somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূগর্ভস্থ পানির সংকট: নদীই একমাত্র ভরসা

০৮ ই মে, ২০১১ বিকাল ৩:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলমান ঢাকা। নাগরিক জীবনের প্রতি মহুর্তের ব্যস্ততা । প্রাণ চঞ্চল এই শহর ঘীরে নগর জীবনের নানান প্রত্যাশা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান এ নগরের বিস্তৃতি যতো বাড়ছে ততই সমস্যা সঙ্কুল হয়ে উঠছে নগর জীবন। গ্যাস, বিদ্যুতের সমস্যাতো আছেই। তার উপর সরবরাহকৃত পানির সঙ্কটে নগর জীবন অতিষ্ঠ প্রায়। ওয়াসার গাড়ির অপেক্ষায় মহল্লায় মহল্লায় দীর্ঘ লাইনে মানুষের হাহাকারও ক্রমশ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। পানির দাবিতে থালা, বাসন, হাড়ি পাতিল, কলস নিয়ে মানব বন্ধনও হরহামেশার চিত্র। কিন্তু প্রতিকার সামান্যই। পানি সরবরাহেও বিদ্যুতের মতো লোডশ্যাডিং পদ্ধতির দিকেই মনোনিবেশ করছে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের এতোটাই দূরাবস্থা যা কল্পনাতীত। ১৫৩০ বর্গ কিলোমিটার এ শহরে দুই কোটি লোকের নিত্যদিনের বাস। প্রতিদিন ২০ লাখ লোক ঢাকা প্রবেশ করে এবং কর্ম শেষে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে ১০ থেকে ১৫ লাখ। ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যার চাপ সত্যিই ঢাকা নিতে পারছেনা। বিপুল জনগোষ্ঠির জন্য পানির যোগান দেয়া দুর্ভেদ্য হয়ে পড়েছে। ১৯৬০ সালে ঢাকায় প্রতিদিন পানির চাহিদা ছিল মাত্র ১৫০মিলিয়ন লিটার। ১৯৯৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রতিদিন ১৫০০ মিলিয়ন লিটার। আর ২০০৫ সালে এ চাহিদা ছিল প্রতিদিন ২১০০ মিলিয়ন লিটার । বর্তমানে ঢাকায় প্রতিদিনকার বিপরীতে পানির চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৫০০ মিলিয়ন লিটার। অতচ প্রতিদিন যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে মাত্র ১৯০০ লিটার। এখনকার হিসেবে প্রতিদিনকার চাহিদার বিপরীতে ৬০০ মিলিয়ন লিটার পানির শর্টেজ বা অভাব রয়েছে। এ শর্টেজ যতোই দিন যাচ্ছে ততই পাহাড়সম আকার ধারন করছে। পানি সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে, ২০৩০ সালে ঢাকায় প্রতিদিনকার পানির চাহিদা দাঁড়াবে প্রায় ৫০০০ মিলিয়ন লিটার। আর ওয়াসা সরবরাহ করতে পারবে মাত্র ২০০০ মিলিয়ন লিটার । যা ভূগর্ভস্থ পানির স্তর থেকে আসবে ১৭০০ মিলিয়ন লিটার এবং সারফেস বা ভ-ূউপরিভাগ থেকে যোগান দেয়া হবে বাকি ৩০০ মিলিয়ন লিটার। প্রতিদিনকার চাহিদা মেটাতে গিয়ে ২০৩০ সালে শতকরা মাত্র ৪০ ভাগ পানির চাহিদাই পুরণ করা সম্ভব হবে। বাকি ৬০ ভাগ চাহিদা পুরণে ঢাকা বাসি পিপাসার্ত হয়ে উঠবে । অতচ পানির ব্যবহারের অবহেলার কারণে প্রতিদিন ১০ লাখ লিটার পানির অপচয় হচ্ছে। আগামি বছরগুলোতে অবর্ণনীয় এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে এ শহর। আয়তনের তুলনায় অধিক জনবসতির কারণেই ভবিষ্যত ঢাকার এমন চেহারা হবে। এ কথা র্নিদ্বিধায় বলা যায় । এ শহরের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকার বর্তমান ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের গড় গভীরতা ৬২ মিটার। প্রতি বছর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে ১ থেকে ২.৫ মিটার হারে। আগামি ২০ বছর পর ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের গড় গভীরতা হবে প্রায় ১০০ মিটার। যেখান থেকে পানি পাওয়ার সম্ভবনা হবে ক্ষীন। তাই ঢাকার নদীগুলো পুনরুদ্ধারে সরকারকে আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে। ঢাকার আশপাশের নদীগুলোকে বাঁচানো না গেলে ঢাকার মানুষগুলোকেও বাঁচানো যাবেনা। নদীর গুরুত্ব শুধৃু সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে নয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের রিচার্জে নদীর ভূমিকা ব্যাপক। বৃষ্টিতে সারফেস বা ভূ-উপরিভাগের পানির রিচার্জ হয়। বর্ষাকালে নদীর পানির প্রাকৃতিক বৃদ্ধি ঘটে। যা ভূগর্ভস্থ পানির আধারে পৌঁছে পানির স্তরের আশাতীত বৃদ্ধি ঘটায়। পানি উত্তোলনের হার যেভাবে বাড়ছে সেই ভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের রিচার্জের হার বাড়ছেনা। ফলে পানির স্তরের ক্রমবনাতি ঘটছে। এইভাবে পানির আধার স্তরে শূণ্যতা সৃষ্টি হলে প্রকৃতিতে বিরাট প্রতিকুল অবস্থার সৃিষ্ট হবে। ভূমিধস থেকে শুরু করে খরা, পরিবেশের বিপর্যয়ে বিনষ্ট হবে নগর জীবন। যা পুরো বাস্তুসংস্থানের শৃঙ্খলটাকে ভেঙ্গে দিবে। ফলে মানুষের জীবন যাপন হয়ে পড়বে সঙ্কটাপন্ন। টিকে থাকার লড়াইয়ে মানুষও তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারবেনা। তাই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। ঢাকার আশেপাশের সকল জলাধারকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। জলাভূমি ভরাট করে মানুষের বসতি বানানো হলে তা মানুষের জন্য মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়াবে। দখল দারিত্বের হাত থেকে ঢাকার সবগুলো নদীকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনতে হবে। নদীগুলোকে শুধু দখলমুক্ত করলেই হবেনা। কারখানার বর্জ্যরে অভিশাপ থেকে ঢাকার আশপাশের নদীগুলোকে উদ্ধার করতে হবে। বর্জ্য নদীতে নিক্ষেপ করার বিরুদ্ধে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তির বিধান করতে হবে। ঢাকার নদীগুলোকে খনন, পুনখননের মাধ্যমে নদীতে পানির প্রবেশ্যতার স্বাভাবিকতা বজায় রাখার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বৃষ্টির পানির সঠিক ব্যবহারের কৌশল প্রণয়ন জরুরি। শহরের বিভিন্ন স্থানে গভীর ও অগভীর কূপ খনন করে বৃষ্টির পানি ভূগর্ভস্থ স্তরে পৌছার সহজ পথ সৃষ্টি করতে হবে। ঢাকার আশ পাশের নদীগুলোর পানি ব্যবহারযোগ্য করার জন্য পানি শোধানাগার প্রকল্প গড়ে তুলতে হবে। এবং ঢাকার নিকটবর্তী স্থানে ভূগর্ভস্থ পানির বিকল্প মজুদ স্তর চিহ্নিত করে ঢাকায় সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে পানির সংস্থান করতেই হবে। সেক্ষেত্রে নদী রক্ষা ও নদীর পানি ব্যবহারের কৌশল প্রণয়নই সবচেয়ে কার্যকরি উপায়। তাই ঢাকার নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে নিজেদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে।

হাসান কামরুল : ভূ-তত্ত্ববিদ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বেনজিরের হালচাল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:০৫

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।




স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে অঢেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালী মেয়েরা বোরখা পড়ছে আল্লাহর ভয়ে নাকি পুরুষের এটেনশান পেতে?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:২০


সকলে লক্ষ্য করেছেন যে,বেশ কিছু বছর যাবৎ বাঙালী মেয়েরা বোরখা হিজাব ইত্যাদি বেশি পড়ছে। কেউ জোর করে চাপিয়ে না দিলে অর্থাৎ মেয়েরা যদি নিজ নিজ ইচ্ছায় বোরখা পড়ে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করায় আপনার কেন দুঃখিত হওয়া উচিত নয়।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮

সোহান ছিল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ঈশ্বরা গ্রামের মহাসিন আলীর ছেলে ও স্থানীয় শহিদ নূর আলী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে ঈশ্বরবা জামতলা নামক স্থানে তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেন্ডার ও সেক্স

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৪ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫২

প্রথমে দুইটা সত্যি ঘটনা শেয়ার করি।

২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে জেলা পর্যায়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষার ঘটনা। দুজন নারী প্রার্থী। দুজনই দেশের নামকরা পাবলিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×