somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাঁদাবাজির রকমফের

২৭ শে এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদি প্রশ্ন করা হয়, বিনা পুঁজিতে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কী? তাহলে এর উত্তরে চোখ বুজে বলা যায় চাঁদাবাজি। চোখা প্যান্ট রোখা মেজাজের বখাটে তরুণের এক মুঠ হুমকি ও তিন আঙ্গুলের এক চিমটি সাহস মিশ্রিত ঝাড়ি এই ব্যবসার মূলমন্ত্র।
একসময় ছিল যখন গ্রাম অথবা মহল্লার ছেলেরা ধর্মীয় উৎসব বা সামাজিক কোনো কারণে চাঁদা তুলতো। সেক্ষেত্রে তাদের কোনো বাড়তি দাবি ছিল না। দিলে স্বাগতম না দিলে নিজেরাই ভাগতম- এই ছিল তাদের মূলমন্ত্র। এখন সময় পাল্টেছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চাঁদাবাজরা এগিয়ে গেছে। বদলে গেছে চাঁদাবাজির স্টাইল এবং উপলক্ষ।
ধরুন সকালবেলা অফিস যাবেন। বাসার গেট খুলতেই আচানক সামনে কিছু তরুণের আবির্ভাব। কি চাই বলতেই একজন পকেট থেকে হাত বের করে ঠাণ্ডা গলায় বলল, ক্যান আপনি শোনেন নাই? আমাগো ল্যাংটা বাবার জন্মদিন। ভোজ হইব। খরচাপাতির ব্যাপার। চান্দি ঠাণ্ডা কইরা চান্দা দেন। আখেরাতে বাবাই দেখব। এই হচ্ছে এখনকার স্টাইল।
কেউবা পর্দার আড়াল থেকে টোকেন দেখিয়ে চাঁদা তোলে আবার কেউবা চাঁদা তুলতে গিয়ে আহ্লাদে গদোগদো হয়ে বলে, ছি ছি চাঁদার কথা বললাম কখন? আপনাদের মহল্লার কল্যাণে কিছু দিবেন আরকি!
চুরি, ছিনতাইয়ের মত চাঁদাবাজিও এখন শিল্পে পরিণত হয়েছে। শুনেছি অনেক চাঁদাবাজ ঘরে বসে স্লিপ পাঠিয়ে এখন চাঁদা তোলে। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে সেই স্লিপে লেখা থাকে, প্রস্তুত থাকবেন যেকোনো দিন আপনার দরজায় টক্ টক্ করে কড়া নেড়ে বলব, ক্যাশ রেডি রাখছেন তো?
এটা কলিকালের চাঁদাবাজির নমুনা। এর সাথে আছে প্রাতিষ্ঠানিক চাঁদাবাজি, ব্যক্তিকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি, সামষ্টিক চাঁদাবাজি। তবে এসবের মূলে আছে রাজনৈতিক চাঁদাবাজি।
চাঁদার চাদরে ছেয়ে গেছে দেশ। ব্যবসা করবেন, জমি কিনবেন, ইটের পড়ে ইট সাজিয়ে গড়ে তুলবেন স্বপ্নের নীড়? আপনার এসব স্বপ্নের ধোঁয়া চাঁদাবাজদের নাকে গেলেই দুঃস্বপ্নের মত হাজির হবে তারা। প্রতিকারের আশায় ছোটাছুটি করবেন, দেখবেন কোথাও কেউ নেই। মাঝখান থেকে বেড়ে যাবে চাঁদার রেট। তখন এমনও হতে পারে যে, মরণের পরে আপনার বাঁধাই করা কবরের জন্য নির্ধারিত চাঁদা পরিশোধ করে যেতে হবে আপনাকেই। অতএব, মরেও যে এদের হাত থেকে রক্ষা পাবেন সে আশায় গুড়েবালি! তখন পিতৃপ্রদত্ত নামের শেষে চাঁদাবাজ শব্দটিও যোগ হয়ে যেতে পারে। অথচ নামের শেষে চাঁদাবাজ শব্দটি কেউ যোগ করতে চায় না। একারণেই হয়তো এখন আমরা দেখি ছদ্মনাম ব্যবহার করতে। শিক্ষকদের ভাষায় যাকে বলে ডোনেশন, মাস্তানদের ভাষায় বখরা, ছাত্রনেতাদের ভাষায় দাবি, রাজনীতিকদের ভাষায় খুশি হয়ে দেওয়া।
চাঁদাবাজিতে পুলিশ পিছিয়ে নেই সে সকলেই জানেন। সাধারণ চাঁদাবাজদের সাথে পুলিশের পার্থক্য হলো, তাদের রয়েছে সরকারি লাইসেন্স। এই লাইসেন্সের ক্ষমতার কাছে আলাদীনের দৈত্য নস্যি! একবার চাঁদাবাজি করার সময় এক যুবককে হাতেনাতে ধরে পেটাতে পেটাতে ঢাকার এক থানার ওসি বলেছিলেন, চাঁদাবাজি করব আমরা, আমাদের লাইসেন্স আছে। তুই চাঁদাবাজি করিস কোন সাহসে?
সত্যিই তো এক এলাকায় দুই চাঁদাবাজ থাকলে চলবে কীভাবে? এক বনে কী দুই বাঘ থাকে? থাকে না। সেদিন মতিঝিল থেকে ফিরছিলাম। চালকের পাশে বসাতে দেখলাম, ফার্মগেট আসার পর চালক কর্তব্যরত পুলিশ সার্জেন্টের হাতে নোট গুজে দিলেন।। মহাখালী আসতেই আবার একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। অনেক সময় দেখেছি বিড়াল মলত্যাগের পর মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়। বিড়ালেরও লজ্জাবোধ আছে। যখন কোনো কর্তব্যরত পুলিশকে দেখি প্রকাশ্যে চাঁদা নিচ্ছে তখন বিড়ালদের প্রতি আমার এক ধরনের শ্রদ্ধাবোধ জেগে ওঠে। কারণ তারা অন্তত টোকেন নিয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ইঁদুরের জন্য ওৎ পেতে থাকে না। বিড়ালও পরিবেশ সচেতন। সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে আমরা এতটাই অচেতন যে প্রকাশ্যে অপকর্ম করেও বুক ফুলিয়ে চলি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×