somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারকা

০১ লা মে, ২০১১ সকাল ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকটা খেলাচ্ছলেই ঢুকে গেলাম সাংবাদিকতা পেশায়।
খেলাচ্ছলে বা বিনা চেষ্টা কি সাংবাদিক হওয়া যায়?
হ্যাঁ যায়, বড় একটা প্রমাণ বা উদাহরণ তো আমি নিজে।
না চাইতেই সাংবাদিক হয়ে গেছি।
পাঠ্যবইয়ে এইম ইন লাইফ রচনা থাকে-না, যেটাকে বানিয়ে লিখতে ও বলতে হয়। বানানো কথাগুলো শিক্ষার্থীদের মুখস্ত করতে হয়, আমি এই করতে চাই, সেই করতে চাই, এই করে দেশের-দশের এই উপকারে লাগবো। জাতির কালো মুখ উজ্জ্বল করবো আরো কত কি!
অবশ্য রচনা বানিয়ে লেখার কারণও আছে। স্কুল বা কলেজের শুরুতে একজন শিক্ষার্থী সহজে বুঝে উঠতে পারে না সে আসলে কী হবে, তার কী হওয়া উচিত। কোথায় সে ভালো করবে। কারণ তাদের মানসিক অবস্থা এ পর্যায়ে সঠিকভাবে গঠিত হয় না। যাদের গার্জিয়ানরাই ঠিক করে দেন তারা কী হবে, তাদের কথা আলাদা। মোদ্দা কথা হচ্ছে, এসব রচনা লেখা, উত্তর মুখস্ত করা পরীক্ষা পাশের ধান্দা। মুখস্ত বিদ্যা। ইন্টারমিডিয়েট লেভেলেও দেখেছি, অনেকে পড়াশোনা করে মানবিক বিভাগে। কিন্তু এইম ইন লাইফ হিসেবে যে রচনা ফাঁদে তাতে বলা হয়, সে ডাক্তার হবে। ডাক্তার হয়ে সোজা গ্রামে চলে যাবে। গিয়ে দুঃস্থ মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবে। গরিব রোগীর কাছ থেকে টাকাপয়সাও নাকি নেবে না!
অনুরূপভাবে ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, শিক্ষক, লেখক, ব্যবসায়ী, কণ্ঠশিল্পীÑএটা-সেটা-ওটা আরো কত কী যে হতে চায় শিক্ষার্থীরা। তারা মনে থেকে চাক বা চাক থাক কিন্তু তাকে পরীক্ষা নামক পুলসিরাতটি তো পার হতেই হবে। সুতরাং মুখস্ত বিদ্যা উগরে দিতেই হয়। কর্মজীবনে শতকরা একজনও এইম ইন লাইফ-এর কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে না। পারবে কী করে, সে মন থেকে হতে চায়নি! অবশ্য কেউ মন থেকে চাইলেই যে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বিষয়টা বোধহয় তা না। খুব কম সংখ্যক মানুষই পারে, স্বপ্ন দেখে তা বাস্তবায়ন করতে। নিদেনপক্ষে স্বপ্নের কাছাকাছি যেতে। এক্ষেত্রে আমার বিষয়টা একটু ভিন্ন। কখনোই সাংবাদিক হওয়ার লক্ষ্য ছিলো না। কৃষক পরিবারের ছেলেরা সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখে না। কারণ তারা জানে, দিল্লি দূর অস্ত, এ তাদের দিয়ে হবে না। তারা বরং অনেক বড় একজন মানুষ হতে চায়। বড় মানুষ যে আসলে কী, তা না-ই বা জানা থাকলো! না জেনেই আমার হয়েছে, না চাইতেই সাংবাদিক!
ঢাকা এসে প্রথমে উঠেছিলাম মাসুদ ভাইয়ের বাসায়। ইন্টারভিউ ছিলো। একটা আন্ধুমান্ধু কোম্পানির ইন্টারভিউ। সে কোম্পানিতেও চাকরি হয়নি। ইন্টারভিউ দিলেই তো চাকরি হয়ে যায় না। তার উপর কারো গায়ের সাথে যদি সেঁটে থাকে গ্রামের সোঁদা মাটির ঘ্রাণ। চাকরি হয়নি তাই বলে তো হুট করে আবার গ্রামের বাড়ির দিকেও ছুট দিতে পারি না। আবার তো ঠিকই আসতে হবে। আবার আসা, আবার চাকরির জন্য চেষ্টা করা মানেই তো ভোগান্তি। তাছাড়া গ্রামে গিয়েই বা কী করবো, সেখানে তো কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে। বড়জোর স্কুলমাস্টার বা এনজিও কর্মী হওয়া যায়। ব্যবসা করতে চাইলে চা দোকান বা মুদি মালের ব্যবসা। এর বাইরে গ্রাম এলাকায় অন্যকিছু তেমন চলবে না। বিকল্প হিসেবে ক্ষুদ্র শিল্পও গড়ে তোলা যায়। গরুর খামার, মুরগির খামার, মাছ চাষ, কুটিরশিল্প মানে বাঁশ বেত দিয়ে জিনিসপাতি বানানো, এগুলো। রিস্কি কাজ। না দাঁড়ালে সমূহ বিপদ। ক্ষুদ্রশিল্প দাঁড় করাতে পেরেছে এর সফল উদাহরণ কমই। কেউ কালে-ভদ্রে দুই-একটা লাভজনক প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে ফেললে মিডিয়ার ব্যাপক কাভারেজ পায়। সেটা তো ঐ যে হয় না, এই ‘না হওয়ার’ গুণেই! গ্রামে থেকে স্কুল মাস্টার, এনজিও কর্মী, কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা কোনোটির জন্যই আমি চেষ্টাটুকুও করিনি। করার কথাও ছিলো না। আমার এইম ইন লাইফ ভিন্ন। বড় চাকুরে হবো। সময়মতো অফিসে যাবো, আবার সময়মতো ফিরে আসবো। ঘড়ি চলবে ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। সপ্তাহে দুই তিনদিন ঘড়ি চলবেই না। মানে কর্মদিবসের ঘড়ি। হরতাল, পূজাপার্বণ, ঈদ এটাসেটা আরো কত রকমের ছুটি তো আছেই! সুতরাং চাকরিই ভালো! কোনো টেনশন নেই, পুঁজি বিনিয়োগের ঝামেলা নেই। উপরন্তু অবসরটুকু মেলে।
অফিসের বড় কর্তা হতে চাওয়া এই আমি শেষপর্যন্ত সাংবাদিক হয়ে গেলাম। এতে যতটা না আমার চেষ্টা বা আগ্রহ, তারচে অনেক বেশি মাসুদ ভাইয়ের। মাসুদ ভাইয়ের বাসায় থাকার সুবাদে দেখতাম তার কাজকর্মগুলো। তার অবস্থাও আমার মতোই। যদিও ঢাকায় বসবাস করছেন প্রায় চার বছর যাবত। এ দীর্ঘ সময়কালে একটা চাকরিও জোটাতে পারেননি। তার বদলে নিয়েছেন পার্ট টাইম বা ‘কামলা’ দেয়ার চাকরি। তিনি সাংবাদিকতা করেন। শুধু সাংবাদিকতা করেন বললে ভুল হবে। বলা উচিত, মূলত সাংবাদিকতা করেন। এর বাইরেও তার পদচারণা কম নয়। সে যাই হোক, মাসুদ ভাই ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তিনি ফিচার, সংবাদধর্মী লেখা লেখেন। পাশাপাশি জড়িত বিনোদন সাংবাদিকতায়ও। পেশাসূত্রে সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেক রথি-মহারথির সাথে সুসম্পর্ক।
মাসুদ ভাই আমাকে প্রণোদিত করেন তার মতো সাংবাদিক হতে। অন্তত যতদিন না চাকরি হচ্ছে। এদিকে বসে বসে তার অন্ন ধ্বংস করছি। ক্ষুদ্র বাসস্থানে বাগড়া দিচ্ছি। একজনের সিটেই দুজন ঘুমাই। রাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর অজান্তেই মাসুদ ভাইয়ের গায়ের উপর অভ্যাসবশত আমার পা চলে যায়। সকালে তা দেখে লজ্জিত হই। ছি ছি, মাসুদ ভাইয়ের গায়ে পা তুলে সারারাত ঘুমিয়ে ছিলাম! কী করবো, কোলবালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারি না। কিন্তু এখানে যে একটা কোলবালিশ ফেলবো, সে জায়গাটুকু থাকলে তো!
আমার যে আসলেই কিছু করা উচিত, বুঝতে পারছি অনেকদিন থেকেই। অন্তত বাসা পাল্টে তাকে মুক্তি দেয়া। অথবা ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন, বসন্তপুর গ্রাম। কিন্তু কী করি, কী করবো...। এমন দোলায়মান পরিস্থিতিতে মাসুদ ভাইয়ের প্রস্তাবটি মনে ধরলো। ঠিকই তো, যতদিন না চাকরি হচ্ছে, তদ্দিন কিছু না কিছু করা যায়। সেটা সংবাদপত্রে হলে তো আরো ভালো। উপার্জনের পাশাপাশি কিছু নামডাকও হবে। কিন্তু বললেই তো হবে না, ওসব কি আর আমি জানি, বুঝি? সেখানেও চিন্তার কারণ নেই, আছেন মাসুদ ভাই। তিনি হাতেখড়ি দেন। শিশুদের অ আ শেখার মতো করে শুরু আমার পাঠ গ্রহণ। অসীম ধৈর্য্য আর একাগ্রতায় মাসুদ ভাই সব দেখিয়ে-বুঝিয়ে দেন...।
সেই থেকে শুরু। তারপর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রদায়কের কাজ করতে করতে এখন আমি নামকরা একটা জাতীয় দৈনিকের বিনোদন সাংবাদিক। মাসুদ ভাই হয়েছে পুরোদস্তুর ক্রাইম রিপোর্টার। যদিও আগে বিনোদন বিট করতেন। এখন দুজন দু ভুবনের বাসিন্দা! অবশ্য মাসুদ ভাইয়ের এবং আমার আজকের এই অবস্থান খুব সহজে হয়ে যায়নি। তিলে তিলে তৈরি করতে হয়েছে নিজেদের। কত ঘাটের পানি খেতে খেতে তারপর একটু থিতু হওয়া। আমি তবু মাসুদ ভাইয়ের মতো ভালো একজন গার্জিয়ান পেয়েছি। তার তো সেটাও ছিলো না। নিজেকে নিজেকে তৈরি করেছেন। বিন্দু বিন্দু করে, তিল তিল করে।
প্রথম দিকে নিজের পেশাগত পরিচয় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিলো। কতটুকু সাংবাদিক আমি? আসলেই কি সাংবাদিক, নাকি আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার পা-াদের মতো নামকাওয়াস্তে...! এখন মনে হয়, হ্যাঁ, আমি সাংবাদিকই! মাসুদ ভাই আমার গুরু। তার সাথে কাটানো প্রথম দিনগুলোর স্মৃতি এখনো কী রকম জ্বলজ্বলে! মনে হয়, এইতো, আমার সামনেই ঘটছে সব। স্লো মোশন ক্যামেরা টেনে নেয় সেদিকে।
শো বিজের বিভিন্ন তারকার সাথে যেমন আমার হৃদ্যিক সম্পর্ক, তেমনি করে অন্যান্য পেশাজীবীর সাথেও কমবেশি। এই তালিকায় কিছু ডাকসাঁইটে রাজনীতিবিদও আছেন, যাদের খ্যাতি এবং কুখ্যাতি দেশজোড়া! অকারণে যারা আমাকে একটু সমঝে চলেন!
প্রথমদিকে, যখন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ছিলাম চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন নাটক, মঞ্চনাটক সবদিকেই পদচারণা আমার। আলাদাভাবে ছোট পর্দা, বড় পর্দার বাছবিচার করতে পারিনি। কিন্তু এখন শুধু ছোট পর্দা অর্থাৎ টেলিভিশন নিয়ে কাজ করি। কারণ রূপালি পর্দার রঙ এখন রূপালি থেকে কালোর দিকে। সেক্ষেত্রে ওখানে তেমন কিছু করারও নেই। বড় পর্দার সাথে যখন আমার সব সংস্রব চুকেবুকে গেছে তখনই কিনা এই ঢেঁকি গেলানোর চেষ্টা! এফডিসির তৃতীয় সারির নায়িকা নোরা। অশ্লীলতার অভিযোগে দুই দুইবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তাকে। অভিনয়-সম্পদ তো সবার থাকে না, কারো থাকে শরীরি-সম্পদ। নোরার আছে শরীরি সম্পদই। এই সম্পদের গুণেই তার কিছু দর্শক তৈরি হয়েছে, পরিচালকরাও তাকে রাখতে চান। পার্শ্বচরিত্র, অপ্রয়োজনীয় কোনো চরিত্র বা দ্বিতীয় নায়িকা হিসেবে। যেভাবেই থাকুক, তার কাজ একটাই দর্শক মনোরঞ্জন। গানের দৃশ্যে দেখা যায়, নায়ক দাঁত দিয়ে কামড়ে কামড়ে নোরার ব্লাউজের হুক খোলে। তারপর ব্রা। নি¤œাংশে এসে দাঁত দিয়ে টান দেয় পেটিকোটের ফিতা। সেটা নিচে পড়ে গেলে বাকি থাকে প্যান্টি। প্যান্টির ভিতর হাত গলিয়ে নায়ক নানা কারিশমা দেখাতে শুরু করে! কখনো নায়ক-নায়িকা বাথরুমে শাওয়ার নিতে নিতে নানা ক্রীড়ায়, লীলায় মেতে ওঠে। এসময় যে ‘হট’ গান বাজে, এ গানের জোরেই একজন মানুষ বসা থেকে সটান দাঁড়িয়ে যেতে পারে! হলজুড়ে শিস বাজতে থাকে...।
এই হচ্ছে নোরা, এমনই হচ্ছে নোরার কাজ। কিন্তু হঠাৎ আমাকে কেন প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ালো নোরার? রহস্যজনক কেসই বটে! মোবাইল নম্বরটাই বা কোত্থেকে জোগাড় করেছে কে জানে। যখন-তখন সে ফোন দেয়, ওর বাসায় নাকি দাওয়াত। হঠাৎ দাওয়াতের কী হলো, বুঝতে পারি না। তাছাড়া দাওয়াত আমি পাবোই বা কেন, ওর সাথে তো আমার কখনো সরাসরি পরিচয় ছিলো না। কোন উপলক্ষে দাওয়াত তাও খুলে বলে না। সহকর্মী নিরঞ্জন দাদাকে বলি সে কথা। উনি হাসেন। হাসতে হাসতেই বলেন, যাও না কেন, দাওয়াতই তো। ও হয়তো আবার সিমেনায় ফিরতে চাচ্ছে। এখন তোমার মতো তরুণ সাংবাদিকরা যদি ওকে আশীর্বাদ না করে তাহলে কীভাবে হবে?
বলি, কিন্তু সেটার সাথে দাওয়াতের কী?
এই বুদ্ধি নিয়ে সাংবাদিকতা করো? বলে নিরঞ্জনদা হাসেন। ধরতে পারি না তার হাসির রহস্য। এই হাসি অবশ্য তার কাছে একাই থাকে না, ছড়িয়ে যায় আরো দুই একজনের কাছে। আরেক সহকর্মী মিতুল ভাই যখন বলেনÑকী, খুব খুব তো দাওয়াত খাওয়া হচ্ছে!
দাওয়াত? কোথায়! আমি ভ্যবলার মতো প্রশ্ন করি। এতে মিতুল ভাইয়ের হাসি আরো দীর্ঘ হয়।
আজকাল তুমি খুব বেশি অভিনয় করতে শিখেছো! মিতুল ভাইয়ের একথার যৌক্তিকতা খুঁজে পাই না। অভিনয়? কীসের অভিনয়!
ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয় আরো দুইদিন পর, যখন নোরা আবার ফোন দেয়। খানিকটা ঝাঁঝালো কণ্ঠেই সে বলে, তুহিন ভাই, আপনি কি আমার দাওয়াত অ্যাকসেপ্ট করবেন না?
অবশ্যই করবো। কিন্তু তার আগে জানতে হবে কীসের দাওয়াত দিচ্ছেন আপনি?
ন্যাকা, কিচ্ছু বোঝে না!
বুঝতেই তো চাচ্ছি। আপনি বলেন।
আমার বাসাটা কয়দিন যাবত খালি। রাতে একা থাকতে ভয় লাগে। আপনি যদি দুই একদিনের আতিথ্য গ্রহণ করেন, সামান্য ডালভাত খেয়ে একটু গল্পগুজব করতাম আর কি!
এটা তো ভয় বাড়ার কথা!
আপনার মতো শক্তসমর্থ পুরুষ কাছে থাকলে আমি একটুও ভয় পাবো না।
আচ্ছা ঠিক আছে, আমি চিন্তাভাবনা করে দেখবো, কীভাবে আপনার ভয় তাড়ানো যায়!
আর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করি না। ফোন কেটে দিই। বুঝতে পারি নোরার দাওয়াতের মানে। এরকম দাওয়াত দিয়ে দিয়ে সে অভ্যস্ত। সিঁড়ি হিসেবে হয়তো এমন দাওয়াত ভালো কাজ দেয়। বুঝতে পারি, ও চাচ্ছে আমি যেন ওকে নিয়ে কিছু লিখি। বিনিময়ে সে নিজের বহু ব্যবহৃত জিনিসটা আমাকে ব্যবহার করতে দেবে! কিন্তু আমি কীভাবে এমনটা করবো, তা সম্ভব নাকি? ওকে নিয়ে একটা শব্দও তো ব্যয় করার অবস্থা নেই। প্রলোভনে পড়ে যদি আমি লিখিও, দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি, আমার সম্পাদক মাইনুর ভাই চশমার উপরের ফাঁক দিয়ে আমার দিকে তাকাবেন। দৃষ্টি থাকবে ঠাণ্ড। কিন্তু সে ঠাণ্ড দৃষ্টিই সারা শরীরে সাপের পরশ বোলাবে! অন্য পত্রিকায় হয়তো লিখতে পারি। কিন্তু আমার মতো মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত বিনোদন সাংবাদিক বিতর্কিত এক তথাকথিত নায়িকাকে নিয়ে লিখবে, এটাকে মানুষ ভালো চোখে দেখবে বলে তো মনে হয় না। অবশ্য ছদ্মনামে লেখা যায়। যেহেতু ওর আহ্বানে সাড়া দিচ্ছি না, সেহেতু ছদ্মনাম, প্রকৃত নামের জটিলতায় ভোগারও দরকার আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু পেঁজগি একটা ঠিকই লাগলো, গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পর।
প্রথম দিকে না জানলেও এখন এলাকার প্রায় সবাই জানে আমার সাংবাদিক পরিচয়ের কথা। সাংবাদিক সাহেব বলে একটু কদরও করে দুই চার গ্রামের অনেকেই। শুরুতে অবশ্য আমার সাংবাদিকতার কথা কাউকে বলিনি। শুধু বলেছি, চাকরি করি। কারণ জানি, সাধারণ মানুষ পঙ্গপালের মতো ছুটে আসবে, অমুক তারকা মোবাইল নম্বর দেন। তমুক তারকাকে কি আপনি চেনেন_এসব ফাও ঝামেলা বাঁধানোর মানুষের কমতি নেই। নাম্বার নিতে পারলে রাতদিন চোদ্দ গোষ্ঠী সমেত ফোন করে তারকার শান্তির বারোটা বাজিয়ে দেবে। কারণ এদেশের ৯৯.৯৯% মানুষ এখনো বোকার স্তরে রয়ে গেছে। এদের কাছে কাছে তারকা মানে নায়ক-নায়িকা, অভিনেতা-অভিনেত্রী। একজন লেখক, একজন সাংবাদিক, একজন খেলোয়াড়, একজন চিত্রশিল্পী, একজন সম্পাদক, একজন শিক্ষকও যে তারকা হতে পারে তা এদের কল্পনায় আসে না। সুতরাং অন্যান্য পেশাজীবী কারো ফোন নম্বর এরা চাইবে না। এমন কাউকে স্বচক্ষে দেখার বাসনাও পোষণ করবে না! তার চেয়ে এই ভালো, আড়ালে থাকি। যাদের নিয়ে আমার কাজকারবার, তাদের শান্তি বিঘ্নিত করার অধিকার তো আমার নেই! কিন্তু আড়ালে তো বেশিদিন থাকা যায় না। একদিন না একদিন ঠিকই বেরিয়ে পড়ে প্রকৃত সত্য। নিজের অজান্তেই আমি নিজের ‘সর্বনাশ’ করে বসলাম।
কী একটা কাজে যেন তেজগাঁও গিয়েছিলাম। দুপুরবেলা গাড়ি না পাওয়ায় ফিরছিলাম হেঁটে হেঁটে। হাঁটতে হাঁটতে যখন বিএফডিসি অতিক্রম করবো, অভ্যাসবশত চোখ চলে বটগাছটার দিকে। এদিকে যখনই আসি, বটগাছটার দিকে চোখ যাবেই। হয়তো এ শহরে বটগাছ কম বলেই! সে যাই হোক, বটগাছের নীচে দাঁড়ানো দুইজন মানুষকে দেখলাম, এরা আমাদের গ্রামের। দুজনের একজনকেও এখানে আশা করিনি। একজন গ্রামে কামলার কাজ করে, অন্যজন ঢাকাতেই কোনো একটা কারখানায় শ্রমিকের কাজ। কী মনে করে নিঃশব্দে দুজনের সামনে দাঁড়ালাম। দুজনই সমস্বরে বলে উঠলো, তুহিন ভাই!
তোমরা এখানে কী করছো?
করিম, যে গ্রামে থাকে সে বললো, আর বইলেন না ভাই, এই হালায় নায়িকা দেখানোর কথা কইয়া আমারে বাড়ি থেকে আনছে। এখন নায়িকা দূরে থাক, একটা বিলাইও দেখাইতে পারলো না!
কারখানা শ্রমিক জব্বার কাচুমাচু করে বললো, আমি কী করুম, হে তো অহনো আহে নাই!
হের আইতে অইবো ক্যান? তুই না কইলি এক লগে বইয়া চা খাস? এখন তো ভাত খাওনের সময় হইছে, এখন ভাত খাচ্ছিস না কেন? তাকে ফোন দিয়া ক, আমরা আসতেছি।
জব্বারের মুখ দেখে মনে হলো, ভালোই ফাঁপরে পড়েছে। চাপা মারাটা যে এতো বিপজ্জনক আগে বুঝলে সম্ভবত সে এ পথে পা মাড়াতো না। জব্বারের অপরাধী মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, কোন নায়িকার সাথে তুমি চা খাও বলেছিলে?
ততোধিক অপরাধী ভঙ্গিতে সে নামটা বললো।
তোমরা আসো আমার সাথে।
কই যাইবেন?
আসোই না, দেখতে পাবে।
দুজনকে নিয়ে হাজির হলাম নায়িকার বাসায়। যে নায়িকার লগে জব্বার বইয়া চা খায়! তিনি বাসাতেই ছিলেন। ফোনে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। এই অসময়ে হাজির হওয়ায় নায়িকা মনে মনে বিরক্ত হলেন কিনা কে জানে, কিন্তু তার মুখে দেখলাম খুশির আভা। সানন্দে অভ্যর্থনা জানালেন। বললাম, আজ আমরা তিনজন আপনার মেহমান। মধ্যাহ্নভোজে আপনার সাথে আমরাও শরিক হচ্ছি।
অবশ্যই অবশ্যই।
করিম ও জব্বারের অবস্থা হয়েছে দেখার মতো। দুজনের চোখই রসগোল্লা হয়ে গেছে বিস্ময়ে। আমরা যখন খেতে বসেছি, মনে হলো জামাই আদরে খাওয়া এটাকেই বলে। নায়িকার নিজের খাওয়ার দিকে যতটা না মনোযোগ তার চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগ আমাদের দিকে। করিমকে নিজ হাতে মাংস তুলে দিয়ে বললেন, আপনি তো কিছুই খাচ্ছেন না ভাই! রহিমের খাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর তার পাতে তুলে দিলেন আরো দুই চামচ ভাত। সেই সাথে তুলে ইলিশ মাছের দোঁপেয়াজা। হেসে বললেন, এটুকু খেতেই হবে ভাই, কারণ মাছটা আমি নিজে রান্না করেছি। কেমন হয়েছে খেয়ে বলবেন...।
করিম ও জব্বারের চোখে আমি বনে গেলাম মহানায়ক। তারা গ্রামে গিয়ে এমন রটনাই না রটিয়েছে, উল্টো নিজেই হয়ে গেলাম দর্শনীয় বস্তু! বাপরে, এই ব্যাটা তলে তলে এতো! কেউ কেউ অবশ্য ওদের কথাকে চাপা ভেবে উড়িয়ে দিয়েছে। যারা উড়িয়ে দিয়েছে তাদের ভুল ভাঙতেও খুব বেশিদিন লাগেনি। তদ্দিনে পত্রিকায় আমার পার্মানেন্ট চাকরি হয়ে গেছে। লিখতেও শুরু করেছি দু হাতে।
বলছিলাম নোরার কথা। নোরার কথা বলতে গিয়ে প্রসঙ্গক্রমে এ কথাগুলো এলো। নোরা আমাকে কীভাবে বিপদে ফেলেছে সে কথা বলি। মাসুদ ভাইয়ের বাড়ি আমাদের দুই গ্রাম পরেই। কাছেই বলা যায়। তারা আমাদের পারিবারিক বন্ধু। তাছাড়া আমার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পিছনে তার যে অবদান তাও তো ভোলার নয়। সুতরাং বাড়ি এলে একবারের জন্য হলেও তাদের বাড়ি যাই। মাসুদ ভাইও টাকাপয়সার পাশাপাশি বাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি কিনে দেন। খালু, খালাম্মার সাথে যেমন আমার সুসম্পর্ক তেমনি সুপর্ণার সাথেও। সুপর্ণার মাসুদ ভাইয়ের একমাত্র ছোট বোন। খেয়াল করে দেখেছি, আমাকে দেখলেই ওর চোখ ঝিলিক দিয়ে ওঠে। আনন্দেই বোধহয়। দেখতেই ভালোই লাগে। সেও মোটামুটি আমার ন্যাওটা। তার নিজের বড় ভাই সাংবাদিক, এটা তার ততটা গর্বের নয়, যতটা গর্ব আমি সাংবাদিক বলে! গতবার যখন বাড়ি গিয়েছি সে আমাকে বললো, আমাকে শাবানার ফোন নম্বরটা দেবে?
অবাক আমি, বলে কী! বিশেষ করে মেয়েরা সচরাচর চায় শাকিব খান, রিয়াজ, ফেরদৌসের নম্বর। আর এ চাচ্ছে শাবানার নম্বর! ঘটনা কী?
বলি, শাবানার নম্বর নিয়ে কী করবে, তুমি বরং শাকিব খানের নম্বর চাইলেই পারো! দেবো কিনা সেটা পরের ব্যাপার!
আমাকে তুমি শাবানার নম্বরটাই দাও।
উনি আমেরিকায়। নম্বর পাবো কই?
কচুর সাংবাদিক তুমি! উনি দেশে ফিরেছেন, পত্রিকায় পড়েছি।
বুঝি, শাবানা যে পর্দাজুড়ে অশ্রুবন্যা বইয়ে দেন, কখনো প্রেমময়ী স্ত্রী, কখনো লাস্যময়ী প্রেমিকা, স্নেহশীলা বোন, আবার কখনো দায়িত্বশীল মেয়ে হিসেবে, এটাই বোধহয় মোহমুগ্ধ করে রেখেছে সুপর্ণাকে। যেমন আরো অনেককে করেছে। চোখের পানি যে জাতির এতো পছন্দ সে জাতির ভবিষ্যত কী! ভেবে পাই না। উত্তর খুঁজে পাই না।
সুপর্ণাকে বলি, ওনার নম্বর পরে সংগ্রহ করে দেবো, আপাতত শাকিব খানের নম্বর রাখো। শাকিবের এখনো বিয়ে হয়নি!
লাগবে না, আমার নায়ক আছে।
বাহ, কে সেই ভাগ্যবান?
তুমি জানো না?
না।
যেদিন আমার বিয়ে হবে সেদিন বলবো।
এখন বললে ক্ষতি কী?
কানার চোখে আলো দেয়ার ইচ্ছা আমার নেই!
এসময় খালাম্মা আসেন। আমাকে ডাক দেন। পিছু পিছু তার রুমে যাবো, এসময় সুপর্ণা ডাক দেয়, কই নম্বর দিলে না?
বললাম না, নাই। পরে সংগ্রহ করে দেবো।
তুমি মোবাইলটা আমার হাতে দাও। আমি খুঁজে দেখি।
সুপর্ণার হাতে মোবাইল দিয়ে আমি খালাম্মার রুমে যাই। এটা সেটা ওটা কত কত গল্প। বাংলার মায়েদের গল্পের কি শেষ আছে! এমনকি আজ দুপুরে কী খেয়েছি, রাতের জন্য কী রান্না হবে সবই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বলতে হয়েছে ওনাকে! তবুও কি কৌতূহল নিবৃত্ত হয়! খালাম্মার সাথে কথা শেষে আবার ফিরে আসি সুপর্ণার কাছে। দেখি, সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। আমার সাধের মাল্টিমিডিয়া মোবাইল সেট কয়েক টুকরা হয়ে এখানে-সেখানে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সুপর্ণা বসে কাঁদছে, হাপুস নয়নে। একবার সুপর্ণার দিকে তাকাই, আর একবার বিধ্বস্ত মোবাইলফোনের দিকে তাকাই। কিয়ৎক্ষণ পরে বলি, কী হয়েছে সু?
সুপর্ণাকে সংক্ষেপে আমি সু ডাকি। আমার কথা শুনে মুহূর্তেই সে কান্না থামিয়ে শক্ত হয়ে যায়, নোরা না ফোরা তোমাকে ফোন করেছে।
তা তো করতেই পারে। কিন্তু মোবাইলফোন ভাঙলো কী করে?
আমি আছাড় দিয়েছি!
কেন?
নোরা-ফোরা কেন তোমাকে ফোন করবে? ওদের সাথে তোমার কী!
ওকে তুমি এতোটা খারাপ ভাবছো কেন? খারাপ হলেই বা তোমার কী, আমারই বা কী?
ও অনেকবার ফোন করেছে। তুমি নেই, আমি শেষমেষ বাধ্য হয়ে রিসিভ করেছি। কিন্তু রিসিভ করার পরই সে এমন কথা বললো...। অবশ্য সে ভেবেছে ফোন বুঝি তুমি ধরেছো। আমি সইতে পারলাম না। ওকে তো আছাড় দেয়া যাবে না, ফোনটাকেই দিলাম আছাড়!
মন খারাপ ভাব নিয়ে মোবাইলসেটের দিকে তাকিয়ে থাকি। আবার মেরামত করা যাবে কিনা কে জানে। মেরামত না হলে তো অনেক টাকা গচ্ছা। টুকরা-টাকরা হয়ে যাওয়া যন্ত্রাংশগুলো টুকিয়ে নিই। যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে। ঢাকায় ফেরার পর ইস্টার্ন প্লাজায় নিয়ে যাই মোবাইলটাকে। মেরামত আর হচ্ছে না, জোরে আছাড় হেতু কিছু কিছু জায়গা এমন বিগড়েছে, সারাইয়ের কোনো পথই নেই। নতুন আরেকটা ফোন কিনতে হলো। তারপর কেটে গেছে মাস দুয়েক সময়। এ দুই মাসে মাসুদ ভাইয়ের সাথে আমার তিনবার দেখা হয়েছে, নতুন কেনা ফোনে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। আমরা এখন আর এক সাথে থাকি না। কর্মক্ষেত্রও ভিন্ন। মোবাইলেই মাসুদ খবর দিলেন, সুপর্ণার বিয়ে ঠিকঠাক হয়ে গেছে। পাত্র কে, নামধাম বললেন, বিয়ের দিনক্ষণও জানিয়ে দিলেন। বিয়েতে আমার অবশ্য থাকা লাগবে।
বলে কী, এ পিচ্চির বিয়ে! তাও মাসুদ ভাইয়ের মতো সচেতন মানুষের সম্মতি আছে এতে! বলি, কিন্তু মাসুদ ভাই, ওতো মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলো। আরো পরেও তো করা যায় কাজটা!
বিয়ের পর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পাস কোর্সে ভর্তি হবে। পাত্র এবং তার গার্জিয়ানদের সাথে আমার কথা হয়েছে।
তাই বলে বাল্যবিবাহ!
বাল্যবিবাহ কী, ওর বয়স এখন সাড়ে আঠারো!
দেখতে দেখতে চলে আসে বিয়ের দিন। আমি বাড়ি পৌঁছাই তিনদিন আগেই। গ্রামে সাধারণত দিনের বেলাতেই বিয়ে হয়। সুপর্ণার বিয়ে পড়ানো হবে বিকালে। ইতোমধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু বরপক্ষ এখনো পৌঁছায়নি। সুপর্ণা বসে মঞ্চে। পরনে শাড়ি, আঁচল দিয়ে ঘোমটা দেয়া। ইতিউতি তাকাচ্ছে সে। আমার সাথে চোখাচোখি হয়েছে দুইবার। দুইবারই সে করুণ হাসি হেসেছে। চেনা পরিবেশ, চারপাশের মানুষজন ছেড়ে চলে যাচ্ছে, এভাবেই তো তার হাসা স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক ভাবটা স্থায়ী হলো না এক ঘণ্টাও।
বাইরে একটু ঘুরে-ফিরে বাড়ির ভিতরে এসে বসি। কেন যেন ভালো লাগছে। খালাম্মা, মাসুদ ভাই বিভিন্ন কাজের তদারকিতে ব্যস্ত।
এসময় ত্রস্ত ভঙিতে সুপর্ণা ঢোকে। বিয়ের সাজে সে। মঞ্চ থেকেই সাধারণত কনেরা নামে না। সুপর্ণা নামলো কেন, কে জানে। ওকে দেখে আমি উঠে দাঁড়াই। সুপর্ণা বলে, উঠবে না, তুমি বসো। আমি বসে আছি একটা সোফায়। মাঝখানে আরেকটা সোফা। তৃতীয় এবং সর্বশেষ সোফায় সুপর্ণা বসে। ওর কেমন যেন দীর্ঘশ্বাস শুনতে পাই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বলি, শোনো, আমি কিন্তু আগামী এক বছরের মধ্যে মামা হতে চাই।
শুধু মামা, আর কিছু না?
নাহ, আর কী হবো, চাচা? দরকার নেই!
তোমাকে বলেছিলাম না, আমার নায়ক আছে?
হ্যাঁ। এও বলেছিলে, যেদিন তোমার বিয়ে হবে সেদিনই নায়কের নামটা বলবে।
এ মুহূর্তে পাশে বসা মানুষটিই আমার নায়ক। যার নাম তুহিন রহমান। এ নায়কই আমার মনের তারকা। যে দিবানিশি জ্বলে, জ্বালায়।
কী বলছো?
ঠিকই বলেছি। তুমি কখনোই আমার দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করোনি। অবশ্য তাকাবেই বা কেন, তোমার চারপাশে তো নামকরা নায়িকা, মডেল আরো কতশত সুন্দরীর ছড়াছড়ি। এক গ্রাম্য বালিকার ভালোবাসার কী মূল্য তোমার কাছে!
এদ্দিন পর একথা বলছো?
বলেছিলাম না, কানার চোখে আলো দেয়ার ইচ্ছা আমার নেই?
কী হয়ে গেলো জানি না, মুহূর্তেই বুকের অনুভব করি তীব্র এক আলোড়ন। কেমন যেন খা খা করে ওঠে মন, বুক। সুপর্ণার দিকে তাকিয়ে মনে হয়, এই সহজ-সরল গ্রাম্য তরুণীর ভালোবাসা আমার খুব বেশি দরকার। যেটা শহুরে শিক্ষিত তরুণীরা দিতে পারবে না। এ ভালোবাসার সাথে অবিরল ধারায় বয়ে চলে মাটির সোঁদা গন্ধ, প্রকৃতির অনুপম নির্যাস। সুপর্ণার দিকে ডানহাত বাড়িয়ে দিয়ে বলি, চলো।
কোথায়? সুপর্ণা সে হাত ধরার প্রয়োজন বোধ করে না। তবে উঠে দাঁড়ায়। আমিও উঠে দাঁড়াই।
আমরা পালিয়ে যাই!
পালিয়ে যাবো? সিনেমা বানাবে তুমি এখানে!
হ্যাঁ, সিনেমাই বানানো। জীবনঘনিষ্ঠ সিনেমা। চলো, সময় আর বেশি পাওয়া যাবে না। বাড়ির পেছন দিক দিয়ে বেরুতে হবে।
আমার পরিবারের মুখে চুনকালি মাখানোর কোনো ইচ্ছাই আমার নেই। নাইবা নায়ক আমার হলো! নায়কের চেয়ে মানসম্মান বড়।
আমার কী হয় জানি না, সজোরে চড় মারি সুপর্ণার গালে। এতোটাই জোরে, তাল সামলাতে না পেরে সুপর্ণা মেঝেয় আছড়ে পড়ে। আমি আবার বলি, কী হলো, চলো!
সুপর্ণা কথা বলে না। চোখ থেকে নেমে আসে জলধারা। ক্ষীণস্রোতা সে নদীর দিকে তাকিয়ে আবার হাত বাড়াই। সুপর্ণা ধরে না সে হাত। কাঁদে, কাঁদতে থাকে।
সু, কান্নার সময় জীবনে অনেক পাবে। এখন চলো পালাই।
সুপর্ণা এ কথারও কোনো উত্তর দেয় না। ধারাবাহিকভাবে কেঁদে যায়। কাঁদতে থাকে...।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রম্য

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪১


জাতীয় পরিচয় পত্রে ভূল সংশোধন কক্ষে মহিলা অফিসার বললেন - কি করতে পারি?

- সুতির নাইটি টা ঠিক করতে হবে।

এই শুনে মহিলা তো রেগে আগুন। খেঁকিয়ে উঠলেন রীতিমতো।
- অসভ্যতা করছেন?... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন

লিখেছেন মীর সাখওয়াত হোসেন, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭

নজদী ওহাবীদের সম্পর্কে আলােচনা করার পূর্বে নজদ দেশ সম্পর্কে আলােকপাত করতে চাই। আরবের মক্কা নগরীর সােজা পূর্ব দিকের একটি প্রদেশের নাম নজদ । এখন উক্ত নজদ দেশটি সৌদি আরবের রাজধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফ্রিল্যান্সার ডট কম

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৬ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৭

কাজের বুয়া ফ্রিল্যান্সার মাসে কামায় লাখ
হুমড়ি খেয়ে ডিগবাজি তায় পঙ্গপালের ঝাঁক
টিপলে বাটন মোবাইলটাতে ডলার আসবে রোজ
ডট কম কোচিং সেন্টার আমরাই দেব খোঁজ।

অমুকের বউ তমুকের ঝি হাতিয়ে নিচ্ছে সব
তোমরা মিছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×