somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুকুশিমা থেকে চিঠিঃ জাপানিদের উচ্চ নৈতিকতার নমুনা

১৫ ই মে, ২০১১ বিকাল ৫:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নোটঃ ভিয়েতনামী ইমিগ্রান্ট হা মিন থান জাপানের ফুকুশিমায় পুলিশ হিসাবে কর্মরত। এই চিঠিটি তিনি লিখেছেন ভিয়েতনামে অবস্থানরত তার বন্ধুকে। চিঠিটির ইরেজী অনুবাদ করেন এন্ড্র ল্যাম এবং ১৯ মার্চ এটি সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হয়। চিঠিটি বাংলা অনুবাদে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। বিস্তারিত নিচের লিংকে পাবেন।

---- ------ --------------- -------
বন্ধু,
কেমন আছ? বিগত কয়েক দিন বিভিষিকাময় দিন যাচ্ছে। আমি চোখ বন্ধ করলে লাশ দেখি, চোখ খুল্লেও দেখি লাশ।

আমরা প্রতিদিন ২০ ঘন্টা করে কাজ করছি। মনে হয় ৪৮ ঘন্টায় দিন হলে ভাল হতো! তাহলে উদ্ধার কাজ আরো ভাল ভাবে করা যেত।

এখন পানি ও বিদ্যুৎ নাই, খাবারও অপ্রতুল।

আমি এখন ফুকুশিমায়, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের ২৫ কিমি এর মধ্যে। আমার এত কিছু বলার আছে যে সব বলতে গেলে দুর্যোগের সময় মানুষের ব্যবহার ও সম্পর্কের বিষয়ে একটি উপন্যাস হয়ে যাবে।
জনগন বেশ শান্ত এবং ভদ্রস্থ আচরন করছে। অপর কে শ্রদ্ধা করা এবং অন্যের অধিকারের বিষয়ে সবাই অনেক সচেতন। তাই এত বড় বিপর্যয়ের পর অবস্থা যত খারাপ হতে পারত তত খারাপ নয়।

কিন্তু ভবিষ্যতে কি হবে বলা যায় না। সবাই তো মানুষ, যখন ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হবে তখন কি এই ভদ্রতা তারা ধরে রাখতে পারবে? সরকার অবশ্য সব রকম চেষ্টায় করে যাচ্ছে, আকাশ পথে খাদ্য ও ঔষধ পাঠানো হচ্ছে। তবে যা সাহায্য আসছে তা সমুদ্রে কয়েক ফোটা লবন ফেলার মতই অপ্রতুল!

একটা ঘটনা তোমাকে বলব। যেখানে একজন জাপানী শিশুর কাছে আমি একজন বড় মানুষ হয়ে শিখলাম কিভাবে ভাল মানুষ হতে হয়!

গতকাল আমার দ্বায়িত্ব ছিল একটা স্কুলে, যেখানে একটি চ্যারিটি প্রতিসঠান খাদ্য বিতরন করছিল। মানুষের লাইন ছিল লম্বা, লাইনের শেষে ছিল ৯ বছরের একটা ছেলে যে একটি টি-শার্ট ও হাফ প্যান্ট পরা ছিল।
খুব ঠান্ডা ছিল আবহাওয়া। ছেলেটিও ছিল লাইনের একদম শেষের দিকে। আমি ভয় পাচ্ছিলাম তার সময় আসতে আসতে খাবার শেষ হয়ে যায় কিনা। আমি তার সাথে কথা বললাম। সুনামির সময় সে ছিল স্কুলে। তার বাবা কাছেই কাজ করেন। তিনি গাড়ি চালিয়ে ছেলেকে নিতে আসছিলেন। ছেলেটি স্কুলের ৩য় তলার বারান্দা থেকেই দেখতে পায় যে তার বাবার গাড়িটি সুনামীতে ভেসে গেছে।

আমি তার মার কথা জিজ্ঞেস করলাম। সে বলল তাদের বাড়ি ছিল সমুদ্রের কাছেই। তার মা আর ছোট বোন ছিল বাসায়। তার মনে হয় না তারা বাচতে পেরেছে। তার চোখে ছিল অশ্রু যখন সে তার নিকটাত্মীয়দের কথা বলছিল।

ছেলেটি ঠান্ডায় কাপছিল। আমি আমার পুলিশের জ্যাকেট টি খুলে তাকে দিলাম। জ্যাকেটের মধ্যে ছিল আমার খাবারের প্যাকেট, সেটিও বের করে তাকে দিলাম। বললাম এটি আমার ভাগের খাবার, আমার খাওয়ার পর বেঁচেছে, তুমি এই খাবারটা খাও, এই লাইনে তোমার সময় আসতে আসতে খাবার নাও থাকতে পারে।

ছেলেটি খাবার টি নিল এবং আমাকে বো করল। আমি ভেবেছিলাম সে ততক্ষনাত খাবারটি খাবে কিন্তু সে খেল না। সে খাবারটি নিয়ে লাইনের সামনে গেল এবং বিলির জন্য রাখা খাবারের মধ্যে সেটি রেখে দিয়ে সে লাইনে তার জায়গায় ফিরে আসল।

আমি একটা ধাক্কার মত খেলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি খাবারটি না খেয়ে ওখানে রেখে আসলে কেন? সে বলল আমার চেয়েও ক্ষুধার্ত লোক এই লাইনে আছে। খাবারটা ওখানে রাখলে ওরা সমান ভাবে বিতরন করতে পারবে।

আমি অন্য দিকে চেয়ে চোখের জল মুছলাম।

যে সমাজে নয় বছরের বাচ্চার মধ্যে এরকম দ্বায়িত্ববোধ জন্ম নেয় তারা নিশ্চয় মহান জাতি, বড় মানুষ!!

তুমি ও তোমার পরিবারের প্রতি শুভেচ্ছা রইল। আমার ডিউটির সময় শুরু হয়ে যাবে এখনই।

হা মিন থান....

বিস্তারিত এই লিংকে দেখুনঃ
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১১ সকাল ৯:১৪
২১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×