somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এস.এস.সি পরবর্তী জিবনঃনির্মম শিক্ষাব্যাবস্থার সম্মুখে

১৫ ই মে, ২০১১ রাত ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“মন খারাপ করার কিছু নেই, এস।এস।সি-এর রেজাল্ট খারাপ হলেও ভবিষ্যতের বাকী পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হবে”।

এস.এস.সি তে খারাপ করার পর কোন পরিচিতকে সান্ত্বনা দেবার ক্ষেত্রে আমরা উপরের বাক্য বা তার সমপোযোগি ভাষাই ব্যাবহার করে থাকি।কিন্তু আমরা কয়জন-ই বা অনুভব করি যাকে সান্ত্বনা দিচ্ছি,তার জীবনে অভিশাপ-এর থ্রিডি শুটিং গেইম রেজাল্ট-এর পরপর-ই শুরু হয়ে গিয়েছে??

নিজের এস.এস.সি পরবর্তী অভিজ্ঞতা দিয়েই ব্যাখা করছি।২০০৬ সালে এস.এস.সি-তে জিপি-এ ৫ পাবার পর আনন্দের সীমা ছিলো না,কারন নিজের যোগ্যতার বিচারে আমার কাছে ভালো রেজাল্ট ছিলো ৪.৫ এর উপরে।সেদিক থেকে রেজাল্ট ছিল অপ্রত্যাশিত,তাই খুশির প্লাবন-ও ছিলো দুকূল উপচানো।পরিবারের চাপে বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে হয়েছিলো।আমি জানতাম,অঙ্কের মুখস্থের পালে হাওয়া লাগিয়ে বিজ্ঞান সমুদ্রে বেশিদূর পাড়ি দেয়া আমার তরীর পক্ষে সম্ভব নয়।তাই ঘরের পাশে নটরডেম কলেজে বানিজ্য বিভাগে ভর্তি হতেই আগ্রহী ছিলাম, কলেজ ভর্তি পরীক্ষাতে উতরাতে পারলেই হলো।আমার সাহায্যে এগিয়ে এলো ততকালীন সরকার।নিয়ম করা হলো,কলেজে ভর্তি হবে এস.এস.সি এর রেজাল্ট-এর ভিত্তিতে।যদি ভর্তি আসনের জন্য একই জিপিএ প্রাপ্ত অধিক শিক্ষার্থী থাকে তাহলে যে শিক্ষার্থীর বয়স বেশি তাকে বিবেচনা করা হবে(এই সিস্টেম এখনো চালু আছে)।অভীশাপ-এর থ্রিডি গেইম শুরু হলো তখন থেকেই। নটরডেম কলেজের বানিজ্য বিভাগে চান্স পেলাম না, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বানিজ্য বিভাগের নির্ধারিত আসনসমূহে যারা সুযোগ পেয়েছিলো তাদের চতুর্থ বিষয় ছাড়া জিপিএ ছিলো ৪.৭৫ বা তার অধিক।চতুর্থ বিষয় ছাড়া আমার জিপিএ ছিলো ৪.৬৩।কি আর করা, অন্য কোন কলেজে পড়বো না এমন নাছড়বান্দা হওয়ায় মা-আর বড় বোনের পরামর্শে ভর্তি হলাম নটরডেমের মানবিক বিভাগে।আমার যখন ক্লাশ শুরু হলো আমার থেকেও ভালো রেজাল্ট করা বন্ধুরা বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য তখনো হারিকেন দিয়ে কলেজ খুজে যাছিল।নিজেকে কিছুটা এগিতে রেখেছি ভেবে কলেজে যাওয়া শুরু করি। অভিশাপ-এর থ্রিডি শুটিং গেইম-এর শুটিং শুরু হলো তখনই।আত্নীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সবার একই পিস্তলে শুটিং, “জিপিএ ৫ পাইয়াও আর্টস?আর্টস তো মাইয়াগো সাব্জেক্টন!পড়ার মতো আর কিছু পাইলা না?”, তাদের শুটিং-এ আমি রীতিমত ঝাঝড়া।একসময় ভাবলাম, বিজ্ঞানে ফিরে যাই।তখনো অনেক কলেজে ভর্তি চলছিলো,তাই খোজ নিলাম এবং খোজ নিয়ে জানলাম আরো ভয়ঙ্কর সব তথ্য।সোনার ডিম (গোল্ডেন ৫) পাড়া সত্তেও নটরডেমে বিজ্ঞান বিভাগে অনেক ভর্তি হতে পারে নাই।ঢাকা কলেজ,রেসিডেন্সিয়াল মডেল আর রাইফেলস পাব্লিকেও পড়ার সু্যোগ পেয়েছে চতুর্থ বিষয় ছাড়া কমপক্ষে ৪.৭৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা।আর সীটি কলেজে একটি নির্দিষ্ট দিনে একেক জিপিএ-প্রাপ্তদের একেক সময়ে ডাকা হয়েছিলো।আগে গেলে বাঘে খায় প্রবাদটি ভুল প্রমান করে যারা আগে গিয়েছিলো তারাই ভর্তি হতে পেরেছিলো।শেষমেষ মানবিকেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেই এবং কলেজ জীবনটি ছিলো জীবনের সেরা সময়।

এই ছিলো তখনকার পরিস্থিতি।বর্তমানে নাকি সে পরিস্থিতি বুড়িগঙ্গার পানি থেকেও ঘোলাটে হয়েছে।জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা আরো বেড়েছে,বেড়েছে কলেজে ভর্তির চাপও।আর ঢাকার ছেলেদের জন্য সেই চাপ খাসীর চাপকে ছাড়িয়ে প্রায় হাতির চাপ।কারন ঢাকার ছেলেদের ভালো কলেজের সংখ্যা মেয়েদের তুলনায় কম। মেয়েদের ভিকারুন্নিসা,হলিক্রস,আইডিয়াল এমনকি সিদ্ধেশরী বা মতিধিল মডেল-প্রত্যেকটি কলেজের স্কুল রয়েছে।তাই যারা এইসব কলেজের স্কুল থেকে পাশ করছে, তাদের কলজে ভর্তি হবার চিন্তা নেই।অন্যদিকে ছেলেদের কলেজের নাম বললে আসে তীব্র প্রতিযোগিতাতাপুর্ণ ঢাকা কলেজ,নটরডেম,রেসিডেন্সিয়াল মডেল বা সেইন্টজোসেফ।এর মধ্যে রেসিডেন্সিয়াল মডেল বা সেইন্টজোসেফ-এরই শুধু স্কুল রয়েছে,কিন্তু কলেজে এদের আসন সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।অন্য সুপরিচিত কলজ যেমন রাইফেলস পাব্লিক বা সিটি কলেজে ছেলেদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে মেয়েদের সাথে।ঢাকার কলেজসমূহে ছেলদের ভর্তির চাপ বেড়ে যাওয়ার একটি বড় কারন হলো ঢাকার বাইরে থেকে প্রচুর ছেলে পরিবার ছেড়ে চলে আসে ঢাকায় পড়ার জন্য।মেয়েদের ক্ষেত্রে এমনটি তুলনামূলকভাবে অনেক কম দেখা যায়,আমাদের দেশের সমাজব্যাস্থা এখনো তেমন পরিপুষ্ট হয়নি যেখানে একজন কলেজপড়ুয়া মেয়ে পরিবার ছেড়ে মেসে থেকে ঢাকায় পড়তে পারবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়,সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারী মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাসমুহে এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি পরীক্ষার জিপিএ যোগ করা হয়।কোন সন্দেহ নেই,তীব্র প্রতিযোগিতাপুর্ন এই সব পরীক্ষায় (যেখানে কিনা ১ নম্বরের ব্যাবধানে জন্য ১০০জনের মেধাক্রম হেরফের হয়) এস.এস.সিতে (এবং এইচ.এস.সি-তেও) কম জিপিএ প্রাপ্তরা বেশ পিছিয়ে পড়বে।অনেক সময় দেখা যায় ভর্তি পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেয়েও এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি-এর স্কোর কম থাকায় একজন শিক্ষার্থী আরেকজনের থেকে মেধাস্থানে পিছিয়ে পড়েছে। বিজ্ঞান বিভাগে চতুর্থ বিষয় ব্যাতিত জিপিএ চার-এর কম পেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষাই দিতে দেয়া হয় না।আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি,সৃজনশিল পদ্ধতি আরোপিত হওয়া সত্তেও প্রাইভেট বানিজ্য এবং কোচিং সেন্টার-এর দ্বৌরথ আশানরূপ হারে কমেনি কারন এই তীব্র প্রতিযোগিতা।জিপিএ কম থাকার কারনে সন্তান পিছিয়ে পড়ুক এমনটি কোন অভিভাবকের কাছেই কাম্য নয়,তাই স্বভাবতই তিনি সন্তানের জন্য কোন অপশন হাতছাড়া করতে চাইবেন না।এর ফলে কোন কোন (এই সংখ্যা নেহাত কম নয়) অভিভাবকের কাছে জিপিএ ৫ একটি মুনাফার নাম যা সমাজে নিজের পরিবারের প্রেষ্ট্রিজ বাড়ায় এবং যা (তাদের মতে) অর্জিত হতে পারে প্রাইভেট কোচিং-এ বিনিয়গের মাধ্যমে।

কোন সন্দেহ নেই যারা জিপিএ ৫ পাচ্ছে তারা প্রত্যেকেই মেধাবী,কিন্তু তাদের মেধার মূল্যায়নে কালো দাগ লেগে যায় যখন তারা প্রত্যাশিত কলেজে কিংবা পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নানাবিধ শর্ত-এর মারপ্যাচে পড়ে নিজ পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে ব্যার্থ হয়।আমি যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ভর্তির সমস্যার কথা বলেছিলাম,তার বিকল্প যুক্তি হতে পারে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ।এখন বেশ কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাছে।তবে এ আগ্রহহের প্রয়াস শুধুমাত্র সামর্থ্যবানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।এক্ষেত্রেও, শিক্ষা যতটা না অধিকারের আকার তার থেকে বেশি বিনিয়োগের অশরীরি।

আমাদের শিক্ষাকে তুলনা করা যেতে পারে একটি দৌড় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে।শিক্ষার্থীরা যখন এস.এস.সি ট্র্যাক অতিক্রম করে এইচ.এস.সি ট্র্যাকে দৌড়তে শুরু করে তখন দৌড়াবার জন্য তাদের জিপিএ জানতে চাওয়া হয়, এইচ.এস.সি শেষ হবার পর ট্র্যাক বিভক্ত হয়ে সরকারী এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়।বেসরকারি ট্র্যাকের দৌড়বিদদের ফি দিতে দিতে তটস্থ থাকতে হয়।অন্যদিকে সরকারি ট্র্যাকের দৌড়বিদদের দৌড় বাধাগ্রস্ত হয় কখনো সেশন জ্যামের কারনে,কখনো বা ছাত্ররাজনীতি নামক বিষবৃক্ষের ছড়ানো বিষে ট্র্যাক বিষাক্ত হবার কারনে।কেউ দৌড়তে দৌড়তে আবিস্কার করে সে আকাশে উড়ছে,পরক্ষনেই আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে তার স্বপন থেতলে যায়।অনেকে দৌড় শুরু করেছে পিছিয়ে থেকে (পড়ুন অর্থের অভাবে),তাদের ভেতর কেউ কেউ দৌড় শেষ করতে পেরে অদম্য মেধাবী হিসেবে স্বীকৃতি পায়,কেউ হয়তো আগেই হাল ছেড়ে দিয়ে ট্র্যাকে শুয়ে পড়েছে ক্লান্তিতে।দৌড় শেষকারীরাই বিজয়ী,যারা ক্লান্তিতে শুয়ে পড়েছে বা যারা আছড়ে পড়েছে স্বপ্নের শিখর থেকে তাদেরকে আবার তুলে দাড়াতে আমাদের শর্তের ভাড়ে ন্যুব্জ এবং বর্তমানে সৃজনশীলতার সাফাই গাওয়া শিক্ষাব্যাবস্থা হাত বাড়িয়ে দেয় কি???
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×