক নাকি উপেক্ষা করা যায় না। আমি তাই নিরুপায় হয়েই হাঁটা দেই। তারপর চাইনিজ আর তিনটা পরোটা শেষে এক কাপ চা। পলাশি অভিযানে আমার সঙ্গী আমারই মত আর এক জন।পরিক্ষা আসলে তারও এসব উপসর্গ দেখা যায়!
রুমে ফিরে দেখি ঘন্টা খানিক সময় পার হয়ে গেছে মুহূর্তের মধ্যে।আইন্সটাইনের আপেক্ষিকতা নীতির ভালো প্রয়োগ। মনে হয় আচ্ছা ঠিক আছে আজ আর সময় নাই।কাল পড়বো।পড়ে উদ্ধার করবো!
ঘুমানোর আগে পুরাতন দেখা মুভির চুম্বক অংশ আবার দেখতে হবে। আরো রাত হচ্ছে হচ্ছে। গভীর মনোযোগ দিয়ে মুভি দেখা চলছে। এত মনযোগ পড়ায় কোনদিন দিতে পারলাম না।আফসোস!
একসময় কাক ডাকতে শুরু করে।জানান দেয় ভোর হচ্ছে। আমার চোখ এইবার ছোট হওয়া শুরু করে। ঘুমাতে যাই। পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি দুপুরের খাওয়ার সময় হয়েছে। দিন শেষ হয়ে যায় খুব দ্রুত কারন আলোর গতি খুব বেশি। নিজে পড়ি আর না পড়ি বিকেলে অন্যের ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনার উপদেশ দিয়ে আসি ঠিকই।
তার পর আবার রাত আবার সেই একই গল্প। যথারীতি পরিক্ষা খারাপ। পরিক্ষার হল থেকে বের হয়ে সেই পুরনো প্রতিজ্ঞা। পরের পরিক্ষায় পড়ালেখা করে খুব ভালো দিবো।কিন্তু কোনদিন তা আর হয়ে ওঠে না। সেই পরিক্ষা যায়।পরের বছর আবার পরিক্ষা আসে। অনেক কিছু বদলালেও পরিক্ষার এই গল্প বদলায় না।
পরিক্ষা নমক যুদ্ধ যখন শেষ তখন আর এই জিনিস গুলো আর ভালো লাগে না যতটা লাগতো পরিক্ষার সময়।