somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাবা শরীফের কিশওয়া কাহিনী

২৬ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিস্তারিত এখানে
Click This Link
মোহাম্মদ আবুল হোসেন: সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে সম্মানিত, সবচেয়ে মহিমান্বিত স্থান হলো পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থিত আল মসজিদুল হারাম। একে কাবা শরীফও বলা হয়। বিশ্বজমিনের সব মুসলমান প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন এ মসজিদকে কিবলা করে। শত শত মুসলমান এ কাবাকে জীবনে একবার স্পর্শ করতে, একবার সেখানে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পাগলপারা হয়ে থাকেন। প্রতিদিন তাই তো অসংখ্যা মানুষ এই কাবাকে তাওয়াফ করেন। কেউবা উমরাহ করার সময়। কেউবা মনের অপূরণীয় সাধ মেটানোর জন্য। এক আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রেমে মশগুল তারা সবাই। তাদের কাছে, মুসলমানদের কাছে এর মহত্ব অপরিসীম। এ কাবাঘরকে চারদিক থেকে যে সুদৃশ্য কাপড়ে ঢেকে রেখেছে তার নাম কিশওয়া আল কাবা। এর রয়েছে বিশেষত্ব। আমদানি করা খাঁটি সিল্ক দিয়ে তৈরি হয় কিশওয়া। এতে স্বর্ণালি ও রুপালি সুতা দিয়ে এব্রয়ডারি করা হয়। প্রতি বছরে একবার পরিবর্তন করা হয় কিশওয়া। তা পরিবর্তন করে যখন নতুন কিশওয়া লাগানো হয় তার আগেই তাতে পবিত্র কোরআনের আয়াত সেলাইয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। কিশওয়া আল কাবা’র জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ বাজুদেহ বলেছেন, কিশওয়াতে যে আয়াত সেলাইয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় তার পুরোটাই হজ সম্পর্কিত। প্রতিবারই একই আয়াত সেলাই করা হয়। তিনি আরও বলেছেন, কিশওয়া তৈরি করা একটি ব্যতিক্রমী প্রথা। এ কাজ করতে পেরে সৌদি আরবের মানুষ নিজেদের সম্মানিত মনে করেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী চলছে এ প্রথা। এ সম্মান সৌদি আরবের মাথায় মুকুটের মতো। সুইজারল্যান্ড বা ইতালি থেকে সিল্ক সুতার কাঁচামাল আমদানি করা হয়। একই সঙ্গে আমদানি করা হয় স্বর্ণালি ও রুপালি সুতা। সিল্কের সাদা কাঁচামালের বাক্সগুলো যখন এসে পৌঁছে তা চলে যায় কিশওয়া কারখানায়। সেখানে একবার দু’বার করে মোট তিনবার ধোয়া হয়। এর মাধ্যমে সিল্কের কাঁচামালের ওপর দেয়া মোমের স্তর পরিষ্কার করা হয়। এরপর তাতে রঙ করা হয়। চারটি বিশেষ রঙে রাঙানো হয় তা। রঙগুলো হলো- কালো, সবুজ, হলুদ ও লাল। এই চারটি রঙের সুতা চার রকম কাজে ব্যবহার করা হয়। কালো সুতা ব্যবহার করা হয় কাবা শরীফের চারদিকে দেয়াল ঢেকে দেয়ার কাজে। সবুজ ও লাল সুতা ব্যবহার করা হয় কাবা শরীফের ভিতরে। সেখানে সিল্কের কাপড় দিয়ে ভিতরের দেয়ালের অর্ধেক পর্যন্ত ঢেকে দেয়া হয়। হলুদ রঙের সিল্ক দিয়ে প্যাডের মতো স্থান তৈরি করা হয়, যার ওপর স্বর্ণালি সুতা দিয়ে পবিত্র কোরআনের আয়াত লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়া কিছু এমব্রয়ডারিতে ব্যবহার করা হয় সাদা কটনের সুতা। একটি নতুন কিশওয়া তৈরি করতে প্রায় ৮ মাস সময় লাগে। তাতে প্রয়োজন হয় ৭০০ কিলোগ্রাম সিল্কের কাঁচামাল ও ১৫০ কিলোগ্রাম স্বর্ণালি ও সিল্কের সুতার কাঁচামাল। যখন একটি কিশওয়া নির্মাণ সম্পন্ন হয় তা প্রতি বছর আরাফাত দিবসে অর্থাৎ ঈদুল আজহার আগের দিন পবিত্র কাবা শরীফে পরিয়ে দেয়া হয়। পুরনো যে কিশওয়াটি খুলে আনা হয় তা রাখা হয় ওয়্যারহাউজে। সেখানে রেখে দেয়া হয়, যতক্ষণ বাদশা তা পরিত্যাগের ডিক্রি জারি না করেন। কোন কোন রিপোর্টে বলা হয়, এই কিশওয়াটি কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। তারপর তা সিনিয়র ইসলামিক বিশিষ্টজনের কাছে পাঠানো হয় উপহার হিসেবে। ১৯৮২ সালে জাতিসংঘকে এমন এক টুকরো কিশওয়া উপহার দিয়েছিল সৌদি আরব। জাতিসংঘের মূল হলে কিশওয়ার ওই টুকরোটি প্রদর্শন করা আছে। একটি কিশওয়া তৈরিতে গড়ে বছরে ২ কোটি সৌদি রিয়েল খরচ হয়। বাজুদেহ বলেন, ১৩৪৬ হিজরি পর্যন্ত মিশরীয়রা তৈরি করতেন কিশওয়া। কিন্তু তারপর থেকে যখন প্রয়াত বাদশা আবদুল আজিজ একটি নির্দেশ জারি করেন। তাতে বলা হয়, কিশওয়া তৈরির জন্য আল মসজিদ আল হারামের কাছে একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বর্তমানে সেই কারখানায় প্রায় ১৫০ জন মানুষ চাকরি করেন। তারা সবাই সৌদি আরবের। তাদের অনেকের রয়েছে এ কাজে ভীষণ আগ্রহ ও পূর্ব অভিজ্ঞতা। পবিত্র কাবা শরীফকে বছরে দু’বার ধোয়া হয়। একবার মহররমে। আরেকবার রমজান মাসের আগে শাবান মাসে। কাবা শরীফকে ধোয়ার মধ্যেও আছে বিশেষত্ব। গোলাপ জল, আগরবাতির সুগন্ধ ও জমজমের পানি দিয়ে ব্যবহার করা হয় এ কাজে। বাজুদেহ বলেন, কাবা শরীফের নিচের দিকের চার দেয়াল সাধারণ নিয়মেই পরিষ্কার করা হয়।
ইতিহাসের পাতা থেকে
সৌদি আরবে পবিত্র মক্কা নগরীতে মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্রতম মসজিদ কাবাকে যে বিশেষ ধরনের কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয় তাকে বলা হয় কিশওয়া। আরবিতে এর নাম কিশওয়া আল কাবা। প্রতি বছর একবারই এই কিশওয়া পরিবর্তন করা হয়। তা করতে অনেক মানুষ প্রয়োজন হয়। ট্রলি ব্যবহার করে রশি বেঁধে নতুন কিশওয়া টেনে লাগানো হয় কাবা শরীফের ছাদে আংটা আকৃতির বিশেষ অবলম্বনের সঙ্গে। পবিত্র হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো আরাফাত দিবস। এদিন হজযাত্রীরা ঐতিহ্যবাহী আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন। ৯ই জিলহজ তারিখে হাজীরা সেখানে সমবেত হন। এ দিনই পাল্টে দেয়া হয় কিশওয়া। প্রতি বছর পুরনো কিশওয়া সরিয়ে ফেলা হয়। আগেই বলা হয়েছে, পুরনো কিশওয়া খুলে তা ছোট ছোট টুকরো করা হয়। তারপর তা দেয়া হয় নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে। দেয়া হয় সফররত মুসলিম উচ্চপর্যায়ের অতিথি ও বিভিন্ন সংস্থাকে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এর আবার কিছু অংশ হজের সুভেনির হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়। শুরুর দিকে উমর বিন আল খাত্তাব টুকরো টুকরো করে কাটতেন কিশওয়া। তারপর তা হজযাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করতেন, যাতে তারা ওই কিশওয়ার টুকরোগুলো দিয়ে মক্কার উত্তপ্ত গরম থেকে রক্ষায় ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমানে একটি কিশওয়া তৈরি করতে খরচ পড়ে ১ কোটি ৭০ লাখ সৌদি রিয়াল। একটি কিশওয়া দিয়ে ৬৫৮ বর্গমিটার এলাকা ঢেকে দেয়া যায়। ৬৭০ কিলোগ্রাম সিল্ক দিয়ে তৈরি করা হয় একটি কিশওয়া। এতে পবিত্র কোরআনের যে আয়াত এমব্রয়ডারি করা হয় তাতে ব্যবহার করা হয় ১৫ কিলোগ্রাম স্বর্ণের সুতা। মোট ৪৭ টুকরা কাপড় জোড়া দিয়ে বানানো হয় একটি কিশওয়া। এর এক একটি টুকরার মাপ দৈর্ঘ্যে ১৪ মিটার ও প্রস্থে ১০১ সেন্টিমিটার। দক্ষ কারিগররা যখন একটি কিশওয়া তৈরি সম্পন্ন করেন তখন তা ৯ই জিলহজ পবিত্র কাবা শরীফের চারদিকে টানিয়ে দেয়া হয়। এর নিচের দিকটা ঝুলন্ত থাকলেও তাতে যুক্ত থাকে তামার রিং। এই রিংয়ের সাহায্যে নিচের অবলম্বনের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে দেয়া হয় কিশওয়া।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×