somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'সব পেলে নষ্ট জীবন' পাওয়া না পাওয়ার গল্প নিয়ে "অটোগ্রাফ "!!

৩০ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"আমাকে আমার মত থাকতে দাও,আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি ।যেটা ছিল না,ছিল না সেটা না পাওয়ায় থাক সব পেলে নষ্ট জীবন।"...প্রথমে গানটির কথা গুলা আমাকে আকৃষ্ট করে,পরবর্তীতে প্রমো দেখে মনে হয় কলকাতার অন্য বানিজ্যিক ছবি থেকে এটা নিশ্চয় একটু আলাদা হবে।সেই আশা থেকে দেখে ফেলা অটোগ্রাফ।খুবই চমকপ্রদ না হলেও এটি অন্যান্য বানিজ্যিক সিনেমা থেকে ভিন্নতার প্রমাণ দিয়েছে অটোগ্রাফ।

এক কথায়ঃ

"অটোগ্রাফ"

পরিচালনাঃ শ্রীজিৎ মুখার্জী
কাহিনীঃ শ্রীজিৎ মুখার্জী
চিত্রগ্রহণ ঃসৌমিক হালদার

অভিনয়ঃ
প্রসেনজিৎ
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
নন্দনা সেন

সঙ্গীতঃ
দেবজ্যোতি মিশ্র
অনুপম রায়

ছবি মুক্তিঃ ২০১০, (কলকাতা)
IMDb rating: 8.4/10

কাহিনী সংক্ষেপঃ

শুভব্রত মিত্র(ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) এক সাধারণ যুবক যে স্বপ্ন দেখে একটি সিনেমা বানানোর।সেই সপ্নের স্ক্রিপ্ট হাতে রাতদিন ছুটেও দেখা মেলে না জনপ্রিয় নায়কের।অন্যদিকে নিজের যোগ্যতা আর তারকাখ্যাতি প্রমাণের জন্য নায়ক অরুণ চ্যাটার্জী(প্রসেনজিত) চান নতুন পরিচালকের সাথে কাজ করতে,সেই সুবাদে ভাগ্য খুলে যায় শুভর। শুভর আত্ববিশ্বাস আর আবেগ দেখে অরুন চ্যাটার্জী নিজেই ছবির producer হতে রাজি হয়ে যান।অন্য কাউকে খুজে না পেয়ে শুভ তার বান্ধবী নন্দিতাকে(নন্দনা সেন) নায়িকা চরিত্রের জন্য রাজি করায়। শুটিং শুরু হয় এবং গভীর হতে থাকে অরুন আর নন্দিতার বন্ধুত্ত্ব।অন্যদিকে ধীরে ধীরে সামনে আসতে থাকে আরুনের নিজের জীবনের কাহিনী।নন্দিতাকে একদিন বলে নিজের জীবনের কিছু গোপন অধ্যায়ের কথা। কিন্তু অজান্তেই রেকর্ড হয়ে যায় ওদের সেই কথোপকথন।উপরে উঠার নেশায় পাগল হয়ে শুভ সেই ভিডিও সিনেমার প্রচারণার জন্য ব্যবহার করে।

চরিত্র চিত্রায়ণঃ

সুপারষ্টার অরুন চ্যাটার্জীর চরিত্রটিতে প্রসেনজিত ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা করা যায় না।জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পাওয়া এই অভিনেতাকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই,তিনি সহজ ভাবেই চরিত্রটির সাথে মিশে যেতে পেরেছেন।

ইন্দ্রনীল এর অভিনয় ছিল যথেষ্ঠ সাবলীল। তাকে তরুন পরিচালকের চরিত্রের জন্য মানানসই মনে হয়েছে।

নন্দনা সেনের অভিনয় মোটেও নজর কাড়েনি এমনকি তার সংলাপ বলার ভঙ্গিও অতটা সাবলীল ছিল না...............তাকে শর্মিলী ঠাকুরের করা অদিতী চরিত্রে কিছুটা মানালেও, সুনন্দনা চরিত্রটি ঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অসফল।

বিশ্লেষণঃ

অনেকেই ছবির গল্প নিয়ে সন্তুষ্ট নন,গল্পটা হয়ত আরো ইনটারেস্টিং হতে পারত।তবে কিংবদন্তী সত্যজিত রায়ের "নায়ক"র গল্পকে ঘিরে নতুনভাবে সেই একই গল্প শোনানোর কায়দাটা প্রশংসনীয়।তবে যারা নায়ক দেখেনি তারা হয়ত ছবির মজাটা পুরোপুরি ধরতে পারবে না।

ছবির মাঝের দিকের বেশ কিছু দৃশ্য এক দেখাতে বুঝতে সমস্যা হতে পারে,editing এর কারনে গল্পে ঘোলাটে ভাব তৈরী হয়েছে,ফলে কোন অংশটুকু শ্যুটিং এর অরিন্দমের জীবনের ঘটনা বা স্বপ্ন আর কোনটুকু অরুণের জীবনের বাস্তব ঘটনা তা আলাদা করতে দর্শকস্কার কে যথেষ্ট বেগ পেতে হতে পারে।

সিনেমার কিছু কিছু সংলাপ খুব ভাল ছিল।তবে মনে ধরে রাখার মত আরো কিছু সংলাপ রাখার সুজোগটাকে পরিচালক কাজে লাগাতে পারতেন।

সবচেয়ে প্রথমে আমার নজর কেড়েছিল সিনেমাটির framing .বেশ কিছু ফ্রেমিং, composition, ক্যামেরা আঙ্গেল,শট আর লাইটিং আমার অসাধারন মনে হয়েছে।

"Behind every great fortune there is a crime."...প্রত্যেক সফল ব্যক্তির উপরে উঠার পিছনে লুকায়িত থাকে একটি গোপন সত্য।অরুণ চ্যাটার্জীর জীবনেও তেমনি এক লুকায়িত গল্প থাকে।নন্দনা জানতে চাইলে মেথড আক্টিং চলছে কিনা বলে অরুণ তা কৌশলে এড়িয়ে যান।নায়ক নিজেও একজন রক্তমাংসের মানুষ,প্রতেক নায়কের খোলসের ভেতরে বাস করে একজন খুব চেনা সাধারণ মানুষ,যে নিজে অপরাধ করে কিন্তু পরবর্তীতে অপরাধবোধে ভুগতে থাকে।সেই অপরাধবোধ থেকে অরুণ বন্ধুকে সব খুলে বলে মুক্ত হতে চায়।আতকিছুর পরও অরুণ কখন নিজের আবেগের সাথে ,নিজের সত্তার সাথে বেঈমানী করেনি।এজন্য তাকে বলতে শুনি 'বিক্রি করেছি,তবে কি জানো মুখের চামড়া,হাতের আঙ্গুল,কন্ঠস্বর,ঘাড় ঘুরিয়ে হেসে তাকানো কিন্ত not my soul,never সেটা কোনদিনও নিলামে উঠেনি,উঠবেও না"

নন্দিতা তার ছোটবেলার নায়ক অরুণের মাঝে নিজের কাছের বন্ধুটিকে আবিষ্কার করে,সেই সাথে আস্তে আস্তে আবিস্কার করতে থাকে তার আর শুভ র সম্পর্কের ফাক গুলো।

অন্যদিকে সৃজনশীল তরুণ পরিচালক শুভ আস্তে আস্তে পরিবর্তিত হতে থাকে.....উচ্চাকাঙ্খা যে মানুষ কে কতটা নিচে নামিয়ে দেয়,মানবিক গুনাবলী থেকে কতটা দূরে ঠেলে দেয় আমরা তা এই চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে দেখতে পাই।আমরা দেখি উচ্চাকাঙ্খার কাছে বিক্রি হয়ে যায় ভালবাসা আর মূল্যবোধ।সে সিনিয়র artist এর সাথে অহমিকা প্রকাশ করে, প্রোডাকশনের লোক এমন কি নিজের বান্ধবী সকলের সাথে রুঢ আচরণ শুরু করে,জনপ্রিয়তার জন্য সে শেষ পর্‍্যন্ত সস্তা প্রচারণার পথ বেছে নেয়।

সিনেমার ending এ পরিচালক গতানুগতিক পথে হাটেননি,যেটি আমার খুব ভাল লেগেছে। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না,সবাই move on করে ,সকলেই এগিয়ে যায় চোখে নিয়ে বেচে থাকার গান-এই চিরন্তন সত্যের দিকে পরিচালক আলোকপাত করেছেন।সেজন্য শুভ কেও দেখা যায় তার নতুন কাজে হাত দেবার জন্য ছুটাছুটি করতে। অন্যদিকে অরুণ আর নন্দিতার মধ্যে প্রেম ,সেই চিরচরিত মিলন দেখানোর সুযোগ থাকলেও পরিচালক তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্ত্বের মাত্রাতেই সিমাবদ্ধ রেখেছেন।হয়ত এই বন্ধুত্ত্ব প্রেমে গড়াবে বা গড়াবে না,হয়ত তাদের আবার দেখা হবে বা হবে না ...তা নিয়ে দর্শককে ভাবার অবকাশ দিয়ে গল্পের ইতি টানা হয়েছে।শেষ হয়েও হলনা শেষ ভাবটাই দর্শককে গল্পটি নিয়ে ভাবনায় আবদ্ধ রাখে।

গানের জনপ্রিয়তায় বলে দেয় যে গানের music দেয়ার ক্ষেত্রে অনুপম রায় এবং দেবজ্যোতি মিশ্র সম্পূর্ণভাবে সফল।গানের lyrics ছিল কবিতার মত কিছুটা ভিন্নধাচে্র,গানগুলোর অত্যন্ত সফল চিত্রায়ণ হয়েছে তা স্বীকার করতেই হয়।



সংযোজিত তথ্যঃ

ছবিতে শুভব্রতকে দেখা যায় সত্যজিৎ রায় এবং ইঙ্গলার বার্গম্যান দ্বারা অণুপ্রানিত এক যুবক। বাস্তবেও পরিচালক শ্রীজিৎ এই দুইজন মানুষের দ্বারা অণুপ্রানিত।শুভকে বলতে শুনি সে 'আজকের নায়ক' বানাচ্ছে কারন তার সিনেমা নিয়ে চিন্তা ভাবনার সবটা জুড়েই সত্যজিত।প্রথম সিনেমাটি তাই আসলে গুরুদক্ষিণা। শ্রীজিতের ভাষায় তার ছবি অটোগ্রাফ মুলত সত্যজিত আর উত্তম কুমারের প্রতি একরকম শ্রদ্ধা নিবেদন।

ছবিতে সংলাপের মাধ্যমে পরিচালক তার প্রিয় ব্যাক্তিকে,বা তার পচ্ছন্দকে উপস্থাপন করেছেন। যেমন পঞ্ছম দা(আর ডি বর্মণ),কবীর সুমন, গডফাদারের ডন কর্লিয়নী,কিনবা ছবি বিশ্বাস।

ছবিতে নায়কের নাম অরুণ চ্যাটার্জী আসলে মহানায়ক উত্তম কুমারের প্রকৃত নাম।

নায়িকা নন্দনা সেন বাস্তব জীবনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের কন্যা।

ছবিতে ব্যবহৃত গান 'উঠছে জেগে সকালগুলো' পরিচালক শ্রীজিতের নিজের লেখা।

একটি শুখবর হল সম্ভবত এ ছবিটির হিন্দী রিমেক হতে যাচ্ছে এবং প্রসেনজিৎ ও ইন্দ্রনীল এর চরিত্রে অভিনয় করবেন যথাক্রমে শাহরুখ খান ও রণবীর কাপুর।

শ্রীজিত ইতোমধ্যে তার পরবর্তী সিনেমার কাজ শুরু করে দিয়েছেন,যেখানে কাজ করছেন প্রসেনজিত,রাইমা,পরমব্রত প্রমূখ ।'বাইশে শ্রাবণ' নামের এই চলচ্চিত্রে বিখ্যাত পরিচালক গৌতম ঘোষকে একজন হাংরি জেনারেশনের কবির ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাবে।শ্রীজিতের কাছ থেকে আরো ভাল ভাল সিনেমা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:০২
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×