somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাঁস-মুরগি-গরু, এমনকি কুকুর-বিড়াল-খরগোশও ছিল বাড়িটিতে।

০৯ ই মে, ২০১১ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চারপাশে ১২ থেকে ১৮ ফুট উঁচু প্রাচীর। তার মাথায় কাঁটাতারের বেড়া। এর মধ্যেই তিনতলা বাড়িটি। বাইরে থেকে মনে হতে পারে ভেতরে কী না কী আছে। কিন্তু ভেতরের পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। হাঁস-মুরগি-গরু, এমনকি কুকুর-বিড়াল-খরগোশও আছে বাড়িটিতে। সীমানাপ্রাচীরের ভেতরই সবজিখেত। এমনই সাদামাটা গেরস্থ পরিবেশে পাঁচটি বছর কাটিয়েছেন আল-কায়েদাপ্রধান ওসামা বিন লাদেন।
পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের হাতে আটক বিন লাদেন পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা, মার্কিন সরকারের প্রকাশ করা ও পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার ধারণ করা ভিডিওচিত্র এবং প্রতিবেশীদের বর্ণনায় এখন উঠে আসছে বিন লাদেনের গোপন-জীবনের নানা চিত্র।
বিন লাদেনের ছেলে ওমর বিন লাদেন ২০০৯ সালে এক ই-মেইলবার্তায় বলেছিলেন, ‘আমার বাবা মাসের পর মাস নিজেকে গৃহবন্দী করে রাখতে চাইবেন না। কেননা তিনি প্রকৃতি খুব ভালোবাসেন। তার পরও আমার কাছে যদি জানতে চাওয়া হয় বেঁচে থাকার জন্য তাঁর কী দরকার—আমি বলব, খাবার ও পানি। তখন তিনি অন্তর্জগতে ডুব দেবেন।’
মার্কিন ও পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরো তিনতলা বাড়ির মধ্যে মাত্র দুটি কক্ষেই সীমাবদ্ধ ছিল লাদেনের জীবন। তবে বাইরে থেকে ঘেরা একটি বারান্দায় তিনি মাঝেমধ্যে হাঁটাহাঁটি করতেন। বেশির ভাগ সময় কাটত টেলিভিশন দেখে। কম্পিউটার নিয়েও সময় কাটাতেন অনেক। তবে বাড়িতে কোনো টেলিফোন বা ইন্টারনেটের সংযোগ ছিল না।
২ মে অভিযান শেষ করে মার্কিন কমান্ডোরা বাড়িটি ছেড়ে যাওয়ার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা তাঁর মুঠোফোনে অ্যাবোটাবাদে বিন লাদেনের আশ্রয়স্থলের খুঁটিনাটি বিষয় ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। ভিডিওচিত্রে অত্যন্ত সাদামাটা গৃহস্থালির আবহ দেখা গেছে। রান্নাঘরে একটা পাত্রে পড়ে আছে কয়েক ডজন মুরগির ডিম। বাসনকোসনে কয়েক পদের খাবার। কাঠের কাপবোর্ডের ডালা খোলা, ভেতরে কিছু নেই। ঘরের মেঝেতে বিছানো সস্তা ফোমের জাজিম। বিভিন্ন কক্ষে কয়েকটি পুরোনো টেলিভিশন সেট। ঘরের অন্যান্য আসবাবও জৌলুশহীন।
মোহাম্মাদ কাসিম নামের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘ওই বাড়িতে দুটো গরু, কয়েকটা কুকুর ও শতাধিক হাঁস-মুরগি ছিল। আমরা বাসা থেকে হাঁস-মুরগির ডাক শুনতে পেতাম।’
পাশের একটি বাড়ির ১৪ বছর বয়সী কিশোর জারার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে, কিছুদিন আগে খুব কম সময়ের জন্য সে ওই বাড়িতে গিয়েছিল। বাড়িতে দুই নারীকে দেখেছিল। তাঁরা আরবি ও উর্দুতে কথা বলছিলেন। ওই দুই নারী তাঁকে আদর করে দুটো খরগোশ উপহার দিয়েছিলেন।
প্রতিবেশীরা বলেছেন, ওই বাড়িতে বাইরের কাউকে আসা-যাওয়া করতে দেখা যেত না। শুধু শামরেজ মোহাম্মাদ নামের এক ব্যক্তি বাড়ির গবাদিপশুর দেখাশোনা ও সবজিখেতের যত্ন নেওয়ার কাজ করতে সেখানে যেতেন। শামরেজকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর গত শুক্রবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেশীরা আরও জানান, ওই বাড়িতে বাস করা আরশাদ খান ও তারিক খান কখনোই বাড়িতে কাউকে দাওয়াত করতেন না। এমনকি তাঁরা নিজেরাও কারও বাড়ি যেতেন না। তবে মসজিদে যেতেন, নামাজ পড়তেন। প্রতিবেশীদের কেউ মারা গেলে জানাজায় অংশ নিতেন।
বাড়ির নারীরা বাইরে বের হতে হলে কেবল স্বামীদের সঙ্গে গাড়িতে করেই বের হতেন। এ সময় তাঁরা বোরকা পরিহিত থাকতেন। আশপাশের শিশুরা মাঠে খেলা করলেও ওই বাড়ির ছেলেমেয়েরা কখনো মাঠে খেলতে যেত না।
প্রতিবেশী এক শিশু জানায়, একদিন বাইরে খেলা করতে করতে তাদের বলটি ওই বাড়ির ভেতর চলে যায়। কিন্তু তাদের বল ফেরত না দিয়ে বাড়ির লোকজন তাদের ৫০ রুপি দিয়ে নতুন বল কিনে নিতে বলে।
২০০৪ সালে ওই বাড়িতে ওঠেন আরশাদ খান ও তারিক খান। তাঁরা প্রতিবেশীদের জানান, তাঁদের বাড়ি দেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকায়। জাতিতে পশতুন। প্রতিবেশীরা জানান, বাড়ি তৈরির সময় শ্রমিকদের দ্বিগুণ মজুরি দিয়েছিলেন ওই দুই ভাই। তাঁরা কী করেন জানতে চাইলে কখনো বলতেন দুবাইয়ে তাঁদের হোটেল আছে। আবার কখনো বলতেন তাঁদের মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবসা আছে।
আরশাদ ও তারিক দুই ভাই-ই নিহত হয়েছেন মার্কিন কমান্ডোদের অভিযানে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরশাদের প্রকৃত নাম আবু আহমেদ আল-কুয়েতি। তিনিই ছিলেন বিন লাদেনের বিশ্বস্ত বার্তাবাহক। তাঁর বাবার সঙ্গে বিন লাদেনের সম্পর্ক ছিল কয়েক দশক ধরে। আরশাদ-তারিকের এক বোনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে লাদেনের ছেলে খালিদের।
বিন লাদেনের তিন স্ত্রী থাকতেন ওই বাড়িতে। তাঁদের সবার সঙ্গে লাদেনের সম্পর্ক কী রকম ছিল জানা যায়নি। তবে ওই রাতের অভিযানের সময় কনিষ্ঠ স্ত্রী আমাল আহমেদ আবদুলফাত্তাহ ছিলেন বিন লাদেনের সঙ্গে। মার্কিন কমান্ডোরা তাঁর কক্ষে ঢুকে পড়ার পর আমাল এগিয়ে এসেছিলেন স্বামীকে রক্ষার জন্য। তখন কমান্ডোরা তাঁর পায়ে গুলি করেন।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানান, ওই বাড়িতে মোট নয়জন শিশু ছিল। তবে তাদের মধ্যে কয়জন লাদেন ও তাঁর ছেলের বাচ্চা আর কয়জন আরশাদ-তারিক ভাইদের জানা যায়নি।
অ্যাবোটাবাদের বাড়ি থেকে উদ্ধারের পর মার্কিন প্রশাসনের প্রকাশ করা একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, বিন লাদেন একটি পুরোনো কম্বল গায়ে দিয়ে বসে টেলিভিশনে তাঁর নিজের ছবি দেখছেন। যেন একজন বয়স্ক অভিনেতা আবার আলোচনায় ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, অন্য ভিডিওচিত্রগুলোতে বিন লাদেনকে ক্যামেরার সামনে প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। ভিডিও ধারণের জন্য তিনি অনেক উৎসাহিত ছিলেন, এ জন্য সাদা গোঁফ-দাড়ি কালি করে ফেলেছেন। এএফপি, নিউইয়র্ক টাইমস ও দ্য ইনডিপেনডেন্ট।
এখান থেকে-
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×