somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছায়া ছিনতাই অথবা ছায়া-পাগলের কাহিনী

০৩ রা মে, ২০১১ সকাল ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক.
স্টেশনে বসে আছি ঠায়। ট্রেন এসে আবার চলে যায়। বুক পকেটের টিকিট শরীরের ভাপে ভিজে জবুথবু। কেউ আসবার কথা নই। আমি ফিরে যাব কারও কাছে এই শহরে এমন কেউ নেই। কাউকে পাঠাবনা ভেবে যে চিঠিখানা লিখেছিলাম, দলা পাকিয়ে ছুড়ে ফেলেছি পরিত্যক্ত এক পুকুরে। আর বালিকা বেশ্যার মধ্যগগণে চুমু খেয়ে উঠে এসেছি মধ্যদুপুরে, চুপিসারে। এর বেশি কিছুই রেখে যাচ্ছি না এই শহরে।

আরও একবার ভালো করে দেখে নিতে চেষ্টা করি শরীরের প্রতিটা ভাজ, হাত গলিয়ে পড়ে শূন্যে। এদিক ওদিক ভালো করে দেখি - আমি কারও ছায়া, একাকী অপেক্ষমাণ। আমার অস্পষ্ট অস্তিত্ব চোখে পড়ছে না কারও। আমি স্টেশনের প্রতিটা দেহের সাথে মিলিয়ে দেখলাম নিজেকে। বুঝলাম আমাকে রেখেই ফিরে গেছে সে, অন্য কোনও ছায়ার সন্ধানে।

বিমূর্ত আমি মূর্ত হওয়ার সন্ধানে খুঁজে ফিরি শরীর। ছয়ফিট ছিপছিপে গড়ন - একটু এদিক-ওদিক হলেও ক্ষতি নেই, কে কার ছায়া মেপে দেখে! শরীর বড় দরকার, মেয়েটি শরীর ছাড়া ভালোবাসা বোঝে না একদমই।


ট্রেন থেকে নেমেই হাঁটা দিই রাজপথের আইল ধরে। সূর্য তখন সম্মুখদিকে। ফাকা রাস্তায় পিছন ফিরে দেখি, ছায়াটি নেই সাথে। কি সর্বনাশ! দ্রুত ছুটে যাই স্টেশনে। তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম তাকে শত শত মানুষের ভিড়ে। কোনও ছায়াই মিলল না আমার সাথে - না আকার, না প্রকারে!
ফিরতি ট্রেনে ফিরে গেলাম ফেলে আসা শহরে। রাস্তায় অলিতে-গলিতে ছায়ার সন্ধানে। চলতি পথে প্রতিটি ছায়ার সাথে মিলিয়ে দেখি নিজেকে। এখন বুঝতে পারছি, ওকে চিনে ও দেখে রাখবার বড় দরকার ছিল।

শেষ পর্যন্ত না পেয়ে জনসমুদ্রের মাঝখান থেকে অন্য একটি ছায়াকে নিয়ে সটকে এসেছি নীরবে। এখন আমি ওকে চোখে চোখে রাখি। সূর্যের নীচে দাঁড়িয়ে পরখ করি ঘনঘন। মাঝে মধ্যে কথাও বলি ওর সাথে। অন্যের ছায়াকে নিজের করার চেষ্টায় এখন কেটে যাচ্ছে আমার দিন রাত্রি।

গ.
লোকটি (যার ছায়া আমি ছিনতাই করেছিলাম) এতদিনে নিশ্চয় ছিনতাই করেছে অন্য একটি ছায়া। তারপর সেই লোকটি আর এক জনের। অতঃপর ঐ লোকটি অন্য কারও কিংবা আপনার...! এই ভাবে শুরু হয়েছে ছায়া ছিনতায়ের কাহিনী। আজকাল আমি আলোর নিচে ছায়া সমেত শরীর দেখলেই জিজ্ঞেস করি - আপনার ছায়াটি আসলেই আপনার তো ? তাই আমাকে পাগল বলে কেউ কেউ, এমনি করে সমাজের চোখে আমি ‘ছায়া-পাগল’ হয়ে উঠি।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×