somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুল শিশুদের গল্প

২৭ শে এপ্রিল, ২০১১ সকাল ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফুল হাতে ক্যাম্পাসের অলিগলিতে ঘুরে বেড়ানো এসব শিশুর ভবিষ্যত কি

ওর নাম জবা। 'জবা' ফুল হয়ে না ফুটলেও ফুলের মতোই নিষ্পাপ। সে ফুল বিক্রি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। ওর বাড়ি ভৈরবে। বছর দুয়েক আগে বাবার হাত ধরে এসেছিল ঢাকায়। বাবা শশা, ঝালমুড়ি_এসব বিক্রি করতেন। গত বছর শাহবাগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ। বাবার মৃত্যুর পর বাসা ছাড়তে হয়। এখন ওরা থাকে নিমতলীতে_একটি দোকানের বারান্দায়। 'বাবা মইরা যাওনের পর থেইকা ফুল বেচি। আমি বেচি ইনভার্সিটিতে, মায় বেচে শাবাগে। সকালে ফুল নিয়া আসি, রাইত ৮টা ৯টার সময় চইলা যাই।' এভাবেই প্রতিদিনের রুটিন বলছিল জবা। অনেকটা তার মতোই গল্প আট বছরের সোহেলের। এক বোন, এক ভাই আর মাকে নিয়ে সে থাকে কামরাঙ্গীর চর। 'বাসা থেকে ভাত নিয়া সকালে আইয়া পড়ি। দুপুরে ফুল আর রাইতে মালা বেচি। মা বাবুরে (ছোট ভাই) নিয়া পার্কে বইয়া থাহে। বাবু ঘুমায়া গেলে মায়, না অইলে বইনে মালা বাইন্দা দেয়।' বলছিল বুয়েট ক্যাম্পাসের নিয়মিত ফুল বিক্রেতা সোহেল।

একটি ফুলের জন্য
'আপা, একটা ফুল নেন, ফুল।' 'মামা, ফুল দিমু, গোলাপ ফুল'_এ রকম কাতর স্বরে অনুনয়-বিনয় করে ছাত্রছাত্রীদের কাছে ফুল বিক্রি করে ফুল-শিশুরা। কেউ নেয়, কেউবা তাচ্ছিল্যভরে তাড়িয়ে দেয়। তবুও হাল ছাড়ে না ওরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুল-শিশু ঝুমা জানায়_'সবাই খালি ধমক দেয় আমাগোরে।' আবার ভিন্নমতও আছে। যেমন_ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ফুল বিক্রেতা সজীব বলে, 'একটা ফুলের দাম দুই টাকা। অনেক সময় ভাইয়া-আপুদের মন ভালা থাকলে তারা দুুই-তিনটা ফুল নিয়া আমাগো ১০ টাকা দিয়ে দেয়।'

কেউ বাসে, কেউ বাসে না
'এবার পহেলা বৈশাখে আমারে একটা নতুন জামা কিন্যা দিছে ভার্সিটির এক ভাইয়া।' হাসিমুখে কথাটি বলছিল ছোট্ট লাকী। তার বন্ধু সোহাগ অনেকটা রাগ করেই বলল, 'ওর তো সিনার ভাই (সিনিয়র) আছে। তাই কিন্যা দেয়। আমাগো কেউ নাই।' বুয়েট ক্যাম্পাসে ফুল বিক্রি করে লিমা। সে জানায়, প্রতিবছর ঈদে হলের এক আপু নতুন জামা কিনে দেয় তাকে। লিমা বলে, 'গত বছর ঈদে আপা আমারে দুই প্যাকেট সেমাইও দিয়েছিল।' ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ক্যাম্পাসের ফুল-শিশুদের তাঁরা স্নেহের চোখেই দেখেন। নৃবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র প্লাবন জানান, 'আমাদের সঙ্গে এসব শিশুর ফুলের সম্পর্ক। এদের স্নেহ, মমতা, ভালোবাসার চোখে দেখি আমরা।' বাংলার ছাত্র রায়হান বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন প্রায় ৩৫ হাজার ছাত্রছাত্রী। প্রতি ৫০ জন ছাত্রছাত্রীও যদি একজন ফুল-শিশুর দায়িত্ব নেন, তাহলে এসব শিশু আর অবহেলিত থাকে না।' ক্যাম্পাসে ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা এসব শিশুর বেশির ভাগই প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর উদ্যোগে প্রতি শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাদের শেখানো হয় বর্ণপরিচয়। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রমনাপার্কে সপ্তাহে তিন দিন তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে দুটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।

তবুও জীবন যাচ্ছে চলে
'সকালবেলা খাই না। আজ সারা দিন মোটে ২৭ টাকার ফুল বেচতে পারছি। পাঁচ টাকার ভাত কিনুম, আর দোকান থেইকা গরুর মাংসের ঝোল চাইয়া নিমু। তা দিয়া দুপুর পার কইরা দিমু। রাতেও পাঁচ টাকার ভাত কিনলে চলব।' সারা দিনের খাওয়া সম্পর্কে কথাগুলো বলছিল আট বছরের ফুল-শিশু সুমাইয়া। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তন্ময় জানায়, তার মাত্র দুটি জামা। একটি যত্ন করে তুলে রেখেছে ঈদের সময় গায়ে দেওয়ার জন্য। আরেকটা প্রতিদিন গায়ে দিয়ে ফুল বিক্রি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল বিক্রেতা লিমন জানায়, 'আমি আর মা ফুল বেচি। কিন্তু ইনভার্সিটি বন্ধ হয়ে গেলে বেচা-বিক্রি থাকে না। তহন মায় শাবাগ গিয়া বেচে। খাওনের পয়সাও তহন জোটে না।' এভাবেই অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন চালাচ্ছে ক্যাম্পাসের ফুল-শিশুরা। মাঝেমধ্যে শিক্ষার্থীদের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট খেয়েও ক্ষুধা মেটাতে হয় তাদের। অনেক ছাত্রছাত্রী আবার তাদের ডেকে নিয়েও খাওয়ায়।

স্বপ্নদেখার দিন
'বড় অইলে ভার্সিটিতে পড়মু, আর আড্ডা দিমু। তহন আর ফুল বেচুম না।' এভাবেই নিজের স্বপ্নের কথা বলছিল সৌরভ। মাকে খুশি দেখতে মন চায় নয়নের। সংসার বলতে নয়ন আর মা। তাই ছেলে হিসেবে দায়িত্বটা যে তার বেশি, এত অল্প বয়সেও সেটা বুঝতে পেরেছে সে। 'বড় অইলে পুলিশ অফিসার অইতে মন চায়। কিন্তু মায়ে দিব না। মায়েরে ছাড়ি যাই কী করে। মায় যা চায়, তা-ই অমু।' বলছিল ৯ বছরের নয়ন। সাত বছরের জোছনা জানায়, 'আব্বু শশা বেচে, আম্মু বোতল টোকায়। আমি বেচি ফুল। আমি বড় হলে বড় অফিসার হমু। অনেক টাকা বেতনের চাকরি করমু। যাতে আব্বু-আম্মুকে আর কষ্ট করতে না হয়।' এবারের বিশ্বকাপে বড় পর্দায় খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছে শামীম। তখন থেকে তামিম ইকবাল নামটা গেঁথে গেছে তার মনে। এখন সে সারা দিন ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকে। ভবিষ্যতে কী হতে চাও? এ প্রশ্নের জবাবে শামীম বলে, 'আমি তামিমের মতো টিকেটার (ক্রিকেটার) হতে চাই।'
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×