somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

র‌্যাবের গুলিতে লিমনের পঙ্গুত্ব, রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে লিমনের ॥ আর যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে?

২৬ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামপ্রতিক সময়ের বহুল আলোচিত বিষয় র্যাবের গুলিতে দরিদ্র কলেজ ছাত্র ‘‘লিমন’’ গুরুতর আহত। শুধু তাই নয় এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী ‘‘লিমন’’ এখন চির জীবনের জন্য পঙ্গু। তার একটি পাঁ কেটে ফেলতে হয়েছে। ঘটনাটি সামপ্রতিক সময়ের বহুল আলোচিত ঘটনার একটি। যখন ঘটনাটি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ পায়, ততক্ষণে যা হবার তাই হয়েছে। লিমনের কন্ঠে হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য যেই শুনেছেন কিংবা খবরের কাগজে পড়েছেন, পাথর হৃদয় ব্যক্তির পক্ষেও মনে হয় চোখের পানি আটকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। এর পরের ঘটনা সকলেরই জানা। সহানুভূতি জানাতে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা লিমনকে দেখতে গেলেন হাসপাতালে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান ‘‘লিমন’’কে দেখতে গিয়ে তিনিও চোখের পানিতে সান্তনা দিলেন ‘‘লিমন’’কে। বললেন সঠিক তদন্ত সাপেক্ষেবিচার হবে। এর পরেই টনক নড়ে সরকারের। মামলা করে লিমনের ‘মা’ র্যাবের বিরুদ্ধে। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, লিমনের ঘটনা ৫টি পৃথক কমিটির সমন্বয়েতদন্ত হচ্ছে। র্যাবের মহাপরিচালক, পুলিশের মহা-পরিদর্শকস্বীকার করেছেন ‘‘লিমন’’ সন্ত্রাসী নয়, সে দুর্ঘটনার শীকার দেশের বিভিন্ন সংগঠনগুলি এর বিচারের দাবিতে এখনো স-রব। প্রতিদিনই কোন না কোন চ্যানেলে প্রতিবেদন থাকছে ‘‘লিমন’’কে নিয়ে। এতো গেলো একটা দিক। কিন্তু লিমনের কী হবে? ‘‘লিমন’’কে সন্ত্রাসী বানিয়ে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়ে তার সারা জীবনের ইতিহাসে যে সামাজিক কালিমা লেপন হয়েছে তার কী হবে? র্যাব সৃষ্টি হবার পর থেকে বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের শত শত অভিযোগ হয়েছে প্রতিনিয়ত। এর কোন সদুত্তর না দিয়েছে সরকার। না দিয়েছে র্যাব কর্তৃপক্ষ। এভাবে আর কতদিন!
লিমনের পাঁয়ে গুলিটা না লেগে সেটা মাথায় বা বুকে-পিঠে লাগলেই শেষ হতো আরেকটি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। শুরু হতো অস্ত্র উদ্ধারের সেই ক্রস ফায়ারের পুরাতন কাহিনী। যে গল্পের সন্ত্রাসী নেতা হতো ‘‘লিমন’’। যাক এরকম কিছু ঘটেনি। তদন্ত ৫টি কমিটি করুক আর ৫০টিই কমিটি করুক, সেটা বিষয় নয়। বিষয় হলো এভাবে আর কত দিন? র্যাবকে কি কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। র্যাবের বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ। শুধুই তদন্ত হচ্ছে। রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে। মামলা হচ্ছে। বক্তৃতা বিবৃতি, চায়ের কাপে ঝড় তোলা টক্ শো প্রতিদিনই হচ্ছে। ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন নজির কি চোখে পড়ছে?
গত ইয়াজ উদ্দীন-মইন-ফখরুদ্দীনের সাড়া জাগানো সরকার এর আমলে র্যাবের ডাইরেক্ট এ্যাকশন মানুষ দেখেছে। মুখে কিছুই বলতে পারেনা কেউ-ই। কারণ সংবিধান স্থগিত ছিল। জারি ছিল জরুরী অবস্থা। এখনতো নির্বাচিত সরকার। তবে এখনো কেন এ সকল কর্মকাণ্ড? কেন একজন দরিদ্র মেধাবি কলেজ ছাত্রকে র্যাবের নিশানা হতে হলো। লিমন কোন অবস্থাতেই সন্ত্রাসী নয়। এটা তদন্ত প্রতিবেদনে যাই আসুক না কেন। জনগণ জানে ও জেনে গেছে ‘‘লিমন’’ কোন পরিস্থিতির শীকার।|
বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই বাহিনী আছে। সরকারের উচিৎ ওদের আর আমাদের র্যাবের কাজ মূল্যায়ন করা। এটা দেরী হলে মুল্যায়নের ভার জনগণ নিজেই নিবে। কারণ জনগণ হলো সাংবিধানিকভাবে দেশের মালিক। আর মালিক মূল্যায়ন করতেই পারে। এ পর্যন্ত যা অতীত ইতিহাস আছে, তাতে জনগণের মূল্যায়ন এর ফলাফল সবসময় সরকারের উল্টোটা। যা কখনই কোন সরকারের জন্য শুভ নয়। আমি মনে করি, লিমনের দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির কি তদন্ত হচ্ছে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো লিমনের দায়িত্ব নেয়া। দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে। যাবতীয় ক্ষতিপূরণ দিয়ে সামাজিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে ‘‘লিমন’’কে। এ রকম ঘটনা র্যাব কেন ঘটালো সেটার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। লিমনের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। তাই এতো হৈ, চৈ। আর যেগুলো প্রকাশ হয় না বা প্রকাশ হতে দেয়া হয়না। সেগুলো ঘটনার কী হবে? তা সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকেই তাঁর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। র্যাবের বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের খবর হরহামেশাই মিডিয়াতে প্রচার হচ্ছে। ‘‘লিমন’’ সন্ত্রাসী নয় তারপরও সে পঙ্গু হলো। কিন্তু যে সকল মোষ্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী বুক ফুলিয়ে বিভিন্ন ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাদের খবর প্রতিনিয়তই প্রকাশ হচ্ছে মিডিয়ায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কে নিবে? তাই পরামর্শ হলো, আসল সন্ত্রাসী ধরুন। ওদের ধরে আইনে সোপর্দ করার দায়িত্ব আপনাদের। ‘‘লিমন’’দের ধরে সন্ত্রাসী হয়তো বা কিছুক্ষণের জন্য বানানো যাবে। কিন্তু তা চিরস্থায়ী নয়। এতে ভাবমুর্তি শুধু র্যাবেরই নষ্ট হচ্ছে না। নষ্ট হচ্ছে সরকারের। আর সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করার আপনারা কে? তাই আর ‘‘লিমন’’ বা অন্য কেউ নয়। আসল সন্ত্রাসী পাকড়াও করুন। আইনের হাতে সোপর্দ করুন। র্যাবের প্রসংসনীয় ভূমিকা অনেক আছে। যা যুগান্তকারী। এরকম ভুমিকায় সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। কিন্তু সকল গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা খাটো হয়ে আসছে, এ রকম লিমনের বিতর্কিত ঘটনায়। তাই এখন থেকেই সতর্ক হোন। যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে র্যাব এর সৃষ্টি। সেই উদ্দেশ্য-ই- বাস্তবায়িত হোক। আর লিমনের এই দুর্বিসহ জীবন থেকে পরিত্রাণ দিতে এগিয়ে আসুক রাষ্ট্র। নয়ত র্যাবের সকল কর্মকাণ্ডই হবে প্রশ্নবিদ্ধ। আর মানবাধিকার কমিশনসহ অন্যান্যরা অশ্রুসিক্ত নয়নে শুধু শান্তনাই দিয়ে যাবেন। কাজের কাজ কিছুই হবে না।
লিমনের প্রতি সহমর্মিতা পোষন করছি। র্যাবের প্রতি আহবান এমন কিছু করুণ, যেন দেশ-জাতি আপনাদের নিয়ে গর্ব করে। গতকালকের খবরে প্রকাশ হয়েছে আদালত নির্দেশ দিয়েছে থানাকে মামলা নিতে। লিমনের পরিবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তদন্ত নিয়ে। কারণ র্যাবের তদন্ত র্যাবেই করছে। বিষয়টি চিন্তাজনক বটে! তবে দেশবাসী আশা করে এ চিন্তার ইতি টানা হোক এবং লিমন যেহেতু সন্ত্রাসী নয়, স্বীকারোক্তি দেয়া হয়েছে। তাহলে এখনো কেন লিমন পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন থাকবে? বহির্বিশ্বে র্যাবের ভাবমুর্তি যেন উজ্জ্বল হয়। আর র্যাবের সফলতা মানে, সরকারের সফলতা। আর সরকারের সফলতা মানেই দেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। এভাবে ধাপে ধাপে বাংলাদেশ পৌছে যাবে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত বিশ্বে। যেটা স্বপ্নদেখে বাংলার আপাময় জনতা----।
লেখকঃ বার্তা সম্পাদক, দৈনিক উত্তরবাংলা, মালদহপট্টি, দিনাজপুর।
মোবাইল-০১৭১৮৮৮০১৭৮।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×