somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাত্তরের মা।

১২ ই মে, ২০১১ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই জুন মাসে মার সাথে মইনের শেষ দেখা হয়,তাদের দলটি আগরতলায় যাওয়ার আগে সবাই যার যার পরিবারের সাথে দেখা করতে এসেছিলো।মা মইনকে কোন বাধাই দেয়নি।কারন তিনি তো দেখেছেন,তিনি ছেলেকে আঁচলের তলে রাখলেই বাঁচাতে পারবেন না।

পাকসেনাদের কাছে যুবক ছেলে মানেই হল নির্ঘাত মুক্তিবাহিনী।তাই তিনি কোন বাধা দেননি।কিন্তু মার মন বলে কথা।তার দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে বাবু ভীষন ডাকাবুকো,বলতে গেলে সে তার বয়সীদের কাছে মুর্তিমান আতঙ্ক।কিন্তু মইন ছেলেবেলা থেকে ভীষন লাজুক,তার চোখে চশমা থাকার দরুন সে তার বন্ধুদের কাছে অবহেলার পাত্র।তার স্বাস্থ্য তেমন ভালো না।মা এটি নিয়েই বেশি চিন্তিত।মার মনে পড়ে বাইরে কোথাও অন্যদের কাছে নির্যাতিত হলে মইন ঘরে এসে নীরবে কাঁদত।

মনে পড়ে একবার মইন তার কোন এক বন্ধুকে রক্ত দেয় ১ ব্যাগ।বাড়ী ফিরে মাকে গর্বের সাথে এ কথা বলার সাথে সাথে মা কিরুপ আঘাত পায়।মা কান্নার মাঝে তাকে বলে,তোর নিজের শরীরেই তো কিছু নাই,তুই কেনো দিলি,তোর কি রক্ত বেশী হয়ে গেছে,তোর গা বেঁয়ে বেঁয়ে কি রক্ত পরে।এতো দূঃখের মাঝে ও মার আজ সে কথা মনে হয়ে হাসি পায়।

সেই ছেলে আজ ৪মাস ধরে ঘর ছাড়া।ইদানিং পাড়ার রাজাকাররা এসে প্রায় জিজ্ঞেস করে তার বড় ছেলেকে কেনো দেখা যায়না।তিনি বুঝতে পারেন তাকে অন্তত বাবুকে বাচাতে হলেও শহর ছাড়া দরকার।

অক্টোবরের এই শেষ দিকে এসে শীতটাও আগাম নেমে গেছে।মা আর ধৈর্য্য ধরতে পারলেন না।তিনি শহরের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর পেলেন মইন মেঘালয়ের দক্ষিনে নেত্রকোনা সীমান্তে পাকসেনাদের সাথে যুদ্ধ নিয়োজিত।যতটুকু খবর পাওয়া যায় সেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি বেশ জটিল।কেননা পাকবাহিনী মিত্রবাহিনীর চালটি ধরে ফেলেছে যে,মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনী নিয়ে নেত্রকোনা হয়ে ময়মন্সিং পার হয়ে ঢাকার উত্তর অঞ্চল বিশেষ করে গাজীপুরে পৌছতে চায় যাতে ভৈরববাজার হয়ে মুক্তিবাহিনীরা নরসিংদী পৌছে গেলে একটা শক্ত বেস্টনীর ভেতর ঢাকাকে ঘিরে ফেলা যায়।তাই যুদ্ধও একটা চুড়ান্ত অবস্থার দিকে যাচ্ছিলো।

নেত্রকোনায় ভারতীয় গুর্খা ডিভিসন যুদ্ধে নেমে পাকবাহিনীর হাতে বিপুল ক্ষতির সন্মুখিন হয়,ফলে তারা আর এগুতে পারেনি।ফলে মুক্তিবাহিনিকেই আবার গেরিলা আক্রমন চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়,এবং দেখা যাচ্ছে বিপুল ক্ষতির বিনিময়ে হলেও মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ ভাংতে পারছে।

অনেক বাধাবিঘ্ন পেড়িয়ে মা নেত্রকোনা সীমান্তে ফ্রন্টলাইনে এসে উপস্থিত হলেন বাবুকে নিয়ে।চারোদিকে প্রচন্ড গোলাবর্ষন চলছে।সবাই দারুন ব্যস্ত,আহতরা ফেরত আসছে।একজন সৈনিককে মা জিজ্ঞেস করলেন,এখানে মইন বলে কেউ আছে?সে দারুন বিরক্ত হলো,আপনি এই গোলাগুলির মধ্যে কিভাবে আস্লেন,আপনার কি প্রানের মায়া নাই।মা একরোখাভাবে আবার জিজ্ঞেস করলো,আমি আমার ছেলের সাথে দেখা করবো,তাকে আমার অনেক দরকার।

দুরথেকে আরেক মুক্তিসেনা এগিয়ে আসলো,বললো আপনি কি চশমা পরা মইনকে খুজছেন,রোগা করে।মা ব্যাকুল হয়ে তাকে বললো,হ্যা বাবা।তুমি কি তাকে চেনো?
তাকে কে না চেনে?
বাবা তুমি আমাকে বলো,সে কেমন আছে?খালাম্মা সে ভালো আছে।ঐ দূরে যেখানে প্রচন্ড গোলাবর্ষন চলছে সে সেখানে যুদ্ধ করছে।

মা সেদিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকলো অশ্রুসিত্ত চোখে,গভীর আবেগে জিজ্ঞেস করলো,আচ্ছা মইন কি যুদ্ধে ভয় পায়,সেকি গুলি করতে পারে?

সৈনিক ক্ষুদ্ধ কন্ঠে উত্তর দেয়,মইন আমাদের সেরা যোদ্ধা।সে যদি ভালো লড়াই করতে না পারতো,তাহলে সে এখানেই থাকত।আমাদের অধিনায়ক মইনকে ছাড়া কোন বড় লড়াইয়ে যায় না।গত সপ্তাহে মইন ও তার দল পুরো এক কোম্পানি পাকসেনাকে ধবংশ করে দেয়।

মা চোখের পানি মুছে,এবং সৈনিককে বলে মইন আসলে বলো,আমরা ভালো আছি।তিনি হাটতে থাকলেন,সৈনিক জিজ্ঞেস করলো,কি ব্যাপার মইনের সাথে দেখা করবেন না?
মইনকে বলো দেশ স্বাধীন হলে আমাদের মাঝে দেখা হবে।

বাবু মাকে বললো,মা ভাইয়ার সাথে দেখা করলে না কেনো?

নারে বাবা।এখন আর আমার কোন ভয় নাই।আমার খালি ভয় হতো,মইন দুর্বল,চোখে কম দেখে,ছেলেটা লড়াই করতে পারবেতো।মনে একটা দ্বিধা ছিলো,তাই যাচাই করতে আসছিলাম।আমার আর কোন দ্বিধা নাই,আমার মইন আর দশটা ছেলের মতোই লড়ছে।

এমন ছেলের মা কি কখনো কাঁদতে পারে?দেখিস আমরা জিতবোই।আমরা কখনো হারতে পারি না।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×