somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নরকের গরম যখন ঢাকায়

২৬ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিদ্যুৎ না থাকলে আপনার ক্ষেত্রে হয়তো টিভি অফ থাকে, ফ্রিজ অফ থাকে, এক্সবক্স থ্রিসিক্সটি-টা কাজ করে না এবং এসি-টাও বন্ধ হয়ে যায় (অবশ্যই যদি আইপিএস থাকে তাহলে সেটাও হয় না)। কিন্তু আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারে বিদ্যুৎ না থাকার মানে কেবল ফ্রিজ-টিভি বন্ধ থাকাই না, সঙ্গে মাথার উপরের বৈদ্যুতিক ফ্যানটাও বন্ধ থাকা। আর বৈদ্যুতিক ফ্যান বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে গরম চেপে ধরে তা নিশ্চয়ই নতুন করে জানানোর কিছু নেই। বিশেষ করে যখন উত্তপ্ত সূর্য সব পুড়িয়ে দিতে চাইছে, তখন ঢাকার বুকে বসেও যেন নরকের গরম কিছুটা হলেও অনুভূত হয়।

বিদ্যুৎ না থাকা বলতে আমি এমন কোনো প্রাচীন এলাকাকে বোঝাচ্ছি না যেখানে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। তৃতীয় বিশ্বে একে লোডশেডিং বলে শুদ্ধভাবে সম্বোধন করা হয়। লোডশেডিং-এর সংজ্ঞাটা ইংরেজি ব্লগে নিজের মতো করে দিলাম এইভাবেঃ In third world, it is called load-shedding. You run out of power frequently because your country’s total power production is a couple of times less than the demand. আসলেই হয়তো লোডশেডিং বলতে এটাই বোঝায়। কিন্তু আমার কেন যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে বাংলাদেশে লোডশেডিং হয় এই কারণেই। প্রায়ই খবরে দেখি এখানে সেখানে পাওয়ার প্ল্যান্ট অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সরকারের এগুলো মেরামত করতে এবং নতুন পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করতে নাকি কয়েক বছর সময় লেগে যাবে। ভালো কথা, কিন্তু কোনো অগ্রগতি তো চোখে পড়ছে না। সরকার নিশ্চয়ই এমন কোনো ভোজবাজির মাধ্যমে কাজ করছে না যে কয়েকবছর আমাদের চোখে কিছুই পড়বে না হঠাৎ একদিন হাওয়া থেকে নতুন নতুন পাওয়ার প্ল্যান্ট উদয় হবে।

হ্যাঁ, সরকারের অগ্রগতি চোখে পড়ে, তবে তা অন্যসব ক্ষেত্রে। এয়ারপোর্ট স্থাপন করতে সরকার রীতিমতো যুদ্ধ করতে রাজি। নভোথিয়েটার, বিমানবন্দর, চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ইত্যাদির নাম পরিবর্তন করতে টাকা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। ভাবখানা এমন, নিজেদের টাকা খরচ করছে। অবশ্য বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসলে সব টাকা ব্যক্তিগত ফান্ডের মতোই হয়ে যায়। অন্তত দেশটার জন্মলগ্ন থেকে লিখিত হয়ে আসা ইতিহাস তা-ই বলে। কিন্তু আমি ওসব বাদ দিয়ে কেবল লোডশেডিং-এর কথা বলবো। এই ভয়াবহ তাপদাহে যখন একমাত্র আশ্রয় ফ্যানটাও বন্ধ হয়ে যায়, তখন সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে সরকারের উপর। তাদের জন্যই আজ সাধারণ মানুষের এই দুরবস্থা। কিন্তু তবুও তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কেন জানেন? কারণ, তারা জানেই না লোডশেডিং কী জিনিস।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীদের কেউই কখনোই তপ্ত রোদেলা দুপুরে বিদ্যুৎ চলে গেলে কেমন লাগে তা জানেন না। কিংবা রাত দুপুরে ফ্যান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘুম ভেঙে গেলে কেমন লাগে সেই অনুভূতিও তাদের নেই। এমনকি বিরোধী দলে গেলেও তারা বেশ আরামেই থাকেন। অর্থাৎ, এই পাঁচ বছর হোক বা পরের পাঁচ বছর, এই মানুষগুলো কখনো জানতেই পারবে না লোডশেডিং যে কতোটা যন্ত্রণাদায়ক।

এই তপ্ত গ্রীষ্মে যখন প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছাড়া কাটাতে হয়, তখন মনে হয় এর চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। প্রচণ্ড গরমে বাইরে থেকে এসে একটু ফ্যানের নিচে বসবেন, সেই উপায় নেই। বিদ্যুৎ নেই। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে একটু শান্তিতে ঘুমাবেন, সরকার সেই উপায়ও খোলা রাখেনি। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে দেখবেন ঘেমে অবস্থা কাহিল। কারণ উপরের ফ্যানটা ঘুরছে না। বিদ্যুৎ নেই ঘুরবে কীভাবে!

তবে এসব কথা আবার সবার ক্ষেত্রে সাজে না। শ্রেণী বিভেদটা বাংলাদেশে চোখে পড়ার মতো। তাই যাদের টাকা আছে তারা দিব্যি আইপিএস, জেনারেটর ইত্যাদি ব্যবহার করছেন। কিন্তু মধ্যবিত্তদের যন্ত্রণার কোনো শেষ নেই। উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তদেরই সব সুযোগ-সুবিধা। মধ্যবিত্ত শব্দটাই যেন অভিশপ্ত।

অবশ্য ভাগ্য আমাদের এখনো ভালো যে রাত ২-৩টা থেকে সকাল ৭-৮টা পর্যন্ত সাধারণত লোডশেডিং হয় না। এর কারণ খুব সম্ভবত যারা বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ লাইন অফ করেন তারা এই সময়টা ঘুমাতে যান। :|

আমরা যারা ঢাকায় থাকি, তাদের ভাগ্য এতোটাই খারাপ যে কেউ আমাদের কষ্ট বুঝবে না। তথাকথিত মন্ত্রীরা তো নয়ই, অন্য কেউই বুঝবে না আমাদের দূরবস্থা। এমনকি বিদেশ থেকে যদি কোনো টুরিস্টও আসেন বাংলাদেশের এই খবর শুনে, তারাও দেখবেন না আমাদের দুর্দশা। কারণ, তারা থাকবেন কয়েক তারা হোটেলে, যেখানে অবশ্যই পাওয়ার ব্যাকআপ থাকবে।

সৃষ্টিকর্তা যদি কখনো আমার কোনো রাজনৈতিক ইচ্ছা পূরণ করতে চাইতেন, তাহলে আমি বলতাম মন্ত্রী-মিনিস্টারদের সবাইকে ২৪ ঘণ্টা টানা লোডশেডিং-এর আওতায় আনা হোক টানা দুই বছরের জন্য। ২৪ ঘণ্টা লোডশেডিং আসলে প্রয়োজন নেই। তপ্ত গরমে এক ঘণ্টার লোডশেডিংই যন্ত্রণা বোঝার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এই মানুষগুলোর জন্য যেন একটু বেশি শাস্তি পাওনাই হয়ে গেছে।

গরমে পুরো দেশটা যখন এমনিতেই তপ্ত, তার উপর নরকের যন্ত্রণা যেন এনে দিয়েছে এই লোডশেডিং। অথচ এই মানুষগুলো ঠিকই আছে শান্তিতে। তাদের জন্য এটাই বেহেশত। আর যাদেরকে তারা মূল্যায়ন করে তারা হচ্ছে উচ্চবিত্তের মানুষ, লোডশেডিং-এ তাদের রয়েছে বিকল্প ব্যবস্থা। মধ্যবিত্তের কথা তাদের ভাবার সময় কই?

যারা বিদেশে আছেন, পারমানেন্টলি দেশে ফেরার চিন্তা করছেন তারা যদি আমার উপদেশ চান, তাহলে বলবো ভুলেও আসবেন না। ঢাকা কেবল পৃথিবীতে অন্যতম বসবাসের অনুপযুক্ত শহরই না, বরং এটি পৃথিবীর বুকেই যেন নরকের প্রিভিউ।

প্রথম প্রকাশঃ AIS Journal



Featured on Global Voices Online.
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১১ রাত ১০:৫৯
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×