somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমসাময়িক।

১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পত্রিকা পড়া হয় না। নতুন একটা বদঅভ্যাস পেয়ে বসেছে সেটা হলো ল্যাপটপে গেম খেলা। স্বর্নাই একটা গেম দিলো, অনেক পুরোনো গেম এম্পায়ার আর্থ ২, যতই ভালো খেলার চেষ্টা করি তখনই গো হারা হারি।

অনেকদিন ধরে গাজীপুর যাওয়া হয় না বলে কাল গিয়েছিলাম। রহমত সাহেব দেখেই আড্ডা জুড়ে দিলেন। সাভারে নতুন গার্মেন্টস হচ্ছে, সেলিম সাহেব নামের একজন জার্মান প্রবাসী আর আমাদের মালিক সেলিম ভাই খুলছেন। এ মাসে নাকি স্যালারীটাও বাড়িয়েছে। আমার জায়গায় আরও দুজন জয়েন করেছে। ফ্যাক্টরীটা আগের মতোই আছে। রহমত সাহেবের একটু ভড়ি হয়েছে।

: কি মিয়া, বড় অফিসে গিয়া আমাগো ভুইলা গেছো নাকি? মাইয়া কেমুন আছে?
: রহমত ভাই, বিরানী আনান, ক্ষুধা লাগছে।
: আরে বলে কি? বিরানী খাইতে এতদূর? তো কাজকাম কেমুন?
: তা ভালোই, তবে আপনাদের এখানকার মতো মজা নেই। আপনাদের মিস করি।
: ধুরু, আমাগো মিস করনের কিছু নাই। ওদিকে তো সেলিম সাহেব বস্তা ভইরা পাত্তী কামাইয়া বিদেশ ভরতাছে। আমরাই হইলাম ফকীরনীর পুত। যেই থালে পয়দা হইছি সেই থালেই মরুম আর গালাগালি করুম।
; ভাবী কেমন আছে?
: আর কেমন? আছে একরকম। বাসায় আসেন না একদিন। ভাবী আপনার কথা এখনও কয়।
: আপনাকে তো ফোন দিলে পাই না।


রহমত ভাই কিছু বললো না। ঐ পুরোনো সমস্যা, বাসা ভাড়া নাহলে ভাবীর ওষুধ। এমন সময় আমার জায়গায় কাজ করতে আসা আসিফ আসলো কিছুক্ষন পর। হ্যংলা পাতলা হলেও খুবই ফরসা, বোঝাই যায় কাজ করতে করতে আর খাওয়া দাওয়া পেটে না পড়ায় চাপা ভেঙ্গে গেছে।

: হাতে গ্লাভস পরো না কেন? চামড়া তো নষ্ট হয়ে যাবে।
: ভাই, কাজ করেই সময় পাই না, রহমত ভাই খুব কড়া।
: উনি কড়া হলেও মানুষ ভালো। শোনো, এক জোড়া পকেটে রাখবে সব সময়। যখনই হাতেরটা ফেটে যাবে তখনই পকেট থেকে বের করবে। গ্লাভস ফুরিয়ে যাবার আগে ইনভেন্টরীকে জানিয়ে দেবে।
: ঠিক আছে ভাইয়া। ভাইয়া এখটা কথা ছিলো।
: বলো।
: আপনার কথা শুনেছি, একটা চাকুরী দরকার, বাবা কাজ করতে পারে না। আমাকে পুরো সংসার টানতে হয় একাই। এই অল্প টাকায় কি করে কি করি বুঝতে পারছি না। যদি একটু দেখেন ভাইয়া।
: চিন্তা করো না, কাজ করতে থাকো। খবর পেলে রহমত ভাইকে জানাবো।

এই ৫০০০ টাকা দিয়ে আমি নিজেই চলতে পারতাম না, মাসের বাকী ১০ টা দিন প্রায় খেয়ে না খেয়ে থাকতে হতো। ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে মানুষের ঘরে গিয়ে হাজির হতাম। প্রতিদিন খাবার দিতে হবে এই ভয়ে টিউশনির ব্যাবস্হা তারাই করে দিতো। অদ্ভুত সময় ছিলো আমার। সে তুলনায় আসিফের আর বড় দুঃসময় চলছে। হয়তো কোনোদিন ও এই দুঃসময় থেকে মুক্তি পাবে, তখন ওর এই শূন্যস্হানে আরও কতো আসিফ আশফাক আসবে, আসবে তাদের দুঃখগুলো আর ওদিকে সেলিম সাহেবদের ব্যাংক একাউন্টে বাড়বে সংখ্যার পাশে থাকা শূন্যের পরিমান। এ চক্র যেনো চলছেই, কেউ ভাংছে না।


রাতে মেসে ঢুকতেই দেখি রহিম ভাইয়ের খিস্তি খেউড়," কাহিনীডা দেখছেন? জমিদার সাহেব আসলেন, আইসাই বললেন বাড়ি ভাড়া থিকা কারেন্ট বিল আর গ্যাস বিল আলাদা, খালি পানিরটা দিতে হইবো না। বাড়ী ভাড়া বাড়াইছে প্রতি রুমে ৮০০ টাকা। কেমনে থাকি এইখানে?"
: মানে কি? নভেম্বরে একবার বাসা ভাড়া বাড়ালো, দু'মাস গেলো না। সে তো নিজের চুক্তি নিজেই ভাংতেছে।
: গরীবের হইছে সমস্যা, মানুষ মানুষের পিছন দিয়া বাশ দিয়া বাশ দেয়, আর গরীব হইলে সামনে দিয়া পিছন দিয়া সাইড দিয়া ব্রেক ছাড়া....
: গলিতে ঢুকার মুখে দেখলাম একটা নোটিশ টাঙ্গানো আছে। কালকে দেখতে যাবেন?
: আমি অখনো খবর নিছি। আপনে যদি রাজী থাকেন তাইলে কালকা লোক পাঠাই। আর আপনের সময় হইলে এই সপ্তাহে ফাইনাল করি, কি কন?
: আমার সময়ের দরকার নেই। ভালো কথা আপনের এক ভাইগ্না না হলমার্কে চাকরী করতো? সে অখন কই ?
: ঐ বাটপার মালয়েশিয়ার লাইনে আছে।
: ও আচ্ছা। একটা ভালো কাজ ছিলো। যদি মালয়েশিয়ায় হয়ে যায় তাহলে থাক।
: ওর নাম বাদ দেন, আপনে মিলন বা শফিকরে একটু দেখেন। শিক্ষিত পোলা দুইটা।
: ওরা কি এ কাজ করবে? কম্পিউটাররের ডিপ্লোমা কি গার্মেন্টসে যাবে?
: আমি আপনারে জানাইতেছি।

রহিম ভাই নিজের বড় ভাইয়ের চেয়েও বেশী কিছু। এই লোকটাকে যতদেখি তত এর জন্য মায়া জন্মে যাচ্ছে। জানি না তার সাইবার ক্যাফে কেমন চলছে। বয়স ৪০ এর কাছাকাছি বিয়ে হয়েছিলো, স্ত্রী ছেড়ে চলে গিয়েছে। তারপর বিয়ের নাম গন্ধ নেই। বাহারী মনের মানুষ, বদ অভ্যাস অবশ্য কিছু আছে।

রুমে গিয়ে ভাবতে বসি, বাবা বলতো মদ জুয়া নারী জীবনটাকে ধ্বংস করে দেয়। যে দেশ নারী আর গুনী মানুষের সম্মান করে না সে দেশ নাকি ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন পাকিস্তান, আফগানিস্তান ইরাক স হ অনেক দেশ চোখের সামনেই জ্বলছে। কখনো ধর্মের নামে কখনো সমাজ শুদ্ধের নামে তারা চলিয়েছে নিধন। ফলে ধ্বংস হয়ে যায় সেসব দেশ।

তার কথা মতো রহিম ভাইও তো খারাপ মানুষ হবার কথা। সে মদ খায়, হোটেলে যায়, যদিও জুয়া খেলে না। কিন্তু জানা মতে এই লোক কখনো টাকা মেরে খায়নি। যখন না খেয়ে দিন চলতো তখন এই লোক আমাকে বৃক্ষের ছায়ায় রেখে দিয়েছিলো। গত ঈদে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এই দুটো ছেলে কে নিয়ে আসে।

মিলনকে খুজে পায় মসজিদের সামনে একটা খুটিতে বেধে রাখা হয়েছিলো। উনি জুম্মার নামাজ শেষে বের হবার সময় গুঙ্গানী শুনতে পেয়ে মসজিদের পেছনে পেয়ে দেখতে পায় ওকে। আগের দিন রাতে এশার নামাজে স্যান্ডেল চুরি করতে গিয়ে ধরা খায়। এই মসজিদে স্যান্ডেল আর জুতো চুরি এমন ভয়াব হ ছিলো যে একবার জুম্মার নামাজ পড়তে আসে ৩০০-৪০০ মানুষের প্রায় সব কটা স্যান্ডেল এবং জুতো চুরি হয়ে গিয়েছিলো। বলা হয় এই মিলন আর তার সাঙ্গপাঙ্গরাই নাকি চুরি করেছিলো।

এরকমই বর্ননা করলো মসজিদের হুজুর ক্বারী হেলাল। গতকাল ধরে এখানেই বেধে রেখেছে।
রহিম সাহেব প্রায় ঝগড়া করে তাকে ছাড়িয়ে আনে। ফার্মেসী থেকে ঔষুধ কিনে বাড়ি নিয়ে যায়। বাড়ি গিয়ে দেখে এটা বাড়ি নয় নদীর পাড়ে ছন দিয়ে ঘেরা কিছু একটা। সেখানে শুয়ে আছে এক বৃদ্ধা মহিলা। কয়েক মাস আগে বাধ ভেঙ্গে গেলে ওদের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। যখন পানি সরে যেতে থাকে তখন নদীর ভাঙ্গনে সবকিছু কেড়ে নেয়। বাবা হারিয়ে যায় সেই ভাঙ্গনে। ছেলেটা একাউন্টিং এ পড়তো সেটাও বন্ধ হয়ে গেলো।

শফিকের অবস্হা ভালো ছিলো এর চেয়ে। সদরে রিক্সা চালাতো। কম্পিউটার সেন্টার খুলে বিশাল লস খেয়ে ধার দেনার জন্য সবকিছু বিক্রি করে দেয়। দুজনকেই ঢাকা নিয়ে এসে নিজের সাইবার ক্যাফেতে ঢুকায় আর নিজের সাথেই রাখে।

এই মানুষটি যদি খারাপ হয় তাহলে আমি কাকে ভালো বলবো? এমন ভালো মানুষ কি সত্যি এ সময়ে খুজে পাওয়া যাবে?

আমার তো মনে হয় আমাদের সমাজে রহিম ভাইয়ের মতো মানুষের অনেক প্রয়োজন।
তাই নয়কি?
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×