somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা দেখার ক্ষেত্রে ভারত কে? কথিত ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতে কতটুকু?

২৮ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আর কত নতজানু প্রবণতা? জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করে গত সাড়ে চার বছর এ সরকার ভারতকে শুধু উজাড় করে সবকিছু দিয়েই গেছে। অর্জন করতে পারেনি কিছুই এখন।
দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করেছে। “আপনারা দিলে আমরা নির্বাচনে জিততে পারব আর না দিলে নির্বাচনে ফেল মারব”- এ ধরনের কথায় কী প্রতিভাত হয়না যে, সরকার মনে করছে এদেশের নির্বাচনী ফলাফলের নিয়ন্তা ও নিয়ন্ত্রক ওরাই? অতীব দুঃখজনক ও লজ্জাজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় তাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
আর কত ঔদ্ধত্য প্রবণতা!
অপরদিকে বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রার্থনার জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছে যে, ভারত বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ দেখতে চায়। কিন্তু কেন দেখতে চায়? ভারত দেখার কে? খোদ ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা কতটুকু আছে? ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা কী ভারত আর বাংলাদেশের জন্য আলাদা? ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা কী ভারতের জন্য মুসলিম শহীদ আর নির্যাতন? আর বাংলাদেশের জন্য ৯৭ ভাগ মুসলমানদের বঞ্চিত করে মাত্র ২ ভাগের কম হিন্দুদের সর্বোচ্চ সুবিধা প্রদান ও তোষণ?
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ভারতে ৫০ হাজারবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে এবং লাখ লাখ মুসলমানদের শহীদ করা হয়েছে। হাজার হাজার ধনী মুসলমানদের বাস্তুহারা করা হয়েছে।

ভারতের স্বাধীনতার রূপকার এবং স্বাধীন ভারতের জনক মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধী। সে ছিল কট্টর গোঁড়া হিন্দু। সে বলতো, হিন্দুধর্মের আদর্শ তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ হয়েই সে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে এবং তার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসে সে হিন্দুধর্মের প্রতিফলন ঘটাতে সমর্থ হয়েছে। তার একমাত্র উদ্দেশ্য ভারতে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
গান্ধী বলেছিল, পবিত্র গো-মাতার জীবন রক্ষা করা প্রত্যেক হিন্দুর ধর্মীয় কর্তব্য। সে মাওলানা মোহাম্মদ আলীর সাথে একযোগে আন্দোলন পরিচালনা করেছিল মুসলমানদের ছুরির নিচ থেকে গো-মাতার জীবন রক্ষার লক্ষ্যে। অবশ্য তার উদ্দেশ্য সাময়িকভাবে হলেও সফল হয়েছিল। কারণ, ১৯২১ সালে পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে মুসলমানরা গরু কুরবানী দেয়নি। পরে অবশ্য মাওলানা মোহাম্মদ আলী মুসলমানদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, তারা যেন গান্ধীকে অনুসরণ না করে। কারণ, গান্ধীর উদ্দেশ্য ভারতীয় মুসলমানদের হিন্দুদের দাসে পরিণত করা, ভারতের স্বাধীনতা নয়।
‘ফ্রিডম অব মিডনাইট’ বইতে উল্লেখ আছে যে, ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগের দিন রাতে ভারতীয় কমিউনিস্ট অ্যাসেম্বলীর সভাপতি ড. রাজেন্দ্র প্রাসাদের বাড়িতে বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণরা বেদের মন্ত্র পড়া একটি মন্ত্রপূত প্রদীপ জ্বেলে অনবরত সরবে বেদমন্ত্র পড়তে থাকে। যে সমস্ত ব্যক্তিবর্গ স্বাধীন ভারতের প্রথম মন্ত্রিত্বের পদ অলঙ্কৃত করতে যাচ্ছে তারা প্রদীপটি প্রদক্ষিণ করতে থাকে। একজন ব্রাহ্মণ প্রত্যেকের মাথায় পবিত্র পানির (তাঞ্চুব নদীর পানি যা নাকি হিন্দুদের নিকট অতি পবিত্র) কয়েক ফোঁটা ছিটিয়ে দিতে থাকে। অতঃপর তারা এক রমণীর সামনে দিয়ে যাবার সময় সে তালপাতায় মুখ ঢাকা একটি তামার পাত্র হতে তর্জনীর মাথা দিয়ে সিঁদুর তুলে প্রত্যেকের কপালে ফোঁটা দিতে থাকে। এ ফোঁটাটি তৃতীয় নয়ন হিসেবে বিবেচিত। যা নাকি কোষধারীদেরকে সব রকমের আপদ-বালাই হতে নিরাপদ করবে। অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি কপচালেও ভারত জন্মলাভ করে একটি কট্টর হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘১৯৪৭ সালে যখন দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয় তখন দেশের সরকারি চাকরিতে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব ছিল ৩৪%, আজ এটা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ শতাংশে। এমনকি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মসংস্থানে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব দলিতদের থেকেও কম। বোঝা যাচ্ছে স্বাধীনতার পর থেকে মুসলিমদের সাথে শুধু শোষণ হয়েছে। তাদের অবস্থার একটু উন্নতি হয়নি বরং মহাঅবনতি হয়েছে।
সাচার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের ৪৯.৯% মুসলিম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে; যা জাতীয় গড়ের থেকে অনেক বেশি। কথিত ধর্মনিরপেক্ষ দেশের জন্য এটা খুবই লজ্জার। সঙ্গতকারণেই এ প্রশ্ন জোরদার হয়- ভারত কি সত্যিই ধর্মনিরপেক্ষ দেশ?
অপরদিকে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মুসলিমদের বিপিএল অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি। অথচ সারা দেশের প্রায় ২৭% দরিদ্রদের সেই সুবিধা দেয়া হয়েছে। ফলে তারা অতিরিক্ত রেশন, কমদামে খাদ্যদ্রব্য, বিনা খরচে বিদ্যুৎও পাননা। গ্রামীণ মুসলিমদের ৬০% ভূমিহীন। ভিটেমাটি ছাড়া চাষ-বাস করার জন্য কোন জমি নেই। অথচ ১৯৫০ সালের সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী জমিদারী প্রথা বিলোপ করা হয়েছিল এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক সম্পত্তি ছেড়ে, অতিরিক্ত জমি সরকার গরিবের মধ্যে বেটে দেয়। তাহলে কি মুসলমানরা এই জমি থেকে বঞ্চিত হয়েছিল? তাদের কোন জমি দেয়া হয়নি? কেন আজ ৬০% মুসলিম ভূমিহীন? সরকারের কাছে এসব প্রশ্নের কোন উত্তরই নেই।

সর্বভারতীয় ইংরেজি নিবন্ধকার Dr. S. Ausaf Saied Vasfi লিখেছে, Muslim Condition is worse than that of Dalits. The only ÔsectorÕ where Indian Muslims are more than adequately represented in Jail. (মুসলিমদের অবস্থা দলিতদের থেকেও সঙ্গীন। একমাত্র সেক্টর যেখানে ভারতীয় মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে ব্যাপকতর, তা হলো জেল)।
অত্যন্ত স্পর্শকাতর প্রশ্ন উঠে, কথিত ধর্মনিরপেক্ষতাহীন ভারত বাংলাদেশে কোন ধরনের ধর্মনিরপেক্ষতা দেখতে চায়? আজকে সচিবালয়ে, সিভিল প্রশাসনে, পুলিশ প্রশাসনে সব জায়গায় হিন্দু আর হিন্দু। ৯৭ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে আজ সাধারণ মুসলমান সংখ্যালঘিষ্ঠ হিন্দুদের তোয়াজ করে চলতে বাধ্য হচ্ছে। জানা গেছে কোনো কোনো জেলার ডিসি হিন্দু, এমপি হিন্দু, ম্যাজিস্ট্রেটরা হিন্দু। সেখানে চলছে মুসলিম নিপীড়ন। বাধ্য হয়ে সাধারণ মুসলমানরা সেখানে হিন্দু সমাজকে তোয়াজ ও ভয় করে চলছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
অপরদিকে মন্ত্রী, সচিব এবং বাংলাদেশ সরকারের স্পর্শকাতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অনেক হিন্দু থাকার ফলে তাদের দাদার দেশে বাংলাদেশের গোপন তথ্যাদি পাচারের অভিযোগ উঠেছে।
পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন- ভারতের চাপে ট্রানজিট, ট্রানশিপমেন্ট ইত্যাদি আত্মঘাতী চুক্তির পর এখন শুধু কাগজ-কলমে দেশটিই দিয়ে দেয়ার বাকী আছে। আরো ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ভারতের করদ রাজ্য হিসেবেই কী ভারত বাংলাদেশকে দেখতে চায়? ভারতের ফেনসিডিল, মাদক ভারতে আকাশ সংস্কৃতি এদেশের যুব সমাজকে তিলে তিলে নিঃশেষ করছে। দ্বীন ইসলাম থাকলে এসব কিছুই হতো না। এ কারণেই দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি ভারতের এত বিদ্বেষ। আর ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য এত চাপ। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “ইহুদী-নাছারারা ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীকা গ্রহণ না করবে।”
কাজেই ভারতীয় প্রেসক্রিপশন ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে এদেশের প্রত্যেকটা মুসলমানকে সতর্ক, সচেতন ও প্রতিবাদী তথা জিহাদী হতে হবে।
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×