somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা বৃটেন: ড. আব্দুল্লাহ খাতের রহ.

১২ ই মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ই-মেইল মারফত লেখাটি পেযেছি। লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, তাই তুলে দিলাম।

আমার দেখা বৃটেন
ড. আব্দুল্লাহ খাতের রহ.,তার দেখা বৃটেনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সমৃদ্ধ বিক্ষিপ্ত প্রবন্ধ, যা তিনি আরবি একটি পত্রিকার উদ্দেশ্যে লিখেছেন।


অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ

অভিজ্ঞতা মানুষের জ্ঞান ও জানার পরিধি সমৃদ্ধ করার অন্যতম উপকরণ। যদি তা সুস্থ বিবেক দ্বারা সঠিক মাপকাঠিতে পরখ ও যাচাই করা হয়, তবে তা থেকে নিশ্চত ফলাফল পাওয়া যাবেই। অভিজ্ঞতা একজন মানুষের অবস্থা ও সংবাদের উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয় না, তার সংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন। অভিজ্ঞতা সৃষ্টি হয় বারবার সংগঠিত ঘটনা ও অবস্থার প্রেক্ষিতে, যদিও মাঝে-সাজে তার বিপরীতও দেখা যায়। আর এ জন্যই কুরআন পূর্বের বিভিন্ন জাতি ও উম্মতের নানা উপাখ্যানের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাদের অবস্থা, জীবনের মূলগতি ও পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা-ফিকির করার আহব্বান জানিয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
فَكَأَيِّنْ مِنْ قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا وَهِيَ ظَالِمَةٌ فَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَى عُرُوشِهَا وَبِئْرٍ مُعَطَّلَةٍ وَقَصْرٍ مَشِيدٍ ﴿45﴾ أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَتَكُونَ لَهُمْ قُلُوبٌ يَعْقِلُونَ بِهَا أَوْ آَذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَكِنْ تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ ﴿46﴾ (سورة الحج: 45-46)
অতঃপর কত জনপদ আমি ধ্বংস করেছি যেগুলির বাসিন্দারা ছিল যালিম, তাই এইসব জনপদ তাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছিল, কত কূপ পরিত্যক্ত হয়েছে এবং কত সুদৃঢ় প্রাসাদ ধ্বংস হয়েছে! তারা কি যমীনে ভ্রমণ করেনি, তাহলে তাদের হত এমন হৃদয় যা দ্বারা তারা উপলব্ধি করতে পারত এবং এমন কান যা দ্বারা তারা শুনতে পারত। বস্তুত চোখ তো অন্ধ হয় না, বরং অন্ধ হয় বক্ষস্থিত হৃদয়। (সূরা হজ : ৪৫-৪৬)

কোন জাতির নির্দিষ্ট কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময়, সে জাতির ইতিবাচক দিকগুলো ভুলে যাওয়া মোটেও উচিত নয়। তবে অভিজ্ঞতা ও উপদেশ গ্রহণের জন্য মাপকাঠি হিসেবে সে জাতির গুরুত্বপূর্ণ ও মানবিক জীবনের প্রধান প্রধান বিষয় নিয়ে চিন্তা-ফিকির করাই যথেষ্ট। যার সম্পর্ক রূহ ও তার উন্নতির সঙ্গে, বিবেক ও তার পরিপক্কতার সঙ্গে, মানবিক জীবনের সঙ্গে তা-ই ওতোপ্রোত জড়িত। আর যার সম্পর্ক প্রবৃত্তি ও পার্থিব স্বার্থের সঙ্গে তা মূলত জীবনের মূল স্রোতের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, বরং তার আনুষাঙ্গিক।

পাশ্চাত্য ও তাদের জীবন সংক্রান্ত আলোচনা খুব দীর্ঘ। যুগযুগ ধরে বিভিন্ন স্থানে তাদের সমাজে নানা বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে চলেছে, তাদের সমাজই আজ মানসিক ইজ্জত ও সম্মানসহ বাঁচার অনুপযোগী হয়ে গেছে। আল্লাহর এ নিদর্শন বুঝার জন্য শুধু আকল ও বিবেক যথেষ্ট নয়।

আমরা খুব গভীরভাবে দেখছি যে, এসব অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হওয়া ও তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করা এ উম্মতের পুনর্জাগরণ খুব জরুরি। এ উম্মত তার দীন পরিত্যাগ করে চলছে ও তা থেকে খুব দূরে অবস্থান করছে। তাই আমরা আজ পাশ্চাত্যের অবস্থা ও তাদের হালাতকে কুরআন-সুন্নাহ ও উত্তম যুগের সঙ্গে তুলনা করে দেখবো। তবে বর্তমান যুগের মুসলমানদের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করে নয়, কারণ তারা ইসলামি আদর্শ থেকে বিচ্যুত। বরং পাশ্চাত্য সমাজের ন্যায় বর্তমান মুসলিম সমাজেও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। যেহেতু তারা কথা-কাজ, সম্পর্ক স্থাপন ও বিচ্ছিন্ন করণ ইত্যাদিতে কুরআন-সুন্নার অনুসরণ পরিত্যাগ করে অহরহ পাশ্চাত্যেরই অনুসরণ করেছে।

তাই আমরা ড. আব্দুল্লাহ খাতের রহ. এ কিতাব উপস্থাপন করছি। এগুলো মূলত: তার দেখা বৃটেনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সমৃদ্ধ বিক্ষিপ্ত প্রবন্ধ, যা তিনি আরবি একটি পত্রিকার উদ্দেশ্যে লিখেছেন। এ অভিজ্ঞতা তাদের সমাজের সার্বিক পরিস্থিতি ও বিস্তৃত চিত্রের নমুনা মাত্র। যাতে আমাদের সমাজে বিদ্যমান এক বিশেষ শ্রেনী, যারা পাশ্চাত্যের দ্বারা প্রভাবিত ও প্রতারিত, তারা পাশ্চাত্যের বিশৃংখলা, অপরাধ, মনুষত্বহীন ও বিস্বাদ জীবন দেখে ভাবে এবং আল্লাহর এ আয়াত নিয়ে চিন্তা করে :
وإن تتولوا يستبدل قوما غيركم ثم لايكونوا أمثالكم. (سورة محمد : 38)
যদি তোমরা ফিরে যাও, আল্লাহ তোমাদের পরিবর্তে এমন এক জাতি নিয়ে আসবে, অতঃপর তারা তোমাদের ন্যায় হবে না। (মুহাম্মদ : ৩৮)
আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, তিনি এর দ্বারা সবাইকে উপকৃত করুন, লেখককে এর সওয়াব দান করুন ও আমাদের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করুন ও আমাদের বিরাট প্রতিদান প্রদান করুন।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য......
আমি লণ্ডনে প্রায় তিন বৎসর অতিবাহিত করেছি, সেখানে আমার পেশা ছিল মনোবিজ্ঞানের চিকিৎসা। লণ্ডনের ব্যাকহাম মসজিদে আমার কিছু ইসলামি প্রোগ্রাম ছিল। এ মসজিদে বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রের উল্লেখ যোগ্য বহু যুবক জমায়েত হতো। আমি বৃটেনের রাজধানীতে কিছু জিনিস প্রত্যক্ষ করেছি, যা লিপিবদ্ধ করে জনগনের সামনে পেশ করা জরুরি মনে করছি। মানুষের বুঝা ও তাতে চিন্তা করার সুবিধার্থে ধাপে ধাপে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করছি। আল্লাহ সহায়।

ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির জনৈক স্কলারশিপ
শুরুতে আমি ইংরেজি ভাষা শিখতে অনেকটা বাধ্যই ছিলাম, যদিও আমি চিকিৎসা বিজ্ঞান ইংরেজি ভাষায় শিখেছি। কারণ, ইংরেজরা চায় সকলেই স্থানীয় ইংরেজদের মত ইংরেজি বলুক ও লেখুক। যেহেতু হাসপাতালে আমার ডিউটি ছিল সকালে, তাই প্রবন্ধ লেখার পদ্ধতি জানার জন্য একজন শিক্ষকের খুব প্রয়োজন অনুভব করছিলাম। তাদের ওখানের স্বাভাবিক নিয়ম হল, কেউ কোন কিছু করতে চাইলে, ব্যবসায়িক স্থান অথবা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে একটি বিজ্ঞাপন টাঙ্গিয়ে দেয়া। টিলিফোনের মাধ্যমে খুব দ্রুত এর উত্তর চলে আসে। আমার কাছে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি সাহিত্যের সাবেক এক ছাত্র এসে উপস্থিত হল। পারস্পরিক আলোচনা অনুযায়ী সপ্তাহে দুদিন টিচিং দেয়ার সিদ্ধান্ত হল। আমার বাসায় তার পাঁচবার যাওয়া-আসার হওয়ার পর লজ্জাভরা কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল : আমার বন্ধু-বান্ধবরা আমাকে জিজ্ঞাসা করে, তুমি পাঁচবার তোমার লোককে পড়াতে গেলে, অথচ সে তার স্ত্রীকে পরিচয়ের জন্য এখনো তোমার সামেন পেশ করেনি, এটা কেমন? তার এ প্রশ্নই আমাদের মাঝে শিক্ষা ছাড়া অন্য বিষয়ে প্রথম কোন আলোচনা। আমি শুরু থেকেই এ ধরণের প্রশ্নের আশায় ছিলাম। কারণ, আমি জানি ইংরেজরা দ্বিতীয় কোন বিষয়ে আগে বেড়ে কথা বলাকে পছন্দ করে না। তোমার উচিত, তারা নিজ থেকে কোন প্রশ্ন করলে, তখন এ সুযোগকে খুব কাজে লাগানো।

আমি তাকে যা বললাম, তার সংক্ষিপ্ত : আমাদের দীন আমাদেরকে নারীদের হিফাজত করা ও তাদের ঢেকে রাখার নির্দেশ দেয়। মাহরাম ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের সঙ্গে তার সহবস্থান করা বা উঠাবসা করা বৈধ নয়। অতঃপর আমি তাকে বিবাহিত নারী-পুরুষের সহবস্থান ও উঠাবসা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, সেখানে কি ৫% হলেও অবৈধ সম্পর্ক ও খিয়াতের সম্ভাবনা নেই? সে বলল, হ্যাঁ, বরং তার চেয়েও অনেক বেশী। আমি তাকে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করলাম :
এ ধরণের অবৈধ সম্পর্ক কি বিশৃঃখলা ও সমাজে অনাচার সৃষ্টির মূল কারণ নয়? সে বলল : অবশ্যই।

অতঃপর আমি তাকে যা বললাম, তার সারাংশ : যেসব কারণে আমাদের দীন নারী-পুরুষের সহবস্থান নিষিদ্ধ করেছে, তার একটি কারণ এটা। দ্বিতীয়তো নারীরা আমাদের কাছে সম্মানের পাত্র। তাদের অনেক অধিকার আমাদের উপর রয়েছে। হোক না সে কন্যা, স্ত্রী বা মা। তার অভিভাবক তার ব্যয় বহন করবে এবং তার কল্যাণের জন্য কাজ করবে। আমাদের ধর্মমতে আমাদের পরিবারে মহব্বত, সহযোগীতা ও পরস্পরের মাঝে প্রতিনিধিত্ব রয়েছে, যা তোমাদের সমাজ কল্পনাও করতে পারে না। সে বলল : এটা খুব সুন্দর এবং যুক্তিসঙ্গত। আমি তার কথা সত্যতার আভাস লক্ষ্য করেছি।

আমি তাকে প্রশ্ন করলাম : তুমি ইসলাম সম্পর্কে কি জান?! সে আমাকে বলল : খোমেনী ও গাদ্দাফী!!
আমার ধারণা ছিল যে, সে ঠাট্টা করছে। কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারলাম, তার ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান এতোটুকুই। আমি আশ্চর্য হলাম, ক্যামব্রিজ ভার্সিটির একজন ছাত্র কুরআন নামে কোন গ্রন্থের কথা জানে না এবং মুহাম্মদ নামে কোন নবীর কথা জানে না। সে আমার সামনে ছোট্ট বাচ্চার মত কথা বলছিল। বরং আমাদের দেশের ছোট বাচ্চারাও তার চেয়ে বেশী জানে আল্লাহর দীন সম্পর্কে। আমি বললাম : তুমি ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জান না, আমি জানি না তোমার এ অজ্ঞতার জন্য দায়ী কে? তোমাদের স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটি, না তোমাদের সিলেবাস। না তুমি নিজেই নিজের জন্য এ মূর্খতা বেছে নিয়েছ? কিভাবে তোমাদের এমন একটি ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জান না, বিভিন্ন দেশে যে ধর্মের অনুসারী প্রায় এক হাজার মিলিয়ন, দ্বিতীয়তো তোমাদের দেশের সঙ্গে ইসলামী রাষ্ট্রের তো ঐতিহাসিক সম্পর্কও রয়েছে? উক্ত শিক্ষক আমার ঘর ত্যাগ করার আগে আমি তাকে কিছু ইসলামী কিতাব দিলাম। পরে সে আমাকে টেলিফোন করে জানালো, আমি সবগুলো বই পড়েছি, অতিসত্বর ইসলাম সম্পর্কে অন্যান্য কিতাবও পড়ব।

সম্মানীত পাঠক বৃন্দ : আমি অনেক চেষ্টা করেছি, এ লোকের নিমিত্তে কিছু সময় বের করার জন্য। তবুও আমার কিছু করার ছিল না, কারণ আমি এমন একটি কাজে ব্যস্ত, যেখান থেকে সময় বের করা আমার জন্য প্রায় অসম্ভব ছিল। তবে ইসলামের দাওয়াতের ক্ষেত্রে আমার নিয়ম হল, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আগে অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় পেশ করা। কিন্তু এসব প্রোপাগাণ্ডাকারীরা কি তৃতীয় বিশ্বের পাশ্চাত্যের হাকিকত ও বাস্তবতা সম্পর্কে জানে?

যদি সে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির কোন ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার হত, তবে তার জন্য কোন কৈফিয়ত তলব করতে পারতাম। কিন্তু সে ইংরেজি ভাষার সাহিত্য নিয়ে স্কলারশিপ নিয়েছে, যেখানে ইসলাম সম্পর্কে কম হলেও পড়ানোর কথা।

যারা সাংস্কৃতি-সাহিত্য ও ইতিহাস বিষয়ে নিজ নিজ গবেষণায় পাশ্চাত্যের লেখকদের বেশী বেশী উদৃতি পেশ করেন, তাদের জানা উচিত যে, তারা ইসলাম সম্পর্কে কতটুকু জানে ও কি জানে? আল্লাহ যথার্থই বলেছেন : বস্তুত চক্ষুসমূহ অন্ধ হয় না বরং অন্ধ হয় বক্ষে বিদ্যমান অন্তরসমূহ।

পাশ্চাত্য নারী ও বিবাহ :
সম্মানীত পাঠক : শুরুতে আমি বলেছি, আমি একজন মানসিক চিকিৎসক। আমার এ পেশা আমাকে আমাদের সমাজের দ্বিতীয় আরেকটি চিত্র দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। আরো সুযোগ করে দিয়েছে বিভিন্ন পেশা ও স্বভাবের নারী-পুরুষ সম্পর্কে জানতে। এ পেশার লোকদের সাধারণ প্রকৃতি হল, মানুষের সমস্যা নিয়ে গবেষণা করা। তারা চলতে চলতে এমন কিছু জিনিস নিয়ে চিন্তা করে, যা সাধারণত অন্যান্য পথিকরা করে না। আমার অনেক ইচ্ছা ছিল, ইসলামের দায়ীগণ এ নিয়ে গবেষণা করুক এবং এর একটি সমাধান পেশ করুক। আশা করি, তাদের পদক্ষেপ চিকিৎসক ও নিরাপত্তাকর্মীদের চেয়েও বেশী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। কারণ, এসব ব্যাধি ছড়ানোর মূল কারণ হচ্ছে ইসলামী শিক্ষা ও আদব-শিষ্টাচারের বিরুধিতা করা।

আমার এ ভূমিকা পেশ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যাতে পরবর্তী ঘটনার বিবরণ শুনে কেউ আশ্চর্য না হয়। বিশেষ করে নারীদের বেশী বেশী আমাদের শরণাপন্ন হওয়া ও তাদের সমস্যাগুলো শ্রবণ করা। কারণ, তাদের সমস্যা শ্রবণ করা ও তাদের সঙ্গে কথা বলা ব্যতীত এর সমাধানও সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গের পর আমি পাশ্চাত্যের নারী ও তাদের মাঝে বিবাহ প্রথা নিয়ে কথা বলছি :
আমি বৃটেনে প্রথম প্রথম খুব আশ্চর্য বোধ করেছিলাম যে, নারীরা পুরুষের ব্যয়ভার বহন করে! আমি যখন রেলে ভ্রমণ করতাম বা কোন হোটেলে প্রবেশ করতান, তখন এ দৃশ্য খুব চোখে পরত। তাদের অভিধানে সম্মান বলে কিছু আছে আমার জানা নেই।

কিছু দিন পর আমার এ আশ্চর্যবোধ দূর হয়ে গেল। অনেক রোগী আমাকে এর কারণ সম্পর্কে অবহিত করল যে, সেখানে কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে আগ্রহী নয়। তারা নারী-পুরুষের মাঝে বন্ধু ও বান্ধবী সম্পর্ককে প্রধান্য দেয় বেশী। অথচ তাদের মাঝে বন্ধুত্বের কোন সংজ্ঞাই যেমন পারস্পরিক মহব্বত, সৌহার্দ্য, সম্মান ও ওয়াদা রক্ষার আলামত পাওয়া যায় না।

তাদের সমাজে পুরুষ বন্ধুটি একমাস বা দুই মাস মেয়ে বান্ধবীর সঙ্গে অবস্থান করে। এ সময় পুরুষ নারীর ব্যয়ভার বা খরচ বহন করে না বরং অধিকাংশ হালাতে নারীরাই পুরুষের ব্যয়ভার বহন করে। যখন ইচ্ছা সে বাড়ী ছেড়ে চলে যায় কিংবা তাকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়, যদি নারী পুরুষের ঘরে অবস্থান করে। এ জন্য তাদের সমাজে নারীরা সব সময় মারাত্বক পেরেশানী ও চিন্তায় মগ্ন থাকে। কারণ, যে কোন সময় তার পুরুষ বন্ধুটি অন্য কোন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক করে তাকে বিদায় দিতে পারে। পরবর্তীতে সে হয়তো আর পুরুষ বন্ধু নাও পেতে পারে।

উদাহরণের মাধ্যমে যেহেতু অনেক বিষয় স্পষ্ট হয়, তাই তাদের সমাজের অগণিত উদাহরণ থেকে আমি একটি উদাহরণ পেশ করছি।

মানসিক হাসপাতালে আমি বিশ বছরের এক নারীকে দেখেছি, খুব বিষন্ন, ভারাক্রান্ত ও মর্মাহত। অনেক দিন সেখানে থাকার পর সে কিছুটা সুস্থতা বোধ করে নিজের থেকে কিছু বলা আরম্ভ করেছে। তার জীবন সম্পর্কে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। সে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল : আমার সমস্যা একটাই, আমি সব সময় পেরেশানী ও চিন্তায় দিনাদিপাত করি। জানি না আমার বন্ধু কখন আমাকে ত্যাগ করে চলে যায়, আমি তাকে বিবাহের জন্য চাপও দিতে পারি না, সে আমার থেকে আলাদা হয়ে যাবে ভয়ে। আমি তাকে বারবার সন্তান নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি, হতে পারে সন্তানের কারণে সে বিবাহের প্রতি আগ্রহী হবে। সামনে বিদ্যমান এ সন্তান তারই ফসল। তুমি আরো লক্ষ্য করছো যে, আমার সৌন্দর্যের কোনও কমতি নেই। তদোপরি আমি তাকে সব ধরণের সেবা দিয়ে যাচ্ছি, তার জন্য সম্পদ ব্যয় করছি। তবুও আমি তাকে বিবাহতে রাজি করতে সক্ষম হয়নি। এটাই আমার অসুস্থতা ও অভিশপ্ত জীবনের মূল কারণ। এ সমাজে আমি আমাকে একাই জ্ঞান করি। আমার এমন কোন স্বামী নেই যে, আমার জীবন সংগ্রামে আমাকে সাহায্য করবে। আমার পরিবার রয়েছে, কিন্তু তাদের থাকা না-থাকা সব বরাবর। আমার যদি এ সন্তানও না থাকত, তবে আরো ভাল হত। আমি চাই না, আমার মত সেও এ অভিশপ্ত জীবন নিয়ে দুনিয়ায় বেচে থাকুক। এ অসুস্থ নারীর ন্যায় আরো নারীর সংখ্যা পাশ্চাত্য সমাজে কম নয়, বরং যারা স্বাচ্ছন্দময় ও নিরাপদ জীবন অতিবাহিত করছে তাদের সংখ্যা খুব কম। এদত সত্বেও পাশ্চাত্যের লোকজন আমাদের ইসলামী সমাজকে কটাক্য ও ব্যঙ্গ করে। তারা মনে করে যে, আমাদের সমাজে নারীরা অসুখী জীবন-যাপন করে। আমরা পাশ্চাত্যের প্রশংসা কুড়াতে চাই না এবং আমাদের ব্যাপারে তারা ভাল ধারণা পোষণ করুক, তাও চাই না। তবে আমরা আমাদের নারীদের বলব, তোমরা ইসলামের নেয়ামতের জন্য আল্লাহর প্রশংসা কর। ইসলাম পূর্ব যুগেও নারীরা খুব অসম্মানিত ছিল, ইসলাম এসে তাদের সম্মানিত করেছে। আল্লাহর মেহের বাণীতে পরিবেশ এমন সৃষ্টি হয়েছে যে, পুরুষরাই নারীদের তালাশ করছে, তাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পেশ করছে। নারী তার পছন্দ মত কবুল করছে বা ত্যাগ করছে। আমাদের পরিবারও তার বিয়ের ব্যাপারে বিরাট ভূমিকা পালন করে। বাবার বাড়ি বা স্বামীর বাড়ি, যেখানেই সে থাকুক, সম্মানের সঙ্গে থাকে এবং পুরুষরাই তার ব্যয়ভার বহন করে। বরং আমাদের সমাজে উল্টো অভিযোগ যে, নারীর ক্ষেত্রে মোহর খুব বেশী ধার্য করা হয় এবং বিয়ের জন্য পুরুষকে অনেক খরচাদি বহন করতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَمُنُّونَ عَلَيْكَ أَنْ أَسْلَمُوا قُلْ لَا تَمُنُّوا عَلَيَّ إِسْلَامَكُمْ بَلِ اللَّهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ أَنْ هَدَاكُمْ لِلْإِيمَانِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ﴿17﴾ (سورة الحجرات : 17)
তারা মনে করে, তারা ইসলাম গ্রহন করে তোমাকে ধন্য করেছে। তুমি বল : তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমাকে ধন্য করেছ মনে করো না। বরং আল্লাহই তোমাদেরকে ঈমানের দিকে পরিচালিত করে তোমাদেরকে ধন্য করেছেন, তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক। (হুজুরাত : ১৭)

সে তো রানী :
আমাদের প্রতিবেশী এক বৃদ্ধ নারী ছিল, যার বয়স প্রায় সত্তরের মত হবে। সে যখন ঘর থেকে বের হতো ও ঘরে প্রবেশ করত, তখন তাকে দেখে আমার খুব দয়া হতো। কারণ, তার সঙ্গে তার পরিবার বা বংশের কেউ ছিল না, যে তাকে সাহায্য করবে। সে নিজেই নিজের প্রয়োজনের সামগ্রী, যেমন খানাপিনা ও কাপড় চোপড় কেনাকাটা করত। তার ঘরের অবস্থা ছিল ভুতরে পরিবেশ, কখনো কেউ তার দরজা নক করতে আসতো না। ইসলাম যেহেতু প্রতিবেশীর কতক অধিকার আমাদের উপর ওয়াজিব করে দিয়েছে, তাই আমি তার সামান্য খেদমত আঞ্জাম দিতে, তার বাড়িতে গেলাম। সে আমাকে দেখে বিস্ময়ে অবাক! অথচ আমি তার বড় কোন প্রয়োজন পুরো করেনি। কারণ, সে এমন এক সমাজে বাস করে, যেখানে ভাল কাজ বলতে কিছুই নেই। সে সমাজ মহব্বত, পরস্পর কল্যাণ কামনা ও প্রতিবেশীর হক বলতে কিছু জানে না। বেশীর চেয়ে বেশী সকাল-সন্ধ্যার অভিভাদন।

সে দ্বিতীয় দিন আমার বাচ্চাদের জন্য কিছু মিষ্টিদ্রব্য ও শুভেচ্ছা স্বরূপ একটি কার্ড নিয়ে আমাদের বাড়িতে উপস্থিত হল। কার্ডে আগের দিনে আমাদের পেশ করা উপহারের জন্য কৃতজ্ঞতার বাণী লিখা ছিল। আমি তাকে আমার স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য উদ্বুদ্ধ করলাম। সে সময়ে সময়ে আমার বাড়িতে যাওয়া-আসা করত। সে আমার বাড়িতে যাওয়া-আসার মাধ্যমে জানতে পারল যে, আমাদের দেশে পুরুষরাই নারীদের জিম্মাদার। পুরুষরা নারীদের জন্য কাজ করে, পোশাক-আশাক কেনাকাটাসহ আরো অনেক দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়। আমার স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় নারীদের ব্যাপারে মুসলমানদের সম্মান বোধ সম্পর্কেও জানতে পারে সে। বিশেষ করে, নারী যখন বৃদ্ধ হয়। তার সন্তান ও নাতী-পুতিরা তার খেদমত ও আরামের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। আমাদের সমাজে যে তার পিতা-মাতার খেদমত পরিহার করে, সে পরিত্যাক্ত ও নিন্দিত বলে বিবেচিত হয়।

বৃদ্ধ এ মহিলা মুসলিম পরিবারের দৃশ্য অবলোকন করতেছিল। কিভাবে পিতা তার সন্তানের সঙ্গে ব্যবহার করে, সন্তানরা কিভাবে পিতাকে ঘরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ঘিরে ধরে। নারী কিভাবে তার স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়। এ অসহায় নারী তাদের সমাজের অবস্থা ও আমাদের সমাজের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করতেছিল। সে তার সন্তানদের স্মরণ করত, কিন্তু কে কোথায় আছে কিছুই সে জানতো না। কেউ তাকে দেখতে আসতো না। হয়তো এক সময় সে মারা যাবে, তাকে দাফন করা হবে, কিন্তু তারা এ বৃদ্ধা সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবে না। তাদের কাছে এ বিষয়টির কোনও গুরুত্ব নেই। আর বাড়িটি হচ্ছে তার সারা জীবনের উপার্জন ও কষ্টের ফসল। সে আমার স্ত্রীর কাছে পাশ্চাত্যের নারীদের কর্ম ক্ষেত্রে ও হাটবাজারে কেনাকাটার দুঃখ-দুর্দশার বর্ণনা দিত। এ বলেই সে তার কথা শেষ করত : তোমাদের দেশে নারীরা তো রানী। আমার যদি এ বার্ধক্য না হতো, তবে তোমার স্বামীর মত একজন স্বামী গ্রহণ করতাম ও তোমাদের মত জীবন-যাপন করতাম।

পাশ্চাত্যের দেশসমূহে শিক্ষা কিংবা কর্ম উপলক্ষ্যে বসবাসকারী আমাদের দেশের লোকেরা অহরহ এ দৃশ্য দেখছে। তবুও আমাদের দেশের এক শ্রেণী তাদের অনুকরণ ও আনুগত্য করতে লজ্জাবোধ করছে না। আমাদের দেশের অনেক পত্র-পত্রিকা পাশ্চাত্যের নারীদের পোশাক, চালচলন ও তাদের কর্ম ক্ষেত্রের প্রশংসা করে যাচ্ছে। সে সমাজের নারীদের স্বাধীনতা আমাদের দেশে আমদানী করার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে।
হে আল্লাহ, তুমি সকল প্রশংসার মালিক। তুমিই আমাদেরকে ইসলামের নেয়ামত দান করেছ। আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَمُنُّونَ عَلَيْكَ أَنْ أَسْلَمُوا قُلْ لَا تَمُنُّوا عَلَيَّ إِسْلَامَكُمْ بَلِ اللَّهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ أَنْ هَدَاكُمْ لِلْإِيمَانِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ﴿17﴾ (سورة الحجرات : 17)
তারা মনে করে, তারা ইসলাম গ্রহন করে তোমাকে ধন্য করেছে। তুমি বল : তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমাকে ধন্য করেছ মনে করো না। বরং আল্লাহই তোমাদেরকে ঈমানের দিকে পরিচালিত করে তোমাদেরকে ধন্য করেছেন। তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক। (হুজুরাত : ১৭)

নারী তার স্বভাবের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে যা ঘটে :
আমি যদিও পাশ্চাত্যে দেখা অনেক কিছুই ভুলে গেছি। তবে সেখানকার আইন পেশায় চাকুরিরত প্রসিদ্ধ এক নারীর বিপরীত মুখী দুটি ঘটনা কোনভাবেই ভুলতে পারিনি।
প্রথম ঘটনা :
এ নারীর মধ্যে নিচের গুণগুলো বিদ্যমান ছিল : শক্তিশালী যুক্তি, অনর্গল বর্ণনা ও নিজের লালিত আকিদা বিশ্বাসের প্রতি দৃঢ় আস্থা। এ ব্যাপারে ব্যাপারে সে ছিল খুবই স্পর্শকাতর। আরো ছিল সে কর্ম চঞ্চল: কখনো তার লেখনি তুমি পত্রিকায় পড়বে, কখনো তাকে টেলিভিশনের পর্দায় বিশাল ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বিতর্ক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ও কথার যুক্তিতে তাদের পরাস্থ করতে দেখবে, কখনো দেখবে আদালতে নিজস্ব মতবাদের পক্ষে সে খুব জোড় গলায় লড়ে যাচ্ছে।

দর্শকের কেউ তাকে দেখে হয়তো মনে করবে, সে নিয়োগকর্তা আইনজীবি হিসেবে কোন কোম্পানীর পক্ষে বা কোন সংস্থার পক্ষে লড়ে যাচ্ছে। না, বিষয়টি এমন নয়। বরং তার কাজই হচ্ছে নারী অধিকার ও নারী-পুরুষের সমতার জন্য লড়ে যাওয়া। এ লক্ষ্যে তার কাছে বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা, কোম্পানী ও মন্ত্রণালয়ের আশ্চর্য পরিসংখ্যান, জরিপ ও তাতে নারী শ্রমিকের শতকরা হার মওজুদ থাকত। সে অনেককে সমান সংখ্যায় নারী শ্রমিক গ্রহণ ও অতিরিক্ত পুরুষ শ্রমিক ছাটাই করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। যেসব কোম্পানী প্রয়োজন না থাকার দরুন নারী শ্রমিক বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোর্টে লড়াই করে এ নারী বহুবার জয়ী হয়েছে। এ নারী বিশেষ বাগ্নিতার অধিকারী। পাশ্চাত্য সমাজে তার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। সে ছিল নারীদের পথিকৃত বরং পুরুষদেরও, যারা নারী-পুরুষের সমান অধিকারের জন্য আন্দোলনরত।

দ্বিতীয় ঘটনা :
এ নারীরই অসুস্থতার ঘটনা। তার প্রাইভেট ডাক্তার হাসপাতালের মানসিক রোগের জরুরি বিভাগে তাকে ভর্তি করেছে, যেখানে আমি কর্মরত। এখানে আমি তার বিপরীত চরিত্রই দেখলাম, টেলিভিশনের পর্দায় বা আদলত চত্বরে সাধারণ মানুষ যা প্রত্যক্ষ করে থাকে।
আমি তাকে দেখলাম দুর্বল, ভেঙ্গে পড়া অসুস্থ এক নারী। তার অনুভূতি হচ্ছে এ দুনিয়ায় সে একাই বসবাস করে। তার কোন সন্তান, স্বামী, ভাই বা আত্মীয় স্বজন বলতে কেউ নেই।
তবে অন্যান্য নারীদের চোখে সে শক্তিশালী ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় অভিজ্ঞ একজন আইনজীবি। সে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে বা বাড়িতে বসে থাকলে বা বার্ধক্যে উপনীত হলে, তাকে দিয়ে তাদের কোন প্রয়োজন নেই। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করার পূর্বেই তার অসুস্থতার কারণ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তবুও আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, যেহেতু রোগীদের জিজ্ঞাসা করা ও তাদের কথার গুরুত্ব দেয়া জরুরি। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম : তোমার অসুস্থতা কি, তুমি কেমন অনুভব করছ ? সে বলল :
আমি জীবন সঙ্গী হিসেবে একজন পুরুষকে চাচ্ছি, কিন্তু সে না বলে দিয়েছে !! আমি আমার জীবন ও কর্মের ব্যাপারে ত্যাক্ত, বিরক্ত।
আমি তার অসুস্থতা খুব আমানতদারীর সঙ্গে বর্ণনা করছি। আমি আমার দায়িত্ব হিসেবে তার জরুরি চিকিৎসা প্রদান করলাম। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সে তার এ অসুস্থতা থেকে কখনো সুস্থ হবে না। কারণ, সে এমন কোন পুরুষ পাবেনা, যে তার বুদ্ধিমত্তা ও সখ্যতা দিয়ে তাকে ঢেকে নেবে ও তাকে বিয়ে করবে। আর ভাগ্যক্রমে কাউকে পেলেও প্রকৃতপক্ষে সে পুরুষ হবে না বরং পুরুষ আকৃতির অন্য কেউ হবে, যে তাকে না বলে উত্তর দেবে না। আর এ ধরণের পুরুষ তার সমস্যাও সমাধান করতে সক্ষম হবে না। দ্বিতীয়ত সে সুস্থ হলে এবং সে তার সাবেক কর্মে যোগ দিলে, পুনরায় তার এ রোগ দেখা দিবে। কারণ, এ ধরণের নারীরা সর্বদা প্রসিদ্ধি কামনা করে। তারা সব সময় মানুষের প্রশংসা কুড়াতে চায়, তাদের নিজের অবস্থা যাই হোক।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আল্লাহর সৃষ্ট প্রকৃত স্বভাব নারীরা ত্যাগ করলে, তাদের কি অবস্থা হয়, লক্ষ্য করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন :
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ﴿30﴾ (سورة الروم: 30)
অতএব তুমি একনিষ্ঠ হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি, যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। (সূরা রূম : ৩০)

মূল সমস্যা হল : মানুষ এ নারীর পূর্ণ সুস্থতা ও প্রখর বাকশক্তি অবলোকন করেছে। সে যখন বিছানায় শুয়ে মানসিক রোগে বিষন্ন ছিল, তখন তাকে কেউ দেখেনি। মানুষের প্রশংসা, গুণকীর্তণ ও তাকে নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা থেকেই তার এ রোগের জন্ম, এটাই তার কপালপুড়ো ও হতভাগা জীবনের আসল কারণ। এটা আমার চোখে দেখা ঘটনা। এ ধরণের ঘটনা অনেক। যারা আরো দেখতে চায়, তাদের উচিত পাশ্চাত্য সমাজে মানসিক রোগাক্রান্ত নারীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা। বরং আমাদের সমাজেও তার নমুনা বিদ্যমান।

নিশ্চয় সংসার ও বাড়িতে স্ত্রী ও তার সন্তানের জন্য পুরুষের অভিভাবকত্ব অত্যন্ত কল্যাণকর। এর থেকে পিছু হটা নারীর জন্য জাহান্নাম, যা বরদাস্ত করা তার শক্তি ও সামর্থ বর্হিভূত। নারী-পুরুষের সমান অধিকার একটা মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা, যা ইয়াহুদ, ক্রুসেট ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী নাস্তিকদের উদ্ভাবন। সকল ধরণের পরিসংখ্যান ও জরিপ, তাদের এ পরিকল্পনা মিথ্যা প্রমাণিত করেছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে :
অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচারণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে। (ফোরকান : ৬৩)



১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেট্রোরেল পেয়েছি অথচ হলি আর্টিজানে নিহত জাপানিজদের ভুলে গেছি

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১১

জাপানে লেখাপড়া করেছেন এমন একজনের কাছে গল্পটা শোনা৷ তিনি জাপানে মাস্টার্স করেছিলেন৷ এ কারণে তার অনেক জাপানিজ বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়৷ জাপান থেকে চলে আসার পরেও জাপানি বন্ধুদের সাথে তার যোগাযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধে নিহত মনোজ দা’র বাবা

লিখেছেন প্রামানিক, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৭১ সালের এপ্রিলের ছব্বিশ তারিখ। দেশে তখন ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের নিয়েই বেশি সমস্যা। তাদেরকে খুঁজে খুঁজে ধরে নিয়ে হত্যা করছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ে থেতে ভাল্লাগে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯

আমার বিয়ে বাড়ির খাবার খেতে ভালো লাগে। আমাকে কেউ বিয়ের দাওয়াত দিলে আমার খুসি লাগে। বিয়ের দিন আমি সেজে গুজে বিয়ে বাড়িতে আয়োজন করা খাবার থেতে যাই। আমাদের এলাকায় বর্তমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুর সামনের পাতার ৯টি পোষ্টে শুন্য (০ ) মন্তব্য।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৫ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০



আজকে সকালে একটু দেরীতে ( নিউইয়র্ক সময়, সকাল ৮:২১ ) সামুতে লগিন করলাম; লগিন করে আজকাল প্রথমে নিজের লগিন স্ট্যাটাস পরীক্ষা করি: এখনো সেমিব্যানে আছি। মোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

উসমানীয় সাম্রাজ্যের উসমান এখন বাংলাদেশে

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০



জনপ্রিয় ''কুরুলুস উসমান'' সিরিজের নায়ক Burak Ozcivit এখন বাংলাদেশে। বিগত কয়েক বছর ধরে তার্কির অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন সুলতানদের নিয়ে নির্মিত সিরিজগুলো বিশ্বব্যপী বেশ সারা ফেলেছে। মুসলিমদের মাঝেতো বটেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×