২০০৯ সাল । অক্টোবর মাস । মন উচাটন । যখন তখন । ভাল্লাগছিলনা ঢাকা । ঘুরতে উদগ্রীব । ভাবনার বাস্তবায়ন । স্থান নির্বাচন । সুদূরের নীল আহবান । নীল-স্বপ্নীল সেন্টমার্টিনস দ্বীপ । নামে নামে মিল । সেন্টমার্টিন সার্ভিস । তাদের অফিসেই সবকিছু ঠিক করে নেয়া । বাসের টিকেট, জাহাজের টিকেট, হোটেল ব্লু মেরিন । তাদের বাসে চড়া । যাত্রা শুরু রাত ন’টার কিছু পর ।
সকালে পৌঁছানো সেন্টমার্টিনসগামী জাহাজ ঘাটে । টেকনাফ শহর থেকে খানিকটা আগে । জাহাজের পথচলা নাফ নদীর বুক চিরে । নদীর বুকে সৌন্দর্যের ঝিকিমিকি । বিমুগ্ধ সময় । ভাললাগার কলসি পূর্ণ হতে শুরু করা । জাহাজের টিকেট খোলা ডেকের নেয়াই ভাল ।
ওই তো সেন্টমার্টিনস দ্বীপ । মধ্যদুপুরে পৌঁছানো । বিশ্রাম । একসময় বিকেল । ভ্যানরিকশা দরদাম করে ঘুরা শুরু । সচলচিত্রের দৃশ্যায়ন সাধারণত যেখানে হয় সেইসব স্থান, একজায়গায় পাথর উত্তোলনের দৃশ্য, হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি, সৈকতের বিভিন্ন প্রান্ত, স্থানে স্থানে নারিকেল বিথিকা ।
কেউ কেউ সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাতে থাকেন না । দুপুরে এসে ঘুরে যান । সেন্টমার্টিন দ্বীপে নেমেই চট করে হয়ত ছেড়া দ্বীপ । কিন্তু রাতে থাকাটা এই অপরূপার নিবিড় সাহচর্যেই থাকা যেন । চাঁদনী রাত পাইনি । সে রাতে তার অসহ্য সৌন্দর্যের গল্প শুনেছি । অন্যের কাছে ।
নীল, কত নীল চাই ? সাগর যেন নীলশয্যা ।
পটে আঁকা ছবির মত যেন নৌকাগুলো সাজানো ।
হোটেল অবকাশের প্রান্তে সূর্যাস্ত, হোটেল ব্লু মেরিন থেকে সূর্যোদয় দেখা ।
ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা পথে
আহ ছেড়া দ্বীপ । সেখানে কোন জেটি বা ঘাট ছিল না । তীর থেকে একটু দূরে ট্রলার বা স্পীডবোট থামে । তারপর ছোট নৌকাতে করে তীরে পৌঁছানো । ট্রলার বা স্পীডবোট থেকে নৌকাতে উঠতে সাবধান । পানির নীচে তাকান একবার । উঁকি দিচ্ছে ভয়ঙ্কর সুন্দর প্রবালের ধারালো ভঙ্গিমা । ছেড়া দ্বীপের সৌন্দর্যে হারিয়ে যায় মন ।
তীরে পৌঁছে দেয়া নৌকার মাঝির ভাষ্য অনুযায়ী নীচের এটা মৌসুমী পাথর । অনেক বছর আগে সালমান-মৌসুমী এখানে সুটিংয়ে এসেছিলেন । মাঝিও নাকি ছোট্ট একটা পার্ট পেয়েছিলেন । জানিনা, পাথরটা আসলেই সে নামে স্বীকৃত না-কি মাঝি ভালবেসে পাথরের নাম রেখেছিলেন ।
গুছিয়ে খরচের হিসেব এই মুহূর্তে করতে ইচ্ছে করছে না তবে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে খরচ খুব বেশি না । হোটেল ব্লু মেরিনে রূপচাঁদা/গোলচাঁদা/টেকচাঁদা - কয়েকরকম ভ্যারিয়েশন। ভাল লাগল । বাইরের রেস্তোরাগুলোতে তুলনামূলক দাম কম । কয়েক পদের সামুদ্রিক মাছ, প্রমাণ সাইজ চিংড়ি । আহা । হোটেল অবকাশে বা ব্লু মেরিনে থাকতেই হবে এমন নয় । কাব্যিক নামের কিছু কটেজ আছে যেখানে সমুদ্রের ঢেউ আপনার কটেজের কাছাকাছি আছড়ে পড়ে সুমধুর সংগীত শোনাবে ।
ফেরার পালা । বিকেলের জাহাজ গোধূলিবেলার টেকনাফে পৌঁছাবে । জাহাজ ছাড়বার সময় পেছন ফিরে তাকানো । দৃশ্যমান বস্তুজগতের সুন্দরকে ফেলে যাচ্ছি । নিয়ে যাচ্ছি অদৃশ্যমান অনুভূতির জগতের আনন্দময়তা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৫১