somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিকাশের জীবনের কথা

০৯ ই মে, ২০১১ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

:| বিকাশের জীবনের কথা :|

বিকাশ গ্রামের ছেলে। গায়ের রং শ্যাম, নাসিকা উন্নত, লম্বা শরীর, স্বাস্থ্য ভাল। এক কথায় দেখতে-শুনতে বেশ ভাল। গ্রাম থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকায় এসে জগন্নাথ কলেজে হিসাব বিজ্ঞানে অনার্স ভর্তি হয়েছে।
ঢাকাতে প্রথম প্রথম একটুও মন টিকত না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হত। মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা, অধিক গাড়ি, অপরিচ্ছন্নতা, থাকা-খাওয়ার অসুবিধা, মারামারি-কাটাকাটি ইত্যাদি ভাল লাগত না।
প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হলো। নিয়মিত ক্লাস করছে। মাঝে মাঝে বন্ধুদের তরফ থেকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যোগদানের দাওয়াত পাচ্ছে কিন্তু এসব ভাল লাগছে না। ক্লাস চলা অবস্থায় এক এক দলের ছেলেরা এসে তাদের মিছিল-মিটিংয়ে যেতে বলে। খাতায় স্বাক্ষর করতে বলে। না করলে বা না যেতে চাইলে অসুবিধা আছে বলে শাসায়। এ ধরনের কর্মকান্ড তার বেশ খারাপ লাগত এবং প্রথম প্রথম ঘন ঘন বাড়িতে আসত।
অনার্স প্রথম বর্ষ শেষ। দেশের রাজনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। মিছিল, মিটিং, হরতাল লেগেই আছে। এখন আর এগুলো বিকাশের কাছে খারাপ লাগছে না। সে এখন এক রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে। দলের প্রতিটি প্রগ্রামে অংশগ্রহন করে। এতে কিছু টাকা তার পকেটে আসে। এবার প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় যে সকল ছাত্ররা মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হতে পারে নাই তাদের বিশ থেকে পচিশ জনকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ভার্তি করে দিয়েছে। এতে কয়েক দিন বেশ ভালই কেটেছে। বাড়ি থেকে মাসে মাসে যে যৎসামান্য টাকা পাঠায় তাতে তার দশ দিনের বেশী চলে না। এখন সে সিগারেট ধরছে। তার বন্ধু-বান্ধব অনেক। কিভাবে বাড়ীর টাকায় তার দশ দিনের বেশী চলবে ? বিশেষ উপলক্ষ্য ছাড়া বাড়ীতে যায় না। তার বাবা নির্র্দিষ্ট এক ঠিকানায় তার জন্য টাকা পাঠিয়ে দেয়। চিঠিতে বারবার সতর্ক করে দেয় লেখা-পড়া ছাড়া অন্য কোন কাজে যেন সময় নষ্ট না করে, স্বাস্থ্যের প্রতি যেন যতœ নেয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরকারী দল এবং বিরোধী দলের মধ্যে যে কোন প্রকারে ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং ক্ষমতা থেকে হটান নিয়ে সহিংসতা লেগেই থাকে। সব সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক অবস্থা সর্বদা নড়বড় থাকে।
বিকাশ সবসময়ই ব্যস্ত। দূরে কোথায়ও প্রোগ্রাম না থাকলে ক্যাস্পাসেই সারাক্ষণ রাজনৈতিক পরিমন্ডলে কাটে। কলেজ ক্যাম্পাসে নিত্যদিন যে নিত্য-নতুন ঘটনা ঘটে তা সবকিছু প্রত্যক্ষ করা এবং দু’একটি ঘটনার সামাল দেওয়া খুব গৌরবের বিষয় বিকাশের কাছে। সে তার দলের এক নেতার হয়ে কাজ করে। নেতা যা আদেশ করে তা যথাযথভাবে পালন করে।
কয়েকদিন রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব খারাপ। বিকাশ বিরোধী দলীয় কর্মী। বিরোধী দলীয় রাজনীতিতে অনেক সংগ্রাম এবং ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এখন তার সংগ্রাম এবং ত্যাগের পালা। তবে এই সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে তার কিছু প্রাপ্তিও আছে।
মাঝে মাঝে বিকাশের মনে প্রশ্ন জাগে, সে যে কাজগুলো করছে তা কি করা উচিত ? মন থেকেই উত্তর আসে- “না, করা উচিত না।” কিন্তু রাজনীতি না করেও তার উপায় নাই। রাজনীতি না করলে কলেজের ছেলে-মেয়েরা মূল্য দেয় না। হলেও বিভিন্ন প্রকার উপদ্রব হয়, তাছাড়া এর ওর হুমকি। এমনকি কলেজের শিক্ষকরাও রাজনীতি না করলে মূল্যায়ন করে না। অনেকে আবার রাজনীতি করে পরীক্ষা পাসের জন্য। রাজনীতি করলে নেতারা স্যারদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সেই সুবাদে ছাত্ররা যদি পরীক্ষার হলে বই দেখেও লিখে শিক্ষকরা অতিরিক্ত স্নেহে ছাত্রদের কোন প্রকার অসুবিধা সৃষ্টি করে না। লেখা-পড়া না করে ইয়ার ইয়ার বই দেখে লিখে পাস করাও এক বিশাল পাওয়া। ছাত্র নেতা থেকে ভবিষ্যতে বিশাল নেতা হওয়াও সুযোগ আছে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য এ কাজের মূল্যও বর্তমানে কম নয়। বিভিন্ন দিক চিন্তা করে বিকাশ জীবন সম্পর্কে অংকের হিসাবে রাজনীতিতে মন্দের চেয়ে ভালর দিকটাই বেশী দেখছে। আবার মাঝে মাঝে মনটা খারাপ হয়ে যায় যখন চিন্তা করে রাজনীতির নামে মানুষদের মারছি. গাড়ি-বাড়ি ভাঙ্গছি-পোড়াচ্ছি, দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করছি। একি আমাদের কাজ! তার পড়া-লেখায়ও মন বসছে না। রাজনীতি ছাড়া কোন কাজ ভাল লাগে না। বর্তমান অবস্থা থেকে ফিরাও সম্ভব নয়। সময় সময় এই চিন্তা খুব অসহ্য লাগে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা অসম্ভম হয়ে পড়ে। সে সময় মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল এমন কি মাঝে মাঝে মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করে তার মাঝে শান্তি খোঁজে।
ক্যাম্পাসে সুন্দরী মেয়েদের সান্নিধ্যে পেতে প্রচন্ড ইচ্ছা জাগে তার। তারা তার মত ফটকা ছেলেদের একদমই পাত্তা দেয় না। নিজেকে বুঝ দেয়, আমিতো সবেমাত্র শুরু করেছি, কালে অবশ্যই বড় নেতা হব। তখন পাত্তা না দিয়ে পারবে না। কলেজের তন্দ্রা নামের মেয়েটি তার খুব পছন্দের। সমাজ কল্যাণে ছাত্রী। একই বছর দু’জনে ভর্তি হয়েছে। প্রথম যেদিন তন্দ্রাকে দেখে সেদিনই বেশ ভাল লাগে। একদিন তার নাম, কোন বিষয়ে পড়ে, বাড়ী কোথায়, থাকে কোথায় জানা স্বত্যেও জিজ্ঞাসা করেছিল। মেয়েটি প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরই সাবলীলভাবে দিয়েছিল। তারপর থেকে প্রায়ই তার সাথে কথা বলতো কিন্তু কখনই বেশীক্ষণ কথা বলতে পারত না। দু’ এক কথা বলেই কথা ফুরিয়ে আসত। শীতেও কপালে, নাকের ডগায় ঘাম জমত। তন্দ্রা হেসে দিয়ে নতুন কথার জোগান দিত। এখন দেখা হলে তন্দ্রা আগের মত কথা বলে না। কথা বলতে চাইলে কাজের অজুহাত দিয়ে সরে পড়ে। বিকাশ নিজের মনের কথা তন্দ্রাকে খুলে বলার সাহস এখনও পর্যন্ত অর্জন করতে পারে নাই শত সাহসিকতার কাজ করা স্বত্যেও। প্রায় রাত্রেই কল্পনা করে আগামীকালকে বলে দেখবে ব্যাপারটি কি দাড়ায়। কিন্তু আগামী কাল আর বলা হয়ে উঠে না। আগের বিকাশের চেহারা, স্বাস্থ্য আর এখন বিকাশের চেহারা, স্বাস্থ্যের মধ্যে অনেক তফাত। আগে অনেক মেয়ে বিকাশকে দেখলে লজ্জায় লাল হয়ে যেত। আর এখন অনেকেই তাকে দেখলে ভয় পায়। মাঝে মাঝে মন খুব খারাপ হয়ে যায়। মনে মনে ভাবে, আমিই কি শুধু একাজ করি, দেশের অনেক নামী-দামী লোকেইতো এই কাজ করছে। তারা তাদের হিসাব-নিকাশ সব ঠিক মতই বুঝে পাচ্ছে, আমি কেন পাব না ? তবে তারা বড় ভাই কিনা, আমাকেও বড় ভাই হতে হবে। তবেই সব হিসাব-নিকাশ বুঝে পাব।
“তন্দ্রা, সুমিদের মত মেয়েরা একটু বেশী ভাল ছাত্রী বলে আমাদের মত ছেলেদের পছন্দ করে না। কিন্তু আমিও এক সময় ওদের চেয়ে ভাল ছাত্র ছিলাম। কনিকা, মর্জিনা ওরা খারাপ ছাত্রী বটে কিন্তু তাদের বাবার প্রচুর অর্থ আছে। ওরাতো আমাদের সাথে মিশে। মাঝে মাঝে আমাদের ঠোঁট থেকে সিগারেট নিয়ে দু’এক টান দেয়। কত আনন্দ, কত ফুর্তি করে।”
রাজনীতি নামে বড় নেতারা যা করে তা বিকাশের অজানা নয়। এই কয়েকদিন আগেও বড় এক নেতা তাকে এলাকার নিয়ে যেতে চেয়েছিল। সে যায় নাই। নেতা যাবার সময় দশ হাজার টাকা দিয়ে বলেছিল, ওখানে তোমার যা লাগে আমি দেখব। তুমি শুধু তোমার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে আমার এলাকায় আস।
পুরান ঢাকার বিকাশের বয়সী সবাই তাকে চেনে এবং মানেও। এখানে সে যা চায় তা পায়, কেউ বাধা হয়ে দাড়ায় না। রাজনৈতিক নেতারা ছাড়া সাধারন মানুষ তার সাথে কথা বলতে ভয় পায়। ভয়ে তার সাথে ভাল আচরণ করে। এ সবই তার নেতার বদলৌতেই প্রাপ্ত। তার নেতা এলাকার সকল দোকানে তাদের দিয়ে চাঁদা তোলায়। বড় বড় সরকারী কাজগুলোর কন্ট্রাক নেয়। নেতার এলাকার সকল সরকারী-বেসরকারী আমলারা নেতাকে ভয় পায়।
নেতার বৌ বেশ ভাল। ভাল ঘরের মেয়ে। দেখতে-শুনতেও বেশ ভাল। কিন্তু মাঝে মাঝে তার কান্নার শব্দ শুনে বিকাশ আশ্চর্য হয়। তার আবার দুংখ কোথায় ? অনেকদিন পর প্রশ্নের উত্তর খুজেঁ পায়। তার নেতার কোন কিছুতেই অভাব নাই। কেবল শালার একটি দোষ, প্রায় রাতেই মদ খেয়ে বাড়ীতে ঢোকে। বৌর সাথে আবল-তাবল কথা বলে। বৌ এ দেখে কাঁদলে তাকে মার-ধোর করে। মাঝে মাঝে রাতে বাড়ীতে আসে না। হোটেলে মেয়েদের সাথে রাত কাটায়। বৌ দু তিন বার রাগ করে বাপের বাড়ী চলে গেলে, নিজে গিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আবার ফিরিয়ে আনে।
একটি বিষয় বিকাশের কাছে বেশ আশ্চর্য লাগে-
ছাত্র রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব করবে ছাত্ররা কিন্তু বাংলাদেশে এর প্রতিনিধিত্ব করছে অছাত্ররা। এদের প্রায় জনই বিয়ে-শাদী করেছে। একটি, দু’টি বাচ্চাও আছে। এমনও অনেকে আছে, যারা দশ-পনের বছর ধরে একই কলেজের বৈধ ছাত্র হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয়। সে এমনও দেখেছে অনেক ছাত্র রাজনীতির দোহাই দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে না। এতে একটি ছাত্রের অনার্স এবং মাস্টার্স পাস করে বের হতে অনেক সময় লাগারই কথা। পাস করে বের হওয়ার পর তারা নির্দিষ্ট কোন কাজেও যোগদান করে না। রাজনীতি নামে এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ায়। এর-ওর থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থাকে। এক কথায় যে কর্মে কোন ছাত্রকে ছাত্র বলা যায় তার কোন বৈশিষ্ট্যই এদের থাকে না। বিকাশ ভাবে, আমিও বোধ হয় এ রকম হয়ে যাব।
কাল হরতাল। তার দলই হরতালের ডাক দিয়েছে। হরতালকে সফল করার জন্য অনেক আয়োজনের দরকার হয়। বোমা বানাতে হবে, অস্ত্র সংগ্রহে রাখতে হবে, সকালে ঘুম থেকে জেগেই হরতালের স্বপক্ষে মিছিল করতে হবে, কয়েকটি গাড়ি ভাংচুড় করতে হবে, রাস্তার মাঝে টাওয়ার পোড়াতে হবে। হরতাল বিরোধী মিছিলের উপর গুলি চালাতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সারারাত জেগে বিকাশ বোমা বানানোর কাজে ব্যস্ত ছিল। একটু ঘুমিয়েই সকালে মিছিলে যোগদান করে। সরকার পক্ষ হরতাল যেন সফল না হয় সে জন্য হরতাল বিরোধী মিছিল বের করে।
এক মিছিল থেকে আরেক মিছিল দেখা যাওয়া মাত্রই এক দল আরেক দলের উপর বোমা, গুলি বর্ষণ করতে লাগল। মাঝ পথে নিরীহ দু’ই পথচারী এবং দু’ই রিকশাচালক তোপের মুখে পড়ে সেখানেই প্রাণ হারালো। পুলিশ প্রথম নিরব দর্শকের ভূমিকায় অবস্থান নিয়েছিল। পরে সরকারী দলের হয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করে। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় নেতারা এক পক্ষ আরেক পক্ষকে বিভিন্নভাবে দোষারোপ করে এবং নিহতদের নিজের দলের বলে দাবী করে।
চারজন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে পরের দু’দিন হরতাল ডাকা হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের হরতালে বিকাশ স্বতস্ফূর্তভাবে যোগদান করে। দু’দিনের হরতালের কার্যক্রমে সে দলের নেতাদের কাছ থেকে খুব প্রসংশা কুড়ায়। তৃতীয় দিনের হরতালে আরো স্বতস্ফূর্ত যোগদান করতে গিয়ে বিকাশ পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতার , গ্রেফতার, গ্রেফতার। বিকাশ অস্ত্রসহ হরতালের মিছিল থেকে গ্রেফতার। দেশের প্রধান প্রধান সব দৈনিকে বিকাশের ছবিসহ গ্রেফতারের খবর প্রকাশিত হয়। এ খবর তার বাবা-মার কানে যায়। তার বাবা তাঁকে ছাড়াতে ঢাকা এসে নিরাশা হয়ে বাড়ী ফিরে গেল। দল থেকে তার মুক্তির দাবী জানিয়ে আলোচনা সভা, মিছিল, পোস্টাল করা হল কিন্তু কিছুতেই তাকে ছাড়ান গেল না।
এদিকে বিকাশ হাজতে বসে অনেক চিন্তা করে। বড় নেতা হতে হলে এ রকম দু’ একবার হাজতে না আসলে চলে না। পুলিশের ডান্ডার মার না খেলে বড় নেতা হওয়া যায় না। বড় বড় নেতারা এ রকম জেল খেটে, মার খেয়ে, অমানুষিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে তারপর বড় নেতা হওয়ার সোপান পেয়েছে। তাদের নামে হাজারটি কেসও আছে। কখনও তাদের হাজতে বেশীদিন ধরে রাখতে পারে নাই। আমিও নিশ্চয় ছাড়া পাব। আমার নেতা আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে।
শুনানির পরে বিকাশের দশ বছরের সশ্রম কারাদন্ড হল। বিকাশ ভাবলো-হোক জেল, আমার নেতা আছে। তাছাড়া আমার দল ক্ষমতায় গেলে আমাকে ধরে রাখে কে ? এ রকম চিন্তা করতে করতে অনেক দিন কেটে গেল। জেলখানার কষ্টে আস্তে আস্তে সে অতিষ্ঠি হয়ে উঠল। প্রথম প্রথম দু’একজন তাকে জেলখানায় দেখতে আসত। এখন তার বাবা-মা ছাড়া কেউ দেখতে আসে না। তার নেতা, তাকে একবার জেলখানায় দেখতে এসেছিল এবং বলে গিয়েছিল যে কোন মূল্যে তাকে জেলখানা থেকে মুক্ত করে নিবে। এতে নেতার প্রতি তার বিশ্বাস আরো বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরে নেতার আর দেখা পাওয়া গেল না। বাব- মা ছাড়া তার এখন আর কেউ নাই।
জাতীয় নির্বাচন শেষ । বিকাশের দল নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়যুক্ত হলো। সরকার গঠন করার পরও তার জন্য কোন নেতা তদবির করতে এলো না। প্রতিদিন রেড়িওতে বর্তমান সরকারের অনেক গুণগানের কথা শুনে। বিকাশের একবার ইচ্ছা হল নেতাদের কাছে তার বর্তমান অবস্থার কথা চিঠির মাধ্যমে জানানোর। কিন্তু মনে কষ্ট লাগলো, ক্ষোপ জমলো। সে সিদ্ধান্ত নিল আর কোন নেতার সাহায্য আশা করবে না। এই নেতারাই তার জীবনকে নষ্ট করে দিয়েছে।
বিকাশের আর নেতা হবার সাধ নাই। নেতারা আজ মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত । মিথ্যার উপর দাড়িয়ে জীবন চলে বটে কিন্তু জীবনের সার্থকতা আসে না। এ সব কথা চিন্তা করতে করতে বিকাশ ক্রমশই গভীর চিন্তিত হয়ে পড়ে। সে জেলখানায় বসেই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। জীবনকে একটি সুন্দর ভিত্তির উপর দাড় করাবার স্বপ্নে তার মন নতুন আশা বাঁধে। তার এখনকার মনের ইচছা মানুষের মনে বাঁিচবার তরে একটা কিছু করা। কিন্তু এ জন্যও অনেক কিছুর দরকার, যা এই চার দেওয়ালের মধ্যে পাওয়া এক দূরহ ব্যাপার। তবুও সে চেষ্টা করে এবং এক সময় কাগজ-কলম সংগ্রহ করে বসে যায় লিখতে। দিনের পর দিন লিখতে থাকে তার জীবনের করুণ (কাহিনী) পরিণতির কথা এবং আরো অনেক কিছু।
তার বাবা অনেক চেষ্টা করেও তাকে জেলখানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে পারে নাই। তার বাবা একজন সাদাসিদে মানুষ। জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বেশী হলেও দুনিয়া সম্পর্কে ধারনা খুব কম। যে সময় একবারেই ব্যর্থ হলেন বিকাশকে জেলখানা থেকে বের করে আনতে তখন এ বিচার সম্পূর্ণ বিধাতার উপর ছেড়ে দিলেন।
বিকাশ অনেকদিন ধরে তার জীবন ইতিহাসসহ আরো অনেক লেখা লিখছে। একসময় শরীরের উপর ইচ্ছাকৃত অনিয়মের কারণে এবং জেলখানার পেষ্টনে শরীর ভগ্ন হয়ে পড়ে। দিন দিন তার চোখের আলো কমে আসতে থাকে। তবুও সে জীবন-মরনের তোয়াক্কা না করে কেবল লিখেই যাচ্ছে। এক সময় বেশী অসুস্থ্যতার কারণে প্রশাসনের তরফ থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা গেল তার ব্ল্যাড ক্যান্সার হয়েছে। ক্যান্সার অবস্থায় কিছুদিন বেঁচে থাকার পর মারা যায়। তার মৃত্যুর খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হল। তার বাবা-মা তার লাশ বাড়িতে এনে দাফণ করে।
মৃত্যুর পর তার জীবনের করুণ পরিনতি সম্ভলিত পান্ডুলিপিখানা প্রকাশিত হয় এবং তা মানুষের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। পরে তার লিখিত অন্যান্য মূল্যবান লেখাও প্রকাশিত হয়। তার কারাবস্থায় লিখিত জীবন ইতিহাস পড়ে অনেকই দুংখ প্রকাশ করে এবং অনেকে আড়ালে তার জীবনের করুন পরিণতির ইাতহাস পড়ে দু'’ফোটা চোখের জলও ফেলে। তার অন্যান্য লেখায়ও বিরল প্রতিভার স্বাক্ষর মিলে। এসবই আজ মানুষের মনের মাঝে বিকাশকে স্থান করে দিয়েছে। মানুষের মনের মাঝে অনেকদিন বেঁচে থাকার কর্মটাই শেষ জীবনে বিকাশের ধ্রুব লক্ষ্য ছিল আর এটাই বিকাশের সার্থকতা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৪৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×