somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নীরব সাম্প্রদায়িকতা

১৭ ই মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. বাসে উঠলো এক নারী। মাথায় সিঁদুর দেখে সহজেই বোঝা যায় সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী। বাসে ওঠার পর হেল্পার হাক ছাড়লো, মহিলা সীট ছাড়েন, দিদিকে বসতে দেন। এই পর্যন্ত শুনলে মনে হবে এখানে সাম্প্রদায়িকতা কোথায়? সে তো খারাপ কিছু বলে নি। কিন্তু ভাষার ক্ষেত্রে শব্দের চেয়ে কথা বলার টোন এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অনেক বেশী অর্থবোধক। শুধুমাত্র বলার স্টাইলের কারণেই সাধারণ বাক্যটি হয়ে গেল বিদ্রুপাত্তক।

২. আমার বন্ধু অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের হার্ডকোর সাপোর্টার। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত বনাম অস্ট্রলিয়া ম্যাচ। আগেরদিন একসাথে বন্ধুকে নিয়ে আরো কয়েকজনের সাথে গল্প করছি। কে কোন দলের সাপোর্ট করবে কথা হচ্ছিল। সবাই মুসলমান, শুধু বন্ধুটি হিন্দু। আড্ডায় ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সাপোর্টারের সংখ্যা প্রায় সমান। বন্ধুটি যখন বললো সে অস্ট্রেলিয়ার সাপোর্টার, অনেকেই দেখলাম বিশ্মিত হলো। একজন তো বলেই বসলো, আপনি কীভাবে অস্ট্রেলিয়ার সাপোর্টার? বন্ধুটি স্বাভাবিকভাবে জবাব দিল, আমি ছোটবেলা থেকেই অস্ট্রেলিয়ার ফ্যান। সেই লোকের জবাব, "আমি তো জানতাম হিন্দুরা ভারতের সাপোর্ট করে"। বন্ধুটি রাগ সম্বরণ করে তড়িৎ জবাব দিল, ক্রিকেটের সাপোর্টের সাথে ধর্মের সম্পর্ক কী?

৩. ছোটবেলার স্কুলের কথা মনে পড়লো। এক হিন্দু সহপাঠী হিন্দি জানেনা শুনে বিশ্মিত আরেকজন বলল, হিন্দুরা তো সবাই হিন্দি জানে।

৪. বুয়েটের এক সিনিয়র ভাইয়া এক হিন্দু সহপাঠিনীকে জিজ্ঞেস করলো, বাংলাদেশে সেটেল করবা? নাকি ভারতে? সহপাঠিনী বাংলাদেশে সেটল করেনি সত্য। কিন্তু গন্তব্যের দেশটি ভারত নয়, কানাডা।

৫. ইসলামপুরের হিন্দুধর্মাবলম্বী বস্ত্রব্যবসায়ী ব্যবসায়ের মন্দা বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ শেষে বিদায় নিলে উপস্থিত একজনের মন্তব্য, "সব টাকা ভারতে খাটাইলে ব্যবসা ভালো হবে কীভাব!" অথচ তিনি ঐ সমাজসেবক ব্যবসায়ীকে ভালোমত জানেনও না।

৬. সামহোয়্যারইন ব্লগেও অনেক রাজনৈতিক পোস্টে ইচ্ছাকৃতভাবে বেহুদা ধর্মবিশ্বাসকে টেনে আনা হয়। কেউ হিন্দু বা কারো হিন্দু কানেকশন আছে প্রমাণ করতে পারলেই যেন সে ভারতের চর। উল্টোভাবে, কাউকে ভারতপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা গেলে তার সাথে ধুতি, পৈতা প্রভৃতি শব্দের ট্যাগ লাগানো হয়। যেন হিন্দু মানেই ভারতপন্থী, আর ভারতপন্থী মানেই হিন্দু। আরো দুঃখের বিষয় হচ্ছে,জুলভার্নের মত তথাকথিত সুশীল সিনিয়র ব্লগাররা, যাদের সামুর মডারেটররা বেহুদা তোয়াজ করে চলে, তারাও এই নীরব সাম্প্রদায়িকতাকে প্রকাশ্য সমর্থন করে চলে।

বাঙালিকে মাত্র চব্বিশ বছর শাসন করেছে পাকিস্তানিরা। কিন্তু এই অল্প সময়েই তারা অনেকগুলো পাকিপনার ভূত রেখে যেতে সমর্থ হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, "হিন্দু মানেই ভারতপন্থী, বাংলাদেশের প্রতি তারা অনুগত নয়" এই ধারনা। চল্লিশ বছর আগে পাকিস্তান থেকে আলাদা হলেও আমাদের একটি বড় জনগোষ্ঠী এখনো পাকিস্তানী মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে রয়েছে। যার নিদর্শন এই নীরব সাম্প্রদায়িকতা। হিন্দু ধর্মাবলম্বী একটা শিশুকে ছোটবেলা হতে মালাউন, চাড়াল এইসব প্রকাশ্য সাম্প্রদায়িক গালাগালির সাথে সাথে এসকল নীরব সাম্প্রদায়কতাও সহ্য করে যেতে হয়। অনেক হয়তো নিতান্তই না বুঝে বা ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে এসব করে থাকে। কিন্তু তাদের এই ধারণার পেছনে কাজ করছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ ঘৃণাবাদী শক্তি।

পৃথিবীর সকল সমাজেই বিভিন্ন ধরণের সাম্প্রদায়িকতা কম বেশী দেখা যায়। যেসকল দেশে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণ(race) এর লোক বসবাস করে, সেখানে দেখা যায় বর্ণবাদ। যেসকল সমাজে একই বর্ণের ভিন্ন ভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস সেখানে রয়েছে এথনিক ডিস্ক্রিমিনেশন। আমাদের সমাজ নৃতাত্ত্বিকভাবে অনেকটাই সুষম। বৈচিত্র্য যতটুকু আছে, তা ধর্মে। কিন্তু সেটাও অনেকের সহ্য হয় না। "৯৭% মুসলিমের দেশ" এর সাম্প্রদায়িক শক্তি সত্যি সত্যি ৯৭% না হওয়া পর্যন্ত সাম্প্রদায়িকতামুক্ত হবে বলে মনে হয় না। বাকি ৩% হয়তো তারা রেখে দিবে যাদুঘরের স্পেসিমেন হিসেবে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১১ রাত ৮:৩৮
১৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×