মিশরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসির সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত ১৫০ জন নিহত ও অপর ৫,২০০ লোক আহত হয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর মুরসির সমর্থক ও বিরোধীরা যে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকেছিল তার সূত্র ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়।
তবে মুরসির সমর্থক ইখওয়ানুল মুসলিমিনের নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের নির্বিচার গুলিতেই বেশিরভাগ মানুষ মারা গেছে; আর নিরাপত্তা বাহিনীর আক্রোশের শিকার হয়েছে মূলত মুরসির সমর্থকরাই।
মুহাম্মদ মুরসিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্বহালের দাবিতে শুক্রবার কায়রোর নাসর সিটি’তে তার হাজার হাজার সমর্থক সমবেত হন। সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে এ সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন ইখওয়ানের শীর্ষ নেতারা। ইখওয়ানের সর্বোচ্চ নেতা মোহাম্মাদ বাদিয়ি বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ‘শান্তিপূর্ণ’ বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন।
পাশাপাশি সামরিক অভ্যুত্থানের নায়ক মিশরের সেনাপ্রধান আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি সেনাবাহিনীর সমর্থকদের রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সিসির আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেশ কিছু মানুষ তাহরির চত্বরে সমবেত হয়, অন্যদিকে মুরসির সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখান নাসর সিটি’তে। শুধু কায়রো নয়, আলেক্সান্দ্রিয়াসহ মিশরের অন্যান্য শহরেও বিক্ষোভ দেখান মুরসির সমর্থকরা।
শুক্রবার শেষ বেলা থেকে শুরু করে সারারাত ধরে সংঘর্ষ চলে। রাতের অন্ধকারেই শতাধিক মানুষ নিহত হয়। ইখওয়ানুল মুসলিমিন বলেছে, শুধুমাত্র শনিবার সকালেই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তাদের ৩১ জন সমর্থক নিহত হয়েছে।
রাব্বা আল-আদাবিয়া মসজিদের কাছে আজ (শনিবার) সকালেও সংঘর্ষ চলার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, সেখানকার রাস্তায় ব্যাপক রক্তের দাগ দেখা গেছে।
মুরসি সমর্থকরা এ এলাকায় অবস্থান ধর্মঘট করছিলেন; তাদেরকে হটিয়ে চেষ্টা করতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে কিনা তার পরিষ্কার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে আজ খুব ভোরে মিশরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেছেন, এ মসজিদের আশপাশে যে অবস্থান ধর্মঘট চলছে তার ইতি টানা হবে। তিনি দাবি করেন, আইনি পন্থায়ই এ অবস্থান ধর্মঘটের ইতি টানা হবে।
ওই এলাকা থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে এবং সমগ্র এলাকা কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে গেছে। ইখওয়ানুল মুসলেমিনের মুখপাত্র গেহাদ আল-হাদ্দাদ বলেছেন, মিশরের নিরাপত্তা বাহিনী আহত করার জন্য নয় বরং হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুঁড়ছে।
ইখওয়ানের প্রবীণ নেতা সাদ আল-হোসাইনি বলেন, মসজিদের এলাকা থেকে ইখওয়ানের সমর্থকদের হটিয়ে দেয়ার জন্য এ ধরনের ততপরতা চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। তিনি আরো জানান, ‘গত পাঁচ ঘণ্টা ধরে ওখান থেকে তরুণদের সরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। তরুণরা বলছে,আমরা রক্তমূল্য দিয়েছি তাই ওখান থেকে পিছিয়ে আসবো না।’
এদিকে ইখওয়ানের সমর্থকদের নির্বিচারে হত্যার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে মিশরের জনগণ। সেনাবাহিনীর বিশেষ করে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আস-সিসি মিশরের জনগণ হত্যায় মেতে উঠেছেন বলে মনে করছে তারা।
মুরসিকে উতখাতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও নিন্দা জানানোর জন্য সমগ্র মিশরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। মিশরের সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তাজা গুলি ব্যবহার করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী শহর আলেকজান্দ্রিয়ায় সংঘর্ষে আজ খু্ব সকালে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে