নোটঃ ভিয়েতনামী ইমিগ্রান্ট হা মিন থান জাপানের ফুকুশিমায় পুলিশ হিসাবে কর্মরত। এই চিঠিটি তিনি লিখেছেন ভিয়েতনামে অবস্থানরত তার বন্ধুকে। চিঠিটির ইরেজী অনুবাদ করেন এন্ড্র ল্যাম এবং ১৯ মার্চ এটি সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হয়। চিঠিটি বাংলা অনুবাদে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। বিস্তারিত নিচের লিংকে পাবেন।
---- ------ --------------- -------
বন্ধু,
কেমন আছ? বিগত কয়েক দিন বিভিষিকাময় দিন যাচ্ছে। আমি চোখ বন্ধ করলে লাশ দেখি, চোখ খুল্লেও দেখি লাশ।
আমরা প্রতিদিন ২০ ঘন্টা করে কাজ করছি। মনে হয় ৪৮ ঘন্টায় দিন হলে ভাল হতো! তাহলে উদ্ধার কাজ আরো ভাল ভাবে করা যেত।
এখন পানি ও বিদ্যুৎ নাই, খাবারও অপ্রতুল।
আমি এখন ফুকুশিমায়, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের ২৫ কিমি এর মধ্যে। আমার এত কিছু বলার আছে যে সব বলতে গেলে দুর্যোগের সময় মানুষের ব্যবহার ও সম্পর্কের বিষয়ে একটি উপন্যাস হয়ে যাবে।
জনগন বেশ শান্ত এবং ভদ্রস্থ আচরন করছে। অপর কে শ্রদ্ধা করা এবং অন্যের অধিকারের বিষয়ে সবাই অনেক সচেতন। তাই এত বড় বিপর্যয়ের পর অবস্থা যত খারাপ হতে পারত তত খারাপ নয়।
কিন্তু ভবিষ্যতে কি হবে বলা যায় না। সবাই তো মানুষ, যখন ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হবে তখন কি এই ভদ্রতা তারা ধরে রাখতে পারবে? সরকার অবশ্য সব রকম চেষ্টায় করে যাচ্ছে, আকাশ পথে খাদ্য ও ঔষধ পাঠানো হচ্ছে। তবে যা সাহায্য আসছে তা সমুদ্রে কয়েক ফোটা লবন ফেলার মতই অপ্রতুল!
একটা ঘটনা তোমাকে বলব। যেখানে একজন জাপানী শিশুর কাছে আমি একজন বড় মানুষ হয়ে শিখলাম কিভাবে ভাল মানুষ হতে হয়!
গতকাল আমার দ্বায়িত্ব ছিল একটা স্কুলে, যেখানে একটি চ্যারিটি প্রতিসঠান খাদ্য বিতরন করছিল। মানুষের লাইন ছিল লম্বা, লাইনের শেষে ছিল ৯ বছরের একটা ছেলে যে একটি টি-শার্ট ও হাফ প্যান্ট পরা ছিল।
খুব ঠান্ডা ছিল আবহাওয়া। ছেলেটিও ছিল লাইনের একদম শেষের দিকে। আমি ভয় পাচ্ছিলাম তার সময় আসতে আসতে খাবার শেষ হয়ে যায় কিনা। আমি তার সাথে কথা বললাম। সুনামির সময় সে ছিল স্কুলে। তার বাবা কাছেই কাজ করেন। তিনি গাড়ি চালিয়ে ছেলেকে নিতে আসছিলেন। ছেলেটি স্কুলের ৩য় তলার বারান্দা থেকেই দেখতে পায় যে তার বাবার গাড়িটি সুনামীতে ভেসে গেছে।
আমি তার মার কথা জিজ্ঞেস করলাম। সে বলল তাদের বাড়ি ছিল সমুদ্রের কাছেই। তার মা আর ছোট বোন ছিল বাসায়। তার মনে হয় না তারা বাচতে পেরেছে। তার চোখে ছিল অশ্রু যখন সে তার নিকটাত্মীয়দের কথা বলছিল।
ছেলেটি ঠান্ডায় কাপছিল। আমি আমার পুলিশের জ্যাকেট টি খুলে তাকে দিলাম। জ্যাকেটের মধ্যে ছিল আমার খাবারের প্যাকেট, সেটিও বের করে তাকে দিলাম। বললাম এটি আমার ভাগের খাবার, আমার খাওয়ার পর বেঁচেছে, তুমি এই খাবারটা খাও, এই লাইনে তোমার সময় আসতে আসতে খাবার নাও থাকতে পারে।
ছেলেটি খাবার টি নিল এবং আমাকে বো করল। আমি ভেবেছিলাম সে ততক্ষনাত খাবারটি খাবে কিন্তু সে খেল না। সে খাবারটি নিয়ে লাইনের সামনে গেল এবং বিলির জন্য রাখা খাবারের মধ্যে সেটি রেখে দিয়ে সে লাইনে তার জায়গায় ফিরে আসল।
আমি একটা ধাক্কার মত খেলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি খাবারটি না খেয়ে ওখানে রেখে আসলে কেন? সে বলল আমার চেয়েও ক্ষুধার্ত লোক এই লাইনে আছে। খাবারটা ওখানে রাখলে ওরা সমান ভাবে বিতরন করতে পারবে।
আমি অন্য দিকে চেয়ে চোখের জল মুছলাম।
যে সমাজে নয় বছরের বাচ্চার মধ্যে এরকম দ্বায়িত্ববোধ জন্ম নেয় তারা নিশ্চয় মহান জাতি, বড় মানুষ!!
তুমি ও তোমার পরিবারের প্রতি শুভেচ্ছা রইল। আমার ডিউটির সময় শুরু হয়ে যাবে এখনই।
হা মিন থান....
বিস্তারিত এই লিংকে দেখুনঃ
Click This Link