somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

:-& এক সপ্তাহের স্মৃতি :-&

১৪ ই মে, ২০১১ সকাল ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

:| এক সপ্তাহের স্মৃতি :|

এক
“আমার মত আনস্মার্ট লোককে ভালবাসার মত মেয়ে এই দুনিয়াতে আছে কিনা সন্দেহ। জীবনের বিশটি বছরে কেউ আমাকে আগ বাড়িয়ে বলে নাই, তোমাকে আমি ভালবাসি।” এই কথাগুলো আমার এক বন্ধুর । সেই রাত্রে সে তার জীবনের ডায়রী থেকে একটি মেয়ের ভালবাসা পাওয়ার আকুলতার পুরোঘটনা শুনাল। যা কতকটা নিন্মরুপ-
সুদীপ্তা, যার চেহারাটা চাঁদ ভোলা। চলাফেরায় বেশ একটি ছন্দ আছে। দেখতে কিছুটা ধৈর্যশীল মেয়েদের মত। তার বিশেষ কিছু গুণ আমাকে খুব আকর্ষণ করল।
একদিন চায়ের দোকানে বসে আড্ডায় মেতে আছি পাঁচ বন্ধু। হঠাৎ একটি মেয়ে দৌড়ে এসে উঠল আমাদের মাঝে। একটি কুকুর তার পেছনে। আমাদের পাঁচজনের হুঙ্কারে কুকুরটি পালাল জীবনের ভয়ে। আড্ডার টেবিল থেকে রোমান্টিক এক বন্ধু এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেয়েটির দিকে। একে একে সকলেরই দৃষ্টি সেই দিকে। এক সময় মেয়েটি দৃষ্টির আড়াল হলে সকলের নিরবতা কাটিয়ে আমি বলে উঠলাম “Excellent”.
বন্ধুরা বলল, “কি বন্ধু তোমার মনে ধরেছে নাকি?”
এক বন্ধু বলল- “ওসবে কাজ নাই, মেয়েটি জাতে হিন্দু।”
“কেন, হিন্দুদের সাথে কি সখ্যতা করা যায় না?”
“যায়, তবে বেশ কষ্ট তাতে। অনেক সাধনা করতে হয়।”
“আরে ভাই , সাধনা ছাড়া এই দুনিয়াতে কিইবা মিলে ?”
“তুমি এ নিয়ে সাধনা কর, আমরা সকলে তোমাকে Help করি।”
“না না সে রকম না। মেয়েটি দেখতে সুন্দর কিনা তাই বললাম। তাছাড়া বাস্তব কথা বলতে দোষ কোথায়? বোম্বের নায়ক শাহরুখ কি হিন্দু জাতের মেয়ে বিয়ে করে নাই ? বাংলাদেশের ফেরদৌসি মজুমদার কি হিন্দু জাতের ছেলে বিয়ে করে নাই ? তাদের সংসার কি চলছে না ? এ রকম ঢেড় ঢেড় উদাহরণ দেওয়া যায়। আসলে কি- ভাল লাগা, ভালবাসা অনেক সময় জাত-পাত মানে না।”
“সেই দৃষ্টান্তটা তুমিও একবার করে দেখাও না ভাই।”
“চায়ের পালা সেরে, সিগারেটের ধূয়া উড়িয়ে এক এক জনে এক এক যুক্তি দেখাচ্ছে আমাকে।”

দুই
পরের দিন একই সময়ে আবার পাঁচ বন্ধু একত্রিত হলাম। পর পর দু’দিন একই জায়গায় আড্ডা দেওয়ার কারণ হয়তবা সেই মেয়েটি। আমরা পাঁচ বন্ধু এরকমই যে রাস্তা-ঘাটে মেয়েদের উদ্দেশ্যে কখনও কোন বাজে কথা বলি না। কখনও কোন বিচ্ছিরী রকমের বাজে কাজও করি না। এই কারণে এলাকার কোন লোক আমাদের সম্পর্কে বাজে কোন মন্তব্য করতে পারে না। আমরা সিগারেট টানি তাও বেশ লুকিয়ে লুকিয়ে।
তবে এই বদঅভ্যাসটাও এখন আমরা ছেড়ে দিয়েছি।
বান্ধবীদের সাথে মেয়েটি স্কুলের যাচ্ছে। আড্ডার আসর থেকে একজনে বলে উঠল-“দেখ দেখ সেই মেয়েটি।”
আরেকজনে বলল- “চেহারাটা যেন দুধে আলতা।”
আরেকজনে বলল- “স্বাস্থ্যটাও বেশ স্লিম। সবমিলিয়ে দেখতে বেশ সুন্দর। আমাদের এই এলাকায় এর আর দ্বিতীয়টি নাই।”
আশ্চর্য, মেয়েটি আমাদের দিকেই আসছে। আমরা সকলেই চুপ। মেয়েটি আমার সোজা-সোজি অপর পাশের বেঞ্চে বসা এক বন্ধুর পিঠ ঘেষে দাড়িয়ে দোকানীর কাছে একটি ‘ECONO DX’ কলম চাইল। টাকা পরিশোধ করার সময় আমি তার নাম জানতে চাইলাম।
অতি সাবলীলভাবে বলল- “সুদীপ্তা।”
“তুমি কোন ক্লাসে পড় ?”
“ক্লাস নাইনে।”
“তোমার বাবার নাম কি?”
“গৌরি মন্ডল।”
“ক্লাসে তোমার রোল নং কত?”
“তিন।” এইসব উত্তর দিতে দিতে মেয়েটি আমাদের কাছ থেকে আস্তে আস্তে সরতে লাগল।
বন্ধুরা সকলে মিলে আমাকে বাহাবা জানাল এবং আমার কৌতুহলের তারিফ করল। মেয়েটির সাবলীল কথারও বেশ প্রশংসা করল। আমার সাথে মানাবে বেশ এ নিয়ে বেশ হাসি-ঠাট্রা হল।
“আরে ভাই শোন, আমি এত কাঁচা ছেলে না যে, যাকে-তাকে দেখলেই প্রেম নিবেদন করে বেড়াব।”
“একজন বন্ধু বলে উঠল- যাকে-তাকে দেখলে যেহেতু নাম, পিতার নাম, ক্লাস, রোলনং ইত্যাদি ইত্যাদি কথা জিজ্ঞাসা করতে পার , তাহলে ওটাও পারবে। আমাদের ভাই এসব জিজ্ঞাসা করার সাহস নাই আর প্রেম নিবেদন করারও সাহস হবে না।”
এ কথা শুনে সকলে হো-হো করে হেসে উঠল এবং এ কথার সত্যতা স্বীকার করল।
“আরে ভাই, সব কথা মেনে নিলাম। কিন্তু প্রেমটা নিবেদন করা যায় কিভাবে ?”
“এইতো হল আসল কথা।”
আমাদের মাঝে একজন আছে, যে ভাল পরামর্শ দিতে পারে। তার কাছে জানতে চাওয়া হলে সে বলল - “আরে ভাই, এতে আর ভাবনার কি? কাল স্কুলে যাওয়ার পথে রাস্তার এক পাশে নিয়ে আশিক তার মনের কথা সরাসরি খুলে বলবে এবং বলে আসবে ভেবে-চিন্তে তারপর সিদ্বান্ত দিতে।”
একজন জিজ্ঞাসা করল- “সিদ্বান্তটা কি রকম আসতে পারে মনে কর ?”
“প্রথমাবস্থায় না বলবে হয়তবা। তারপরই হল আসল খেলা। সাধনায় নামতে হবে, সাধনায়। মাঝে মাঝে এখানে এসে বসতে হবে। সামনাসামনি দেখা হলে, কেমন আছ? সাথে আরো কুশলাদীর কথা জিজ্ঞাসা করতে হবে। ঈদের সময় ঈদ কার্ড, পূজার সময় গানের ডিবিডি কিনে পাঠাতে হবে। সুন্দর করে চিঠি/এসএমএস পাঠাতে হবে। অনেক কষ্ট স্বীকার করে তবে প্রেম।”
শেষে সিগারেটের ধূয়া উড়াতে-উড়াতে সিদ্বান্ত হলÑ “কালকে স্কুলে যাওয়ার পথে আশিক, সুদীপ্তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিবে।”

তিন
পরের দিন বাড়তি সাজে সজ্জিত হলাম। ইস্তারী করা জিন্সের প্যান্ট, সুন্দর শার্ট, কালি করা সু পরিহিত অবস্থায় বন্ধুদের আড্ডার টেবিলে আমার আগমন। সেন্টের ঘ্রাণে ঘ্রাণইন্দ্রীয়ের খুব কাছের খাদ্যের পর্যন্ত ঘ্রান ঢুকতে দেয় না। অন্যদের বেশও আজ বেশ পরিপাটি। এরই মধ্যে সুদীপ্তার দেখা মিলল। সকলের আগে আমার নজরে আসল । আড্ডার স্থান থেকে বের হয়ে সুদীপ্তার সামনে এসে দাড়ালাম,
“তোমার সাথে একটা কথা ছিল।”
“আমার এখন ক্লাসের সময়। আপনার কথা শুনতে গেলে ক্লাস মিস হবে।”
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ক্লাস শুরু হতে এখনও ঢেড় সময় ।
“তোমার ক্লাস ক’টায় আমি তা ঠিক ঠিক জানি।”
“আসলেই আপনার কথা শুনতে গেলে আমি ক্লাস মিস করব। আপনার কথা আরেকদিন শুনব।”
এই কথাগুলো সুদীপ্তা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল। তার সাথের দুই বান্ধবীকে আমি প্রথমেই একটু সামনে এগিয়ে যেতে বলি। তারা সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল। সুদীপ্তা তাদেরকে ডেকে, তাকে নিয়ে যেতে বলল। আবার তাকে জিজ্ঞাসা করলাম “তাহলে কি তুমি আমার কোন কথা শুনবেই না?”
“এখন না, আরেক দিন শুনব।”
“’ঠিক আছে, তাহলে আরেক দিনই বলব। তবে কথাটা তোমার জন্য ভয়ের কোন কারণ ছিল না, এখনই শুনতে পারতে। এই বলে চলে আসলাম।”
বন্ধুরা সকলে মিলে প্রথমে আমাকে বাহাবা দিল। তারপর কি কথা হল তা শুনার জন্য কৌতুহলী হয়ে পড়ল। আমি তাদেরকে সব খুলে বললাম। শুনে তারা আমাকে সাহস জোগাল হবে-হবে বলে।

চার
বিছানায় শুলে মানুষের মনে বিচিত্র কল্পনা বাসা বাঁধে। তেমনি বিছানায় শরীর এলিয়ে আমার মনে সুদীপ্তাকে নিয়ে শত কল্পনা পর্দার ছবির মত ভেসে উঠল। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করি আর চিন্তা করি কিভাবে সুদীপ্তার সবকিছু নিজের করে নেওয়া যায়। মধ্যরাত পর্যন্ত ঘুমের কোন ঘোর নাই । কেবল কল্পনা, কিভাবে সুদীপ্তাকে বলা যায়, “তোমাকে খুব ভালবাসি।” আর যদি বলেই ফেলি তা হলে সে কি রকম আচরণ করবে তারও অগ্রীম কল্পনা করছি।
সুদীপ্তা কি আমাকে খুব বাজে ছেলে মনে করেছিল ? তার সাথে যে সময় কথা বলছিলাম তখন কি আমার কথাগুলো ঠিকমত হয়েছিল না কি উদ্ধত অথবা বোকা বোকা হয়েছিল ? বন্ধুরাইবা আমাকে কি রকম মনে করেছিল ? এখন কি সুদীপ্তার কাছে মনের কথা জানিয়ে একটি চিঠি দেওয়া যায় ? এরকম ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ি।
ঘুম থেকে জেগে স্নান, নাস্তা সেরে পড়ার টেবিলে বসি কিন্তু পড়ায় মন বসছে না। সেজে-গুজে বাহির হলাম বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য।
আড্ডার টেবিলে প্রথমেই সুদীপ্তাকে নিয়ে আলোচনা। এক বন্ধুর চাচাত বোনের নিকট সুদীপ্তা নাকি বলেছে- “আশিক ভাই মুসলমান, সে হিন্দু তার কি কথা শুনবে সে ?”
আমি এই কথা শুনে বেশ আশ্চর্য হই। এরই মধ্যে এতটা চিন্তা করে ফেলেছে সুদীপ্তা!
সুদীপ্তার দুই বান্ধবী স্কুলে যাচ্ছে। তাদের সাথে সুদীপ্তা নাই। আমি তাদের কাছে গিয়ে জানতে চাইলামÑ গতকাল সুদীপ্তার সাথে কথা বলার পর আমার সম্পর্কে সুদীপ্তা তাদের কাছে কি বলেছে ? তাদের কাছেও হিন্দু-মুসলমান জাতির ভিন্নতার কথা বলেছে।
সুদীপ্তাকে মনে মনে বেশ ভালবেসে ফেলেছি। কিভাবে এই কথাটা তাকে জানান যায় তার উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। সরাসরি ভালবাসার প্রস্তাব যদি সুদীপ্তা সরাসরি প্রত্যাখান কওে ? তাই সেটাও করা সম্ভব হচ্ছে না। সুদীপ্তা আমার সম্পর্কে কিছুই জানে না। তাই তার সাথে রাস্তায় দাড়িয়ে কথা বলতে চাওয়ায় আমার সম্পর্কে হয়তবা খারাপ ধারনাও আসতে পারে।
বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসলে রাজ্যের কথা এসে ভিড় জমায়। প্রথমে শুরু হয় রাজনীতি নিয়ে, তারপর অর্থনীতি, তারপর রোমান্টিক শেষে ধর্মনীতি । এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেওয়া সাথে চা, সিগারেট চলে সমান তালে।
সুদীপ্তাকে নিয়ে বন্ধুদের মাঝেও যে একটি ছোট আকর্ষণ আছে তা তাদের কথাবার্তায় মাঝে মধ্যে ফুটে উঠে। আসলে প্রত্যেক মানুষই সুন্দরের পূজারী। বন্ধুদের কেউ কেউ এমনও বলে যদি আমি শিঘ্রই প্রেমের প্রস্তাব না দেই তাহলে তারা সে সুযোগটা হাত ছাড়া করবে না।
যেহেতু আমি প্রথম ভালবাসার কথা বলতে চাচ্ছি তাই আমাকেই প্রথম সুযোগ দিচ্ছে নচেৎ তারাও একেবারে সুযোগ গ্রহনের অযোগ্য নয়। তবে বন্ধু হিসেবে তারা যে আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করবে তাও সুস্পষ্ট।

পাঁচ
পরদিন সকাল সকাল বাড়ি থেকে বের হলাম। আজ পথিমধ্যে দু’জনে সামনা-সামনি দেখা। কারো সাথে কোন বন্ধু-বান্ধব নাই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম-
“কেমন আছ ?”
“ভাল, আপনি কেমন আছেন ?”
“ভাল। সেদিন রাস্তায় দাড়িয়ে কথা শুনতে বলেছি বলে কি খুব মাইন্ড করেছ ?”
“নাহ্। আসলে সেদিন আপনার কথা শুনার মত সময়ই ছিল না। তাছাড়া কোন কথা বলার থাকলে তা আমাদের বাসায় এসেই বলতে পারেন। রাস্তায় দাড়িয়ে কথা বলা কি ভাল দেখায় ?”
আমি সুদীপ্তাকে যে কথা বলব বলে চিন্তা করেছি তা আর মুখ থেকে বের হল না। তাই অন্য কথায় চলে গেলাম।
“আসলে কি তোমার এক বান্ধবী আমাদের রাস্তা-ঘাটে দেখলেই কেবল হাসে। যা খুব দৃষ্টিকটু মনে হয়। মেয়েটিকে আমরা চিনি না। তুমি যেহেতু আমাদের এই এলাকার মেয়ে, তাছাড়া তোমাকে আমরা মোটামুটি চিনি-জানি তাই ব্যাপারটা তোমার কাছে খুলে বলার জন্য সেদিন পথরোধ করেছিলাম।
“কার কথা বলছেন?”
“মেয়েটি লম্বা, শুকনা কিন্তু সুন্দর।”
“শম্পা?”
“হবে হয়তবা। নাম জানি না। তাকে বলবে, আমাদের দেখলে এ রকম দৃষ্টিকটুভাবে যেন না হাসে।”
“ঠিক আছে, বলব। তাছাড়া আপনারাও বাড়ন করে দিতে পারেন, বড় ভাইয়ের অধিকার নিয়ে।”
বন্ধুদের নিকট আজকের কথোপকথনের বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব রাখলাম। আড্ডার টেবিলে অনেক কথাই হল। এর মধ্যে সুদীপ্তার সাথে আমার আরেক বার খোলাখুলি কথা বলা দরকার এই মতও প্রকাশ করল কেউ কেউ। আজ আড্ডার টেবিলে সুদীপ্তাকে নিয়ে আমার তেমন কোন আগ্রহ প্রকাশ পেল না। তাই কথায় কথায় এক বন্ধু বলে ফেললÑ “কি হে, রাজকন্যাকে জয় করার আগ্রহ কি শুরুতেই ভাটা পড়ল।”
“না, তা হবে কেন? যা পাইতে চাই তা ধীরে সুস্থ্যে আদায় করে নিব। এনিয়ে বেশি মাতামাতি করে লাভ কি?”
“ও তাই বল । আমরা মনে করলাম, নাকি এখানেই ঘটনার ইতি টান। তা না হলে আলোচনায় আসছো না কেন ? আলোচনায় না এসে কি কোন পাওনা আদায় করা যায় ? আমরা না আবার পরিত্যক্ত সম্পদ ভেবে দক্ষল করে নেই।”
“না না, সে হবে না। বন্ধু হিসেবে যখন গ্রহনই করেছ, তখন এ সম্পত্তি আমাকে তোমাদের দিয়েই দিতে হবে।”
“আরে ভাই, তুমি যাকে সম্পদ জ্ঞানে গ্রহন করেছ সে আমাদের নয়, তা তোমার কাছে থাকলেই আমাদের আনন্দ।”
“আমি তোমাদের আনন্দই যেন দিতে পারি, তাতেই আমার সুখ।”
আজ আড্ডা দিতে দিতে অনেক সময় পার হয়ে গেল। তবুও আড্ডা যেন শেষই হতে চায় না। ক্রমেই আড্ডা আরো জমে উঠল। আজকের অবস্থা দেখে মনে হয় আড্ডায় আড্ডায় জীবনটা যদি পার করে দেওয়া যেত তা হলে জীবন নামের তরীটা পার হতো স্বর্গসুখে। স্কুলের লেইজারের ঘন্টা বাজল। মেয়েরা দলবেঁেধ লাঞ্চের উদ্দেশ্যে বাড়ি যাচ্ছে। যাদের বাড়ি দূরে তারা অল্প কিছু খেয়ে দল বেধেঁ নেমে গেছে কাঁনামাঁিছ খেলতে।
সুদীপ্তা হয়তবা আজ দূর থেকেই আমাদের লক্ষ্য করেছিল। আমাদের দিকে চেয়ে হাসতে হাসতে সে বান্ধবীদের সাথে চলে যাচ্ছে। আমাদের সকলেই দৃষ্টি তার দিকে। আমরা মোহাচ্ছন্ন হয়ে কেবল তার দিকে চেয়ে আছি। সুদীপ্তা হয়তবা আমাদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পাগল ভেবেছে। সে হাসি থামাতে হাত দিয়ে মুখ বার বার চেপে ধরছে। সে দৃশ্য বেশ ভাল লাগল।

ছয়
পরের দিন সকালে ওই একই জাগয়গায় আমাদের আড্ডা। আমরা আড্ডায় মেতে আছি এরই মধ্যে দেখি সুদীপ্তা তার বান্ধবী সহযোগে আমাদের দিকেই আসছে। প্রথমাবস্থায় আমরা কিছুটা আশ্চর্য হলাম। তারপর যখন শম্পা নামক মেয়েটি এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করল-
“আশিক ভাই , আপনাদের দেখলে নাকি আমি খুব হাসি ?”
“কে বলেছে ?”
“সুদীপ্তার কাছে বলেছেন।”
“হ্যাঁ,বলেছি।”
“আপনাদের দেখলেই আমি হাসি?”
“হ্যাঁ, হাসো।”
“আসলে এটা আপনাদের ভুল ধারনা। আমি এমনেতেই রাস্তা-ঘাটে হাসি না আর যদি হেসেই থাকি তা আপনাদের উদ্দেশ্য করে না। তারপরও যদি ভুল হয়ে থাকে তবে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এই বলে চলে গেল।”
বন্ধুদের কাছে ব্যাপারটা খুবই রহস্যজনক মনে হল। তারা জানতে চাইল আসল ব্যাপারটা কি। অবস্থা বেগতিক দেখে আমি সব ঘটনা খুলে বললাম।
পরামর্শদাতা বিজ্ঞ বন্ধুটি বলল - “অনেকদূর এগিয়েছ বন্ধু। প্রেমতো আশি পারসেন্ট হয়েই গেছে এখন বাকি কেবল কবুল বলা। চালিয়ে যাও, চালিয়ে যাও।”
আরেক জনে বলল-“এত কিছু হয়ে গেল আমরা কিছুই জানলাম না। আসলে প্রেমের ব্যাপারে আশিক আমাদের চেয়ে জিনিয়াস।”
আরেকজন বলল-“আরে ভাই সবকিছুই বুঝলাম কিন্তু ওরা যে আমাদের পরোক্ষভাবে অপমান করে গেল তা কি তোমরা বুঝতে পেরেছ?”
“এই কথাটাই চিন্তা করছি আমি। এখন এর জবাব কিভাবে দেওয়া যায় তা নিয়ে চিন্তা কর।”
পরামর্শ দাতা বিজ্ঞ বন্ধুটি বলল-“জবাব আবার কি? আশিক কালকে সরাসরি বলবে- আসল কথা এটা নয় , আসল কথা হলো তোমাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। আমি তোমাকে ভালবাসি। তারপর অবস্থাটা কি দাড়ায় দেখ।”
সকলে তার কথায় সায় দিল।

সাত
আজ সকাল সকালই আড্ডার টেবিলে এসে সকলে উপস্থিত। আমার নিজের কাছে আজ বেশ নার্ভাস লাগছে। বন্ধুরা আমাকে বিভিন্ন কথা বলে সাহস জোগাচ্ছে। আমি এতে একটু অপমানবোধ করে মুচকি হাসি দিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বললাম-
“আরে তোরা কি যে ভাবিস। এটা কোন কাজ হল। এ আমার জন্য কোন ব্যাপারই না।”
এরই মধ্যে দেখি সুদীপ্তা তার বান্ধবীদের সাথে আসছে। কাছে আসতেই আড্ডার টেবিল থেকে উঠে তাকে একটু কথা শুনার জন্য আড়ালে আসতে অনুরোধ করলাম। সুদীপ্তা এবার আর অমত করল না।
“তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালবাসি।”
সুদীপ্তা কিছুক্ষণ চুপ থেকে - “তাহলে এই হল আপনার আসল কথা।”
“ঠিক তাই।”
“আশিক ভাই, আপনাকে ভালবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
“কেন সম্ভব নয় ?”
“এ কি করে সম্ভব ? আমি হিন্দু জাতের মেয়ে আর আপনি মুসলমান জাতের ছেলে।”
“আমি তোমার ধর্মে কখনও আঘাত করব না।”
“তাতেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল?”
“হবে না কেন ? এ রকম উদাহরণ কি দুনিয়াতে নাই?”
“থাকুক, তবে আমি তা হতে চাই না।”
“তুমি ব্যাপারটা ভাবতে না হয় কয়েকদিন সময় নাও।”
সুদীপ্তা কিছুই বলল না, স্কুলের দিকে চলে গেল।
বন্ধুরা অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে কি কথা হল তা জানার জন্য। সব যখন জানা হয়ে গেল পরামর্শদাতা বিজ্ঞ বন্ধুটি বলল- “এইত হল শুরু। চেষ্টা করে যাও হে বন্ধু, চেষ্টা করে যাও। সফল হবে।”

পরিণতি
প্রতিদিন একই স্থানে আমাদের আড্ডা। তবে আড্ডায় কয়েকদিন আগেরও আমার যেই সচেতনতার ভাব ছিল এখন আর তা নাই। বন্ধুরা বুঝতে পারে আসলেই মন থেকে আমি মেয়েটিকে ভালবেসে ফেলেছি। পরদিন আড্ডার টেবিলে একটি নতুন খবর শুনে আরেকটু মর্মাহত হলাম।
সুদীপ্তার বিয়ের জন্য বর ঠিক হয়ে আছে । ছেলেটি বি.এস.সি পাস। একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। আজ রাতেই তাদের বিয়ের কাজ সম্পন্ন হবে। শম্পা নামের মেয়েটি আমাদের আড্ডার টেবিলে এসে সকলকে নিমন্ত্রণ করে গেল এবং অবশ্যই আমাদেরকে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করে গেল। তাকে যে সুদীপ্তাই এখানে পাঠিয়েছে তাও বলে গেল।
পরামর্শদাতা বিজ্ঞ বন্ধুটি (রাসেল) এই ঘটনাকে প্রেমের ট্রাজিটি হিসেবে আখ্যায়িত করল এবং বাস্তবতা মেনে নেওয়ার পরামর্শ দিল। বাল্যবিবাহ যে বেআইনী বিষয়টা সকলের অবগতির জন্য স্মরণ করিয়ে দিল।
বিয়ে ঠেকানো ঠিক হবে না। যেহেতু সুদীপ্তা নিজেই এই বিয়েতে রাজি আর লেখা-পড়ার চেয়ে ঘর-সংসারই সুদীপ্তার কাছে এখন বেশী অর্থবহ, তা সুস্পষ্ট।
আমরা শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’ উপন্যাসের একটি কপি সুন্দর মোড়কে মুড়ে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার অনেক আগেই উপস্থিত হলাম।
সুদীপ্তা আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়ে বলল- “আপনারা সকলে এসেছেন দেখে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি।” এ সময় সুদীপ্তার মুখের হাসিটা আমার কাছে কৃত্রিম কৃত্রিম মনে হলো। সকলের পক্ষ থেকে আমি ‘দেবদাস’ উপন্যাসখানা সুদীপ্তার হাতে তুলে দিলাম। নিজের মনের কষ্টটুকু চাপা দিলাম মনকে এ বুঝ দিয়ে ‘ভোগের মাঝে সুখ নাই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’।
দীর্ঘ প্রায় পাঁচটি বছর পরে সেই সুদীপ্তার সাথে পূজার ছুটিতে দেশের বাড়িতে দেখা। সাথে তার স্বামী এবং ফুটফুটে এক বাচ্চা। দু‘জনে মিলে বাচ্চার জন্য দোকানে পোশাক চয়েজ করছে। প্রথমে আমাকে চিনতে পারে নাই সুদীপ্তা। যখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম - কেমন আছ ? তখন অনুসন্ধিৎসু চোখ দিয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে যখন চিনতে পারে তখন আশ্চার্য হয়ে উত্তর করল- “ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন ?” তার স্বামীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল গ্রামের বড় ভাই পরিচয় দিয়ে।
সুদীপ্তাকে সেই আগের মতই লাগল তবে স্বাস্থ্যটা আগের চেয়ে একটু মুটিয়ে গেছে এই যা পার্থক্য।
আজও সেই বিজ্ঞ পরামর্শদাতা রাসেল বন্ধুটির সাথে দেখা হলে সুদীপ্তাকে নিয়ে বেশ গল্প হয়। যে গল্পে আমরা অতীতের স্মৃতিচারণের সুখ পাই, এছাড়া আর কিছুই না।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:১৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×