somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুয়েট। প্রসংগঃ রাজনীতি

০৬ ই মে, ২০১১ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন থেকে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি তখন থেকেই ভেবেছি বুয়েটে পড়তে হবে। কখনো ভাবিনি সেই বুয়েট নিয়ে আজ এরকম একটা লেখা লিখব!

গতকালের প্রথম আলো এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন (বাকিগুলা আমি দেখিনি) –এ একটা খবর ছাপা হয়েছে যেটা দেখে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায়না। সত্য-মিথ্যা নিয়ে পরে আসছি। এক শিক্ষার্থীকে নাকি পিটিয়ে তিন তলা থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে! যতদুর মনে পড়ে কিছুদিন আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল।

তখন আমরা খুব আফসোস করছিলাম, এই সব ছেলের কি খেয়ে দেয়ে কোন কাজ-কাম নাই! কিন্তু এখন যখন বুয়েটেও যা কিনা দেশের সেরা (!) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে বিবেচিত সেখানে রাজনীতির করাল থাবা এতো খারাপভাবে বসবে এটা কল্পনাও করিনি।
বুয়েটে সনি হত্যার পর বেশ কিছুদিন রাজনীতি অঙ্গন বেশ স্তিমিত ছিল। কিন্তু ০৫ ব্যাচ(২০০৫ সালে HSC পাশ) এর পর থেকে রাজনীতি ডানা মেলতে থেকে। আর নির্বাচিত সরকার আসার পর সেটা এখন ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। বিশ্বকাপ দেখা নিয়ে গন্ডগোল রাজনৈতিক সমস্যা না হলেও পরোক্ষ ইন্ধন ছিল তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাদের।

এবার আসি মুল ঘটনাতে যেটা গত পরশু (বুধবার) ঘটেছিল।

বুয়েটের ০৯ ব্যাচের মধ্যবর্তী একটা সমস্যা নিয়ে কিছু ছেলের মধ্যে হাতাহাতি হয়। সমস্যাটা কি সেটা ঠিক জানতে পারিনি। তবে প্রত্যেকটা ব্যাচ-এ কিছু তথাকথিত নেতা আছে। সম্ভবত এ নেতৃত্ব নিয়েই ঝামেলা! পরবর্তিতে ঐ ছেলে (যে মার খেয়েছে) তার বড় ভাইদের ডেকে নিয়ে আসে। বেশ কিছু কথিত বড় ভাই (০৫, ০৬, ০৭ ব্যাচ) ও তার ব্যাচের অন্য কিছু ছেলে লাঠিসোটা, রড, ব্যাট, স্টাম্প নিয়ে চিৎকার করতে করতে আহসানুল্লাহ হলে আসে। এবং ঐ হলের তিনতলায় গিয়ে সেই ০৯ ব্যাচ এর ছাত্রদের(যারা প্রথমে মেরেছিল) খুজতে থাকে। কিছু সাহসী সাধারণ ছাত্র বাধা দিলেও তাদের বলা হয়, এটা রাজনৈতিক সমস্যা। সাধারণরা যেন এখানে নাক না গলায়! আর যারা ঐ হলের কথিত নেতা তারা বেশ কিছুক্ষন চেষ্টা করে ঘটনা নিয়ন্ত্রন করার। কিন্তু যখনই বুঝতে পারে প্রতিপক্ষের পাল্লা ভারী তারা সরে পড়ে। তারা অনুরোধ করে হলের বাইরে মিটমাট করার জন্য। কিন্তু থামানো যায়নি। ফলশ্রুতি দুজনের মাথা ফাটা। আর ০৯ ব্যাচের যে ছেলেটাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে খবর এসেছে তাকে ফেলে দেওয়া হয়নি। তাকে ধাওয়া করে হয়েছিল এবং সে প্রাণভয়ে দুইতলা (৩ তলা নয়) থেকে লাফ দেয়। নিচে ঘাসের আচ্ছাদনে পড়ে বেশি ব্যাথা পাওয়ার কথা না। কিন্তু হয়ত বেকায়দাভাবে পড়ে চোয়ালে ব্যাথা পায়।

হায় ছাত্র!!
যারা কিনা ’৫২ তে পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল বুক চিতিয়ে, স্বাধীনতার সময় অসীম সাহসে যুদ্ধে গিয়েছিল তাদের এ করুণ পরিণতির দায় নেবে কে? ছাত্রলীগ না ছাত্রদল না শিবির? এ দায় আসলে আমাদের সবার।

বুয়েট ছাত্রলীগ!
কিছুদিন আগেই যাদের নেতৃত্বে সাধারণ ছাত্ররা সম্রাট হত্যার দুর্বার অন্দোলন করেছিল, তারাই এখন নিজেদের মধ্যে মারামারিতে লিপ্ত।

বুয়েটে যারা পড়তে আসে তাদের উদ্দেশ্য কি থাকে? ভালোভাবে পড়া শেষ করে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, দেশের জন্য কিছু করা। নিতান্তই সাধারণ কিন্তু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী! বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা এটা নিশ্চিত করে যেন সেরারাই এখানে পড়তে পারে। কিন্তু যখন পত্রিকায় নেগেটিভ খবর আসে তখন আর এটা মনে থাকেনা MIT তে কাজ করা বাংলাদেশী গ্রাজুয়েটদের অধিকাংশই (একমাত্রও হতে পারে) বুয়েটের স্টুডেন্ট ! যখন ব্লগে লেখা আসে, বুয়েট ছাত্র কর্ত্রিক ছাত্রী লাঞ্চিত তখন আর এটা মাথায় আসে না বুয়েট থেকে প্রতিবছর শয়ে শয়ে শিক্ষার্থী বাইরে বৃত্তি(ফুল ফান্ডিং) নিয়ে পড়তে যায়!

কিছু বিপথগামী ছাত্রের জন্যে বুয়েটের নাম এখন অনেক নিচে নেমে গেছে! এটা শুধু ছাত্রলীগের দোষ না। যদি আজ ছাত্রদল হতো একই ঘটনা ঘটতো। কিন্তু কি লাভ এইসব মারামারিতে! অন্তত বুয়েটে কোন লাভ দেখিনা আমি। ঢাবি তে মারামারির তাও একটা কারণ থাকে। তারা মারামারি করে সেন্ট্রালে যেতে পারবে। বুয়েট থেকে সর্বোচ্চ যে পদটা পেতে পারে তা হচ্ছে ছাত্রলীগের ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক’ – যে পদের কোন দাম নাই! ছাত্রলীগের যে কমিটি দেয়া হয়েছে সেই কমিটির কোন বৈধতা নাই। ক্ষমতার লোভ ছাড়া আসলেই কঠিন। তাই তো দেখি এখনো ০৩ ব্যাচের ছাত্র(০৩ ব্যাচ বের হয়েছে ২০০৮ এর শেষে) বুয়েটে রয়ে গেছে! এই ক্ষমতার জন্যেই কালকের এই ঘটনা!

কিন্তু এই ক্ষমতা দিয়ে কি করবে তারা? ডিপার্টমেন্ট আলাদা করার পর পরীক্ষা পিছানোয় আর ভুমিকা রাখতে পারবেনা তারা। তার ওপর পরীক্ষা পেছানো যতটা না রাজনৈতিক তারচে অনেক বেশি সাধারণের অংশগ্রহণ থাকে।

এই ক্ষমতা দিয়ে কি করবে তারা? ব্যাচের প্রোগ্রাম করবে। কিন্তু কারো কি যায় আসে প্রোগ্রাম কে করল না করল তাতে?

এই ক্ষমতা দিয়ে কি করবে তারা? তারা প্রকাশ্যে মদ্যপান করে ছাত্রী লাঞ্চনা করবে। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীকে র‍্যাগ দেবে। ক্যাম্পাসে ত্রাস সৄষ্টি করবে।
এই আবাল গুলারে ন্যাংটা কইরা ক্যাফের সামনে ঝুলাই রাখা দরকার।
ছাত্র-রাজনীতি অতীতে অনেক সাফল্যের রূপকার। কিন্তু এখন এটা একটা ব্যাধি। এখনই তার প্রতিকার না করলে দেশের ভবিষ্যত অন্ধকার।
আর বুয়েটের জন্য এটা অনেক বেশি সত্যি। দেশ যাদের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা করে তারা নিজেরাই ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। যদি এখনই কিছু করা না হয়, আর বেশিদিন লাগবে না এটা বলতে ,
The Best Brains… The wastage…
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×