ভিনগ্রহে প্রান?
এই বিশ্বব্রহ্মান্ডে শুধুমাত্র আমরা কি একা? নাকি পৃথিবীর বাইরেও প্রানীর অস্তিত্ব আছে? এই প্রশ্ন চলে আসছে বহু বছর আগে থেকেই। এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী যেমন ডঃ হু, সুপারম্যান, বা সিনেমা, টেলিভিশনের পর্দাতেই এদের দেখা মেলে। অনেকের বিশ্বাস বহির্বিশ্বে প্রানীর সংখ্যা অগুনতি।যদি তাই হবে আমরা তাদের দেখি না কেন?
১৯৬০ সালে স্থাপিত রেডিওটেলিস্কোপ তার প্রশ্ন “কেউ আছেন?”বহির্বিশ্বে প্রচার করে চলেছে। এর উত্তর আজো পায় নি।রেডিও এস্ট্রোনমীর জনক এবং সেটী (SETI- Search for extra terrestrial Intelligence)র প্রতিষ্ঠাতা ডঃ ফ্রাঙ্ক ড্রেকের কাছে আজও এটি বড় প্রশ্ন। ডঃড্রেক ১৯৬১ সালে তার প্রতিষ্টিত সমিকরনে হিসেব করে দেখিয়েছিলেন প্রায় ১০, ০০০ গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব সম্ভব।
সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে কিন্ত ১০ হাজার না হোক এর কাছাকাছি কোন সংখ্যার গ্রহেও যদি প্রানীর অস্তিত্ব থাকে তাহলেও তো তাদের সাথে মোলাকাত হওয়া উচিৎ। পারমানবিক বোমার জনক এনরিকো ফার্মি ও সেই ১৯৫০ সালে এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। স্টিফেন হকিং, কার্ল সাগানের মত মনিষীরা কিন্তু ভিনগ্রহে প্রানের অস্তিত্ব সম্পর্কে আশাবাদী।ভিনগ্রহের প্রানীদের সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের” এমন মন্তব্য প্রফেসর জন জারনেকীর।জ্যোতির্বিজ্ঞানী সেঠ শস্তাক বলেন “অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে ভিনগ্রহীদের” তাদের সুক্ষ সংবেদনশীল যন্ত্রপাতীর কথা।বহির্বিশ্বে প্রানের না থাকার ধারনা একেবারে সরাসরি নাকচ করে দেন শস্তাক।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হিসেব অনুসারে বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে নক্ষত্রের সংখ্যা ৭০ সেক্সটিলিয়ন বা ৭ এর পর ২২টা শুন্য। এদের মধ্যে নক্ষত্র গুলোর চারপাশে ঘুর্নায়মান ২৩% ভাগ গ্রহে পৃথিবীর মত আবহাওয়া বিরাজমান।ইদানিং কালের গবেষনা অনুসারে আমাদের গ্যালাক্সি “মিল্কি ওয়েতে” ই রয়েছে ৫০ কোটি পৃথিবী সদৃশ গ্রহ।
আমরা বেতার তরংগ ব্যবহার করছি ১০০ বছর ধরে, পৃথিবীর ৪০০ কোটি বছর বয়সের তুলনায় যা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। ভিনগ্রহিদের বেতার বার্তা আমাদের কাছে পৌছবে তার সম্ভাবনা ক্ষীন, কারন সে গ্রহ হয়ত অনেক অনেক দূরে এবং তাদের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আমাদের থেকে ভিন্নতর।পৃথিবীতেই আমরা আগে যে এনালগ পদ্ধতি ব্যবহার করতাম তা আজ ডিজ়িটাল, সুক্ষ থেকে সুক্ষতর।আমরা আগের থেকে বেশী করে তরংগ সনাক্ত করতে পারছি কিন্তু তা অতি ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র।
আবার অন্য এক দলের মন্তব্য ‘বুদ্ধিবৃত্তির উন্নতির সাথে সাথে প্রানি ডেকে আনছে ধ্বংশকে, যেমন পারমানবিক বোমা বা ভাইরাস প্রযুক্তি”,বুদ্ধিমান উন্নত প্রযুক্তির ভিনগ্রহীরা আমাদের সাথে যোগাযোগের আগেই হয়ত নিজেদের ধ্বংশ নিজেরাই ডেকে আনছে। অনেকে এও পর্যন্ত বলেন যে ভিনগ্রহে প্রানের অস্তিত্ব নেই তাই আমরা কিছুই খুজে পাচ্ছিনা, এবং খোজাখুজি করার ও কোন মানে নেই।পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব অত্যন্ত জটিল, এবং তা,নির্ভর করছে এই পরিবেশ, প্রানের উপাদান ইত্যাদি অনেক গুলো অনিশ্চয়তার মধ্যে যা একসাথে হয়ে জীবন সৃষ্টি অসম্ভব। এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে আমরা নিসঙ্গ।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপক নিক বোস্ট্রম কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো “এমন কি হতে পারে , যে মানুষ উন্নত বুদ্ধিবৃত্তির কোন ভিনগ্রহের প্রানীর কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত প্রোগ্রাম?”হয়ত একই প্রোগ্রামে অন্য কিছু আর তৈরী হয় নি।
ভিনগ্রহী থেকে থাকলে আমরা কেন তা খুজে পাচ্ছি না।ডঃ ড্রেকের উত্তর খুবই সোজা “ খুব বেশী হলে আমরা কয়েক হাজার গ্রহকে ভাল ভাবে পরীক্ষা করতে পারছি।যদি ধরে নি ১০ হাজার গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব তাহলে সেটা হবে প্রতি ১০ কোটিতে একটি। ভিনগ্রহে প্রানের অস্তিত্ব খুজে পেতে আমাদের আরো অনেক রাস্তা পে্রোতে হবে”
আজ থেকে ৫/৭ শ’ বছর আগে এক মহাদেশের মানুষের কাছে অন্য মহাদেশ ছিল অপরিচিত।বছরের পর বছরের অনিশ্চিত সমুদ্রযাত্রার মাধ্যমে কলাম্বাস যা আবিস্কার করেছিলেন তা আজ সেকেন্ডের মধ্যেই যোগাযোগের আওতায়।ভবিষ্যতে হয়ত এমনটিই ঘটবে। বহু আলোকবর্ষ দুরের গ্রহের বার্তা নিমেষেই পৌছবে পৃথিবীতে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১১ সকাল ৯:০৭