somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"গেরিলা" একটি মুক্তিযুদ্ধের 3 D ছবি ! ! !

২১ শে মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"নিষিদ্ধ লোবান" বইটির ডাউনলোড লিঙ্ক চেয়ে গতকালকে দুটি পোস্ট দিয়েছিলাম। এই বই থেকে হউয়া মুক্তিযুদ্ধের ছবি “গেরিলা” দেখার আগে বইটি পড়ে নেয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পড়তে পারিনি, তবে আজকে বন্ধুবান্ধব মিলে ছবিটা দেখে এলাম। “গেরিলা” জনমনে যে ভালই সাড়া ফেলেছে তা বলতে হবে। অডিটোরিয়াম হলে প্রচুর ভিড়, সব স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে মেয়ের সাথে অনেক অভিভাবক গোছের লোক এসেছেন ছবি দেখতে। মনে হল শুধু ছবি দেখতেই তারা আসেননি, দায়িত্ত্ববোধ বলেও একটা বেপার আছে, হাজার হলেও মুক্তিযুদ্ধের তকমা লাগানো আছে ছবিটির প্রোফাইলে।



আমি ও আমার বন্ধুবন্ধবরা খুবই সাধারণ মানের দর্শক, মাঝে মাঝে সিনেমা হলে গিয়ে আলেক জান্ডার বোঁ ও ময়ুঁরী অভিনিত বাংলা ছবি দেখতে আমাদের বাধে না। দুরুম দারাম একশনের ফাঁকে ফাঁকে খুল্লাম খুল্লাম নাচের গান আর ভাগ্য ভাল থাকলে দুই তিনটা কাট পিস্ যদি থাকে তাহলে পয়সা উসুল হয়েছে ভেবে বাক বাকুম খুশিতে বাসায় ফিরি। তবে আমাদের কাছে “গেরিলা” দেখার অর্থ ভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধের ছবি। এখানে যেমন কাটপিস্ কিংবা সস্তা বিনোদন প্রত্যাশা করা যায়না তেমনি এটা নিয়ে বানিজ্য করাটাও প্রত্যাশিত না।




ছবিটির মূল চরিত্র বিলকিস রুপায়নে পরিচালক ভাল একটা জিনিষ চয়েস করেছেন। জয়া আহসান স্যান্ডেলিনা সাবান ব্যাবহার করে দিন দিন আরো গ্ল্যামারাস হচ্ছেন। সময়ের অভিনেত্রী, আগের চেয়ে আরও সুন্দরী হচ্ছেন এটা মানতে হবে। সিনেমাতে যখন মাঞ্জা মারা সাজুগুজু করে মিসেস খানের সাথে পাকি অফিসারদের পার্টিতে গেলেন, তখন যা লাগতেছিল না মাম্মা... একেবারে খাসা!! পরিচালক সুযোগ বুঝে সেইখান থেকেই নেয়া ছবি দিয়ে পোস্টার ছেপে দিলেন। উদ্দেশ্য সফল, আমার মত যারা সাধারণ দর্শক, এমন পোস্টার দেখেই কাইত। তবে জয়া ভাল অভিনেত্রী, তার অভিনয় নিয়ে কোন কথা নাই।



ফুয়াদ, বালাম, হৃদয় খান আর আরেফিন রুমীর যুগে বাংলা মিউজিক যে বিরাট উন্নতি সাধন করেছে, এই ছবিটিতে তার স্পষ্ট ছাপ। এই জন্যেই হয়ত গীতিকার ও সুরকার আলতাফের বাসায় যখন পিচ্চি মেয়ে হারমোনিয়াম বাজিয়ে একবার “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী” ও পরের বার “জয় সত্যেরও জয়” গান গাইছিল, গায়েবি আওয়াজের মত ইলেকট্রিক ইনস্ট্রুমেন্টে বাজানো মিউজিকে হলরুম সয়লাব। পরিচালক আসলে খুবই আধুনিক, সত্যি কথা বলতে কী ঢোল তবলা হারমোনিয়াম (যেগুলো দিয়ে একাত্তুরে বাজানো হয়েছিলো) এগুলানতো ক্ষ্যাত যন্ত্রপাতি, আধুনিক না। এখনতো মডার্ন যুগ। পোলাপান কী আর অইসব ক্ষ্যাত জিনিষ খাইব। “চির উন্নত মমশির” এর সুরটাও খুব বাজে হয়েছে।



ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়ার সময় স্কুলের বড় ভাইয়েরা শখের বশে একটা মুক্তিযুদ্ধের মঞ্চ নাটক করেছিলেন ২৬ মার্চ উপলক্ষে। নাটক দেখতে গিয়ে দেখি সেখানে নায়ক ও রাজাকারের ভূমিকায় একজন ভাইয়াই অভিনয় করছিলেন। একবার আলগা দাড়ি আর পাঞ্জাবি পড়ে, আরেকবার ছিড়া গ্যাঞ্জী আর মাথায় গামছা বেঁধে। পরে বুঝতে পারলাম, উপযুক্ত অভিনেতা না পাওয়াতে বাধ্য হয়ে একজনই ডাবল রুল করছিলেন। স্কুলের ছোটখাট আয়োজনে বাচ্চা কাচ্চা ছেলে মেয়ের শখের বশে করা নাটক, তার জন্য এটা কোন বেপার ছিল না। কিন্তু খটকা লাগলো “গেরিলা” সিনেমা দেখতে গিয়ে। শতাব্দী ওয়াদুদ পাকি অফিসারের বেশে ভালই মানিয়েছিলেন। বসে বসে মদ খাচ্ছিলেন আর নিরীহ বাংগালী মারছিলেন। কী নির্মম, কী করুণ ! মাঝে গেরিলাদের আক্রমনে, স্পষ্ট দেখলাম, জিপ উল্টে মারা পড়লেন। কিন্তু ছবির দ্বিতীয় অংশে হঠাৎ কিভাবে যেন তিনি আবার হিটলারী গোফ নিয়ে পুনর্জন্ম লাভ করলেন। আমিও প্যাচ খায়া গেলাম। পাশের বন্ধুরে জিগাইলাম, উনিই কি মেজর সরফরাজ নাকি নতুন আরেকজন? সেও কিছু বলতে পারলো না। সাধারন মানের দর্শকতো, এতকিছু বোঝার সাধ্য নেই!! তারপরেও এই সিম্পিল জিনিষটা কিলিয়ার নাহ... এরকম ছবিতে কেন ডাবল রুল থাকবে, অভিনেতা কি কম পড়ছিলো???



ছিবিটি অবশ্যই 3 D ! কারণ এখানে গোলাগুলি আর বোমাবাজির সময় যে ধরণের স্পেশাল ইফেক্ট আর সাঊন্ড দেয়া হয়েছে তাতে বোঝা যায় সামনে আসছে থ্রি ডি’র শুভদিন। থার্ড ক্লাস মার্কা ইফেক্ট ব্যাবহার করে আমাদেরকে পরিচালক ব্যাপক মজা দিয়েছেন। ধন্যবাদ প্রাপ্য।


মাসখানেক আগে চ্যানেল আই তে “গেরিলা” ছবির শুটিং নিয়ে প্রায় দুই ঘন্টার একটা অনুষ্ঠান প্রচার করেছিলো। অনুষ্ঠান দেখে জানতে পেরেছিলাম সেনা বাহিনীর একটা স্পেশাল ইউনিট পরিচালককে সহায়তা করেছে। এটাতো করতেই হবে, এদের ছাড়া যুদ্ধের গুলা বারুদ, ট্যাং, হেলিকাপ্টার এসব পাবে কোথায়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যে আর্মিদের কাজে লাগালো হয়েছে তাদের চুলের আর্মি ছাট আর মুভমেন্ট পুরাই সেই একিরকম সেনা সেনা লাগলো, মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা নয়। হেলিকপ্টার আর হাতির ব্যাবহার পুরাই আকাইম্মা।



পরিচালক আরেকটা কাজ করতে পারতেন, দামড়া ফেরদৌস রে না নিয়ে হার্ট থ্রব নাম্বার ওয়ান নায়ক সাকিব খান কে নিতে পারতেন তাহলে রিক্সাওয়ালারাও ঝাপাইয়া পইড়া ছবিটা দেখতো। তাতে ছবিটাও সার্বজনিন হতো। দামড়া ফেরদৌস কোন কামেরই না।



আমরা সাধারণ শ্রেণীর দর্শক, নিন্ম মানের বাংলা ছবি দেখে অভ্যস্থ, ভেবেছিলাম এই ছবিটা একটা অসাধারণ মানের ছবি হবে। কিন্তু কোন পার্থক্য করতে পারলাম না। “হয়ত এসব হাই ক্লাস সিনেমা বোঝার কোন খেমতা আমাগো নাইক্কা”। তবে আরও অনেক যুদ্ধের ছবি আগে দেখেছি। এর চেয়ে আগুনের পরশমনি, হাংগর নদী গ্রেনেড, ওরা ১১ জন অনেক উঁচুমানের মুক্তিযুদ্ধের ছবি। পরিচালক নাছির উদ্দিন ইউসুফ একজন জ্ঞানি ব্যাক্তি। নিজে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে সরকারি অনুদানে ছবি বানিয়েছেন। তবে চিরাচরিত বাংলা বানিজ্যিক ধারার বাইরে আসতে পারেননি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বানিজ্য চলে না !!



রাজাকারদের নৃসংশতা ভালভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তখনকার রাজাকার আর এখনকার যুদ্ধাপরাধীরা যে প্রকারে মানবতা বিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল তা জঘন্য ও ঘৃণ্য। তাদের গালে থু থু ও গলায় ফাঁসির দড়ি পড়ুক। তবে আমাদের বর্তমান সরকার তাদের বিচার করার যে মহান দায়িত্তে নিয়োজিত হয়েছেন তা অবহেলা করে যদি আবারো ভোট বানিজ্য করেন তাহলে আমাদের আর কিছুই করার থাকে না।
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×