somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চারুলতা - শেষপর্ব

০৪ ঠা মে, ২০১১ বিকাল ৫:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গাঁ ঘামিয়ে যায় রাতুলের।সূর্যের প্রখর আলোতে চোখ মেলতে কষ্ট হচ্ছিল।সেই সমান্তরাল রশ্মিকে উপেক্ষা করে চোখ মেলে তাকায়।দেয়াল ঘরিটায় ৩ টা ১৯ বাজে তখন।অনেক বেলা হয়ে গেছে।আগের রাতের ঘটনা মনে করতে চাইছে রাতুল।কিছুক্ষন আগেই স্বপ্ন দেখছিল যে, সাতটি গোলাপ হাতে দাড়িয়ে আছে ও।বিশাল এক সমুদ্রের মাঝে ছোট একটি নৌকায়।নৌকার পাল নেই নেই বৈঠা।চিৎকার করছে কিন্তু কেউ সাহায্য করতে আসে না।

ঘামিয়ে গেছে টি শার্টটা।বারান্দায় এসে দাড়ায় ও।একটা সিগারেট প্রয়োজন ছিলো।রাতে আনতে ভুলে গেছে।ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ার দরুন ঘুম ঘুম ভাবটা তখনও কাটিয়ে তুলতে পারছিল না।এবার মনে পড়ল রাতুলের।গতকাল চারুলতা আসেনি।অবুঝ মনে কোথায় যেন টন টনে একটা ব্যাথা অনুভব করল রাতুল।কেন এলোনা চারু?ওর কোন বিপদ হয়নি তো?এমনটা হলেতো ফোনে জানানোর কথা।তবে কি চারু আমাকে ধোকা দিল?কিন্তু চারু ধোকা দিবে কেন?

এমন প্রশ্ন উকি দিতে লাগল রাতুলের মনে।চারুলতার মোবাইলে সংযোগ পাওয়া গেল না।খাটের উপর এসে বসল।এখন বাইরে যাওয়া উচিত কিন্তু যেতে ইচ্ছে করছিল না।বালিশটা মুখের উপর দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা কিন্তু চারু ছায়া হয়ে ঘুম সাংগ করল।উঠে বসে পড়ল রাতুল।পাশের রুমে যেয়ে দেখল মা শুয়ে আছে।চুপি চুপি যেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল সে।

মা: কিরে পাগলা!!! তোর মন খারাপ?

রাতুল: তুমি ঘুমাও নাই?আমার মন ঠিক আছে।

মা: এখনও ত খাওয়া দাওয়া করিস নি। চল খেতে চল।

রাতুল: না, পরে খাব।তোমাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষন শুয়ে থাকি।


মায়ের কোলে থেকে কষ্ট কমিয়ে নিতে চায় রাতুল।কিন্তু বিষয়টা তারপরেও পীড়া দিচ্ছে।কি যেন নেই নেই মনে হচ্ছে।মস্তিষ্কে কেমন যেন একটা যন্ত্রনা বারে বারে চমকে উঠছিল।

রাত তখন ১টা ৫৭।রাতুলের মোবাইলটা হঠাৎই বেজে উঠল।মোবাইলের মনিটরের দিকে তাকাতেই কপালে তিনটা ভাজ পড়ে রাতুলের।চারুলতার নাম ভাসছে। কলটা রিসিভ করে রাতুল,

রাতুল: চারুলতা!!!

ওপাশ থেকে: রাতুল আমি ঈনিয়া,

রাতুল: মানে কি?

ওপাশ থেকে: মানে আমি ঈনিয়া,

রাতুল: চারুলতার নম্বর তোর কাছে এল কোথা থেকে?

ওপাশ থেকে: আমিই চারুলতা,

রাতুল: কিসব আবোল তাবোল বকতেছিস?আমাকে ক্লিয়ার কর প্লিজ!!!

ওপাশ থেকে: রাতুল তুই আমার কথাগুলো একটু শোন, আমিই চারুলতা।আমি শুরু থেকেই তোকে খুলে বলছি, শোন আমি অনেক আগে থেকেই তোকে অনেক পছন্দ করতাম।কিন্তু সেই ভালো লাগা এতটা গভীর হয়ে যাবে আমি নিজেও ভাবতে পারিনি।তোর দুষ্টামি, কথা বলার ধরন ,চুলে টান দেয়া, ঝারি দেয়া, নাক টেনে দেয়া, চুলের কাঁটা খুলে নেয়া, হাসি দিয়ে রাগ ভুলিয়ে দেয়া সবই আমার ভালো লাগত।জানিস তো ছোটবেলা থেকে আমি নিঃসঙ্গ একাকী বড় হয়েছি।তাই তোর সঙ্গ, তোর হাসি, তোর কথা আমার অনেক আপন মনে হত। আমি আবিষ্কার করলাম তোকে ছারা আমার নিজেকে কেমন যেন এলোমেলো লাগতো।তোর শত ঝারি খাওয়া সত্বেও তোর কথা শোনার জন্য আমি তোর পিছু পিছু হেঁটেছি।তোকে হারানোর ভয়ে আমি ছদ্মনাকে চারুলতা কৌশলে তোকে ফোন করেছি।কিন্তু আমার প্রতি তোর এতটাই অবহেলা ছিল যে তুই আমার গলার স্বরই চিনতে পারিস নি।দেখ রাতুল, আমি সত্যিই তোকে অনেক ভালোবাসি, গতকাল যা হয়েছে তার জন্য আমি আন্তরীকভাবে দুঃখিত।আমাকে ক্ষমা করে দিস।

রাতুল:তোর বলা শেষ হইছে? এইবার ক্ষ্যান্ত দে।তুই আমার সাথে এমন একটা চিটিং করলি কিভাবে?তোর কি বিবেক বইলা কিচ্ছু নাই?আমাকে ভালো লাগে সেইটা ত তুই আমাকে বলতে পারতি,কিন্তু বন্ধু হয়ে এই চিটিং এর মানে কি?

ওপাশ থেকে: দেখ আমি তোকে অনেকবার বলতে চেয়েছি।কিন্তু তুই কখনোই আমার কথা শুনিস নি।আর আমি চিটিং করিনি।আমি তোর সাথে কানেক্টেড থাকার জন্যই এসব করেছি।

রাতুল: শুন ন্যাকামি বাদ দে।তুই আর কখনই আমার সাথে কথা বলবি না।তোর মত চিটারের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

ওপাশ থেকে: তুই এতটা কঠোর কেন?

রাতুল: আমি এমনই, পছন্দ হয়?? না হইলে কিছু করার নাই।তুই ফোন রাখ।

ওপাশ থেকে:ওকে তাহলে আজই তোর সাথে শেষ কথা।আমিও দেখি তুই কতটা কঠোর।


অপর প্রান্ত থেকে কান্নার শব্দ শোনা যায়।কলটা কেটে দেয় রাতুল।কিছুক্ষন থ মেরে বসে থাকে।মোবাইলটা ছুরে ফেলে বিছানার উপর।বালিশে মাথা রাখে।এপাশ থেকে ওপাশ গড়াগড়ি।ঘুম আসে না।ঈনিয়ার সাথে এমন ব্যাভার করাটা কি ঠিক হয়েছে?ভাবতে থাকে রাতুল।ঈনিয়াতো খারাপ কিছু করেনি,প্রেমের জন্য এতটুকু করা যায়।নামটা হোকনা চারুলতা কিন্তু মানুষটাত ঈনিয়া।না বুঝে কতখানি কষ্ট দেয়া হয়েছে বেচারিকে।


পরের দিন ভার্সিটিতে যেয়ে ঈনিয়ার খোঁজ করে রাতুল।রাজু জানাল একটু আগে নাকি ঈনিয়াকে নীচে নামতে দেখেছে।দৌড়ে নীচে যায় রাতুল।ঈনিয়া আদ্রিকার সংগে কথা বলছিল।রাতুলকে আসতে দেখে ওর গাড়ির দিকে হাটতে শুরু করলো। ঈনিয়া যখন গাড়ির কাছাকাছি তখন রাতুল পিছন থেকে এসে ঈনিয়াকে জোরে ঝাকুনি দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল,

রাতুল: কিরে তোর চোখ এমন ফুলে গেছে কেন?সারা রাত কান্নাকাটি করছিস?

ঈনিয়া: না।আমি কাঁদব কেন?আর তুই না বললি আমার সাথে কথা বলবি না?

রাতুল: আরে সোনা তুমিই ত আমার সব, আমার চারু , আমার ঈনিয়া।

ঈনিয়া:ফাজলামি করতেছিস আবার?

রাতুল:ফাজলামি না।আমি ড্যাম সিরিয়াস।তোমার না খুব শখ আমাকে নিয়ে রিক্সায় ঘুরার? চল আজ তোমাকে নিয়ে রিক্সায় ঘুরব সমস্ত ঢাকা সিটি।

সম্পর্কটা তুই থেকে তুমিতে নেমে আসায় লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় ঈনিয়া।রাতুল হাত ধরে নিয়ে যায় ওকে। রিক্সায় বসে ঈনিয়ার চোখে তাকায় রাতুল।গভীর নয়ন জোড়ায় কত ভালোবাসা জমা রেখেছে মেয়েটা।ঈনিয়ার হাত চেপে ধরে রাতুল।শিহরিত হয় ঈনিয়া।চোখ থেকে জল গড়িয়ে নেমে আসে। ঈনিয়ার বৃষ্টিঝরা নির্ঘুম চোখদুটোতে ওষ্ঠের চুম্বন রেখা একে দেয় রাতুল।ঈনিয়াও রাতুলের বুকে ঠাই খুঁজার চেষ্টা করে।বিকেলের কোমল রোদ এসে মেখে যায় ওদের গাঁয়ে।
এভাবেই একটি চারুলতার মৃত্যঘটে আর দুজনের সম্পর্কের ভিত স্থাপিত হয় পরম ভালবাসায়।

[অতঃপর গল্প শেষ করিতে পারিলাম]

সবার জন্য শুভেচ্ছাস্বরুপ রইল চন্দ্রবিন্দুর দারুন একটি গান।


চারুলতা - প্রথম পর্ব

চারুলতা -দ্বিতীয় পর্ব

চারুলতা-তৃতীয় পর্ব

চারুলতা-চতুর্থ পর্ব

চারুলতা-পঞ্চম পর্ব



সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১২ ভোর ৫:২৪
৩১টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×