somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবুতরের বাড়ি

২৭ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা থেকেই কবুতর পোষেন সাহাবুদ্দিন। একবার তিনি বাজার থেকে দুটি মূল্যবান জার্মান রন্টি কবুতর কিনে আনলেন। একটা সময় কবুতর ডিম পাড়ল। সেই ডিম থেকে বাচ্চাও হলো। সাহাবুদ্দিন খুব খুশি। একদিন দুপুরে তিনি খেতে বসেছেন। তাঁর মা মাংসের তরকারি দিয়ে ভাত খেতে দিলেন। খুব তৃপ্তি নিয়ে ভাত খেতে খেতে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘মা, কিসের মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছি?’ মা হেসে উত্তর দিলেন, ‘নতুন যে কবুতরটা বাচ্চা দিয়েছে, তার মাংস।’ সাহাবুদ্দিনের গলা দিয়ে আর খাবার নামে না। ‘মা, তুমি কী করেছ! এর একটা কবুতরের দাম ৪০ হাজার টাকা, তুমি জানো, আমরা ৪০ হাজার টাকার মাংস খাচ্ছি।’ অনেকটা কেঁদে কেঁদেই বলছিলেন তিনি। তবে তাঁর মা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, একটা কবুতরের দাম ৪০ হাজার টাকা হতে পারে।
এই ঘটনা জানালেন কোরেশী মুহম্মদ তানভীর হাসান। তিনি বাংলাদেশ ফেন্সি পিজিয়ন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। থাকেন নাখালপাড়ার ব্যাংকার্স রোতে। তানভীরের বাড়িতে গিয়ে ৪০ হাজার টাকার চেয়েও বেশি দামের কবুতর দেখা গেছে। তিনি জানান, যখন তিনি তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র, তখন থেকেই কবুতরের ভক্ত। পুরান ঢাকায় গিয়ে রেসার কবুতর দেখে তিনি প্রথম আকৃষ্ট হন। রেসারের পেছনে ছুটে ছেলের পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে, এই ভেবে তানভীরের বাবা তাঁকে খাঁচায় পোষার জন্য কিছু শৌখিন কবুতর কিনে দেন। এভাবে শখের বশে কবুতর পোষা চলছিল। তবে একবার ঈদের আগে তাঁর হাতে একেবারেই টাকা ছিল না, তখন তিনি ৯৫ হাজার টাকায় তিন জোড়া কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করে খুব আনন্দ পেয়েছিলেন।
ফেন্সি কবুতরের বিশাল সংগ্রহ এখন তানভীরের বাড়িতে। ৩০ প্রজাতির দুই শতাধিক কবুতর এখন তাঁর খামারে রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এসব কবুতরের মধ্যে আছে সেকশন পোটার, বোরবার্জ, হ্যানা পোটার, বুখারা, জ্যাকোবিন, শ্যালো, ফ্রিলব্যাক, বিউটি, হোমার, এক্সিভিশন হোমার, বার্গ হোমার, স্ট্রেচার, মালটেশ, হাঙ্গেরিয়ান ও কিং। এগুলো সব বড় জাতের কবুতর। ছোট জাতের কবুতরের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: টেগারোলার, ফান্টেইন, শর্ট ফেইস, প্যারাগুয়ে, বার্লিন, হোয়াইট টামলার, কালার হেড ও হেলমেট।
দেশি কবুতরের মধ্যে সিরাজী, লক্ষ্যা ও মুক্ষি পছন্দ করেন তানভীর। তাঁর কাছে এখন নিকোবর প্রজাতির এক জোড়া কবুতর আছে। তিনি জানান, নিকোবর কবুতর সারা বিশ্বেই দুর্লভ। ঢাকায় আরও দু-একজন শৌখিন কবুতরপ্রেমীর কাছে আছে নিকোবর।
তাঁদেরই একজন ইন্দিরা রোডের আবদুল হক। তাঁর কাছে অন্যান্য শৌখিন কবুতরের পাশাপাশি আছে ছয়টি নিকোবর প্রজাতির কবুতর। কবুতর পোষা শুধু শখ হয়েই থাকেনি আবদুল হকের কাছে। তিনি অন্য ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে শৌখিন কবুতর আমদানি করে থাকেন।
আবদুল হক নিকোবর প্রজাতির কবুতর সম্পর্কে জানান, একসময় নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এসব কবুতরের বসবাস ছিল। এ জন্য নামকরণে নিকোবর শব্দটি আছে। এখন এই কবুতর বিলুপ্তির পথে। রঙের বৈচিত্র্য দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে এই কবুতর। তীব্র আলোতে এদের রং সবুজ দেখায়, হালকা আলোতে হয় লাল আর অন্ধকারে নীল রং ধারণ করে।
২০০৮ সালে নিকোবর আবদুল হকের সংগ্রহে আসে। প্রতি মাসে এরা ডিম পাড়ে। কখনো একটা, আবার কখনো দুটো। এরই মধ্যে আবদুল হক চারটি নিকোবরের ছানা পেয়েছেন। তাঁর ইচ্ছা, জঙ্গলে অনুকূল অবস্থা তৈরি করে এসব কবুতর একসময় জঙ্গলে ছেড়ে দেবেন।
দেশি কবুতরের বাজার আছে টঙ্গী, মিরপুর ও জিঞ্জিরায়। টঙ্গীতে কবুতরের হাট বসে রোববার। আর মিরপুর ও জিঞ্জিরায় বসে শুক্রবার। বিদেশি শৌখিন কবুতরের সে অর্থে কোনো হাট নেই। শৌখিন কবুতর পালনকারীরা নিজেদের মধ্যে সেই কবুতর বিনিময় কিংবা বেচাবিক্রি করে থাকেন। বিদেশি এক জোড়া শৌখিন কবুতরের দাম প্রকারভেদে পাঁচ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো হয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়েও অনেক বেশি। যেমন, নিকোবর বিরল প্রজাতির কবুতর। ঢাকা শহরে এক জোড়া নিকোবর কবুতরের দাম পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছে বলে জানান তানভীর হাসান। এ বিষয়ে আবদুল হক বলেন, নিকোবর দুষ্প্রাপ্য, তাই টাকার অঙ্কে এর মূল্য নির্ধারণ করা যাবে না। যাঁর দরকার, তিনি পাঁচ লাখ টাকার বেশি দামেও নিকোবর কিনে নিতে চাইবেন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×