somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুখের মতো কান্না-১

২২ শে মে, ২০১১ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৃথিবীতে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। লোমহর্ষক অনেক কাহিনী। কিছু হারিয়ে গেছে। কিছু রয়ে গেছে কালের সাক্ষী হয়ে।

আমি ভাবলাম, হাজার হাজার বছর আগের সেই গল্পগুলোকে একুশের মত করে লিখে ফেললে কেমন হয়? এ ভাবনা থেকেই তৈরি হলো সুখের মত কান্না।

একটি চিরন্তন ঘটনার দূরবর্তী ছায়া অবলম্বনে তৈরি এই উপন্যাসের মূল আইডিয়াটি কোত্থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, এটা খুঁজে বের করবেন পাঠক। আর সচেতন পাঠককে খুব একটা খোঁজাখুঁজি করতে হবে বলেও মনে হয় না।
পাঠক, আপনারা ভাল থাকবেন।

*** *** *** ***
পরপর তিন রাত একই স্বপ্ন দেখলো রুহান।
স্বপ্নের শেষ পর্যায়ে এসে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙার পর সে আবিষ্কার করে তার সারা শরীর ভেজা। যেন এইমাত্র ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে অবস্থা। তখন প্রচন্ড তৃষ্ণা পায় তার। গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমের রমযান মাসে বিকেল চারটার দিকে যেভাবে বুক শুকিয়ে যায়, মনে হয় একফোটা পানি না হলে বোধয় কল্জে ফেটে মরেই যেতে হবে, তেমন তৃষ্ণা।

আজ তৃতীয়বারের মত স্বপ্নটা দেখলো রুহান। জেগে উঠে ঘড়ি দেখলো। রাত তিনটা বাইশ। পরপর তিন গ্লাস পানি পান করলো সে। স্বপ্নটিকে একটু নাড়াচাড়া করতে লাগলো। এমন অদ্ভুত স্বপ্ন কেন দেখবে সে? আর এর মানেই বা কী হতে পারে? নিজে নিজে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চেষ্টা করলো।

এমনও তো হতে পারে যে, তার অবচেতন মন পুরো ব্যাপারটি কল্পনা করে সাজিয়ে নিয়েছে? তারপর স্বপ্নের মোড়কে ভরে সেটাকে তার সামনে এনে উপস্থাপন করেছে।

এই ব্যাখ্যাকে সে নিজে-নিজেই বাতিল করে দিল। কারণ, এ জাতীয় পরিকল্পনার জন্য প্রথমে বিষয়টিকে সামনে আসতে হবে। সেটা বাস্তবে হোক বা কল্পনায়। তারপর সেটিকে নিয়ে ভাবতে হবে। তাহলেই হয়ত এক সময় নিজের অজান্তে ভাবনাগুলো শেকড় গেড়ে বসবে মনের ভেতরে। তারপর স্বপ্নের মাধ্যমে অস্তিত্ব তৈরি করে ঘুমের মধ্যে এসে হাজির হবে। রুহান তো এ জাতীয় চিন্তা-ভাবনার ধারে-কাছেও যায়নি কখনো। সুতরাং এ ব্যাখ্যা বাতিল।

আরেকটি সম্ভাবনাও থাকতে পারে। সেটা হল, আসলে এর কোনো ভিত্তিই নেই। তার দুর্বল চিত্ত তাকে বিভ্রান্ত করবার চেষ্টা করছে। তাকে ভয় পাইয়ে দিতে চাইছে। আর এই চেষ্টাটা করছে বিপরীত অ্যাঙ্গেল থেকে।

একজন মানুষকে দু’ভাবে কাবু করা যায়। এক, বেশি কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে। দুই, স্বাভাবিকের'চে বেশি খুশি করে ফেলার মাধ্যমে। দু’টি পদ্ধতিই মোটামুটি খতরনাক। যেমন-

একলোক তার যা কিছু ছিল, জমি-জমা, বাড়ি-ঘর, সবকিছু বিক্রি করে ব্যবসা করার জন্য (মনে করা যাক) ৫০ লক্ষ টাকা একত্র করেছে। এখন যদি কোনো ছিনতাইকারী গ্রুপ এসে তার সব টাকা নিয়ে যায়, তাহলে এই লোকের হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.০৯%।

একইভাবে নুন আনতে পানতা ফুরায় টাইপ গরীব কাউকে যদি হঠাৎ করে এককোটি টাকা ধরিয়ে দেয়া হয়, অথবা ‘যদি লাইগ্যা যায়’, তাহলে এই লোকেরও মাথার তার ছিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। একে বাঁচানোও মুশকিল হবে।

মোটকথা, মাত্রাতিরিক্ত কষ্ট বা আনন্দ, দু'টোই বিপজ্জনক। দু’ভাবেই মানুষকে ঘায়েল করা যায়।
রুহান ভাবছে তার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পদ্ধতিই সম্ভবত অবলম্বন করা হয়ে থাকতে পারে। নাগালের বাইরের কিছু তার সামনে তুলে ধরে তাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হতে পারে।

অবশ্য এই সম্ভাবনাও পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারলো না সে। ব্যাপারটি এমন হলে পর পর তিন রাত একই ব্যাপার ঘটতো না। কাকতালীয় বলেও মেনে নেয়া যায় না। কারণ, কাকতালেরও একটা লিমিট আছে। তাহলে কী হতে পারে?

রুহানের বাবার নাম রায়হান চৌধুরী। ধর্ম-কর্ম করা মানুষ। তবে ধর্মের যে কোনো তত্ত্ব তাঁর সামনে রাখা হলে তিনি সেটাকে যুক্তির পোশাক পরিয়ে ব্যাখ্যা করার বিষ্ময়কর ক্ষমতা রাখেন। ‘স্বপ্ন’ ব্যাপারটি নিয়ে উনার বিশ্লেষণধর্মী ভাবনাগুলোও যথেষ্ট যৌক্তিক।

রুহানের বয়স মাত্র নয়। অথচ তার চিন্তা-ভাবনা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা বড়দের মত। যে কোনো ব্যাপারকে যুক্তির কষ্টি পাথরে যাচাই করে বাস্তবসম্মত ভাবে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা ছোট্ট রুহান পুরোপুরিই রপ্ত করতে পেরেছে। বাবা জীবিত থাকতেই বাবার এই গুণটি সে পেয়ে গেছে উত্তরাধিকার সূত্রে।

সেদিন বাবার মুখে রুহান শুনেছে-
স্বপ্ন মোট তিন প্রকারের হয়।

১। সত্য স্বপ্ন
স্রষ্টা মানুষকে মাঝে-মধ্যে স্বপ্নে বিভিন্ন ইঙ্গিত করেন। অনেক সময় বিপদ-আপদের জন্য আগাম সতর্ক করে দেন। বেশিরভাগ মানুষই সেটা বুঝতে পারে না। তারা স্বপ্নকে নিছক স্বপ্ন ভেবে হালকা করে উড়িয়ে দেয়।

২। অসত্য স্বপ্ন
মিষ্টার ইবলিস বলে ভয়াবহ ক্ষমতাবান এক ভদ্রলোক আছেন। উনার আরেক নাম আজাজিল। উনি মানুষের রগে-রেশায় বিচরণ করার ক্ষমতা রাখেন। এই ক্ষমতাও তিনি স্রষ্টার কাছ থেকে চেয়ে এনেছেন। ঘটনাটি ছিল এভাবে-
আল্লাহ পাক যখন মানুষ সৃষ্টি করলেন, তখন শয়তান ছিল ফেরেশতাদের লিডার। আল্লাহ বললেন, ‘সবাই আদমের সামনে শ্রদ্ধাবনতচিত্তে মাথা নত করো। আমার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে তোমরা সম্মান করো।’ ‘সবাই সম্মান করলো, শুধু ইবলিস যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিল, সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো।

আল্লাহপাক তাকে বললেন, ‘কী হলো? তুমি আদমকে সম্মান করছো না কেন?’
ইবলিস বললো, ‘প্রভূ, আমি তো আদমকে মাথা নত করে সম্মান জানাতে পারি না।’
আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন?’
সে বললো, ‘আমি যে তাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ।’
আল্লাহ বললেন, ‘ও আচ্ছা, তাই নাকি?
‘হ্যাঁ।’
‘কীভাবে?’
সে বললো, ‘মানুষকে তুমি সৃষ্টি করেছো মাটি দিয়ে। আর মাটির গুণ হল নিম্নমুখি। একখন্ড মাটিকে উপর দিকে ছুড়ে মারলে সেটা আবার নিচে নেমে আসে। আর আমাকে তৈরি করেছো আগুন দিয়ে। আগুনের গুণ হল সে উর্দ্ধমুখি।’

আল্লাহ বললেন, ‘তাহলে তুমি আদমকে সম্মান জানাবে না?’
শয়তান বললো, ‘স্যরি আল্লাহ। আমি সেটা পারবো না।’
আল্লাহ বললেন, ‘আমার নির্দেশ অমান্য করার পরিণাম তুমি জানো?’
‘হ্যাঁ, জানি।’
‘তবুও তুমি তোমার সিদ্ধান্তে অনড়?’
‘হ্যাঁ।’
‘তবে যাও। দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে। চিরদিনের জন্য তোমার গলায় অভিশাপের মালা পরিয়ে দেয়া হল।’
শয়তান বুঝে গেল তার যা হবার হয়ে গেছে। আল্লাহর মুখ থেকে কোনো কথা একবার বেরিয়ে গেলে সেটার আর নড়চড় হয় না।

সে বললো,
‘ঠিক আছে প্রভূ, আমি চলে যাচ্ছি। কিন্তু আমি তো হাজার হাজার বছর তোমার উপাসনা করলাম। বিনিময়ে আমি কি তোমার কাছে কিছু চাইতে পারি না?’
আল্লাহ বললেন, ‘কী চাও তুমি।’
সে বললো, ‘মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়ার ক্ষমতা।’
‘আর?
‘তাদের অন্তরে প্রবেশ করার ক্ষমতা।’
‘আর?’
‘কিয়ামত পর্যন্ত আয়ূ।’
‘আর?’
‘সুস্থতা। স্থায়ী সুস্থতা।’
‘আর কিছু?’
‘আর কিছুর দরকার নেই আমার। এতেই যথেষ্ট হবে।’
আল্লাহ বললেন, ‘কী যথেষ্ট হবে?’
সে বললো, ‘যে মানব জাতির জন্য আজ আমার এই দূর্গতি। আমি সেই মানব জাতিকে শান্তিতে থাকতে দেব না। সবগুলোকে তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তুলবো। সবাইকে আমার দলে ভিড়াবো।’
আল্লাহ বললেন, ‘তাই নাকি?’
শয়তান বললো, ‘হ্যাঁ।’
আল্লাহ বললেন, ‘আমি তোমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম। দেখি তুমি কতটুকু কী করতে পারো। তবে একটি কথা মনে রেখো। যারা আমার প্রকৃত বান্দা হবে, তুমি তাদের ধারে-কাছেও ভীড়তে পারবে না। আর যারা তোমার কু-মন্ত্রণায় ভ্রান্ত পথে পা বাড়াবে, আমি তাদেরকেও তোমার জাহান্নামের সঙ্গী বানাবো।’

সেই থেকে ইবলিস শয়তান মানুষের মনের ভেতরে, শরীরের শিরা-উপশিরায় বিরাজ করার ক্ষমতা নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সে মানুষের ভেতরে প্রবেশ করে মানুষকে নষ্ট করার যাবতীয় কলাকৌশল প্রয়োগ করে। মাঝে-মধ্যে স্বপ্নেও মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।

রুহান ভাবছে তার স্বপ্নে শয়তানের কোনো হাত আছে কি না! এই সম্ভাবনাকে অবশ্য উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না...

চলবে
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×