somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের সর্বশেষ দুর্ভিক্ষের দৃশ্য

০৯ ই মে, ২০১১ রাত ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্বের ধারায় এইক্ষনে সত্তরের দশকে ঘটে যাওয়া সর্বশেষ দুর্ভিক্ষের কিছু চিত্র তখনকার পত্রিকার আলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করব। কোন ভুল ভ্রান্তি থাকলে বাজে কথা না বলে সংশোধন করে দিলে কৃতার্থ হব :

বাংদেশের ৭০ জন বিশিষ্ঠ সাংবাদিক,সাহিত্যিক,বুদ্ধিজীবীর এক যুক্ত বিবৃতি:
বাংলাদেশের বর্তমান খাদ্যাভাব ও অর্থনৈতিক সঙ্কট অতীতের সর্বাপেক্ষা জরুরী সঙ্কটকেও দ্রুতগতিতে ছাড়াইয়া যাইতেছে এবং ১৯৪৩ সনের সর্বগ্রাসী মন্বন্তর পর্যায়ে পৌঁছাইয়া গিয়াছে।তাঁহারা সরকারের লঙ্গরখানার পরিবেশকে নির্যাতন কেন্দ্রের পরিবেশের শামিল বলিয়া অভিহিত করিয়া বলেনঃ “দুর্ভিক্ষ মানুষ দ্বারা সৃষ্ট এবং একটি বিশেষ শ্রেণীর অবাধ লুন্ঠন ও সম্পদ-পাচারের পরিণতি”। তাঁরা বলেনঃ “খাদ্য ঘাটতি কখনও দুর্ভিক্ষের মূল কারণ হইতে পারে না। সামান্যতম খাদ্য ঘাটতির ক্ষেত্রেও শুধু বন্টন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা যায়। যদি দেশের উৎপাদন ও বন্টন-ব্যবস্থা নিম্নতম ন্যায়নীতি উপর প্রতিষ্ঠিত থাকিত,দেশের প্রশাসন,ব্যবসা-বাণিজ্য শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সুবিচারকে নিশ্চিত করার সামান্যতম আন্তরিক চেষ্টাও থাকিত তাহা হইলে যুদ্ধের তিন বছর পর এবং দুই হাজার কোটি টাকারও বেশী বৈদেশিক সাহায্যের পর ১৯৭৪ সনের শেষার্ধে আজ বাংলাদেশে অন্ততঃ অনাহারে মৃত্যুর পরিস্থিতি সৃষ্টি হইত না।”(ইত্তেফাক,অক্টোবর ১,১৯৭৪)

সে সময়ের পত্রিকার কিছু শিরোনাম ছিল এইরকম :

“চালের অভাবঃ পেটের জ্বালায় ছেলেমেয়ে বিক্রি”-(গণকন্ঠ আগষ্ট ২৩,১৯৭২)

“লাইসেন্স-পারমিটের জমজমাট ব্যবসা;যাঁতাকলে পড়ে মানুষ খাবি খাচ্ছে;সিরাজগঞ্জ,ফেণী, ভৈরব,ইশ্বরগঞ্জ ও নাচোলে তীব্র খাদ্যাভাব,অনাহারী মানুষের আহাজারীঃ শুধু একটি কথা,খাবার দাও”- (গণকণ্ঠ আগস্ট ২৯,১৯৭২)

“গরীব মানুষ খাদ্য পায় নাঃ টাউটরা মজা লুটছে;গুণবতীতে চাল আটা নিয়ে হরিলুটের কারবার”-(গণকন্ঠ সেপ্টেম্বর ১৯,১৯৭২)

“একদিকে মানুষ অনাহারে দিন যাপন করিতেছেঃ অপরদিকে সরকারি গুদামের গম কালোবাজারে বিক্রয় হইতেছে”-(ইত্তেফাক এপ্রিল ৭,১৯৭৩);

“এখানে ওখানে ডোবায় পুকুরে লাশ।”(সোনার বাংলা এপ্রিল ১৫,১৯৭৩);

“চালের অভাবঃ পেটের জ্বালায় ছেলেমেয়ে বিক্রি; হবিগঞ্জে হাহাকারঃ অনাহারে এ পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু”-(গণকন্ঠ মে ৩,১৯৭৩);

“কোন এলাকায় মানুষ আটা গুলিয়া ও শাক-পাতা সিদ্ধ করিয়া জঠর জ্বালা নিবারণ করিতেছে”-(ইত্তেফাক মে ৩,১৯৭৩);

“অনাহারে দশজনের মৃত্যুঃ বিভিন্নস্থানে আর্ত মানবতার হাহাকার;শুধু একটি ধ্বনিঃ ভাত দাও”-(গণকন্ঠ মে ১০,১৯৭৩);

“লতাপতা,গাছের শিকড়,বাঁশ ও বেতের কচি ডগা,শামুক,ব্যাঙার ছাতা,কচু-ঘেচু পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের প্রধান খাদ্যে পরিণতঃ গ্রামাঞ্চলে লেংটা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি”-(ইত্তফাক মে ১০,১৯৭৩);

“পটুয়াখালীর চিঠিঃ অনাহারে একজনের মৃত্যু;সংসার চালাতে না পেরে আত্মহত্যা”-(গণকন্ঠ মে ১০, ১৯৭৩);

“ওরা খাদ্যভাবে জর্জরিতঃ বস্ত্রাভাবে বাহির হইতে পারে না”-(ইত্তেফাক মে ৩০,১৯৭৩)

“আত্মহত্যা ও ইজ্জত বিক্রির করুণ কাহিনী”-(গণকন্ঠ জুন ১,১৯৭৩)

“স্বাধীন বাংলার আরেক রূপঃ জামাই বেড়াতে এলে অর্ধ-উলঙ্গ শ্বাশুরী দরজা বন্ধ করে দেয়”-(সোনার বাংলা জুলাই ১৫,১৯৭৩)

“গ্রামবাংলায় হাহাকার,কচু-ঘেচুই বর্তমানে প্রধান খাদ্য”-(ইত্তেফাক এপ্রিল,১৯৭৪);

“দুঃখিনী বাংলাকে বাঁচাও”-(ইত্তেফাক আগষ্ট ৪,১৯৭৪);

“জামালপুরে অনাহারে ১৫০ জনের মৃত্যুর খবর”-(ইত্তেফাক আগষ্ট ১৩,১৯৭৪)

“১০দিনে জামালপুর ও ঈশ্বরদীতে অনাহার ও অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে ৭১ জনের মৃত্যু”-(গণকন্ঠ আগস্ট ২৭, ১৯৭৪)

--চলবে।
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×