আজ এতদিন পর পেছনের কথা ভাবতে গিয়ে বারবার ওয়ায়েস করনী’র কথা মনে পড়ছে। ওয়ায়েস করনী, করিম এবং লায়েস সবসময় একসাথে থাকতো। একসাথে ক্লাস ওয়ার্কগুলো করতো। একসময় বিভিন্ন গ্রুপ স্টাডি আর এ্যাসাইনমেন্টের কারনে আমার সাথে ওর বেশ ভালো একটা সময় কাটে। আমি ও সে একসময় ক্লাসের মনিটর ছিলাম। আমি ফাঁকি দিতাম, তাকে দেখতাম স্যারদের পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে, সবাইকে লেকচার ফটোকপি করে দিচ্ছে। আমরা লেখাপড়া জমিয়ে রাখতাম পিএল এ পড়বো বলে। তাকে দেখতাম সবকিছু কেমন করে যেন আগেই গুছিয়ে ফেলেছে।
সে লম্বা মানুষ। বিছানায় দাঁড়ালে সিলিং ফ্যান মাথা ছুই ছুই করে। একদিন শুনলাম সিলিং ফ্যানে লেগে হাতের রগ কেটে ফেলেছে। তারপর থেকে সে ভারি কাজ করতে পারতোনা। বিনয়ী ও অসম্ভব প্ররিশ্রমী ছিল সে।
বিবিএ’র শেষ ক্লাশের দিন সে বেশ স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছিল। আমরা সবাই মিলে ছবি তুলেছিলাম। আজ এ ছবিটি আমার মনকে প্রচন্ডভাবে আলোড়িত করে।
একসময় পাশ করে বের হলাম। সে ঢাকায় এনজিও ফাউন্ডেশনে চাকরি করছে। আমার ও করিমের অফিস তার অফিসের পাশেই। কিন্তু দেখা করার সময় হতো না। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হতো। একদিন লাঞ্চ আওয়ারে আমি, করিম আর সে আড্ডা দিলাম। নীলক্ষেতেও একদিন দেখা হলো।
এর ১০/১২ দিন পর এক সকালে রাজু’র (রাজু ঢাবি’তে পড়ে, ওয়ায়েসের বন্ধু)ফোন পেলাম। কান্না জড়ানো কন্ঠে জানালো ওয়ায়েস আর নেই। আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না, এখনও হয় না। এটা কি চলে যাবার সময় হলো? ওয়ায়েস হসপিটালে ভর্তি আছে জানতাম, কিডনিতে সমস্যা ছিল। বছর খানেক ধরেই যে ভুগছিল তা জানতাম না। যাব যাব করেও হসপিটালে যাওয়া হয়নি, কর্পোরেট লাইফ আমাদেরকে শেকল পড়িয়ে রেখেছে। তবে লায়েস ও করিমের কাছ হতে খবর নিতাম। পরে শুনেছি হসপিটালের শেষ দিনগুলোতে সে অনেক কষ্ট পেয়েছে।
১৬ নভেম্বর, ২০০৭ ওয়ায়েস আমাদের ছেড়ে চলে যায়। ভালো থেক ওয়ায়েস। তোমার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা ...
নোটঃ আগামীকাল ২৮ এপ্রিল আমাদের বিজনেস ডিপার্টমেন্টে রিইউনিয়ন হতে যাচ্ছে। বন্ধুরা সবাই একসাথে হবে কিন্তু সেখানে ওয়ায়েস থাকবেনা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৫