somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গালীর ADJUSTMENT এর রকম ফের......

০৭ ই মে, ২০১১ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই বঙ্গে জন্মে জীবনে একবারও জীবনের সাথে কোন রকম adjust করেনি এমন বঙ্গসন্তান খুজে পাওয়া যাবেনা। ভাই আপনি কোন adjust করেননি তো আপনি বাঙ্গালীই না। ৯৯% বাঙ্গালীকেই জন্মের পর থেকেই adjustment এর উপর থাকতে হয়। ডাকাক্তারা বলেন শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের কোন বিকল্প নাই। কিন্তু আজ কাল যে শিশুদের কপালে তাও নেই। উচ্চমূল্যের এই বাজারে বাকি সব কিছুর সাথে adjust করে শিশুটির জন্য আসে গুড়া দুধ। মায়ের বুকের দুধের জন্য আকুপাকু করতে থাকা নাদান আবুটাও বাধ্য হয়ে এই গরম পানিতে গোলা প্যাকেটের দুধের সাথে adjust করে নেয়। মা বাবার আদর পাবে কি, বাবা মা তাদের ক্যারিয়ারের সাথে adjust করতে করতে আবুটা বুয়াটার কোলেই adjust হয়ে যায়।এতো গেলো আজকালকার শিশুদের সাথে adjust এর কাহিনি।

আসেন দেখি আরেকটু বড় বাবুদের কপালে কি হয়। বাবুর বয়স ৪ ও হয়নি তখন থেকেই সে নিজেকে দেখে তার চেয়েও বেশি ওজনের ব্যাগ নিয়ে কোচিং এর মেলাতে । অতিদূর্লভ সরকারি স্কুলের একটা সিটে যে তাকে adjust হতেই হবে। এই কোচিং টু বাসা আর বাসা টু কোচিং আসা যাওয়ার মাঝে তাকেও ঘুমের সাথে adjustment করে নিতে হয়। গাড়ি বা কিক্সাতে মা কিংবা বুয়ার কোলে ঘুমাতে হয়। এই বাচ্চাদের adjustment এর বহর দেখে মাঝে মাঝে নিজেকেই নিজের অসহায়ত্বের সাথে adjust করে নিতে হয়।

যা হোক বহু কাহিনি করে সবাই যে যার মতো পড়া শুনায় ব্যস্ত। কিন্তু adjustment এর কাহিনি যে শেষ হয়না ! গুরুজনে বলেন বাচ্চাদের জন্য নিয়মিত খেলা ধুলা করা শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু হায় এখনেও যে adjustment এর কাহিনি। স্কুল/কলেজ, কোচিং, বাসার স্যার, বাইরের প্রাইভেট ইত্যাদির সাথে adjust করতে করতে বাচ্চা গুলির যে ঠিকমত ঘুমানোই সময় থাকেনা, খেলবে কখন?? আর সময় বের করতে পারলেও খেলবে কই? মাঠ কোথায়? তার সম বয়সী বন্ধু কোথায়? তাই আবার adjustment। এইবার কম্পিউটারের সাথে।

যাক এতো গেলো পড়া শুনার সাথে adjustment এর কাহিনী। আসেন এর বাইরে আসি। মেয়ে হয়ে জন্মেছেন। হাইস্কুল থেকেই adjustment শুরু। সম বয়সী ছেলেরা যখন বাইরে খেলাধুলায় কিংবা আড্ডায় তখন আপনি চার দেয়ালের মাঝে বন্দিনী। বড় ভাই যে বয়সে একা একা কক্সেসবাজার ঘুরে এসেছে, সেই বয়সে আপনি ১০ মিনিট দুরের বান্ধবীর বাসাতেও একা একা যাবার অনুমতি পাবেন না। কি আর করা , adjust করে নেন। মা কিংবা বাবার সাথে যান। যান ধরে নিলাম বাসায় সবাইকে ম্যানেজ করে একা বের হয়েই গেলেন, কিন্তু তাও কি adjustment এর হাত থেকে বেচে গেলেন?? না এবার যে রাস্তার বখাটে ছেলেদের কথা আর ইশারার সাথে adjust করে চলতে হবে। বখাটেদের সাথে তোমাদের এমন adjust করে চলা দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় দু’একটাকে ট্রাকের নিচে ফেলে দেই। কিন্তু ওই যে ভীরু বাঙ্গালী। তাই রাগের সাথে adjustment। সরি আপুরা, পারলামনা।

তাই বলে ভাববেন না যে ছেলে হয়ে জন্মে খুব বড় একটা কাজ করে ফেলেছেন। adjustment যে আপনাদের কপালেও লিখা আছে। সিগারেট খান না তাও বিড়িখোড় বন্ধুর ধোয়ার সাথে ঠিকই adjust করে নিতে হবে। নতুন মডেলের মোবাইলে বাজার ভর্তি,আপনি পড়ে আছেন ১১০০ এর আমলে। কারন আর কিছু না, পিতার সেই কালজয়ী বাণী, “বাবা একটু adjust করে নে, তুইতো সবই জানিস।” আর ভুল করে সংসারের বড় ছেলে হয়েছেন তো গেছেন। প্রায় সর্ব ক্ষেত্রে adjust করতেই হবে। বাবা মা আপনার কানে সব সময়ই বলে যাবে, “ তুমিনা বড় ছেলে, ছোট ভাই বোনদের জন্য এতোটুক adjust করতে পারবানা?? ”


আসেন বলি আম জনতার কথা। লোকাল বাসের সিট থেকে লিফটের কিউ সব জায়গায় adjustment। চাকুরি করেন আর বস / কলিগের সাথে adjustment করেননি তা হতেই পারেনা। না হয় ধরে নিলাম চাকুরি না ব্যবসা করেন। ভাইরে তাও উপায় নাই। লোকাল ভাই থেকে শুরু করে থানার হাবিলদার পর্যন্ত সবার সাথেই adjustment এ আসতে হবে। বাইরে আপনি ডাকসাইটে মানুষ কিন্তু ঘরের বউয়ের সাথে টিভির রিমোট নিয়ে ক্যাচাল লাগেনি এমন তো হবার নয়। পারিবারি শান্তি বজায় রাখার জন্যই হোক আর বউয়ের সাথে ঝগড়ায় হেরেই হোক রিমোটের সাথে adjustment করতেই হয়। তাও না হয় বউটা আপনার খুব ভালো, রিমোট আপনার হাতেই আছে। টিভিতে খেলা দেখতে বসেছেন, কিন্তু সিদ্ধু আর জাফারুল সরাফত যে বসে আছে ওই পাড়ে। কি আর করবেন? Adjust করেন ভাই adjust।


বাদ দেন, অনেক হইছে আম জনতার adjustment এর কথা। এখন নিজের কথা বলি। মধ্যবিত্ত সংসারের বড় ছেলে। সারাটা জীবনই adjust করে করে এলাম। বাপ মা গল্পের বই কিনতে টাকা দিতে রাজি না। কুছ পরোয়া নেহি, টিফিনের পয়সা adjust করে ঠিকই কিনতাম। কাজিন বিদেশ থেকে মোবাইল পাঠালেন। সংসারে তখন মোবাইল তো দূরে থাক একটা সীমও নাই। পড়ি তখন কলেজে। বাপের সোজা কথা তিনি মোবাইল নামক যন্ত্রনা নিতে রাজি না। মনে বড় আশা জাগিলো। কিন্তু হায়, ছোট ভাইয়ের আবদারে নিজের আশাটাকে মনের সাথে adjust করে মোবাইল খানা তাঁর হাতেই তুলে দিতে হলো। আরো বড় হইলাম কিন্তু adjustment এর হাত থেকে নিস্তার নেই। টিউশনির টাকার অর্ধেকটা যখন বন্ধু নিজের মনে করে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ধার নেয় আর বলে “দোস্ত এই মাসটা একটু adjust করে নে।” তখন অনাগত দিনগুলির চিন্তায় মাথার স্ক্রু গুলির আন্ত adjustment অটোমেটিকই লুজ হতে থাকে। বন্ধুরা প্রায় দিনই বাফেটে খাইতে যায়, হাজি,নান্না , বুমার’স তো কমন। মনে খায়েশ জাগিলেও বাস্তবতার সাথে adjustment করতেই হয়। প্রথম দেখাতে একটা মেয়েকে ভালো লেগেছিলো। কিন্তু ঢাকায় নতুন আসা ছেলেটা ঢাকার সাথে adjust হতে হতে পানি অনেক দূর গড়িয়ে গেলো। মনের ভিতর মাঝে মাঝে চিন্তা আসে ইস তখন যদি সব adjustment কে গুলি মেরে, তাকে বলে বসতাম তবে কি আজ এমন রস কসহীন জীবন কাটাতে হতো? মনটাকে অন্য কোথাও adjust ও করতে পারিনা। adjust করতে করতে অবস্থা এমন হয়ছে যে কেউ কিছু বললে না ও করতে পারিনা।
“দোস্ত একটু বাসায় দিয়ে আয় না?”
“আচ্ছা চল।” টিউশনি- থাক adjust করে নিবো।

“আচ্ছা শোন আজ আমরা অমুক জায়গায় যাচ্ছি। চল আমাদের সাথে।”
“আচ্ছা চল।” থাক ব্যাংকের কাজটা আরেকদিন adjust করে নিবো।

আজ থাক, অনেক হয়েছে। ফাইনাল অতিসন্নিকটে। পড়া রেখে ব্লগ লিখছি। না রেখে না, adjust করে।

ধন্যবাদ-
জি.এম. আকতার হোসেন বাপ্পি
[email protected]
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×