somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিহিংসায় অন্ধ যুক্তরাষ্ট্র তার আরেক শত্রুকে নিশানায় এনে হত্যা করল (বিন লাদেন হত্যা)

০৭ ই মে, ২০১১ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিহিংসায় অন্ধ যুক্তরাষ্ট্র তার আরেক শত্রুকে নিশানায় এনে হত্যা করল। মার্কিনরা উল্লসিত। বুশ আমলের নাটবল্টুরা বলার সুযোগ পেল, গুয়ানতানামোয় বন্দী নির্যাতন বিফলে যায়নি। ইউরোপও হইহই করে আনন্দ জানাচ্ছে। বাদবাকি বিশ্বের মার্কিন বশংবদ শাসকেরা (এর মধ্যে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টও আছেন) আমেরিকার মিশন সম্পন্ন হওয়ায় বাহবা জানাচ্ছেন।
ব্যাপারটা কিছুটা অদ্ভুত। বিন লাদেন তাহলে ছয় বছর ধরে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমির গা ঘেঁষা এক বাড়িতে আশ্রিত ছিলেন! কারও পক্ষেই বিশ্বাস করা কঠিন যে, পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কিছু জানতেন না। ২০০৬ সালে এ ধরনের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে আমার কথাবার্তার বিবরণ পাকিস্তানের ওপর আমার শেষ বইটাতে প্রকাশ করেছি। ওই ভদ্রলোক আমাকে নিশ্চিত করেছিলেন যে বিন লাদেন পাকিস্তানের ভেতরেই নিরাপদে আছেন। তিনি আরও বলেছিলেন, আমেরিকানরা বিন লাদেনকে মৃত দেখতে চাইলেও পাকিস্তানের স্বার্থেই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর ভাষায় কারণটা এই: ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে মারার কী ফায়দা?’ পাকিস্তানকে দেওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ও অস্ত্রপাতির দিকেই তিনি ইঙ্গিত করেছিলেন। ভদ্রলোক কি উদ্ভট কল্পনার মধ্যে আমাকে মজাতে চাইছিলেন, নাকি ধোঁকা দিচ্ছিলেন, তা নিয়ে আমি সে সময় নিশ্চিত ছিলাম না। এখন বুঝতে পারি, তিনি আমাকে সত্যই জানাচ্ছিলেন।
পাকিস্তান এখন এক ভয়ংকর বিতর্কের মধ্যে পড়েছে। ঘটনা যা-ই হোক, দেশটার কায়েমি সেনা-রাজনৈতিক গোষ্ঠী ধিক্কার থেকে বাঁচতে পারবে না। যদি তারা স্বীকার করে যে লাদেনের খবর তারা জানত, তাহলে তাদের ভেতর থেকেই নিন্দার ঝড় উঠবে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কনিষ্ঠ কর্মকর্তা ও সেনাদের মধ্যে গভীর অসন্তোষ রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় নিজ দেশের মানুষ হত্যার জন্য তাঁদের বাধ্য করায় তাঁরা অখুশি। যদি দেখা যায়, বিন লাদেনকে হত্যার জন্য আমেরিকান হেলিকপ্টারগুলো যে আসছে, তা পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে জানানোর প্রয়োজন আমেরিকা বোধ করেনি, তাহলে প্রমাণিত হয়ে যাবে যে দেশটির সার্বভৌমত্ব আমেরিকার মর্জির কাছে বাঁধা। যে নেতৃত্ব দেশের সার্বভৌমত্ব এভাবে বিকিয়ে দেয়, তাঁদের তারা গ্রহণ করবে না।
সিআইএর বিদায়ী প্রধান লিও পানেত্তা বলেছেন, আগেই তাঁরা ঠিক করে নিয়েছিলেন যে অভিযানের খবর পাকিস্তানকে জানানো হবে না। তাতে করে উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে পারে। কিন্তু গল্পগুলো দ্রুতই বদলে যাচ্ছে এবং কর্তাব্যক্তিদের মুখের কথায় আর বিশ্বাস রাখার উপায় থাকছে না। উইকিলিকসে যেমন ফাঁস হয়েছে, পাকিস্তানের ভেতরে ড্রোন হামলা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের মধ্যে সমঝোতা থাকলেও গণ-অসন্তোষ সামাল দিতে পাকিস্তান প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করবে। অন্যদিকে, সিআইএর চোখে আইএসআই একটা সন্ত্রাসী সংগঠন এবং তারা এখন নতুন তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে। পাকিস্তানের আকাশসীমায় যে হেলিকপ্টারগুলো ঢুকেছিল, তাদের হয়তো নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য অতীতে দেখা গেছে, বিমান আক্রমণ চালানোর সময় পাকিস্তানের রাডার-ব্যবস্থাকে আমেরিকার তরফে অচল করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এইবার সে রকম কিছু করা হয়নি।
পাকিস্তানের ভেতরের নির্ভরযোগ্য সূত্র জোর দিয়ে বলছে যে এই অভিযানের কোনো আগাম সংবাদ পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ছিল না। এ ঘটনা থেকে পাকিস্তানের মুখ রক্ষা করে বেরিয়ে আসার কোনো পথ যেখানে ছিল না, সেখানে আইএসআই যদি আগে থেকে অভিযানের খবর জানত, নিশ্চিতভাবেই তারা আগাম ব্যবস্থা নিত। এবং নির্ঘাত এর প্রভাব ভবিষ্যতে পাকিস্তানে মার্কিন সামরিক সাহায্যের ওপরও পড়ত। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কিংবা গোয়েন্দা সংস্থা এই খবর জানলে অন্তত নিজেদের মুখ রক্ষার জন্য একটি কাজ করতই। তারা চাইত, লাদেন ইসলামাবাদের একেবারে কাছে পাকিস্তানের সামরিক একাডেমির বুকের ওপর ধরা না পড়ে আরও কম বিব্রতকর জায়গায় তাঁকে পাঠিয়ে দিত। তখন আমরা দেখতাম, ধরা যাক, ওয়াজিরিস্তানের কোনো পাহাড়ি এলাকায় লাদেন-বধের ঘটনাটা ঘটছে। তা ছাড়া, এ ঘটনায় ভারত ও আফগানিস্তান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রচারণা-যুদ্ধের বিরাট মওকা পেয়ে গেল।
বাস্তবে, বিন লাদেনের মৃত্যুতে কিছুই বদলাবে না একটা বিষয় ছাড়া। অর্থনীতি ঠিকঠাক চললে এই ঘটনার সুবাদে ওবামার আরেকবার নির্বাচিত হওয়া হয়তো নিশ্চিত হলো। ইরাকে দখলদারি, ‘আফ-পাক যুদ্ধ’ এবং ন্যাটোর লিবিয়া আগ্রাসন চলবে বলেই মনে হচ্ছে। ওদিকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন অচলাবস্থা বহাল থাকছে। চাপের মুখে আরব দুনিয়ায় যে স্বৈরশাসকদের ওবামা নিন্দা করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাদের শিরোমণি সৌদি আরব ছাড়া তারা সবাই বিপদেই আছে।
আফগানিস্তানে তালেবান নেতাদের জন্যও ব্যাপারটা স্বস্তির। এখন আর তাদের বিন লাদেনের সঙ্গে একাকার করে নিন্দা করা যাবে না। এ ছাড়া বিন লাদেনের মৃত্যুতে আফগান-পরিস্থিতি এক চুলও বদলাবে না। বিদ্রোহীরা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম না হলেও (এমনকি সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধের সময়ও সেটা তারা পারেনি) দেশের বাকি অংশে তাদের নিয়ন্ত্রণ কম নয়। এই যুদ্ধে আমেরিকা জিততে পারবে না। যত তাড়াতাড়ি এখান থেকে তারা বেরিয়ে আসে ততই মঙ্গল। যত দিন না তা করা হবে, তত দিন তাদের পাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল থাকতেই হবে। মার্কিন-পাকিস্তান অম্লমধুর ভালোবাসা তত দিন চলবেই।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×