সমাজপতিদের অপবাদ আর রোষানলে পড়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিবারেই নেমে আসে ঘোর অমানিশার আঁধার। অকালেই ঝরে যায় বহু নিরপরাধ প্রাণ। আর এসব ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সময় সারাদেশে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। এমনকি বেশ কয়েকটি ঘটনা গড়িয়েছে হাইকোর্ট পর্যন্ত। তাতেও কমেনি সমাজপতিদের দৌরাত্ম্য। এবার সমাজপতিদের দেয়া অপবাদে অকালে ঝরে গেল লক্ষ্মীপুরের কিশোরী সাবানা আক্তার (১৮)। আপন চাচার হাতধরে সে পালিয়ে যায়, এমন অপবাদ দিয়ে তার পরিবারকে একঘরে করে রাখে এলাকার সমাজপতি তোফায়েল ও তার লোকজন। কিন্তু অবিশ্বাস্য এ অপবাদ সইতে পারেনি সাবানা ও তার চাচা রিপন (৩০)। দু'জনেই আজ রোববার বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এর কিছুক্ষণ পর নিজ বাড়িতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সাবানা। অন্যদিকে রিপনও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের সহিদাবাদ গ্রামের দর্জি বাড়ির হত দরিদ্র সফি উল্যার ১০ শতাংশ জমি রয়েছে স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি তোফায়েলের বাড়ির সামনে। তোফায়েল সেই জমি তার কাছে বিক্রি করার জন্য বৃদ্ধ সফি উল্যাকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। এতে সফি উল্যা রাজি না হওয়ায় তাকে ও তার পরিবারকে বিভিন্ন সময় হয়রানি করে প্রভাবশালী তোফায়েল। সমপ্রতি সফি উল্যার ছেলে রিপন (৩০) ও বড় ছেলে বাক প্রতিবন্ধী নুর আলম বাদশার মেয়ে সাবানা (১৮) চট্টগ্রামে সফি উল্যার মেয়ের বাসায় বেড়াতে যায়। আর এটাকেই হাতিয়ার করে নেয় তোফায়েল। সে ও তার অনুগত নূর হোসেন গং এলাকায় রটিয়ে দেয় চাচা রিপনের হাতধরে ভাতিজি সাবানা পালিয়েছে। তারা এলাকায় ফিরে আসার পর তোফায়েল এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত সফি উল্যার পরিবারকে এক ঘরে করে রাখার জন্য এলাকাবাসীকে নির্দেশ দেয়। সেই সাথে সফি উল্যাহকে শুক্রবার গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে সেখান থেকে বের করে দেয়া হয়। তোফায়েল ও নূর হোসেন বাদী হয়ে চাচা-ভাতিজির কথিত অনৈতিক সম্পর্কের বিচার চেয়ে স্থানীয় ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুস শহীদের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তিনি আগামী শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে এ বিচারের সময় নির্ধারণ করেন। এদিকে গত ৫ দিন ধরে তারা গ্রামের কারো সাথে মিশতে পারেনি। দোকান থেকে তাদের কেনাকাটা করতেও দেয়া হয়নি। এ কারণেই রিপন ও সাবানা লজ্জা আর ক্ষোভে আজ রোববার সকালে বিষপানে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিষপানের কিছুক্ষণের মধ্যেই সাবানা মারা গেলেও রিপনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। সাবানা ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করত। অন্যদিকে চাচা রিপন গ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। বিবাহিত রিপনের একটি সন্তানও রয়েছে।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস শহীদ শীর্ষ নিউজ ডটকমকে জানান, তার কাছে তোফায়েল এবং নূর হোসেন লিখিত অভিযোগ করায় তিনি বিচারের উদ্যোগ নিয়ে তারিখ দিয়েছেন। এর বেশি তিনি কিছুই জানেন না।
তোফায়েল বলেন, এরা লোক ভালো না। স্বভাব চরিত্র খারাপ বিধায় তাদের মসজিদে যেতে এবং গ্রামের মানুষের সাথে মিশতে মানা করেছি। সে জন্য চেয়ারম্যানের কাছে তাদের বিচারও চেয়েছি।
লক্ষ্মীপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম সারোয়ার শীর্ষ নিউজ ডটকমকে জানান, তিনি এখনো লিখিত অভিযোগ পাননি। লোক মুখে খবর পেয়ে একজন এসআইকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন।
এভাবে আর কতদিন আমরা তোফায়েল দের অত্যাচার সহ্য করব।এর কি কোন প্রতিকার নাই। জবাব দাও এই সমাজ !!!!!!!
View this link View this link