ঘুমিয়ে আছে সে সদ্য জেগে যাওয়া চরের মাটিতে
শীতের অস্তাচলে বটের ঝুড়িতে প্রবহমান নদীর মতো
চাদরের বুনটের কিছু সুতো ঢিলে ঢালা অঙ্গে তার
সাদা আলোয় উজালা দেয়াল, সামুদ্রিক বাতাসে
হাতে আঁচড়ানো কেশরের মতো সফেদ চুল
মুদিত চোখের ধীর বলীরেখায় ক্লান্তির আবরণ
বুনো চড়াই উড়ে গেল দক্ষিনের উর্বর আকাশে
দরজার আলো গলিয়ে, সুশান্ত মৌনতা এই ঘরে
ঘুম ঘোরে কখনো তার শুষ্ক গলা কেশে ওঠে
সাদা কালো আলো আঁধার গলায় ছোয় শ্লেষ্মার জল
বাতাস পরিপাটি ঢেকে রাখে তনুর বাদামী মোড়ক
সচেতন আলো তিল আঁকে ভাঁজ করা মথের পাখায়
নুয়ে চুম্বনরত সূর্য কপোলে, ঘৃতপাত্র, গাছচ্যুত ফল
পড়ে আছে মরা ঘাসের উপর - হলুদ বেলের খণ্ডিত
করোটি। শনির চাকার মতো কব্জিতে লোহার বালা
সিথানে পাণ্ডুর হাত রক্তহীণ শুয়ে থাকে মর্গের বালিশে
যেন বিহাচ নদীর তটে ভেসে আসা শীর্ণ পপলারের শাখা
নারকেল জল, টিনের কৌটা, মাটির ভেতর শুকনো বকুল
ছড়ানো শিয়রে। ভাতের উষ্ণতায় গড়ে ওঠা সোমরস
পাত্রের কিনারা চুঁয়ে চুঁয়ে সন্ধ্যায় তার ঢুলু ঢুলু চোখ
কী তীব্র আহ্লাদ চাঁদিমায় ডুবে যেতে দুধ মালাইয়ের মত
কী প্রবল ইচ্ছে ছিল তার, ঝিনুকের চাকুতে শাস কুড়িয়ে
পাতায় আহার, জলমত্ত জুড়ানো কাউনের জাউ, এক হাতা জল
মাখনের প্রান্তরে আজ তার খোলা কুমড়োর ছাঁচ নিলীমিত দৃষ্টি
কেউ তাকে দূর পর্বতের ঢাল থেকে মৃদু কণ্ঠে ডাকে
সাগরে সারিন দেবীর ছায়ামূর্তি সলোভ হাতছানি দিয়ে
উড়ে আসে সুচারু পাখায়, ডাকে, তাই বেছে নেয় অন্তর্ধান
পাথরের শয্যায়, উন্মন সে একজন সমাহিত পলাতক
শুয়ে আছে সে জলপাত্রের কানায় রেখে অতৃপ্ত ওষ্ঠ
শুকতারায় পূণ্য স্নানে মুছে নিয়ে অনিচ্ছাকৃত পাপের চিহ্ন
ভেজা শরীর পাখিদের আব্রুতে আড়চোখ নেই, স্তব্ধ সে
সূর্যের ঝরা পাতায়; ডুবন্ত আঁধারে উড়ন্ত কাচের পোকা নয়
সমাহিত সে মিহিন মাকড়সার জালে ভোরের নতুন আলোয়
----
ড্রাফট ১.১/ শামসুর রাহমানের "তার শয্যার পাশে"র ছায়াবলম্বনে