somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইনের শাসন ও এমকে আনোয়ারের মহান বাণী

০৯ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এম কে আনোয়ার সাহেব বিশাল এক বাণী দিয়েছেন। অনুষ্ঠান হচ্ছিল তারেক রহমানের জেলে যাওয়ার ছয় বছরের বার্ষিকী। সেখানে তিনি বাণী দিলেন, "শাহবাগ আর আইনের শাসন এক সাথে চলতে পারে না।"

বটে? হঠাত করে এইরকম আইনী মতামত দেওয়ার খায়েশ হলো কেন জনাব? তারপর তিনি কি বললেন! "সরকার যদি আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় তা হলে শাহবাগের বিরুদ্ধেও যারা কথা বলতে চান তাদের জন্যও সমান সুযোগ করে দিতে হবে।" সরকার কি আপনার মুখ চেপে ধরে রেখেছে? এইতো আপনি দিব্যি বলে দিলেন শাহবাগের বিরুদ্ধে কথা। আপনাকে কেউ বাধা দিয়েছে? সরকার আর কি করবে? আপনার মাইক ভাড়াটা দিয়ে দেবে? ঝাইরা কাসেন আঙ্কেল। মনের কথা পেতে রাখতে হয়না, বদ হজম হবে। এই বয়েসে পেট ফুলে গেলে অসুবিধা। ওনার এই কথা দুইটা নিয়ে একটু আলাপ করি।

শাহবাগ আর আইনের শাসন একসাথে চলতে পারে না। এই কথাটা ভুল। নেহায়েত বাতুলতা। শাহবাগ আইনের শাসন নিশ্চিত করছে, আপনারাই বরং আইনের শাসনে বাগ্রা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বিশেষ ভাবে জনাব এম কে আনোয়ার সাহেব, আপনি নিজেও আপনার বক্তৃতায় আইনের শাসনের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন ক্রমাগতভাবে। একটু বিশদভাবে বলি।

আইনের শাসন বা Rule of Law কি জিনিস? আইনের শাসনের মৌলিক কথাটা হচ্ছে এরকম: প্রথমত, দেশের প্রচলিত সাধারণ এবং সার্বজনীন আইনের প্রাধান্য থাকতে হবে, সকলের জন্যে এক আইন হবে, শাসকের জন্যে কোনো বিশেষ অগ্রাধিকার বা স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা থাকা চলবে না; দ্বিতীয়ত, আইনের উর্ধ্বে কেউ থাকবে না এবং সকলের ক্ষেত্রে আইনের সমান প্রয়োগ থাকতে হবে; তৃতীয়ত একটা আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং সেই বিচার ব্যবস্থ্যা থাকবে স্বাধীন এবং তার ক্ষমতাকে কোনো ব্যক্তি বা শ্রেণী বিশেষের জন্যে খর্ব করা চলবে না। অনেকেই এর সাথে গণতান্ত্রিক অধিকার, বাক চিন্তার স্বাধীনতা ইত্যাদিকে আইনের শাসনের সংজ্ঞার সাথে যুক্ত করতে চায়, সেটা নেহায়েত ভুলও না। আমরা খুব বিস্তারিত এখানে না করলেও চলবে। এইটাই মৌলিকভাবে আইনের শাসনের ধারণা।

আর শাহবাগ কি করেছে যাতে করে আইনের শাসন বিঘ্নিত হচ্ছে? শাহবাগ কতগুলি ঘৃণ অপরাধীর বিচার চাইছে এবং তাদের সর্বোচ্চ দন্ডের দাবি করছে। তাতে করে আইনের শাসনের বিঘ্ন ঘটলো কিভাবে? থেকে কি কেউ বলছে যে বিচার চাইনা? একটা কথা অনেককে বলতে শুনেছি, এইভাবে রাস্তায় দলবেধে বসে 'ফাঁসি চাই' 'ফাঁসি চাই' বলতে থাকলে নাকি বিচার প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করা হয় এবং তাতে করে ন্যায় বিচার বিঘ্নিত হতে পারে। এটাই কি এম কে আনোয়ার সাহেব বলতে চাচ্ছেন? চলেন সেটাও একটু বিবেচনা করে দেখি।

প্রতিটা বিচার ব্যবস্থায় বাদী পক্ষ সব সময়ই আসামির শাস্তি দাবি করে। আপনি যদি একজনকে খুনের অপরাধে আসামী হয়ে থাকেন তাহলে বিচারের আগে পরে বা বিচারের সময় মৃতব্যক্তির স্বজনেরা ও তাদের উকিলেরা আপনার মৃত্যুদন্ডের দাবি তো করবেই। আপনার বিরুদ্ধে যদি ধর্ষণের অভিযোগ থাকে তাহলে বা সেরকম ঘৃণ্য কোনো অপরাধের অভিযোগ থাকে তাহলে ভিকটিমের স্বজনের সাথে সমাজের সচেতন মানুষেরাও শাস্তির দাবিতে যোগ দেয়। উদাহরণ দিতে হবে? আপনিমনে করে দেখুন, আপনি নিজেও কোনো না কোনো সময় এরকম দাবি করেছেন। এরকম দাবি আইনের শাসনের প্রতিবন্ধক না, বরং যারা শাস্তি দাবি করে বা বিচার দাবি করে তারা আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই আদালতের কাছে শাস্তি দাবি করে, বিচার দাবি করে। তার বিপরীতটাই বরং আইনের শাসনের প্রতিবদ্ধকতা বলে বিবেচিত হবে।

বিচার চাওয়ার বিপরীতটা মানে বিচার মানতে না চাওয়া বা বিচারে বাধা দেওয়া। নির্দোষ লোকের মুক্তি দাবি করা মানে কিন্তু আইনের শাসনের প্রতিবন্ধকতা না। এই যে এমকে আনোয়ার সাহেবেরা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলার প্রত্যাহার দাবি করছেন, তার বিরুদ্ধে মামলার নিন্দা করছেন সেটা কি? আপনি যদি আপনার প্রিয় নেতাকে নিস্পাপ নির্দোষ মনে করে তার মুক্তির দাবি করে থাকেন, করতেই পারেন। তাতেও আইনের শাসনের বিঘ্ন ঘটে না। (যদিও তারেক রহমানকে আপনি নিষ্পাপ মনে করেন ইটা ভাবতেই আমার হাসি পাচ্ছে হাঃ হাঃ হাঃ)। আইনের শাসনের বিঘ্ন হয় যখন একটা সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি একটা প্রতিষ্ঠিত আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থাকে ও তার কর্তৃত্বকে কথায় ও কাজে নানারকমভাবে হেয় করার বা খাটো করার বা উত্খাত করার চেষ্টা করে। ওই যে আইনের শাসনের ব্যাখ্যা দিয়েছি আগে, সেটা আরেকবার দেখে নিন, প্রয়োজনে আইনের শাসনের উপর আরেকটু বিস্তারিত পাঠ করে নিন। এমকে আনোয়ার সাহেবের কিন্তু এই কাজটিই করে যাচ্ছেন, এবং ওরাই আইনের শাসনে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছেন। ব্যক্তিগতভাবে এমকে আনোয়ার সাহেব নিজেও আদালতের বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন, সেকারণে আদালত থেকে ওকে নোটিশ ফোটিশও দেওয়া হয়েছিল, সেগুলির বর্তমান অবস্থা কি আমি জানিনা।

আপনি আইনের শাসন চাইলে আপনাকে আদালত মানতে হবে, আইন মানতে হবে। তার মানে এই না যে আপনি আইনের বা আদালতের সমালোচনা করতে পারবেন না। অবশ্যই পারবেন, সেটাকে হতে হবে সুনির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট। এই যে আপনারা সাধারনভাবে বেহুদা বলতে থাকেন, আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হতে হবে, স্বচ্ছ হতে হবে এগুলি কোনো সমালোচনা না। আপনারা বলুন কোনখানে মানটা আন্তর্জাতিক হয়নি বা আন্তর্জাতিক মানটা কি বা কোথায় অস্বচ্ছতা হয়েছে। সেগুলি তো আপনারা বলেন না।

আর আপনারা যদি মনে করেন যে গোলাম আজম নির্দোষ নিষ্পাপ তাহলে মন খুলে তার মুক্তি দাবি করেন। আপনার নেত্রী মাঝে দুয়েকবার সেই দাবিও করেছিলেন। সেটা আপনারা করতেই পারেন।সেই অধিকারও আপনাদের আছে। কিন্তু আদালত মানবো না গৃহযুদ্ধ দিবো, এই আদালত গুড়িয়ে দিব এগুলি তো আপনি বলতে পারেন না। এগুলি যে শুধু আইনের শাসনের বিপক্ষে তাই কেবল না, এগুলি কথা ও কাজ রাষ্ট্রের অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জ করে।

"সরকার যদি আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় তা হলে শাহবাগের বিরুদ্ধেও যারা কথা বলতে চান তাদের জন্যও সমান সুযোগ করে দিতে হবে"- এই কথাটা থোলে এমকে আনোয়ার সাহেব কেন বলছেন! এইটাই আসল কথা। ওই যে ওনাদের পার্টনার রয়েছে না! জামাত! জামাতকে যেন আমরা সুযোগ করে দেই যাতে ওরা আমাদের আদালতের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে, ইচ্ছে মত ধমক দিতে পারে সেটা হচ্ছে ওনার আসল আবদার। কিন্তু এমকে আনোয়ার চাইলেই কি আমরা জামাতকে রাস্তায় দাড়িয়ে আমার রাষ্ট্রকে, আমার রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধমক দেওয়ার সুযোগ করে দিব? দুঃখিত আঙ্কেল, আইনের শাসনের মানে কিন্তু সেটা না। আপনি ঠিক বলেন নাই।

বয়স হয়েছে, অনেক অভিজ্ঞতা আপনার আছে, ইনিয়ে বিনিয়ে এইসব তেনা প্যাচানো কথা না বলে স্পষ্ট করে সত্ভাবে মনের কথাটা বলেন; আর মেহেরবানী করে পিটার ভিতর এক কথা রেখে মুখে আরেক কথা বলবেন না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×