বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আমি আরিফ রেজা ।
আজকে ১৭ নভেম্বর ২০১২ । আমার ১৬ তম জন্মদিন । তাই আমি আজকে আমার ফ্রিল্যান্সিং জীবনের বৃত্তান্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি । আমার ওডেস্কের / প্রোগ্রামিং এর ইতিহাস বর্ননা করব ইনশাল্লাহ । আশা করি এটি নতুনদের জন্য ভালো একটি নিদর্শন হতে পারবে ।
শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালের ১৫ নভেম্বরের পর । তখন বাসায় কম্পিউটার/মোবাইল কিছুই ছিলনা । কিন্তু ইন্টারনেটের জন্য আমার ছিল দুর্বলতা । খুব পছন্দ করতাম এই জিনিসটা । তাই JSC পরীক্ষার পর পর মোবাইলের জন্য বাবার কাছে ধর্না দিতে থাকি । আগেই বলে নিই, আমি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি । খুব আবদারের মাধ্যমে মোবাইল পাই । নোকিয়া ২৭০০ ক্লাসিক । প্রথম বলে খুব ভালোই । জাভা, ইন্টারনেট, অপেরা মিনি সব আছে । তাই খুব আনন্দের সাথে ইন্টারনেট ব্রাউজিং শুরু করি । তার সাথে গেমস খেলা । এরই এক পর্যায়ে ফেসবুক নামক একতি সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইটের সাথে আমার পরিচয় হয় । একাউন্ট খুলে উপভোগ করতে শুরু করে দিই ।
তখন হঠাত করেই একদিন ওয়েবসাইট বানানোর পদ্ধতি রপ্ত করার এক সুপ্ত বাসনা আমাকে পেয়ে বসে । কিভাবে ফেসবুক, গুগল, ওয়াপট্রিক, জেডজি, গেটজার এসব ওয়েবসাইট তৈরী হয় । গুগলে সার্চ দিলাম । ওরা আমাকে ওয়েবসাইট বানানোর অনেক থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট যেমনঃ webs.com , weebly.com এসব ওয়েবসাইটের লিংক দেয় । আমি এসব দিয়ে সাইট বানাই আর ভাবি কিভাবে গুগল / ফেসবুকের মত ওয়েবসাইট বানানো যায় । তখনও ভাবতাম এসব থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট দিয়েই ওয়েবসাইট বানাতে হয় । ২০১১ সালের এপ্রিল/মে মাসের দিকে আমার ভাইয়া একটা কম্পিউটার কেনে । ওটা দিয়ে এবার ফেসবুকিং চালানো শুরু করি । তার সাথে ঘাটাঘাটি । হঠাত করে ফেসবুকে একটা ফ্যান পেজ খুলে বসি । ইসলামিক একটা পেজ । ওটার জন্য ভালো ট্যাব বানানোর জন্য ফেসবুকের একটা এপ্লিকেশন এর সাথে পরিচিত হই । সেটা হল Iwippa । সেখানেই সেটিংস এ দেখি কিছু এইচটিএমেল কোড । আমি ভাবি, কোড জিনিসটা কি? তারপর দেখি কোডের কিছু কথার সাথে মেইন এপ্লিকেশনের কিছু মিল আছে । যেমন কোডে লেখা আছে "Arif Reza" তাহলে এপ্লিকেশনে দেখাচ্ছে "Arif Reza" । তারপর সেটা এডিট করি । দেখি কোডের সাথে এপ্লিকেশন ইন্টারফেসের কিছু পরিবর্তন আসছে । তারপর গুগলে সার্চ দেই এইচটিএমএল দিয়ে । ওরা আমাকে এইচটিএমএল এর টিউটোরিয়াল ওয়েবসাইট -> w3schools.com এ ঢুকিয়ে দেয় । তারপর ওখান থেকে html শেখা শুরু করি । তারপর শিখি সিএসএস । শিখেই দেখি ওয়েবসাইট বানান যাচ্ছে । তখন আবার ভাইয়া কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার জন্য পিসি নিয়ে ঢাকা চলে যায় । আমি ফাকা । তবুও শেখা ছাড়িনা । ক্লাস নাইনের বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে ভাইয়ার কাছে এইচটিএমএল এর বাংলা বই চেয়ে মেসেজ পাঠাই । দুই দিনের মাথায় আমার হাতে বই চলে আসে । বইটি আমার লাইফটাকে সম্পুর্ণ বদলে দিয়েছে । সেই বইটি হলঃ-
মাস্টারিং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
লেখকঃ মাহবুবুর রহমান , এ কে এম হাসান
সেই বই পড়ে শিখে ফেলি ->> HTML, CSS, JAVASCRIPT, PHP, SQL এবং XAMPP সম্পর্কে ধারনা পাই ।
তারপর বইটির দ্বিতীয় খন্ড পড়ে জানতে পারি ->> PHP-MySQL , Joomla, Dreamweaver, AJAX, ASP.NET, XML and Joomla
তখনও বাসায় কম্পিউটার নেই । ইতিমধ্যে বাঙ্গলাদেশে "ডোল্যান্সার" নামে একটা ফ্রিল্যান্সিং (পিটিসি) কম্পানী ব্যবসা শুরু করে । আমার বড় ভাইয়া তার সদস্য হয়ে যায় । আয় হয় অনেক । এমনও সময় ছিল যখন ডোল্যান্সার থেকে ভাইয়া দিনে ২০,০০০ টাকাও পেয়েছে । আমিও ডোল্যান্সারকে খুব ভালোবাসতাম । তখন আবার বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার সাইবার ওয়ার সম্পর্কে জানতে পারি ও আমিও হ্যাকিং শেখার জন্য এক ফেসবুকের বড় ভাইয়ার কাছে টিউটোরিয়াল লিংক চাই । উনি "টিউনেরপেজ" নামে একটা সাইটের কথা বললেন । আমি ঢুকলাম । হ্যাকিং শিখে ফেললাম । হঠাত করে ভাইয়া একদিন ডোল্যান্সার থেকে একটা ল্যাপটপ পেয়ে যায় । তার মাস তিনেক পরেই আরেকটা । আমার খুশি দেখে কে । কারন পরেরটা আমার বাসার ঠিকানায় চলে এসেছিল । সেটা থেকেই এখন লিখছি । এখন এটা আমার । যাই হোক, টিউনেরপেজ থেকে একসময় পিটিসি এর আসল ঘটনা জানতে পারি ও ডোল্যান্সারকে অপছন্দ করতে শুরু করি । কিন্তু ভাইয়াকে কিছু বলতাম না । কে জানে কখন ল্যাপটপ নিয়ে নেয় । তারপর একসময় টেকটিউন্স নামের আরেকটা সাইটের সাথে দেখা হয় । সেখান থেকে জানতে পারলাম আসল ফ্রিল্যান্সিং কাকে বলে । তারপর আমার এক আশ্চর্য মুহুর্ত । আরে, আমিতো ওয়েবসাইট বানানোর সব কোডিং জানি । ইতিমধ্যে আবার বিভীষিকা নামে একটা হরর ওয়েবসাইট আমি তৈরী করে ফেলেছি । স্পাম হওয়ার ভয়ে কোনো ওয়েবসাইটের লিংক দিচ্ছি না । কেউ কিছু মনে করবেন না প্লিজ ।
তখন ওডেস্কে একটা একাউন্ট খুলে একাউন্ট ৯০% করে ফেলি । তখনই এপ্লাই করে শুরু করি । ২০১২ সালের আগস্ট মাসে একাউন্ট খুলেছিলাম । কোনো কাজ পাচ্ছিলাম না । তাই, দুইচারদিন পরেই এপ্লাই করা স্টপ করে দেই । তারপর কয়েকদিন এভাবেই গেল । জুলাই মাসের দিকে একটা ব্লগে পড়লাম ওডেস্ক বাঙ্গলাদেশে ওয়ার ট্রান্সফার নাকি যেন চালু করেছে । ওইটা দেখে আবার ওডেস্কের কথা মনে পড়ল । ইতিমধ্যে ডোল্যান্সার Gone । অবশ্য ডোল্যান্সার থেকে অনেক কিছু পেয়েছি সেটা অস্বীকার করতে পারব না । তখন আবার ওডেস্কের একাউন্টটার কথা মনে পড়ল । সেটাতে অনেকদিন পর ঢুকে আরও কয়েকটা জব এ এপ্লাই করলাম । এপ্লিকেশন গুলান তখন ছিল এরকম => " আমি এই কাজ পারব । আমি ওয়েব প্রগ্রামিং জানি । এই কাজটা এই ল্যাঙ্গুএজ দিয়ে এভাবে করতে হবে । তাই কাজটা পেলে খুব ভালোমত করে দিতাম ।" ।
তার তিন-চারদিন পর একটা ইন্টারভিউ পেলাম । ২/ঘন্টা জব এর জন্য । ওয়ার্ডপ্রেস । দীর্ঘ দুইদিন বকবকানীর পর কাজটা পেলাম । অবশ্য কাজটা ডাইরেক্ট পাইনি । বায়ার অন্য একজনকে হায়ার করেছিল, কিন্তু সে বায়ারকে চিট করেছে । তাই পরের বার আমার দিকে কম রেটের জন্য বায়ারের নজর গেছে । আমি ৭ দিনের কাজ ২ দিনে করে দিলাম । বায়ার মহাখুশি । ২৩ ঘন্টা কাজ করে পকেটে ঢুকল মাত্র ৪৬ ডলার । সেইদিনেই আবার ওই বায়ার আরেকটা ওয়েবসাইটের কাজ করতে বলল । আরেকটা থিম বানায় দিতে হবে । এবার ও নিজেই আমার রেট দ্বিগুন করে দিল । মানে চার ডলার পার আওয়ার । এবারেরটা অবশ্য একটু বড় ছিল । কিন্তু মাত্র ৩৬ ঘন্টা টাইম কাউন্ট করেই আমি কাজটে করেদিলাম । বায়ার এবারও মহাখুশি । আবার ৫ ফিডব্যাক দিল । ব্যাস, একাউন্টে জমা হল ২০০ ডলারের মত । তারপর একটা ডিবিবিএল একাউন্ট করে ১৪-১৫ দিন পর আমার প্রথম ওডেস্ক ইনকাম হাতে পেলাম । আমার নিজের ইনকাম । এর আগেও অবশ্য ইনকাম হয়েছে । ক্লাস এইটে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি । সেটাই ছিল আমার জীবনে প্রথম আয় । এবারেরটা দ্বিতীয় এবং বড় অংকের । তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ওডেস্কে মোট ৭ টা প্রজেক্ট কমপ্লিট করেছি ও কয়েকটা এখনও রানিং আছে ।
আরও একটা বড় সংবাদ হল, ওডেস্কের এক বায়ার আমাকে তার কোম্পানী "শাইন" এর জন্য লাইফটাইম জব দিয়েছেন । শাইন এর আন্ডারে একটা সাব-কোম্পানী হল "ইজিযযি" । সেই কোম্পানীর ওয়েবসাইটের মূল প্রোগ্রামার হলাম আমি । ওয়েবসাইট তৈরী ও আজীবনের জন্য এটা মেইনটেইনেন্স আমার হাতে । বায়ার অস্ট্রেলিয়ান । ওনার সাথে মোবাইলে কথা বলে ইন্টারভিউ দিয়েছি । আমার মোবাইল নাম্বার দিয়েছিলাম ও উনি কল করেছিলেন । এই লাইফটাইম জব এর জন্য আমাকে ৭ ডলার / ঘন্টা দিচ্ছেন । আমি বলেছি, সামনে SSC পরীক্ষা । তাই আগামী তিনমাস কাজ করতে পারব না । উনি রিপ্লাইয়ে বলেছেন, "It's okay Arif. Education is most important. Keep your education well and work with ejizzy anytime you can." । এখনও এই জব রানিং আছে ।
এই হল আমার ওডেস্ক বৃত্তান্ত ।
সবশেষে আমার ওডেস্কে করা সব ওয়েবসাইটের লিস্ট দিচ্ছি । এটা স্পাম না । কারন ওয়েবসাইট আমার না । তাই ভিজিট করলে আমার কোনো লাভ নেই । যদি আমার কাজ দেখতে চান কেউ তাই শুধু এটা দিলাম ।
http://www.evalues.com
http://www.wycroc.org
http://www.1960sportsbook.com (mobile version)
http://www.howtospeakenglish.ca
http://www.recipesandproducers.com
http://www.recetasyproductores.co.uk
http://www.ejizzy.com (under moderation by me)(coming soon......)
আমার ওডেস্ক বৃত্তান্ত এখানে তুলে ধরলাম । নতুনদের জন্য উপদেশ একটাই, আমার উল্লেখ করা বই পড়েন । তারপর দেখেন রেজাল্ট । আমি দশম শ্রেণীতে পড়েও যদি এতকিছু করতে পারছি তাহলে আপনি কেন পারবেন না?
ইতিমধ্যে আমি ওডেস্ক থেকে ৪ মাসের জন্য বিরতি নিয়েছি । আমার সব রানিং ক্লায়েন্টকে বলে চার মাসের জন্য ছুটি নিয়েছি । ওনারা সবাই রাজি । কিন্তু একজনের একটা ছোট্ট কাজ ছিল । সেটা কমপ্লিট করে দিলাম । আরেকটা ৫ স্কোর । এখনও আল্লাহর অশেষ রহমতে ৫ ফিডব্যাকএই আছি । একজন ইন্ডিয়ান এর জন্য ৪,৯৮ হয়ে গেছিল । রিফান্ড করে দিয়েছি । এখন আবার ৫ । ধন্যবাদ সবাইকে ।
এই post টা কেমন লাগলো জানাবেন......Outsourcing Help for Bangladeshis