পূর্ণিমার জবানবন্দি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আমি পূর্ণিমা রানী শীল। বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের একটি গ্রামে। গ্রামের নাম পূর্ব দেলুয়া। বাংলাদেশের আর দশটি গ্রামের মতোই ছায়া-শীতল, সবুজ মাঠ আর গাছ গাছালীতে ঘেড়া। এবং তার সাথে আছে অভাব-অনটন, ভালোবাসা, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি। মা ,বাবা, ভাই-বোন নিয়ে গ্রামের আর দশটি পরিবারের মতো আমরা ছিলাম মোটামুটি সুখী। পরস্পরের প্রতি ছিল বিশ্বাস আর ভালোবাসা। সমাজের অন্যান্যদের সাথে ছিল সুসম্পর্ক। বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ আমাদের দেশ এই ‘বোধ’ আমাদেরকে উল্লসিত করে তুলতো, আবেগিত করে তুলতো। ‘‘আমার সোনার বংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’’ এই সংগীতে এক অনাবিল চেতনার উন্মাতালতা জেগে উঠতো মনে প্রাণে। দোলা দিয়ে যেতো দেহের প্রতিটি অনু-পরমানুতে।
এখন আমি ঢাকার থাকি। একটি প্রাইভেট বিশ্ব-বিদ্যালয়ে বিএসসি-তে পড়ছি। থাকি একটি মেয়েদের হোষ্টেলে। লেখাপড়া চলছে একটি ট্রাষ্টের যৎসামান্য অর্থের অনুদান আর আমার টিউশনির টাকা দিয়ে। আমি বর্তমানে সবসময় নিজেকে আড়াল করে রাখি। আমি আমার আপাদমস্তক বোরকায় ঢেকে চলতে বাধ্য হচ্ছি। নিজেকে নিজেই আড়াল করে রাখছি পরিচিত মানুষজনদের নিকট হতে। কিন্তু কেন, আমি এভাবে চলছি ? তা উল্লেখ করার জন্যই আমার এই জবানবন্দি প্রদান।
আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে ২০০১ সালে আমাদের এই বাংলাদেশে একটি সাধারন নির্বাচন হয়েছিল। ক্ষমতা বদলের নির্বাচন। ঐ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপি-জামায়াত-এর চার দলীয় জোট। নির্বাচনের পর বিজয়ী দল সারাদেশে শুরু করল একা হিং¯্র তান্ডবতা। তার হাত হতে আমার পরিবার বাদ যায়নি। ২০০১ সালে ০৮ অক্টোবর আমার পরিবার ও আমার জীবনের একটি বিভীষিকাময় দিন। যা আমার এই জীবনে কখনো ভুলতে পারবো না।
তখন সন্ধ্যা। বিদ্যুৎ নেই। অন্ধকার নেমে আসছে প্রকৃতিতে। কে জানতো প্রকৃতির মতোই আমার জীবনেও নেমে আসবে ঘোর অন্ধকার। বাড়িতে আমি , মা আর আমার এক ছোট বোন। এমন সময় খবর পেলাম কারা যেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে আমার বাবাকে মেরে রাস্তায় ফেলে রেখেছে। এই খবর শুনে আমরা বাড়ি হতে বের হতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় বিএপি-জামায়াতের ১৫/২০ জনের একটি সন্ত্রাসীদল আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে ও লুটপাট করে। আমার মা ও আমার ছোট বোনসহ আমাকে বেদম মারপিট করে। সন্ত্রাসীদের আঘাতের পর আঘাতে আমরা সবাই প্রচন্ডভাবে আহত। আমার মা ও বোন মাটিতে লুটিযে পড়ে। নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এরপর সন্ত্রাসীদের কয়েকজন আমাকে পাাঁজাকোলা করে নিয়ে যায় বাড়ির পাশে একটি ধানি জমিতে। আমাদের গ্রামের আলতাফ , খলিল ও অন্যান্যদের সহযোগীতায় লম্পটদের পাশবিক অত্যাচারে আমি একসময় জ্ঞান হারাই।
কতোক্ষন বেহুঁস হয়ে বাংলাদেশের সবুজ চাতালে রক্তাক্ত আমি অচেতন অবস্থায় পড়েছিলাম, জানিনা। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন জানতে পারলাম- আমাদের স্কুলের শিক্ষক সাধন চন্দ্র শীল স্যার এবং অসীম কুমার নামের সেনাবাহিনীর একজন সদস্য আমাকে উদ্ধার করেন। থানার ইন্সপেক্টর ইকবাল হোসেন সাহেব আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। আমি সুস্থ হই। কিন্তু এখনো স্বাভাবিক হতে পারছিনা। জীবনের অতীতের দিকে তাকালে এক বিভীষিকাময় অধ্যায় আমাকে মৃত্যুর চেয়ে বেশি কষ্ট দেয়।
(সৌজন্যে- বাংলাদেশ প্রতিদিন, ০৬ মে,২০১১।)
৩টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম
আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা
২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন
যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!
এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিউ ইয়র্কের পথে.... ২
Almost at half distance, on flight CX830.
পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১
হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সামুতে আপনার হিট কত?
প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন