জাফর ইকবাল স্যার তার “রঙ্গিন চশমা” বইতে তার হল জীবনের এক দিনের একটি সমস্যার কথা লিখেছিলেন। একদিন তিনি হল ক্যান্টিনে শিং মাছ দিয়ে ভাত খেতে বসেছেন, খাওয়ার এক পর্যায়ে খেয়াল করেন তার শিং মাছের মুখের মধ্যে বড়শি (মাছটা বড়শি দিয়ে ধরা হয়েছিল), তারপর আরও একটু খেয়াল করে বুঝতে পারেন যে কেঁচোটি বড়শিতে গাঁথা হয়েছিল মাছটি ধরার জন্য, সেটা এখনো এই বড়শিতে লেগে আছে! এবার ভাবুন উনার কি অবস্থা হয়েছিল।
কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু বলছিল, ক্যান্টিনে খেতে গেলেই বোঝা যায় বাজারে কোন জিনিসের দাম সবচেয়ে কম, যেইদিন আলুর দাম কম সেইদিন সব খাবারের আইটেমে আলু আর আলু!! খিঁচুড়িতে ভাতের চেয়ে আলুর পরিমাণ বেশি থাকে।
আমার এক বান্ধবী আছে, যে পারতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উঠে না। কারণ, ঠাসাঠাসি করে বাসে উঠতে তার ভালো লাগে না।
এমন হাজারো সমস্যা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের, যা বলে শেষ করা যাবে না।
তবুও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা পিছিয়ে নেই। এত সংকটের মাঝেও তারা ভালো ফলাফল করছে, দেশের বাইরে যাচ্ছে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার জন্য, দেশের মধ্যেও তারা ভালো ভালো অবস্থানে চাকরি করছে।
ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে, ডিবেট করছে, বিভিন্ন সামাজিক কাজে বিনামূল্যে শ্রম দিচ্ছে, বাঁধনের হয়ে কাজ করছে, সারাদিন কোন পুষ্টিকর খাবার না পেলেও মুমূর্ষ রোগীকে রক্ত দিচ্ছে।
সামাজিকতায় তারা সবার চেয়ে এগিয়ে, হাতের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রাখছে ফেইসবুকে, মিগ৩৩-তে এবং বিভিন্ন মেসেঞ্জারে আড্ডা দিচ্ছে বন্ধুদের সাথে।
তারা রাতে ঘুমায় না। কেউ আছে গিটার নিয়ে। কোন এক গায়ক এক মুভিকে বিখ্যাত করার জন্য গেয়েছিলেন “give me some sun-shine give me some rain, give me another chance I wanna grow up once again.”
আমাদের ক্যাম্পাসের ছেলে-মেয়েরা সেই গান গাচ্ছে নিজের সব আবেগ মিশিয়ে, সত্যি আর একবার চান্স চায় তারা, তাই তাদের সুরে সেই গান হয়ে উঠে আসল গায়কের চেয়েও বেশি প্রাণবন্ত।
আবার কেউ তার ভালোবাসার মানুষকে নিজের সব প্রতিভা উজার করে বুঝানোর চেষ্টা করছে, তার পৃথিবীটা কত সুন্দর!
কেউ আবার সাদা কাগজ নিয়ে কবিতা লিখতে বসে, সেটা কোন বৃথা চেষ্টা নয়, তার কাগজের লেখা কবিতা থেকে যে লাইনটা পাঠ করবে, সেটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুনলে আরও কিছুদিন বেঁচে থাকতে চাইতেন এই পৃথিবীতে!!
মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। পোষাক সচেতনতা ঠিক রেখে তারা নিজেদের সাজিয়ে রাখছে পরীর মত করে! তারাও বিতর্ক করছে, ভালো রেজাল্ট করছে। মনের মানুষের(!) জন্য রান্না করছে, আর TSC তে বসে খাচ্ছে।
এই প্রাণের মেলা প্রমাণ করে আমরা ভালো থাকতে জানি এবং ভালো আছি।
সত্যিই ভালো আছি। কয়েকদিন পর হল আর ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে হবে। তখন? যে হলে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না বলে প্রভোস্ট স্যারকে গালি দিতাম, সেই আমরাই এই শহরের সাধারণ মানুষ হয়ে কি করে জীবন কাটাব ? কাকে গালি দিব ?
[এই লিখাটি "বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যাবস্থা এবং একটি গল্প" এর সমাধান নয়। লেখাটির মূল বিষয় আলাদা...
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১১ রাত ৮:০৫