somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাংক ঋণের সুদের হার হ্রাস প্রসঙ্গে -১

৩০ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংক যাদের সঞ্চয় আছে অথচ যারা বিনিয়োগে ঝুঁকি নিতে চায় না এবং যাদের সঞ্চয়ে স্বল্পতা আছে অথচ যারা বিনিয়োগের ঝুঁকি গ্রহণে প্রস্তুত-এই দুই পক্ষের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরি করে। এক কথায় ব্যাংক সঞ্চয়কারীর অর্থ নিরাপদে রক্ষা করে এবং অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করে।

একটি সুষ্ঠু ও দক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমানতের সুদের হারের সময়ে ঋণের সুদের হারের পার্থক্য যথাসম্ভব কম থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এই পার্থক্য বেশ বড়। ঋণের জন্য সুদের হার হ্রাস করা হলে পার্থক্যটি কমে আসবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও বাস্তবতা হলো ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণে জর্জরিত হওয়ায় ঋণ প্রদানে সুদের হার হ্রাস করতে অসুবিধার সম্মুখিন হচ্ছে। খেলাপি ঋণ ঐতিহাসিকভাবে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর একটি বোঝা স্বরূপ বিরাজ করছে। ঋণগ্রহিতা নির্বাচনে দক্ষতার অভাব, ঋণ গ্রহিতাদের শিল্প ব্যবসার ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞতা এবং ঋণগ্রহিতাদের একাংশের মধ্যে ইচ্ছাপূর্বক খেলাপি হওয়ার প্রবণতা, খেলাপি ঋণের অদক্ষতা সৃষ্টি হওয়ার প্রধান কারণ। এছাড়া খেলাপি ঋণের বোঝার ভারে ন্যুব্জ হয়ে ব্যাংকগুলো যখন ঋণের জন্য বেশি হারে সুদ ধার্য করতে বাধ্য হয় তখন উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে যেসব শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হয় সেগুলো কার্যত এক সময় মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে খেলাপি ঋণ সমস্যা আরো প্রকট হয়ে উঠে। ঋণ গ্রহণকারীদের জন্য সুদই একমাত্র ব্যয় নয়, ঋণ পাওয়ার জন্য তাদেরকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ঘুষ নিয়ে সন্তুষ্টি অর্জন করতে হয়। এটি সুদের ওপর বাড়তি ব্যয়। এরকম পরিস্থিতিতে যারা ইচ্ছাপূর্বক খেলাপি হয় তারাই ব্যাংকগুলোর কাছে প্রাধান্য পায়। এই সমস্যাটি বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন দাতাসংস্থার পরামর্শে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। অনেকে এই সংস্কার সম্পর্কে আশান্বিত হতে পারেননি। কারণ, ব্যাংকের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ পরোক্ষভাবে থেকেই যাচ্ছে। অতীতে খেলাপি ঋণের জন্য সরকারী প্রভাবে ঋণ দেয়াকে দায়ী করা হতো। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে যে সংস্কার আনা হয়েছে তা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে কেবলমাত্র ভবিষ্যতই তা বলতে পারে। ঋণগ্রহণকারীদের ব্যয়ের আরেকটি বড় কারণ হলো ঋণ প্রক্রিয়াকরণে দীর্ঘসূত্রতা। সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট লোনের ক্ষেত্রে এক থেকে দু’বছর বিলম্বের ঘটনা। একজন বিনিয়োগকারী যে ধরনের বাজার পরিবেশকে সামনে রেখে তার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেন সেটি ঋণ প্রাপ্তিতে বিলম্বের ফলে বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। ফলে বিলম্বে প্রাপ্ত ঋণ দিয়ে যে শিল্প গড়া হয় তা রুগ্ন হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে এখনও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পূর্বাভাস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। উন্নত দেশে এমনকি প্রতিবেশী ভারতেও এই ধরনের বিজনেস প্রোকাস্টিং সংস্থা আছে। এসব সংস্থা থেকে ব্যবসার ভবিষ্যৎ অবস্থা সম্পর্কে যে সব পূর্বাভাস দেয়া হয় তার উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীরা তাদের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর নিজেদেরও এ ধরনের কোন ব্যবস্থা নেই। ব্যাংকগুলো যদি তাদের সমিতি বা সংস্থার মাধ্যমে এরকম সংস্থা গড়ে তোলে তাহলে ব্যাংক এবং কাস্টমার উভয় পক্ষেরই উপকার হবে। ব্যাংক প্রশাসনের মধ্যে প্রজেক্ট এসেসমেন্টের যে ব্যবস্থা আছে সেটিও অত্যন্ত দুর্বল এবং অপেশাদারী। প্রশিক্ষণ ও তদারকির মাধ্যমে বিদ্যমান ফিনান্সিয়াল এনালিস্টদেরকে আরও দক্ষ করে তোলা সম্ভব।

(আগামী পর্বে শেষ)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×